মানুষ সেই সৃষ্টির শুরু থেকেই সামাজিক ভাবে বসবাস করে আসছে। মানুষ সেই পূর্বপুরুষ থেকেই জিনগত ভাবেই সামাজিক জীব। মানুষ যে পরিমান বুদ্ধি ও চাতুর্য মস্তিস্কে ধারণ করে তা তার একা বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট হলেও সে একা বাঁচতে পারে না কারণ জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারনে সে সামাজিক এবং নির্ভরশীল জীব।
গত পর্বে তুলে ধরা হয়েছিল পরকীয়ার বা দ্বিচারিতার মত অপরাধের পিছনে টেলিভিশন বা নাটক ছবির ভূমিকা।
আজ তুলে ধরব সামাজিক ভূমিকা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় এসব ঘটনা যেসব পরিবারে ঘটে সেখানে স্বামী বা স্ত্রী এদের উভয় বা কেউ একজন ব্যস্ততা বা উদাসীনতা বা অবহেলা বা অবজ্ঞা বা অসুস্থতা বা আভিজাত্যপূর্ণ সম্পর্ক ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে একজনের সাথে আরেকজনের দুরত্ব তৈরি হয়।
যেখান থেকেই একাকিত্বের সূচনা হয়।
আমি প্রথম পর্বেই বলেছি মানুষ একাকিত্ব কে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। তাই মানুষ একাকিত্ব কে দূরে রাখতে চায়।
আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখবো যে সবধরনের অপরাধের মূল কারণে হচ্ছে অভাব। যেকোনো ধরনের অভাব মানুষকে অপরাধের পথে পরিচালিত করে।
তেমনি সঙ্গীর অভাব কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এসব অপরাধের দিকে প্রলোভিত করে। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মোবাইল ফোন ইন্টারনেট ভিত্তিক যোগাযোগ যেখানে সহজেই পরিচিত বা অপরিচিত কাছের বা দূরের যেকোনো মানুষ এর সাথে সহজে সংযুক্ত হতে পারছে। পাসওয়ার্ড প্রটেকশন এবং সিক্রেট মেসেজিং এর মাধ্যমে গোপনে মেসেজিং করাও আজ সহজসাধ্য।
ফলে যে ব্যক্তি তার কাছের পছন্দের মানুষ এর কাছে থেকে সাড়া পাচ্ছে না সে সহজেই আরেকজনকে খুঁজে নিচ্ছে। চালিয়ে যাচ্ছে যোগাযোগ।
যা মানুষ কে তার কাছের মানুষ এর উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে। একধরনের ফ্যান্টাসি জগত যেখানে সে তার অনলাইনের সঙ্গীকে কল্পনা করে নিচ্ছে। যেখানে সে কাছে না থাকা সত্ত্বেও ভার্চুয়ালিটির জগতের আরেকজনকে নিজের আপন ভেবে একাকিত্ব দুর করছে। ফলে সে পাশে থাকা কাছের মানুষটিকে মনের অজান্তেই দূরে সরিয়ে দিচ্ছে এবং ভার্চুয়াল দুনিয়ার সামগ্রী দিয়ে নিজের মানসিক যে ঘাটতি তা পূরণ করে নিচ্ছে। ফলে ভার্চুয়াল জগতের সামাজিকতায় পরিপূর্ণ মানুষ তার ব্যক্তিজীবনে পুরোপুরিভাবেই আলাদা চরিত্রের এবং কিছুটা অসামাজিক হিসেবে থেকে যাচ্ছে। যা থেকেই পরকীয়ার মত ভয়াবহ অপরাধ ঘটছে। যার মূল কারণ মানুষ তার কাছের মানুষদের থেকে দূূরে চলে যাচ্ছে। নিজেকে একা করে ফেলছে। দূরে সরে যাচ্ছে সমাজ থেকে। নিজের মস্তিষ্কের চিন্তা ও চেতনায় তৈরি করছে নতুন এক ফ্যান্টাসির জগত যা তাকে সরিয়ে দিচ্ছে বাস্তবতা থেকে। ধাবিত করছে অপরাধের দিকে।
আসলে পরকীয়া বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক সমাজে একধরনের ট্যাবু। এসব নিয়ে আলাপ করা/লিখালিখি ইত্যাদিও এগুলোর ছড়িয়ে দেয়ার আরও একটি কারণ। হুমায়ুন আহমেদ, সুনীল গংগোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, ডা: লুৎফর রহমান সহ বহু লেখক তাদের বইয়ে এগুলোর মুখরোচক বর্ণনা দিয়ে এগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলেছেন যা আসলেই এইধরনের অপরাধ ছড়িয়ে দিতে ভুমিকা রাখছে। কারণ সব ধরনের সাহিত্য সবার বোধগম্য বিষয় না হওয়াতে কিছু মানুষ এগুলোকে অপরাধ হিসেবে না দেখে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে দেখে। সম্মানিত লেখকগণ হয়ত অপরাধের বিপক্ষে শিক্ষা দেয়া বা অপরাধের ভয়াবহ পরিনতি জানানোর জন্য লিখলেও সবাই হয়তো একে সেভাবে গ্রহন করছে না। তাই সাহিত্যের ভুল ব্যাখ্যা এবং সঠিক শিক্ষার অভাবও এই অপরাধগুলোর পিছনে দায়ী।
(পরবর্তী পর্বে সমাপ্য……..)
পরিশেষ একটি কথা।
★হয়তো বলা হতে পারে আমি কেন লিখছি?
কারণ বর্তমান সময়ে পত্র পত্রিকার পাতা খুললেই পরকীয়ার জের খুন, শিশু হত্যা, স্ত্রী হত্যা, স্বামী হত্যা, পরকীয়া দেখে ফেলায় শিশু মেয়েকে হত্যা, আত্নহত্যা, পরকীয়ার প্রমাণ পেয়ে স্ত্রীকে ও তার প্রেমিককে হত্যা। এসব খবর দেশের এই বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে ঘটে যাওয়া এইধরনের অপরাধের শতাংশ মাত্র। সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এবং অপরাধবিজ্ঞানীদের আজ সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কার অন্যতম বড় কারণ পরকিয়া। আমার অভিজ্ঞতা, বয়স ও জ্ঞান খুবই কম এই বিষয়ের তুলনায়। কিন্তু আজ এই বিষয়টি আমাদের অগোচরেই একসময় প্রকট হয়ে দাড়াবে। আজ আমরা শুধুই পত্রিকায় সংবাদ দেখছি। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ছাড়াছাড়ি, ডিভোর্স, পালিয়ে যাওয়ার মত ঘটনা। যার পিছনে সামান্য কারণ। কিন্তু আমরা বুঝছি না। একসময় হয়ত দেশ উন্নত হলে প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারে এই সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করবে। যেখানে অভাব হবে ভালবাসার, অভাব হবে বিশ্বাসের।
মানুষ ভালবাসা নিয়ে আশায় বেঁচে থাকে।
আর একটি দেশ তার মানুষ নিয়ে বেঁচে থাকে।
ভালবাসুন দেশকে। আপনার আমার ভালবাসায় দূূর করা সম্ভব অপরাধ। আমাদের দেশকে গড়ে তুলি। বিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ ও সঠিক জ্ঞান গ্রহন করি।
কাজ করি বিজ্ঞান নিয়ে, উন্নত করি দেশ।