ঘুম নিয়ে যতকথা পর্ব- ২

আবারো আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছি ঘুম নিয়ে কিছু মজাদার ও অবাক করা বিষয় যার বিশ্লেষণ করা হবে বিজ্ঞানের মাধ্যমে। আর আপনারা যারা আগের পর্বটি পড়েননি তারা পরে আসতে পারেন “ঘুম নিয়ে যত কথা পর্ব- ১

তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

৬. এইবার আপনারা জানতে চলেছেন যে আমরা কেন স্বপ্ন দেখি। আমি জানি আপনাদের প্রত্যেকের মনেই প্রশ্ন টি আপনাদের মধ্যে একবার হলেও এসেছে যে আমরা কেন স্বপ্ন দেখি এবং সেই স্বপ্নগুলি আমাদেরই ইন্ডিভিজুয়াল আলাদা আলাদা কেন হয়।

তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক Scientifically এর কি ব্যাখ্যা রয়েছে। আমরা প্রথমে যে স্বপ্নটি কে নিয়ে কথা বলব সেটি হলো recaring dreams. আপনি হয়তো লক্ষ্য করে দেখেছেন আপনি কোন একটি স্বপ্ন একবার দেখলে কিন্তু সেই স্বপ্নটি আবারো আপনি পরেরদিন দেখলেন কিংবা আরো কয়েকদিন পরে দেখবেন।

যখনই এই ঘটনাটি আমাদের সাথে ঘটে তখন আমাদের এই স্বপ্নগুলি ভীষণভাবে ভয় পাইয়ে দেয়। সেটা ভালই হোক কিংবা খারাপ। কারণ তার দেখা স্বপ্ন বেশির ভাগই আমাদের মনে থাকে যা আমার বা আপনার মনে বিশেষভাবে প্রভাব ফেলে। যদি আপনার সাথে এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আপনাদের কে জানিয়ে রাখি যে এরকম ঘটনা প্রত্যেকটি মানুষের সাথেই হয়ে থাকে কখনো না কখনো একবার হলেও। কিন্তু এরকমটা হবার কারন জেনে আপনি মোটেও অবাক হবেন না।

এর প্রধান কারণ হল আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের ভালো রাখতে চায়। যে প্রবলেম গুলো আপনাকে সবচেয়ে বেশি distract করে, আপনার লাইফ থেকে সেই problem গুলি বার বার আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের alert করে। যেমন ধরুন আপনার কোন স্থানে কেটে গেছে। কিন্তু আপনি সঠিক ট্রিটমেন্ট নিতে ভুলে গেছেন। কিন্তু আপনার মস্তিষ্ক জানে যে এ ক্ষেত্রে আপনার treatment নেয়াটা অত্যন্ত জরুরী। তাই সে ক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্ক আমাদের যে স্বপ্নটি দেখায় সেটা ওই treatment কে ডাইরেক্টলি কিংবা ইনডাইরেক্টলি কেন্দ্র করে।

আপনি দেখতে পারেন যে কারো পা দিয়ে অনবরত রক্ত পড়ছে বা কারো পা ভেঙে গেছে কিংবা আপনারই সেটা হয়েছে। তাই সে ক্ষেত্রে আপনার বুঝে নেয়া উচিত যে নিশ্চয়ই আপনার শারীরিক কোনো সমস্যা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে বা হবে। যেকোন ক্ষেত্রে বারংবার দেখা স্বপ্নকে আপনাদের সিরিয়াস নেয়া উচিত। অবশ্যই সেটাকে ভয় পেয়ে নয় বরঞ্চ এমনটা ভেবে যে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে সহযোগিতা করছে আপনার সমস্যার সমাধান করার। তাছাড়া সাধারনত আমরা প্রত্যেকেই জানি যে আমরা যেটা ভাবি সেটাই আমাদের স্বপ্নের রূপ এ আসে।

কিন্তু আপনারা কখনো কখনো লক্ষ্য করে দেখবেন যে কিছু কিছু স্বপ্ন যেগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো অতি জঘন্য বা নোংরা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের মতে আমরা শৈশবে হোক বা এখনকার সময় হোক আমরা কখনও না কখনও নিশ্চয়ই গল্পের বই থেকে পাঠ্যবই থেকে টিভিতে কিংবা ইন্টারনেটে এমন কিছু observe করি যেটা আমরা মনে রাখতে না পারলেও আমাদের মস্তিষ্ক ঠিকই মনে রাখে এবং আমাদের অবচেতন মন সেটাকে মনে রাখে। কারণ ঘটনাগুলি সাধারণত খুবই অস্বাভাবিক হয় যেগুলি অনেক অনেক দিন পরে হলেও আমাদের মস্তিষ্ক থেকে reflect হয়। কারণ এটা ভুললে চলবে না আমাদের মস্তিষ্কের পাওয়ার এত বেশি যা আপনি কোনদিন কল্পনাও করতে পারবেন না।

৭. আপনি হয়তো কোনো না কোনো ব্যক্তির সাথে পরিচিত হবার পর এটা ভেবে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন যে তার বয়স এত কম কেন? অর্থাৎ তার বয়স হয়তো ৯০ কিংবা ৮০। কিন্তু আপনার তাকে দেখে মনে হয় ৬০ কিংবা ৭০ কিংবা ৫০ বছর বয়স মাত্র। এটা জেনে আপনি অবাক হয়েছেন। কিন্তু এবার আপনারা এটা জানবেন যে এটা কেন হয়।

এর সাথে আমাদের ঘুমের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানীরা একজন মহিলার ওপর সমীক্ষা চালায় তাকে দেখে ৬০ থেকে ৭০ বছরের মনে হয়। কিন্তু আসলে তার বয়স ছিল ৮৩ বছর। তার এই সমীক্ষায় জানা যায় তার এই যৌবন ধরে রাখার ক্ষমতা শুধুমাত্র ঘুমের কারণে এবং মহিলার কথাতেও এটা প্রমাণ হয় যে সে মহিলা ভীষণভাবে ঘুমাতো। বিজ্ঞানীদের মতে ঘুমানো অবস্থায় আমাদের শরীরে temperature এবং ব্লাড প্রেসার কম থাকে যে কারণে আমাদের হূৎপিণ্ড আরাম অনুভব করে। এক কথায় বলা যায় ঘুমের সময় আমাদের শরীরের চার্জ হয় ঠিক মোবাইলের মতো।

আর এই সময়ে আমাদের আমাদের শরীরের টিস্যু ও নিউক্লিয়ার শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং নতুন নতুন কোষের জন্ম দেয় এবং আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা পেতে গভীর ঘুমের খুবই প্রয়োজন। লক্ষ্য করে দেখবেন যে কম ঘুমের কারণে আমাদের চোখের নিচে black spot পরে কিংবা ত্বকের উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে কমে যায়। কিন্তু তাই বলে এই নয় যে অনেক বেশিক্ষণ ঘুমাতে হবে। যদি আপনি প্রয়োজনের বেশি ঘুমান তাহলে আপনার ওয়েট অনেক তাড়াতাড়ি বাড়তে থাকবে অর্থাৎ আপনি মোটা হয়ে যাবেন।

৮. আমি জানি আমার বলা আগের তথ্যগুলির মধ্যে আপনাদের কিছুটা হলেও ধারণা ছিল। কিন্তু এবার আমি যে তথ্যটি দিতে চলেছি তার সম্বন্ধে আপনাদের কোনো ধারণা ছিল না। আমরা সাধারণত জানি আমরা শৈশব থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত ঘুমানোর সময় বাড়াতে থাকি কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন ১৮ বছরের পরেও মানুষ বাড়তে থাকে। আপনি যদি ঘুমাতে যাওয়ার সময় আপনার হাইট মেপে রাখেন এবং ঘুম থেকে ওঠার পর আবার হাইট মাপেন তাহলে দেখতে পাবেন আমাদের হাইট বেড়ে গেছে। তবে তা বেশি বাড়ে না। মাত্র ০.৫ ইঞ্চি এর মতই বেড়ে যায়।

কারণ ঘুমের সময় আমাদের শরীরের মেরুদণ্ডের ওপর সেই রকম চাপ পড়ে না। তাই ঘুম থেকে ওঠার পর সাধারণত আমাদের হাইট বেড়েই যায়। তবে এই হাইট বেশিক্ষণ থাকে না। প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের শরীর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে কারণ আমাদের মেরুদন্ডের উপর আবার বেশি চাপের ফলে এমন ঘটনা ঘটে আর এই ঘটনা আমাদের সঙ্গে রোজী ঘটতে থাকে।

 

৯. এবার যেটি বলতে চলেছি সেটি সাধারনত সবার সাথে হয়না। কিন্তু আপনি চাইলে এই ঘটনাটি ঘটাতে পারেন এবং এটি সত্যিই মজা ও আনন্দদায়ক হতে পারে আর আপনি নিজেকে বাকিদের থেকে অনেক বেশি আলাদা মনে করবেন। সেটা হল astral projection. ধরা যাক আপনি ঘুমিয়ে রয়েছেন। এ অবস্থায় যদি আপনি আপনার শরীর থেকে বের হয়ে আপনার নিজের শরীরকে দেখতে পারেন তাহলে কেমন হবে?

I think, দারুণ ব্যাপার হবে আর এটা যে সম্ভব তা সাইয়েন্টিফিক্যালি প্রমানিত। আপনিও করতে পারেন এমনটা তবে এটা করবার জন্য আপনাকে মেডিটেশনের প্রক্রিয়া আপন করে নিতে হবে। অর্থাৎ আপনাকে অনেক বেশি ধ্যান করতে হবে। ধ্যান বা মেডিটেশন এর সময় শরীর মানসিকভাবে খুব হালকা হয়ে পড়ে। তেমনি কয়েক মাসের নিয়মিত মেডিটেশন আপনার জন্য অনেক helpful হতে পারে। তো একবার হলেও চেষ্টা করে দেখবেন আর আপনি যদি সত্যি সেটা করতে পারেন তাহলে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>