ফিল্ডস পদক,যাকে বলা হয় গণিত শাস্ত্রের নোবেল পুরষ্কার। ২০১৪ সালে একটি কাঙ্ক্ষিত প্রতীক্ষার অবসান ঘটেছিল প্রথমবারের মত একটি মেয়ের ফিল্ড পদক জেতার মাধ্যমে। হ্যা, এখানে মরিয়ম মির্জাখানির কথা বলা হচ্ছিল! নামটা অপরিচিত লাগছে নিশ্চই? লাগারই তো কথা! সুদূর পারস্যে জন্ম নেওয়া এই গণিতকন্যাকে মুষ্টিমেয় কিছু গণিতপ্রিয় বাঙালী ছাড়া আর তেমন কেউ চিনেনা হয়তো। তিনি আর বেঁচে নেই।
মাত্র ৪০ বছরে ক্যান্সারে মৃত্যু হয় তার। গত শনিবার(১৫ জুলাই,২০১৭) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হিসেবে মৃত্যু হয় মরিয়মের। তাঁর মৃত্যুর খবর রবিবার প্রকাশ করে ইরানের সবগুলো দৈনিক পত্রিকা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি পত্রিকা ইরানের হিজাব প্রথা ভেঙে মরিয়মের ছবি প্রকাশ করেছে। ইরানের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী, কোনও নারীর ছবি প্রকাশ করা হলে অবশ্যই হিজাব পরিহিত হতে হবে। কিন্তু মরিয়মের মৃত্যুর পর তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হিজাব ছাড়াই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ইরানের ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল।
২০১৪ সালে ফিল্ডস পদক পাওয়ার পর মরিয়মের ছবিতে হিজাব পরিয়ে প্রকাশ করেছিল ইরানের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রিত একটি সংবাদপত্র। অন্যরা শুধু তার মুখের একটি স্কেচ প্রকাশ করেছিল। রবিবার প্রকাশিত ইরানি সংবাদপত্রের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছে হামশাহরি। দৈনিক পত্রিকাটির প্রথম পাতায় ছবি ছেপে শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, যেমন ছিলেন তিনি। দনইয়া-ইয়ে-এহতেসাদ শিরোনাম করেছে, গণিতের রানির চিরবিদায়। পত্রিকাটিও মরিয়মের হিজাব ছাড়া ছবি প্রকাশ করেছে। মরিয়মের মৃত্যুতে ইরানসহ বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনেতাই শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানিও শোক জানিয়েছেন।
মৃত্যুর পরও মরিয়মের শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার আরেকটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে রবিবার। মরিয়ম চেক বিজ্ঞানিকে বিয়ে করেছিলেন। ইরানের সংসদের বেশ কয়েকজন সদস্য দাবি করেছেন, ইরানি মায়েদের সন্তানদের বিদেশিদের বিয়ের অনুমতি দিতে সংবিধান সংশোধনের। এতে বিদেশিদের ইরানের নাগরিকত্ব দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মরিয়ম ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। ফিল্ড মেডেল পুরষ্কারটি প্রতি চার বছরে ৪০ বছরের নিচে থাকা দুই থেকে চারজন প্রতিযোগীকে প্রদান করা হয়। কমপ্লেক্স জিওমেট্রি এবং ডায়নামিক সিস্টেমের উপর বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে অধ্যাপক মির্জাখানি এই পুরষ্কারটি অর্জন করেন।
নাসায় কর্মরত তার এক বন্ধু তার মৃত্যুর খবর জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, একটি আলো নিভে গেল আজকে। এটি আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে… খুব তাড়াতাড়িই ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।
১৯৭৭ সালে ইরানের তেহরানে জন্ম নেয়া অধ্যাপক মির্জাখানি কিশোর বয়সে গণিত অলিম্পিয়াডে দুইটি স্বর্ণপদক অর্জন করেছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তারপর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিন বছর আগে ১৯৩৬ সাল থেকে চালু হওয়া ফিল্ডস মেডেল পুরষ্কারটি কোনো মেয়ে অর্জন করার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছিলেন তিনি।
সূত্র:দ্য গার্ডিয়ান