মানুষের ১০০,০০০ বছর পূর্বের খাদ্য তালিকা প্রকাশ

খাদ্যের কথা শুনলেই মতিষ্কের খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায় হয়ত আপনার সেই প্রিয় খাবারটির কথা ভেবে জীভে জলও এসে যায় কিন্তু অাজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা কি খেতে তাদের খাবার গুলো কি আমাদের খাবারের মতই জিভেজল অানা খাদ্য ছিল না কি অন্য কিছু ছিল?   এ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়েছে যাতে বেরিয়ে এসেছে মানুষের খাদ্য  সম্পর্কে নানা  বিচিত্র তথ্য তেমনি কিছু বিচিত্র তথ্য বেরিয়ে এল সম্প্রতি মরক্কো থেকে প্রাপ্ত জীবাশ্ম থেকে।

মরক্কোর জিবেল ইরহাউদ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে নতুন জীবাশ্ম থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা হচ্ছে ১০০,০০০ বছরের মধ্যে আমাদের প্রজাতিটি তাদের উৎস থেকে অনেকাংশেই পিছিয়ে এসেছে এবং নতুনত্ব পেয়েছে এই জীবাশ্ম দেখাচ্ছে ৩০০,০০০ বছর আগে আমাদের পূর্ব পুরুষ প্রাচীনতম হোমো স্যাপিয়নদের খাদ্য তালিকায় কি কি ছিল?

জেলেল ইরহাউদ এ পশুর জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপিসের একজন প্যালিওথ্রোপলজিস্ট টেরেসা স্টিল বলেছেন,”আমাদের প্রাচীনতম হোমো স্যাপিয়নরা প্রচুর পরিমানে গ্যাজেলের মাংস মাঝে মাঝে বিভিন্ন বন্য প্রাণী যেমন জেব্রা এবং খুব সম্ভবত মৌসুমী উটপাখি ডিম খেত।”

এছাড়াও টেরেসা খাদ্য উৎস, পরিবেশগত পরিবর্তন এবং মানব বিবর্তন ও অভিবাসনের উপর বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। ২০০৪ এ যখন মরক্কোর প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চলটির খনন শুরু হয় সে সময় তিনি আন্তর্জাতিক দলটির একজন ছিলেন।  এছাড়াও তিনি ২০০৪ এর জুনে

“Human origins: Moroccan remains push back date for the emergence of Homo sapiens.” শিরোনামে প্রকাশিত দুটি ম্যাগাজিনের সহ লেখিকা ছিলেন।

জিবেল ইরহুদ 1960-এর দশকের পর থেকে তার মানুষের জীবাশ্ম এবং মধ্যম শৈলীর যুগের সৌন্দর্যের জন্য সুপরিচিত, কিন্তু সেই জীবাশ্মের ভূতাত্ত্বিক বয়স অনিশ্চিত ছিল।

তবে সেখানেই নতুন করে আশার মুখ দেখান রাবাটের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর আর্কিওলজি অ্যান্ড হেরিটেজ (আইএনএসএপি) এর Abdelouahed Ben-Ncer ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের বিবর্তনবাদী নৃতাত্ত্বিক জ্যান-জ্যাকস হুবলিন। হুবলিনের নেতৃত্বে করা এই খনন প্রকল্পটি থেকে দলটি ১৬ টি নতুন পাথরের হাতিয়ার পশুর হাড় সহ হোমো স্যাপিয়েন্সের জীবাশ্মেরর সন্ধান পায় যার মধ্যে অন্তত ৫ জন ব্যক্তির মাথার খুলি, দাঁত এবং হাড় রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে এগুলো মুটামুটি ভাবে ৩০০,০০০ বছরের পুরোনো।  যা পূর্বের মানব জীবাশ্ম হতে প্রায় ১০০,০০০ বছর আগের জীবাশ্ম। এবং পশুর জীবাশ্ম গুলোর বিশ্লেষণের মাধ্যমে মনে করা হচ্ছে এগুলোর বয়সও প্রায় 337,000 থেকে 374,000 বছরের মধ্যে। যেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই গ্যাজেলদের হাড়।

আর সেখান থেকে সংগ্রহিত হাড় গুলো থেকে প্রায় ৪৭২ টি প্রজাতিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে যেগুল পুর্ববর্তী রেকর্ডিং এর বিরতীর সময় গুলোকে নির্দেশ করে এ থেকেও ধারনা করা হচ্ছে এগুলো মূলত আমাদের পূর্বপুরুষদের খাদ্য তালিকায় ছিল।

পশুহাড়ের অধিকাংশই গ্যাজেলের হাড় এছাড়াও টেরেসা অন্যান্য জীবাশ্ম গুলোর মধ্যে hartebeests,wildebeests বা নু হরিণ,জেব্রা,মহিষ,শজারু,খরগোশ,কচ্ছপ,মিঠা পানির মোলস্যাক্স,সাপ এবং উঠপাখির ডিমের খোসা বলে চিহ্নিত করেন। এই জীবাশ্ম এবং হাতিয়ার গুলো থেকে ধারনা করা হয় তারা এগুলো শিকার করে খেতেন।এছাড়াও টেরেসা জানান, “বড় বড় হাড় গুলোর ভাঙ্গার চিহ্ন দেখে বুঝা যাচ্ছে তারা হাড়ের মজ্জা গুলো খেয়ে হাড় গুলোকে ভেঙ্গে ফেলতো।”

সেখানে কোন প্রকার চিতাবাঘ কিংবা হায়ানার জীবাশ্ম খুজে পাওয়া যায় নি। যাতে করে ধারনা করা হচ্ছে মানুষের দ্বারাই গ্যাজেল বা অন্যান্য প্রাণীগুলো আক্রমনের স্বীকার হয়েছিল।

টেরেসে আরো বলে মধ্য প্রস্তর যুগ প্রায় ৩০০,০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল এবং পরবর্তীতে আধুনিক মানব এবং তাদের বায়োলজিক্যাল গঠন এবং আচরনে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছিল যার বেশীর ভাগই শুরু হয়েছিল আফ্রিকার বিভিন্ন স্থানগুলোতে যা এই জীবাশ্ম গুলো সমর্থন করে। এবং তার দৃষ্টিতে প্রাচীন হোমো সেপিয়েন্স থেকে আজকের হোমো সেপিয়েন্স হতে এবং তা আরও কার্যকর এবং মানব বিবর্তন অবিরত করতে  উত্তর অাফ্রিকা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিল।

Comments are closed.