আর মাত্র কদিন, এরপরই কক্ষপথে পাড়ি জমাবে দেশের প্রথম কৃত্রিম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১।আসছে এপ্রিলেই মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -১।
#স্যাটেলাইট ও প্রযুক্তিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম আমেরিকা স্পেস এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত স্পেস এক্স এর লঞ্চ প্যাড থেকে এপ্রিলের ২৪-২৭ তারিখের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণ করা হবে।
স্যাটেলাইট নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস টুইট বার্তামতে ২৮ মার্চ কানের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস প্ল্যান্ট ত্যাগ করে স্যাটেলাইটটি। পরে স্যাটেলাইট বহনকারী কার্গো বিমান অ্যানতোনোভ নাইস বিমানবন্দর থেকে ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য রকেট নির্মাণ করেছে বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক টেসলার প্রধান নির্বাহী অ্যালেন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেস এক্স এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্প। যুক্তরাষ্ট্রের এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হবে এবং এরই মাধ্যমে বাংলাদেশ নাম লিখাবে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট ক্ষমতাধর দেশের তালিকায়।
স্পেসএক্স এর ফ্যালকন-৯ রকেট বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) এর ৩.৫ মেট্রিক টন বঙ্গবন্ধু -১ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে, যেটি এশিয়ান ছোট দেশ দ্বারা পরিচালিত প্রথম জিওস্টেশনারি যোগাযোগ উপগ্রহ। জিওস্টেশনারি অরবিট বা ভূস্থির কক্ষপথ বা ভূস্থির ক্রান্তিয় কক্ষপথ হল পৃথিবীর ক্রান্তিয় অঞ্চলের ৩৫, ৭৮৬ কিলোমিটার ওপরে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে একটি ঘুর্ণায়মান গোলাকৃতি কক্ষপথ।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি ১১৯ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় নির্ধারিত স্লটে পৌঁছতে সময় নেবে আট দিন । স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের জন্য ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল স্লট (১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) কিনে নিয়েছে বাংলাদেশ।
দুই কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে এ স্লট বরাদ্দ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের মধ্যে চুক্তি হয়। ইন্টারস্পুটনিকের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি হলেও এ চুক্তি তিন ধাপে ৪৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এ প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে এনে এ প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
দেশের প্রায় ৩৭ স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে প্রায় কোটি কোটি ডলার আয় করা যাবে। এসব চ্যানেল এখন বিদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে ফ্রিকোয়েন্সি কিনে অনুষ্ঠান প্রচার করতে হবে না। দেশের টিভি চ্যানেলগুলো স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে। সে টাকা এখন থেকে দেশেই থেকে যাবে। ইন্টারনেট বা ভি স্যাট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকেও বিদেশে টাকা খরচ করতে হবে না। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। তবে এ টিভি চ্যানেলগুলো এখনকার প্রচলিত ক্যাবলভিত্তিক প্রচারের পরিবর্তে ছোট ডিশ অ্যান্টেনায় ডাইরেক্ট টিভি সিগন্যাল পাবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০ ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। বাকি ২০টি বিদেশি বা প্রতিবেশী দেশের কাছে ভাড়া দেয়া যাবে। অব্যবহৃত এই অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশে ভাড়া দিয়ে প্রতি বছর ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা যাবে।
স্যাটেলাইটটি ১৫ বছর মেয়াদের মিশনে পাঠানো হচ্ছে। এই কৃত্রিম উপগ্রহটি টেলিভিশন চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি-স্যাট ও বেতারসহ ৪০ ধরনের সেবা দেবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ট্যারিস্ট্রিয়াল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা বহাল রাখা, পরিবেশ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ই-সেবা নিশ্চিত করবে। সেইসাথে মহাকাশ বা জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তি, জাহাজের দিক নির্দেশনায়, এবং সামরিক ক্ষেত্রে শত্রুর অবস্থান জানা, দূর সংবেদনশীল তথ্যে, মাটি বা পানির নিচে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে ব্যবহার করা যাবে এ স্যাটেলাইট। এছাড়াও মহাশূন্য এক্সপ্লোরেশন, ছবি তোলার কাজে, হারিকেন-ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস, গ্লোবাল পজিশনিং বা জিপিএস, গামা রে ডিটেকশনেরও কাজে লাগবে এটি।
পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও আসন্ন হামলা ছাড়াও স্থল সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য ইন্টিলিজেন্স সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা পেতে, তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিভিন্ন খনি সনাক্তকরণ, ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করাসহ অত্যাধুনিক অনেক কাজেই স্যাটেলাইটের সুফল পাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ভূমি থেকে উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে । গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় এই গ্রাউন্ড স্টেশন। বেতবুনিয়ার গ্রাউন্ড স্টেশনটি ব্যাকআপ স্টেশনে হবে। মূলত কাজ হবে জয়দেবপুরের স্টেশনেই। গাজীপুরে প্রায় ৫ একর জায়গা জুড়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে বিদেশি প্রকৌশলীরা কাজ করছেন।
ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইচ টিপে উদ্বোধনের পরই কেপ কার্নিভ্যালে স্পেসএক্স থেকে মহাকাশে রওয়ানা হবে স্যাটেলাইটটি। নব নির্মিত উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে এই উৎক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্লোরিডায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
তথ্যসূত্র : Space X , আমেরিকা স্পেস, টেকশহর ডট কম
Leave a Reply