সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর প্রযুক্তি ও তার বিশ্লেষণে জোর দিচ্ছে। ফেসবুকের ঘোষণামতে, তাদের ডিজাইনকৃত প্রোগ্রামটি আত্মহত্যা নির্মূলে সাহায্য করবে। অ্যালগরিদম নিয়ন্ত্রিত প্রোগ্রামটি তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবার প্রস্তুতি ও গ্রহণ করছে। শুধু কি ফেসবুক, বর্তমানে যদি আপনি গুগলে এমন কোনো কী-ওয়ার্ড এর সন্ধান করেন যা আত্মহত্যা সম্পর্কিত, তাহলে গুগল আপনায় সুইসাইড হটলাইন দেখাবে।
অবশ্যই এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, মেশিন বা যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কখনোই মানসিক সমর্থন ও মানসিক সাহায্যের সাথে তুলনা করা যাবে না। তবে বিষয়টি যখন আত্মহত্যা নির্মূল, তখন Artificial Intelligence বা কৃত্রিম বুধিমত্তার ব্যবহার না করা এবং এর সাহায্য না নেওয়াটা বোকামিই হবে।
মার্চ ২০১৭ হতে, গত প্রায় দশ মাসব্যাপি যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু প্রদেশে ফেসবুক তাদের এ প্রক্রিয়াটির পরীক্ষাধীন কার্যক্রম পরিচালনা করে। এটি উদ্দেশ্য মূলত এমন ব্যবহারকারীকে সাহায্য করা যারা আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত প্রোগ্রামটি মূলত ‘অ্যালগরিদম’ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। এই অ্যালগরিদম প্রাপ্ত ডেটাবেস অথবা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত ফলাফলের সংগ্রহমালার তুলনা করে এবং উপর্যুক্ত সিদ্ধান্তের পথ তুলে ধরে। গত দশ মাস ধরে পরীক্ষাধীন সফটওয়্যারটি ফেসবুক দ্রুত ই সকলের জন্য উন্মুক্ত করতে চায়।
তাহলে ‘ফেসবুক অ্যালগরিদমিস্ট’ কাজ করে কিভাবে?
এখনো অবধি পরীক্ষামূলক প্রোগ্রামটি কে ‘ফেসবুক অ্যালগরিদমিস্ট’ নামে পরিচিত। আমরা সম্ভবত জানি, ফেসবুক এর পারসোনাল ওয়ালে আমরা যা দেখি, তা আমাদের প্যাটার্ন-ম্যাচিং অ্যালগরিদম দ্বারা পরিচালিত। এখন জানা যাক, ‘প্যাটার্ন-ম্যাচিং’ অ্যালগরিদম কী? খুব সহজে বলতে গেলে, আমাদের পোষ্টকৃত স্ট্যাটাস, শেয়ারকৃত ছবি, অন্যের পোষ্টে আমাদের প্রতিক্রিয়া– এ বিষয়গুলোর প্যাটার্নের তথ্য গ্রহণ করেই ফেসবুক তার কাজ করে।
ধরা যাক, আপনার কোনো বন্ধু যদি এমন কমেন্ট করে যে, “তুমি ঠিক আছো কি?” অথবা “আমি কি কোনো ভাবে তোমায় সাহায্য করতে পারি?”– তাহলে ‘ফেসবুক অ্যালগরিদমিস্ট’ এ ধরণের বাক্যাংশ কে বিশ্লেষণ করে থাকে। বিশ্লেষণের পরবর্তীতে, প্রোগ্রামটি খুঁজে বের করে যে ব্যবহারকারীর পোষ্টকৃত ডেটাবেসে কোনো সুইসাইডাল থ্রেড (আত্মহনণ হুমকি) আছে কি না।
যদি প্রোগ্রামটি এমন কিছু খুঁজে পায়, তাহলে তথ্য-উপাত্ত সমূহ পর্যালোচনা করার জন্য ফেসবুকের ‘বিশেষ পর্যালোচক টিম’ (SRT) এর কাছে পাঠানো হয়। এছাড়াও উপর্যুক্ত অ্যালগরিদম প্রোগ্রামটির সাহায্যে অন্যের রিপোর্টকৃত পোষ্টের তথ্য উপাত্তের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে, তাৎক্ষণিক সাহায্য এর জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কে জানানো হবে, যাতে করে উপর্যুক্ত ব্যবহারকারী সঠিক পরিচর্যা পেতে পারে।
যদি আপনার মনে হয়, কোনো ফেসবুক পোষ্টে ‘আত্মহনণ হুমকি’ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে থাকছে, তাহলে আপনি ও পোষ্টটির “Give Feedback on this post” এ যেয়ে “Suicide or Self-injury” অপশনে সাবমিট করতে পারেন পোষ্টটি সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া। যা হয়তো সাহায্য করতে পারে মানসিক সমর্থন প্রার্থী একজন ব্যবহারকারীকে।