ঘুম নিয়ে যত কথা। পর্ব-১

আমরা প্রতিদিন অন্তত একবার হলেও ঘুমাই। কিন্তু আপনি কি জানেন পৃথিবীতে ১০০% মানুষের মধ্যে গড়ে ১৩ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন রাতে না ঘুমিয়ে দিনে ঘুমায়। আরো এরকম অনেক Facts আছে আমাদের ঘুমকে নিয়ে। যেমন ধরুন আপনার বয়স যতই হোক না কেন প্রতি রাতে ঘুমের পর ০.৫ ইঞ্চি আপনার শরীরের আয়তন বাড়ে। আবার ধরুন কেনই বা আমরা স্বপ্ন দেখি এবং প্রত্যেকের স্বপ্ন কেনই বা আলাদা হয়?

ঠিক এরকমই অজানা অবাক করা ঘুমের তথ্য নিয়ে এবং সেই তথ্যগুলোকে বিজ্ঞান এর মাধ্যমে বিশ্লেষণ নিয়ে আজকের এই পোস্ট যা আপনাকে আশ্চর্য করবে এবং প্রত্যেকটি পয়েন্ট আপনাদের জানা অতি আবশ্যক।

১. প্রথমেই আমরা জানতে চলেছি ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের শরীরের সকল অর্গানের বিষয়।

আমরা সকলেই অবশ্য এটা জানি যে ঘুমানোর সময় আমাদের শরীরের সমস্ত অর্গান নিশ্চল হয়ে যায়। কিন্তু ঘুমানোর সময় আমরা খুব জোরে শব্দ শুনতে পেলে ঘুম থেকে জেগে উঠি কিংবা আমাদের চোখে পানি ছিটালে আমাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু আমাদের শরীরে সবচাইতে দেরিতে যে ওর গানটি একটিভ হয় সেটি হলো আমাদের নাক।

আমাদের ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের শরীরের প্রথমেই মস্তিষ্ক একটিভ হয় তারপর অন্যান্য অর্গান একটি ভয় আর সর্বশেষে একটিভ হয় আমাদের নাক। যেমন ধরুন আপনার পাশের বাসার প্রতিবেশী ড্রিল চালালে সেই আওয়াজে আপনার ঘুম ভেঙে যায় আবার আপনার নাকের সামনে যদি সেই ব্যক্তিই পচাঁ টমেটো রাখে তাহলে কিন্তু আপনার ঘুম ভাঙবে না। আর যেহেতু গন্ধের কারণে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে না এটা শুনে ভালো লাগলো। এটা কিন্তু খুবই বিপদজনক বা ভয়ংকর হয়ে ওঠে আমাদের জন্য মাঝে মধ্যে।

আর আপনি জেনে অবাক হবেন প্রত্যেক বছর প্রায় ৫০০ জন লোক মারা যায় এই কারণেই। আসলে কোথাও আগুন লাগলে এবং তা আমাদের আয়ত্তের মধ্যে এলে আমরা নেভাতে সফল হই। কিন্তু কারো ঘরে আগুন লাগলে সেই আগুনের গন্ধ ঘুমন্ত মানুষের নাকে ঢোকেনা। ঘুমন্ত অবস্থায় যদি কারো বাড়িতে আগুন লেগে যায় তাহলে তাকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে কারণ ঘুমের সময় আমাদের নাক ১% গন্ধও পায় না।

২. এবার আপনারা জানতে চলেছেন কিভাবে আমাদের ঘুম আমাদের গ্রোথ এবং হাইট নিয়ন্ত্রণ করে। তার আগে আপনাদের পরিচিত হওয়ার দরকার আছে প্রয়োজনীয় এক খনিত হরমোন যার নাম HGH অর্থাৎ human growth hormone. এই হরমোনের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয় যে আমরা দেখতে কেমন হব এবং আমাদের হাইট কেমন হবে।

এ কারণেই HGH হরমোন আমাদের শরীরের সবচাইতে প্রয়োজনীয় একটি হরমোন যা আমাদের শরীর থেকে এমনিতেই নির্গত হয় কিন্তু ঘুমানোর সময় তা বেশি পরিমানে হয়ে থাকে। কারণ সায়েন্টিস্ট এর মতে ঘুমানোর সময় আমাদের শরীরের প্রায় সকল হরমোনই আরাম করতে থাকে।

৩. এবার আমরা জানতে চলেছি ঘুমানোর সময় মানুষ কেন নাক ডাকে। তার প্রধান কারণ হলো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার সময় নাক ও গলায় যে শ্বাস-প্রশ্বাসের জায়গা আছে তা অত্যন্ত আরাম বোধ করে এবং এই অবস্থায় আমাদের শরীরে কিছু পরিমাণে বায়ু প্রবেশ করে ।এই সময় আমাদের শরীর ওই হাওয়া যাওয়ার রাস্তাটি কে ছোট করে ফেলে যার ফলে সেই অংশটি অতিমাত্রায় ছোট হয়ে যায়।  তাই এর কারনেই মানুষ সাধারণত নাক ডাকে।

তবে অতি মাত্রায় সবারই ছোট হয়না। কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এমনটি হয়ে থাকে তাই আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই পরিবারে কোন ব্যক্তির মধ্যে এই নাক ডাকার ঘটনাটি ঘটতে থাকে।

৪. আপনারা কি জানেন যে আমরা ঘুমের ঘোরে প্যারালাইসিস হয়ে যাই। আমরা জানি প্যারালাইসিস লোকেরা সাধারণত চলাফেরা করতে পারে না এবং তাদের হাত-পাও নিশ্চল হয়ে থাকে। আর আপনারা ভেবে অবাক হবেন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার সময় আমাদেরও প্যারালাইসিস হয়ে যায়। কিন্তু এই ব্যাপারটা নিয়ে অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নেই কারণ এটি একটি নরমাল ব্যাপার যা প্রত্যেকের সঙ্গে ঘটে। কিন্তু আমরা কখনো নিজেরাই অনুভব করতে পারি না যে আমাদের প্যারালাইসিস হয়েছে।

কারণ, আমরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা অবস্থায় এরকমটা হয়ে থাকে। কারণ, আমাদের শরীরের যে সকল অর্গান এবং হরমোন আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলো মস্তিষ্কর সিগন্যাল পাঠানোর কারণে অচল হয়ে যায়।

৫. তবে আপনি কি জানেন ঘুমের সময় আপনার চোখ অনবরত নাড়তে থাকে। এমনটা ঘটে এবং সেটি প্রমাণিত। আমাদের প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত চিন্তায় মনে হয় ঘুমানোর সময় আমাদের চোখের অবস্থান একই জায়গায় স্থির থাকে। কিন্তু এই ভাবনাটা সম্পূর্ণটাই ভুল কারণ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গিয়েছে যখন আমরা ঘুমাই তখন আমাদের চোখ আমাদের সাথে এক অদ্ভুত আচরণ করে। ঘুমানোর সময় আমাদের চোখ সবসময় নড়তে থাকে।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার একটি গ্রাফ চিত্রে দেখা যায় এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় চোখ সঞ্চালিত হয়। যদি আপনি ভেবে থাকেন যে এরকমটা আপনার সাথে হয়না তবে আবারো বলবো এটি আপনার সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। শুধুমাত্র আপনার সাথে নয় আপনার পিতা, মাতা, বন্ধুবান্ধব সমস্ত পৃথিবীর মানুষের সাথে এটা ঘটে। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার এটাই, আমরা সেটা কখনোই অনুভব করতে পারি না। এর আরেকটি প্রধান কারণ হলো এই ঘটনা শুধুমাত্র তখনই ঘটে যখন আপনারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকেন।

এরকমই অজানা, অবাক করা আরও কিছু ঘুমের তথ্য ও সেগুলোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে আসছি পরের পোস্টে।

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>