“আমাদের বোস মশাই”

 

“এক কথায় অসাধারণ”

উক্তিটি শুনে  হয়ত অদ্ভুদ লাগতে পারে কিন্তু রহস্যেরর কিছুই নেই এযে সত্যিই অসাধারন। এই উক্তিটি বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের যিঁনি আমাদের বাঙ্গালী বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ অর্থাৎ সত্যেন বসুর কাজ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। আজ যদিও আইনস্টাইনকে নিয়ে একটি কথাও হবে না তবু শুরুটা তাঁকে দিয়েই,কেননা শুধু বাঙ্গালীরা নয় বরং পুরো বিশ্বই আজ হিগস- বোসন (ঈশ্বর কণা) কণার জনককে ভুলতে বসেছে। আমরা যতটানা নিউটন আইনস্টাইকে চিনি বা তাঁদের নিয়ে চর্চা করি তার এক শতাংশও হয়ত সত্যেন বসু,জগদীশ চন্দ্র বসু, জামাল নজরুল ইসলাম কিংবা মেঘনাদ সাহাকে নিয়ে করি না। এমন মানুষ হয়ত অনেক কমই খুজে পাওয়া যাবে যারা হয়ত দশজন বাঙ্গালী বিজ্ঞানীর নাম জানেন। এর কারন প্রচার মাধ্যমে ভিনদেশী বিজ্ঞানীরা যতটা সুযোগ পান তার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আমাদের স্বদেশী বিজ্ঞানীরা তেমনি একজন প্রচার বিমুখ মহান বাঙ্গালী বিজ্ঞানী সতেন্দ্রনাথ বসু।তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞানের কিছু কিছু বিষয়ে যার অবদান ছিল আইনস্টাইনের চেয়েও অনেক বেশী।

হিগস বোসন কণার জনক এই কিংবদন্তী বিজ্ঞানী ১৮৯৪ খৃষ্টাব্দের ১ লা জানুয়ারী উত্তর কলকাতার গোয়া বাগান অঞ্চলে স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলের পাশে ২২ নম্বর ঈশ্বর মিত্র লেনে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পরিবারের আদি নিবাস ২৪ পরগণার কাঁড়োপাড়ার সন্নিকটে বড়োজাগুলিয়া গ্রামে । তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন পূর্ব ভারতীয় রেলওয়ের হিসাবরক্ষক এবং মাতা আমোদিনী দেবী ছিলেন আলিপুরের খ্যাতনামা ব্যবহারজীবী মতিলাল রায়চৌধুরীর কন্যা । যে সময়টাতে সত্যেন বসু জন্মেছিলেন সেই সময়টাতেই জন্মেছিলেন বিজ্ঞানের আরও চার কিংবদন্তি, পরমাণু বিজ্ঞানী লিস মিটনার, অটোহ্যান, আলবার্ট আইনস্টাইন ও ম্যাক্সভন লু-এর মতো প্রতিভাবান বিজ্ঞানীরা। সময়ের সেই সুবর্ণ ধারায় এ উপমহাদেশে রামানুজন, মেঘনাদ সাহা, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এবং রবীন্দ্রনাথেরও জন্ম হয়ে ছিল সেই শতকেই।

সেই হিসেবে বেশ ভাগ্যবানই বলা চলে পরিবারের এই জেষ্ঠ্য পুত্রকে। তাঁর শিক্ষা জীবনের প্রাথমিক পর্যায় শুরু হয়েছিল নর্মাল স্কুলে। পরে বাড়ীর সন্নিকটে নিউ ইন্ডিয়ান স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি হিন্দু স্কুলে এন্ট্রান্স ক্লাশে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯০৯ খৃষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।তারপর ভর্তি হোন প্রেসিডেন্সী কলেজে এবং সেখান থেকেই১৯১১ খৃষ্টাব্দে আই.এস.সি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে তার মেধার পরিচয় দেন । তার কলেজ জীবনে তিনি সান্নিধ্য পান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এবং আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র বসুর মতন যশস্বী অধ্যাপকদের যারা উভয়ই প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯১৩ খৃষ্টাব্দে পুনরায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক এবং ১৯১৫ খৃষ্টাব্দে একই ফলাফলে মিশ্র গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

এর আগে ১৯১৪ সালে এম-এস-সি পরীক্ষার আগে সত্যেন বসু ডাক্তার যোগেন্দ্রনাথ ঘোষের মেয়ে ঊষাবতী দেবীকে বিয়ে করেন।এছাড়া প্রেসিডেন্সীতে তিনি আরেক কিংবদন্তী মেঘনাদ সাহাকে সহপাঠি হিসেবে পেয়েছিলেন। সত্যি বলতে সত্যেন বসু এমন এক আবহে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন যেখানে শিক্ষক-সহপাঠি সবাই অত্যন্ত মেধার অধিকারী ছিলেন। আর এই আবহই তাঁকে পরবর্তী জীবনে একজন পরিপূর্ণ বিজ্ঞানী হতে সাহায্য করেছিলো। যদিও এই প্রখর মেধাবী হওয়ার কারনে তাঁকে সম্মুখীন হতে হয়েছে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার।

বিদেশে গিয়ে পড়ালেখা করার ইচ্ছে সত্যেন বসুর ছোটবেলা থেকেই ছিল। এম-এস-সি’তে রেকর্ড পরিমাণ নম্বর পাবার পর তাঁর শিক্ষক প্রফেসর ডি এন মল্লিক সস্নেহে ডেকে বললেন, “এত বেশি নম্বর পেয়েছ পরীক্ষায়, বড় বেমানান লাগছে হে”। সত্যেন্দ্রনাথ ভাবলেন এবার মনে হয় সুযোগ এলো বিদেশ যাবার। কিন্তু হলো না। সে বছর পদার্থবিদ্যা বা গণিতের জন্য কোন বৃত্তি দেয়া হলো না। সবগুলো বৃত্তি পেলো রসায়নের শিক্ষার্থীরা। এত ভালো রেজাল্ট করার পরেও ভালো কোন চাকরির ব্যবস্থা হলো না। কিংবা বলা যায় এত ভাল রেজাল্টের কারণেই কোন চাকরি পাওয়া গেলো না। এত ভাল ছাত্রকে কেউ সাধারণ চাকরি দিতে চান না। তাঁর বাবা রেলওয়ের বড় অফিসারদের ধরে রেলওয়েতে একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে চাইলেন। কিন্তু সত্যেন্দ্রনাথ রাজী হলেন না। তিনি বাবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসামে চলে গেলেন। সেখানে গৌরীপুরের জমিদারের ছেলেকে প্রাইভেট পড়ানোর দায়িত্ব নিলেন।

এর অনেক পরে সত্যেন বসু এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “পাশ করার পর প্রথম একটা বছর আমি টিউশনি করে কাটিয়েছি। এই এক বছরে বাইরের দু’একটা কলেজে ও অন্যান্য সরকারি অফিসেও চাকরির চেষ্টা করেছিলাম। হয়নি। যাকে প্রাইভেট পড়াতাম সে এখন সিনেমা জগতের দিকপাল কুমার প্রমথেশ বড়ুয়া। পাটনা কলেজে একটা দরখাস্ত পাঠিয়েছিলাম। উইলসন সাহেব তখন সেখানকার প্রিন্সিপাল। স্যার যদুনাথ সরকার তখন সেখানে অধ্যাপনা করতেন। কিন্তু সেখানেও আমার চাকরি হলো না। তাঁরা জানালেন তাঁদের দরকার একজন সেকেন্ড ক্লাস এম-এস-সি। তখন ভাবলাম ফার্স্ট ক্লাস না পেয়ে সেকেন্ড ক্লাস পেলেই বুঝি ভালো ছিল। আর একবার বাবার বন্ধুর কথামত আলিপুর আবহাওয়া অফিসে একটা দরখাস্ত পাঠিয়েছিলাম। জবাব এলোঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃতী ছাত্রের উপযুক্ত কোন চাকরি এখানে খালি নেই। প্রার্থী অন্য কোথাও দরখাস্ত করলে ভালো হয়”।

চাকরির জন্য দরখাস্ত করতে করতে ক্লান্তি এসে গেল। নিজের পড়াশোনাটা আবার শুরু করার কথা ভাবছেন। এ সময় কলকাতার সায়েন্স কলেজে রসায়নে গবেষণা করছেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডঃ প্রফুল্ল মিত্র প্রমুখ। সত্যেন বসু কেমিস্ট্রি পড়েন নি। ভাবছেন কী করা যায়। এদিকে জগদীশ বসু তখন পদার্থবিদ্যার গবেষণা থেকে সরে গিয়ে উদ্ভিদবিদ্যার দিকে ঝুঁকেছেন। উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখার্জির আহবানে সায়েন্স কলেজে ফলিত গণিতের অধ্যাপক পদে যোগ দিয়েছেন ডঃ গণেশ প্রসাদ। উনি জার্মানি থেকে ডঃ কাইনের কাছে গবেষণা করে এসেছেন। সত্যেন বসু একদিন হাজির হলেন ডঃ গণেশ প্রসাদের কাছে। সত্যেন বসুর এম-এস-সি থিসিসের পরীক্ষক ছিলেন ডঃ প্রসাদ। পরীক্ষার খাতায় অত্যন্ত কম নম্বর দেয়া এবং পরে কম নম্বর পেয়েছে বলে ছাত্রদের খোঁচা দেয়া ছিল তাঁর স্বভাব। কিন্তু সত্যেন বসুর থিসিসে খুব কম নম্বর দেয়া সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষেও। তাই ডঃ প্রসাদ তাঁর স্বভাব-খোঁচাটা দিতে পারলেন না সত্যেন বসুকে। কিন্তু তাঁর আরেকটি অভ্যাস ছিলো – অন্যের বদনাম করা। প্রেসিডেন্সি কলেজের ভালো ভালো শিক্ষকের বদনাম করতেন তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রদের পেলেই। ছাত্ররা, বিশেষ করে গবেষক ছাত্ররা ভয়ে কোন প্রতিবাদ করতো না। কিন্তু স্পষ্টভাষী সত্যেন বসু গুরুনিন্দা শুনে চুপ করে থাকতে পারলেন না। প্রতিবাদ করলেন। তাতে ডঃ প্রসাদ ভীষণ রেগে গেলেন। বললেন, “তুমি পরীক্ষায় যতই ভাল কর না কেন, তোমার দ্বারা গবেষণা হবে না”। কী আর করা। ব্যর্থ মনোরথে ফিরে এলেন। ভাবলেন নিজেই যা পারেন করবেন। তত্ত্বীয় কিছু কাজও শুরু করে দিলেন।

এর কয়েকদিন পর বিহার সরকার কয়েকটি পদে নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলো। সত্যেন বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রিন্সিপাল জেম্‌স, ডঃ মল্লিক প্রমুখ বিশিষ্টজনের প্রশংসাপত্র সংগ্রহ করে দরখাস্ত পাঠালেন। মনে মনে আশা করলেন যে এবার নিশ্চয় কিছু হবে। কিন্তু তাঁর চাকরি হলো না এখানেও। ডঃ মল্লিক একদিন তাঁকে ডেকে বললেন, “বিহারের ডি-পি-আই আমাকে লিখেছেন – আপনার ছাত্র সত্যেন্দ্রনাথ বসু এত ভাল যে আমাদের ঠিক দরকারে লাগবে না”। আশার বাতি আবারো নিভলো।

একদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখার্জির কাছ থেকে ডাক এলো। শুধু সত্যেন বসু নয়, তাঁর মত আরো সব কৃতী ছাত্রদের ডেকেছেন তিনি। খাড়া সিঁড়ি বেয়ে লাইব্রেরি ঘরের পাশে স্যার আশুতোষের খাস কামরায় হাজির হলেন সত্যেন বসু, মেঘনাদ সাহা, শৈলেন ঘোষ। সবাই কৃতী ছাত্র, কিন্তু পরিপূর্ণ বেকার। স্যার আশুতোষের বিরাট ব্যক্তিত্বের সামনে ভয়ে ভক্তিতে সকলেই বিনীত, নম্র। স্যার আশুতোষ শুনেছেন এই নবীন ছাত্ররা চাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয় পড়ানো হোক। তিনি সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, “তোরা পড়াতে পারবি?” সত্যেন বসু উত্তর দিলেন, “আজ্ঞে, যা বলবেন তা-ই যথাসাধ্য চেষ্টা করবো”। স্যার আশুতোষ সস্নেহে হাসলেন।

তখন পদার্থবিজ্ঞানে নানারকম নতুন নতুন আবিষ্কার শুরু হয়েছে। বেশির ভাগই জার্মানিতে। ম্যাক্স প্ল্যাংক, আলবার্ট আইনস্টাইন, নিল্‌স বোর – এঁদের নামই শুধু শুনেছেন সত্যেন বসু। জানতে গেলে পড়তে হবে জার্মান ভাষায় লেখা বই, গবেষণাপত্র এবং আরো সব বিজ্ঞান পত্রিকা। কিন্তু যুদ্ধের মধ্যে তখন সে সব ভারতে আসে না। শেষ পর্যন্ত নতুন পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তাঁদের জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা হলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মাসিক ১২৫ টাকা। মেঘনাদ সাহার উপর ভার পড়লো কোয়ান্টাম থিওরি নিয়ে পড়াশোনার। সত্যেন বসুকে পড়তে হবে আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি থিওরি। স্যার আশুতোষের কাছে তাঁরা স্বীকার করে এসেছেন যে এক বছরের মধ্যে পড়াশোনা করে নিজেদের তৈরি করে নেবেন এবং তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু করবেন। বলে তো এলেন, কিন্তু বই পাবেন কোথায়? রিলেটিভিটির কিছু ইংরেজি বই পাওয়া গেলো। শিবপুর কলেজের ইংরেজ অধ্যাপক ডঃ ব্রাউলের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি থেকে পাওয়া গেল ম্যাক্স প্ল্যাংক, লুডবিগ বোল্‌টজম্যান (Ludwig Boltzman) ও উইলহেল্‌ম বিন (Wilhelm Wien) – এর জার্মান বই। মেঘনাদ সাহা জার্মান শিখলেন এবং বইগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করলেন। কিছু প্রয়োজনীয় বই পাওয়া গেল ফরাসী ভাষায়। সত্যেন বসু ফরাসী ভাষা শিখলেন বইগুলো পড়ার জন্য।এর পরই শুরু হলো এক বছরের মাথায় ১৯১৭ সাল থেকেই সায়েন্স কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ানো শুরু হলো ফলিত গণিত, পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন। পদার্থবিদ্যা পড়ানোর দায়িত্ব পেলেন শৈলেন ঘোষ, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন বসু, যোগেশ মুখার্জি, জ্ঞান ঘোষ প্রমুখ।ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মেধাবী সত্যেন্দ্রনাথ কর্মজীবনে সম্পৃক্ত ছিলেন বৃহত্তর বাংলার তিন শ্রেষ্ঠ শিক্ষায়তন কলকাতা, ঢাকা ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। সত্যেন বসুর কর্মজীবন শুরু হয় ঐ সমকালেই সদ্য প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে ১৯১৫ সালে প্রভাষক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে। সেখানে তিনি বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সঙ্গে মিশ্র গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি সেখানে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে রিডার হিসেবে যোগদান করেন তখন মাসিক বেতন ছিল চারশ’ টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসু তত্ত্বীয় পদার্থ বিজ্ঞান ও এক্সরে ক্রিস্টোলোগ্রাফির ওপর কাজ শুরু করেন। এছাড়া তিনি শ্রেণী কক্ষে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা পড়াতেন। ক্লাসে একদিন আলোকতড়িৎক্রিয়া ও অতিবেগুনি বিপর্যয় পড়ানোর সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বর্তমান তত্ত্বের দূর্বলতা বোঝাতে এই তত্ত্বের সঙ্গে পরীক্ষালব্দ ফলফলের ব্যতয় তুলে ধরেন। সে সময় তিনি ঐ তত্ত্ব প্রয়োগ করতে গিয়ে একটি ভুল করেন। পরে দেখা যায় তার ঐ ভুলের ফলে পরীক্ষার সঙ্গে তত্ত্বের অনুমান মিলে যাচ্ছে! বসু পরবর্তীতে তার ঐদিনের লেকচারটি একটি ছোট নিবন্ধ আকারে Planck’s Law and the Hypothesis of Light Quanta নামে প্রকাশ করেন চার পৃষ্ঠার এই প্রবন্ধটি পাঠালেন ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান সাময়িকী ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে। কিন্তু সেখানে লেখাটি প্রকাশের যোগ্য বিবেচিত হলো না। এতে দমে গেলেন না সত্যেন বসু। তিনি লেখাটি পাঠিয়ে দিলেন জার্মানিতে খোদ আইনস্টাইনের কাছে। সত্যেন বসু আইনস্টাইনকে লিখলেন, “Respected Sir, I have ventured to send you the accompanying article for your perusal and opinion”।

বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন সত্যেন বসুর প্রতিভাকে চিনতে ভুল করলেন না। তিনি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রবন্ধটি জার্মান ভাষায় অনুবাদ করে ‘সাইটশ্রিফ্‌ট ফ্যুর ফিজিক’ (Zeits Fur Physik) জার্নালে নিজের মন্তব্য সহ প্রকাশের ব্যবস্থা করলেন। সত্যেন বসুর প্রবন্ধ সম্পর্কে আইনস্টাইন লিখলেন, “আমার মতে বোস কর্তৃক প্ল্যাঙ্কের সূত্র নির্ধারণ পদ্ধতি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

কেননা ১৯২৪ খৃষ্টাব্দে প্রকাশিত প্রবন্ধটিতে প্লাঙ্কের কোয়ান্টাম তেজস্ক্রিয়তা নীতি ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞানের সাহায্য ছাড়াই প্রতিপাদন করা এবং সদৃশ কনার সাহায্যে দশার সংখ্যা গণনার একটি চমৎকার উপায় বর্ণনা করেন এছাড়াও এই নিবন্ধটি ছিল মৌলিক এবং কোয়ান্টাম পরিসংখ্যানের ভিত্তি রচনাকারী।

আর বসুর “ভুল” সঠিক ফলাফল দেওয়ার কারণ হলো একটি ফোটনকে আর একটি ফোটন থেকে আলাদা করা মুশকিল। তাই দুইটি ফোটনের একদম একই শক্তি ভাবাটা ঠিক নয়। কাজেই দুইটি মুদ্রার একটি ফোটন আর একটি বোসন হয় তবে দুইটি হেড হওয়ার সম্ভাবনা হবে এক তৃতীয়াংশ । বসুর ভুল এখন বোস‌-আইনস্টাইন সংখ্যাতত্ত্ব নামে পরিচিত। আইনস্টাইন এই ধারণাটি গ্রহণ করে তা প্রয়োগ করলেন পরমাণুতে। এই থেকে পাওয়া গেল নতুন প্রপঞ্চ যা এখন বোস‌-আইনস্টাইন কনডেনসেট নামে পরিচিত। সত্যেন বসুর কয়েকটি গবেষণা দেখে আইনস্টাইন প্রশংসা করে কয়েকটি চিঠি লেখেন। তার কর্মকে আইনস্টাইন ‘ইটস আ বিউটিফুল স্টেপ ফরোয়ার্ড’ বলে আখ্যায়িত করেন।

সত্যেন বসুর কাছে লেখা আইনস্টাইনের চিঠির সূত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সত্যেন বসুর জন্য দুই বছরের শিক্ষাছুটি মঞ্জুর করলো। ১৯২৪ সালে সত্যেন বসু গেলেন ইউরোপে। জার্মানিতে গিয়ে দেখা করলেন আইনস্টাইনের সাথে। খোলামেলা বৈজ্ঞানিক আলোচনা করলেন আইনস্টাইন ও সত্যেন বসু। জার্মানি থেকে প্যারিসে গিয়ে মাদাম কুরির সাথে দেখা করলেন। মাদাম কুরির ল্যাবোরেটরিতে কিছু কাজ করারও সুযোগ পেলেন সত্যেন বসু। দ্য ব্রগলির ল্যাবেও কাজ করেছিলেন কিছুদিন। ১৯২৪ থেকে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত ইউরোপের বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে বৈজ্ঞানিক সাক্ষাৎ সত্যেন বসুর গবেষণা ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। দেশে ফেরার পর ১৯২৭ সালে সত্যেন বসু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার প্রধান অধ্যাপক এবং সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডিন নির্বাচিত হন।

সম্প্রতি সার্নের গবেষণাগারে আবিষ্কৃত হয়েছে ‘ঈশ্বর কণা’, যার পারিভাষিক নাম হিগস-বোসন কণা৷ আর সেই বোসন যাঁর নাম অনুসারে হয়েছে তিনি বাঙালি জাতীয় বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। পদার্থবিজ্ঞানে এ বারের নোবেল পুরস্কারের সাথে জড়িয়ে আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির অতিসূক্ষ্ম কারণ অনুসন্ধানের ফলাফল এবং একজন বাঙালি বিজ্ঞানী। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির বা পদার্থকে ‘ভর’দান করার নেপথ্য কণাটির সাধারণ অনুধাবনযোগ্য নাম ‘ঈশ্বরকণা’, তত্ত্বগতভাবে ‘হিগস-বোসন কণা’। এই কণা নিয়ে গবেষণার জন্য ২০১৩ সালের পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পিটার হিগস ও বেলজিয়ামের ফ্রাঁসোয়া আঁগলার। আর তার সাথে পরোক্ষভাবে স্মরণীয় হয়ে আছেন বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু, যাঁর পদবীর নামানুসারে কণাটির নামের সাথে রয়েছে ‘বোসন’ শব্দটি। বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান, বসু-আইনস্টাইন ঘনীভবন, বোসনের উপর গবেষণা করে ১৯৮৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন Carlo Rubbia এবং Simon van der Meer, ১৯৯৬ সালে David M. Lee, Douglas D. Osheroff, Robert C. Richardson, ১৯৯৯ সালে Martinus J. G. Veltman ও Gerardus ‘t Hooft, ২০০১ সালে Eric Allin Cornell, Carl Edwin Wieman এবং Wolfgang Ketterle) নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, কিন্তু দুঃর্ভাগ্যজনকভাবে বোসকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়নি। তাদের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয়ঃ for the achievement of Bose-Einstein condensation in dilute gases of alkali atoms, and for early fundamental studies of the properties of the condensates

“ “S. N. Bose’s work on particle statistics (c. 1922), which clarified the behaviour of photons (the particles of light in an enclosure) and opened the door to new ideas on statistics of Microsystems that obey the rules of quantum theory, was one of the top ten achievements of 20th century Indian science and could be considered in the Nobel Prize class.””

নোবেল পুরস্কার না পেলেও সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯২৯ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতি এবং ১৯৪৪ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে তিনি লন্ডনের রয়েল সোসাইটির ফেলো হন। ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্স্টিটিউট , কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সত্যেন্দ্রনাথ বসুকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক পদে মনোনীত করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে দেশিকোত্তম এবং ভারত সরকার পদ্মবিভূষণ উপাধিতে ভূষিত করে। এ ছাড়াও ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা শহরে তাঁর নামে সত্যেন্দ্রনাথ বসু জাতীয় মৌলিক বিজ্ঞান কেন্দ্র নামক গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হয়। বাঙ্গালী হিসেবে আমাদের গৌরব যে, সত্যেন্দ্রনাথ বসু পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সব গবেষণা করেছেন তার প্রায় তিন দশকব্যাপী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের একটি কক্ষে বসে। যদিও সেই কক্ষটি আজ নেই।মনে প্রাণে বাঙ্গালী এই বিজ্ঞান প্রেমী ব্যক্তিত্ত্ব বাংলাভাষার প্রতি ছিলেন অত্যন্ত অনুরাগী। তিনি সবসময় চেয়েছেন এদেশের মানুষ বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চা করুক। এই প্রসঙ্গে তাঁর অমর উক্তি, “যাঁরা বলেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান হয় না, তাঁরা হয় বাংলা জানেন না, নয় বিজ্ঞান বোঝেন না।” শুধু মাত্র তিঁনি বলেই চুপ করে বসে ছিলেন না বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি বিজ্ঞান পরিচয় নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করতেন। স্মরণযোগ্য যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকেও তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বই লিখিয়ে নিয়েছিলেন। সত্যেন বসুর প্রত্যক্ষ উৎসাহেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিজ্ঞান বিষয়ক বই ‘বিশ্ব পরিচয়’ লেখেন ১৯৩৭ সালে। রবীন্দ্রনাথ সত্যেন বসুকেই উৎসর্গ করেছিলেন ‘বিশ্ব পরিচয়’। এ প্রসঙ্গে সত্যেন বসু বলেন, “নোবেল পুরষ্কার লাভ করলেও আমি এতটা কৃতার্থ বোধ করতাম না”।

বৈজ্ঞানিক কর্মকান্ড ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন সংগীতানুরাগী ও সাহিত্যপ্রেমিক। বিজ্ঞানের পাশাপাশি সঙ্গীত ও সাহিত্যেও ছিল তাঁর আন্তরিক আগ্রহ ও বিশেষ প্রীতি। তার সাহিত্যপ্রীতির স্বীকৃতি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে নিজের বিশ্বপরিচয় বিজ্ঞানগ্রন্থ, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর জাপানে ভ্রমণরচনা ও সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর অর্কেস্ট্রা কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছিলেন।বলাবাহুল্য আইনস্টাইন যেমন বেহালা বাজাতেন, গণিতজ্ঞ পিন্‌লে বাজাতেন পিয়ানো, রিচার্ড ফাইনম্যান বাজাতেন বঙ্গো ড্রাম, তেমনি সত্যেন্দ্রনাথ বসুও বাজাতেন এস্রাজ – পেশাদারী দক্ষতায়। বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তিনি মনেপ্রাণে ধারণ করতেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত কর্মঠ ও দেশপ্রেমে পরিপূর্ণ সত্যেন বসু স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী বিপ্লবী নেতাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতেন।

 

শুধু মাত্র তাই নয় সত্যেন বসু ছিলেন একজন আত্মভোলা মানুষ। এ নিয়ে সত্যেন বসুর অনেক মজার ঘটনা আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সময়ের একটা ঘটনার উল্লেখ করেছেন কাজী মোতাহার হোসেন সত্যেন বসুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে। একদিন সত্যেন বসুর মেয়ে বায়না ধরলো সিনেমা দেখতে যাবে। সত্যেন বসু তখন গণিতের একটা জটিল সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত। তবুও মেয়ের পীড়াপীড়িতে রাজী হলেন। মেয়েকে নিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে গেলেন মুকুল সিনেমায় (পরে এই সিনেমা হলের নাম হয়েছে আজাদ)। গাড়ী থেকে নেমে গাড়োয়ানকে টাকা দিতে গিয়ে দেখেন মানিব্যাগ ফেলে এসেছেন বাসায়। চিন্তিত মুখে মেয়েকে বললেন, “তুই এখানে একটু অপেক্ষা কর মা, আমি বাসায় গিয়ে মানিব্যাগটা নিয়ে আসি”। একই ঘোড়ার গাড়ীতে ফিরে এলেন বাসায়। নিজের টেবিলের ওপর থেকে মানিব্যাগটা তুলে নিতে গিয়ে নজর পড়লো যে বৈজ্ঞানিক সমস্যাটির সমাধান খুঁজছিলেন তার ওপর। অমনি সব ভুলে গিয়ে সমস্যাটির সমাধানে বসে গেলেন। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। গাড়োয়ান অপেক্ষা করছেন তো করছেনই। সাহস করে হাঁকডাকও করতে পারছেন না। এত বড় বিজ্ঞানীর বাড়ীতে কি হাঁকডাক দেয়া চলে? কিন্তু দু’ঘন্টা পরেও যখন তাঁর প্রিয় ‘বোস সাহেব’ বেরোলেন না, গাড়োয়ান সাহস করে ঘরে ঢুকে দেখলেন সত্যেন বসু চেয়ারে বসে অংক কষছেন নির্বিকার চিত্তে। গাড়োয়ানের ডাকে চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার?” গাড়োয়ান কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, “হুজুর, আপনি টাকা নিয়ে সিনেমা হলে যাবেন বলেছিলেন। আপনার মেয়ে সেখানে অপেক্ষা করছে”। এবার সত্যেন বসু সম্বিত ফিরে পেলেন, “তাই তো, বড্ড ভুল হয়ে গেছে”।

জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত কাজের মধ্যে অতিবাহিত করেছেন প্রফেসর সত্যেন্দ্রনাথ বসু। মৃত্যুর আগের দিনও তিনি প্রাইম নাম্বার নিয়ে গবেষণা করেছেন।

সত্যেন বসু ১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন। জগতের অমোঘ নিয়তির কবলে তার নশ্বর দেহ হয়তো এ পৃথিবী ছেড়ে গেলো কিন্তু তিনি আজীবন বেঁচে রইবেন সারা বিশ্ব তথা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের হৃদয়ে। এ পৃথিবী যতোদিন থাকবে ততোদিন সত্যেন বসু তার কীর্তি ও কর্মের মধ্য দিয়ে বেঁচে রইবেন আমাদের মাঝে। যদিও সত্যেন বসুকে নোবেল পুরষ্কার না দেয়াটা নোবেল কমিটির অনেক সদস্যের কাছেও এখনো বিস্ময় এবং হতাশার কারণ। আর হবে নাই বা কেন? সত্যেন বসুর আবিষ্কারের উপর গবেষণা করে পরবর্তীতে কমপক্ষে তিনজন পদার্থবিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।

অবশ্য এটা সত্য যে দশক বা শতাব্দীর বিচারে কোন বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার পেলেন কি পেলেন না তা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাঁর নাম অক্ষয় হবে কি না। তাঁর অবদান সর্বদাই আলোচিত, পঠিত এবং ব্যবহৃত হবে কি না। সত্যেন বসু আলোচিত হবেন, সম্মনিত হবেন ততদিন যতদিন বিজ্ঞানের চর্চা থাকবে। তিনি চিরঞ্জীব তাঁর সৃষ্ট সংখ্যায়ন তত্ত্বে, তাঁর নামে নামকৃত বোসন কণাসমূহে, বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যানে, প্রাইম নাম্বার থিওরিতে, পদার্থের পঞ্চম অবস্থা নামে পরিচিত বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবনে, গণিতে, সাহিত্যে এবং সঙ্গীতে। বাঙ্গালীর আজ সত্যিই গর্বে বুক উচু করে বলা বলা উচিত হ্যাঁ আমি বাঙ্গালী আমি গর্বিত আমি বাঙ্গালী।

Comments are closed.