Akula, নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিন

সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি করা আকুলা ক্লাস সাবমেরিন বিশ্বজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এসেছে, এমনকি বর্তমানেও আমেরিকান নেভি এদের দেখে ভয় পায়।

আমেরিকার একছত্র আধিপত্য ছুটাতে সোভিয়েত ইউনিয়ন  আকুলাকে দিয়ে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিল।

ফলাফল তাদের পক্ষেই গিয়েছিল।
আকুলা প্রায় একদশক ধরে সাগরতলের রাজার উপাধি লাভ করেছিল।
যার ফলে আমেরিকা তাদের সাবমেরিন নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয়েছে, কেননা তাদের সাবমেরিনগুলো প্রচুর শব্দ করতো, যার ফলে খুব সহজেই প্রতিপক্ষের সাব এদের শনাক্ত করতে সক্ষম হত, যা সমুদ্রে এদের একচেতিয়া প্রভাব ক্ষুন্ন করেছিল।

বিষয়টা ভাবা যায়???

কতটা পাওয়ারফুল হলে আমেরিকা সমীহ করে চলে??

আকুলা (Akula) মানে ইংরেজিতে হাঙর।

প্রজেক্ট ৯৭১- এর আদলে তৈরি হওয়া নিউক্লিয়ার পাওয়ারড অ্যাটাক সাবমেরিন- গুলোর রিপোর্টিং নাম হল- আকুলা।

১৯৮৫ সালে প্রথম পানিতে নামানো হয়েছিল – যার ফলে পুরো বিশ্ব চমকে গিয়েছিল, কেননা তারা ভাবেনি যে সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমানে রাশিয়ার এরকম সক্ষমতা থাকা সম্ভব ছিল।

পরবর্তীতে ইয়াসেন ক্লাস সাবমেরিন  এদের উত্তরাধিকারি হয়। আকুলা ক্লাস ছিল ভিক্টর ক্লাস সাবমেরিন এর উত্তরাধিকারি।

একেকটি সাবমেরিন বানাতে খরচ পড়েছিল তখনকার সময়ে প্রায় ১.৫৫বিলিয়ন ডলার, যাও কিনা আনুমানিক হিসাব, ১৩১,১৩১,৫৫০,০০০ টাকায়। বর্তমানের মুদ্রাস্ফীতি হিসেবে সেটি ২.৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়।

১৯৮৩ – ১৯৯৯ সালের মধ্যে ১৫ টি সাবমেরিন তৈরি করা হয়েছে যার মধ্যে বর্তমানে ৫ টি অ্যাক্টিভ সার্ভিসে আছে। ১৯৮৪ সালে প্রথম সার্ভিসে আসে, বর্তমানেও এদের জায়গা কেউ দখল করতে পারেনি। ২০১৯ সালেও আকুলা ক্লাস সাবমেরিন ত্রাস সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে।

ধরণ: নিউক্লিয়ার অ্যাটাক সাবমেরিনঃ

how it looks

ওজন: পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় ওজন ১৩,৪০০-১৩,৮০০টন

দৈর্ঘ্য: ১১০ মিটার

গতি: ভেসে থাকা অবস্থায়: ১০নট(১৯কিমি/ঘন্টা), ১নট= ১.৮৫২কিমি

ডুবে থাকা অবস্থায়: ২৮-৩৫নট(৫২-৬৫কিমি/ঘন্টা)

সর্বোচ্চ গভীরতা : ৬০০মিটার পর্যন্ত ডুব দিতে সক্ষম।

ক্রিউ সংখ্যা : ৬২ জন যারা ১০০দিন ধরে সাগরে অপারেট করতে পারে একে।

রিয়াক্টর: ১৯০মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ওয়াটার নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর

টার্বাইন: ৩২মেগাওয়াট বা ৪৩,০০০অশ্বক্ষমতা সম্পন্ন

জেনারেটর : ২মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি টার্বোজেনারেটর

প্রপেলার: সাতটি ব্লেড সম্পন্ন

টর্পেডো ও মিসাইল: ৪*৬৫০মিমি ও ৪*৫৩৩মিমি টর্পেডো টিউব রয়েছে যা একনাগাড়ে ৪০ টি টর্পেডো কিংবা মিসাইল ছুড়তে সক্ষম।

৬৫০মিমি টর্পেডো দিয়ে বড় বড় ভাসমান জাহাজ যেমন ফ্রেইটার কিংবা এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ডুবানো যায় অপরদিকে ৫৩৩মিমি টর্পেডো দিয়ে মিডিয়াম থেকে হাল্কা ভাসমান জাহাজ ডুবানো যেত,যা প্রতিপক্ষের জন্যে ভীতিকর বটেই।

এখন কথা হল কিভাবে এরা শত্রুর চোখ ফাকি দিয়ে চলত:

এরা প্রায় ৬০০মিটার গভীরে ডাইভ দিতে সক্ষম যেখানে আমেরিকান সাবমেরিনগুলো ২০০-৪০০মিটার এর মধ্যেই ডাইভ দিতে পারে সর্বোচ্চ।

ফলে তারা তাদের নিচে থাকা আকুলা ক্লাস সাব এর কোনো হদিস ই খুঁজে পায়না,  এর আরো একটা বড় কারণ হল, আকুলা ক্লাস সাবমেরিন গুলো সমুদ্রের নিচে থাকা থার্মাল লেয়ারের মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করত যা সোনারে ধরা পড়ে না।

আর নয়েজ খুব কম মাত্রায় নিঃসরণ করত বিধায় বুঝার কোনো উপায় থাকত না।

উন্নত ভার্সন গুলোতে মাত্র ৬০ জন লোক একে সর্বোচ্চ দক্ষতায় চালাতে পারে, যেখান লস আঞ্জেলেস ক্লাস সাবমেরিনের ১৩০ জন লাগে সর্বোচ্চ দক্ষতায় অপারেট করতে।

অটোমেশন এর দ্বারাই লোকসংখ্যা কমিয়ে এনে একে আরো দূর্ধর্ষ বানিয়েছে।

উপরন্ত এটা ভাবতে পারেন যে,  এগুলা তো নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন, তো এদের তো হিট সিগনেচার দেখেই শনাক্ত করা সম্ভব, তাহলে কেন এদের শনাক্ত করা যায় না???

— কারণ হলো এর রিয়াক্টর ছিল উন্নত মানের যা হিট সিগ্নেচার রিলিজ করতো অনেক কম পরিমাণে, সে পরিমাণ ধরতে প্রতিপক্ষের সাব কে আকুলার অনেক নিকটে এবং অনেক গভীরে আসতে হবে, যা একপ্রকার মরণফাদ বলা চলে।

প্রজেক্ট ৯৭১ এর ৭টি অরিজিনাল আকুলার মধ্যে বর্তমানে ৩ টি এখনো সার্ভিসে রয়েছে

প্রজেক্ট ৯৭১ ও প্রজেক্ট ৯৭১আই এর ৬ টি আকুলাই বর্তমানে সার্ভিসে রয়েছে, যা আগের ভার্সন অরিজিনাল আকুলার থেকে শব্দ কম নিঃসরণ করে।

প্রজেক্ট ৯৭১ ইউ এর একটি আকুলাই বর্তমানে সার্ভিসে আছে

সর্বশেষ প্রজেক্ট ৯৭১ এম একটি ই সার্ভিসে রয়েছে যা ১৪ তম।

এতক্ষন এর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হল কিন্তু কেন এটি অন্য সকল দেশের থেকে আলাদা তাই জানা হল নাঃ

সাবমেরিন ডিটেক্ট করা হয় এর নির্গত  শব্দ দ্বারা, কিন্তু সেদিক দিয়ে আকুলাকে ডিটেক্ট করা যায় না, কেননা সোনার যে মাত্রায় শব্দ ডিটেক্ট করতে পারে না,  আকুলা সেই মাত্রায় শব্দ উৎপন্ন করে, যা কারণেই এটি ইউএস নেভির কাছে এখনো ত্রাস হয়ে রয়েছে।

কেননা এরা দ্রুতগতির, অনেক বিধংসী ক্ষমতাসম্পন্ন , অনেক গভীরে ডুব দেওয়ার ক্ষমতাই এদের আমেরিকান সাবমেরিন থেকে আলাদা করেছে

আকুলা ১২ টি গ্রানাট ক্রুজ মিসাইল বহন করতে পারে যা ভূপৃষ্ঠে ৩০০ কিমি দূরে থাকা টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম।

আমেরিকা ফলস্বরুপ সিউল্ফ ক্লাস সাবমেরিন নামায় আকুলার সাথে টক্কর দেওয়ার জন্যে, তাও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আকুলার সাথে পেরে উঠতে পারেনি, ফলে তাদের কাছে এটা একটা ,মিস্ট্রি হিসেবেই রয়ে গেছে।

ভারত বর্তমানে ২০১৯ সালে রাশিয়ার সাথে ৩বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে আরেকটি আকুলা ক্লাস সাবমেরিন লিজ নেবার জন্যে যা ২০২৫ সাল নাগাদ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে INS CHAKRA 3 নামে।

সোর্সঃ উইকিপিডিয়া

Comments are closed.