আমাজন রেইনফরেস্ট : পৃথিবীর ফুসফুস, জলবায়ু রক্ষায় ভূমিকা

১.৭ বিলিয়ন একর এরিয়া নিয়ে পৃথিবীর বুকে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রেখে পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে। কিন্তু যে হারে বনভূমি নিধন হচ্ছে, আশার আলো ক্রমশ নিভুনিভু হয়ে আসছে। ইতিমধ্যে আমাজনের প্রায় ২০% নেই হয়ে গেছে অনবরত আগুন লাগা, বন নিধন করে জমি, গবাদি পশুর খামার+ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যে প্রতিটি দেশের হিংসাত্নক মনোভাবের জন্যে।

২০৩০ সাল নাগাদ এটি ২৭% এ গিয়ে ঠেকবে।  এভাবে চলতে থাকে ২১০০সালের আগেই আমাজন অতীত হয়ে যেতে পারে।তখন বইপত্রে এর অস্তিত্ব দেখা যাবে হয়তোবা।

এই আমাজন যদি না থাকে তাহলে আমাদের পৃথিবী কি হারাবে আর পরিবেশ কতটা প্রতিকূল হয়ে উঠবে মানুষের জন্যে তা নিয়েই আজকে আমাদের এই আর্টিকেল:

মোট ৯ টি দেশে এর বিস্তার রয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইনফরেস্ট এমনি এমনি বলা হয় না একে।কিছুদিন আগে এখানে আগুন লেগেছিল যা কিনা মহাশুন্যে থেকে পরিলক্ষিত হয়েছে। গাছের ঘনত্ব এতই বেশি যে সূর্যের আলো মাটিতে পড়তে ১০মিনিট সময় লাগে।এর বিশালত্ব বুঝতে এটা কিছুটা ধারণা দিতে পারে।

আমরা মানুষ, অবশ্যই আমরা ১০০% আমাজন বন নিধন করবোই। জায়গা দরকার আমাদের, হোক সেটা গাছ কেটেই।

ফরেষ্ট ফায়ার

কি হবে যদি আমরা পুরো আমাজন বন নিধন করি?

  • ৫৫,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা অনুর্বর হয়ে পড়বে।
  • প্রায় ৩৯০বিলিয়ন গাছ কাটা পড়বে,যা প্রায় ১৬০০০ প্রজাতির।
  • আমাজন বিলীন হয়ে গেলে ২০% অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হবে যা পরবর্তিতে পূরণ করা সম্ভব হবে না।

ফলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হবে যা পৃথিবীর বায়ুমন্ডল বিষিয়ে তুলবে

  • ফলে ৯০-১৪০বিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস আমাদের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করবে , যা বার্ষিকভাবে আমাদের ত্যাগ করা কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায় ৩-৫ গুন বেশি।তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিবে খুব দ্রুত।
  • ফলে যে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হবে তা নিঃসরণ করার একটাই পথ, সমুদ্র, ফলে সমুদ্রের পানিতে এসিডিটি অনেক বেড়ে যাবে সাধারণ মাত্রার তুলনায়। যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করবে প্রবালপ্রাচীর এবং অনুজীবদের। মাছ মরে ভেসে উঠবে, সাথে সমুদ্রের পানিতে ব্লিচিং সৃষ্টি হবে।
  • প্রতি ১০ টির মধ্যে ১ টি চেনা প্রজাতির বাসস্থান হল আমাজন।
  • ৪০,০০০ উদ্ভিদ প্রজাতি, ২৫,০০,০০০ পোকামাকড়ের প্রজাতি, ১৩০০ প্রজাতির পাখি, ৪০০প্রজাতির  স্তন্যপায়ী প্রানী,৪০০প্রজাতির উভচর প্রানী সাথে ৩১,০০০,০০০ আমাজন আধিবাসী নেই হয়ে যাবে যদি আমাজনের শতভাগ বিলীন করা হয়।
  • গাছপালার অভাবে সেখানে ভূমিক্ষয় প্রচুর পরিমাণে দেখা দিবে, পানি খুব সহজেই উর্বর মাটি ধুয়ে নিয়ে যাবে
  • আমাজন এর সংলগ্ন প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব বজায় রেখেছে, যা কিনা ৭০% অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সুযোগ ঘটিয়েছে।
  • বননিধনের ফলে কৃষি ও পর্যটন পেশা মুখ থুবড়ে পরবে সাথে এটি অবলম্বন করে থাকা মানুষেরাও অসহায় হয়ে পড়বে।
  • ওষুধশিল্পে ব্যবহার করা কাচামালের মধ্যে ২৫%  সরবরাহ করে আমাজন মাত্র ৪০০ প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে।
  • মাত্র ১% প্ল্যান্টস নিয়ে গবেষনা করার সুযোগ হয়েছে যাদের ওষুধি গুনাগুন আছে, বাকি ৯৯% এখনো উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি, ফলে আমাজন বিলীন হয়ে গেলে, আমরা ওষুধশিল্পে একটু সম্ভাবনাময় সেক্টর হারিয়ে ফেলবো এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের গতি কিছুটা হলেও শ্লথ হয়ে যাবে।
  • সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হবে জলবায়ু পরিবর্তনে। এটি বুঝতে হলে আমাদের প্রস্বেদন প্রক্রিয়াটি বুঝতে হবে। গাছ মাটি থেকে গ্রহন করা ১০০% পানির মধ্যে  ৯৭% পানি ই বায়ুমন্ডলে প্রেরণ করে বাকি ৩% দিয়েই তার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে থাকে। একটি ওক গাছ বছরে ৪০০০০ গ্যালন পানি এই উপায়ে বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে দেয়, এছাড়াও এক একর ভুট্টাক্ষেত দিনে ৪০০০ গ্যালন পানি প্রস্বেদিত করে থাকে বায়ুমন্ডলে, যার ফলে জলীয়বাষ্প পরিমিত পরিমাণে থাকে, যা বৃষ্টিপাতে সহায়তা করে।
  • বায়ুমন্ডলে থাকা ১০-১৫% পানি এই গাছপালা থেকেই আসে বাকিটা সমুদ্র থেকে আসে।

বৈশ্বিক খরা সৃষ্টি করতে এটুকুই যথেষ্ট। বন না থাকলে বৃষ্টি হবে না আর বৃষ্টি না হলে রেইনফরেস্ট গড়ে উঠবে এমন ধারণা নিশ্চয়ই অমূলক।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি সংস্থার মতে, প্রতি ৩ দিন এ আমাজনের একটি প্রজাতি আবিষ্কৃত হচ্ছে, তাহলে চিন্তা করা যায় কি পরিমাণ সম্পদ আমাদের হাতে রয়েছে, আর আমরা তা পুড়িয়ে ফেলছি।

আশার আলো হচ্ছে,  ট্রপিক্যাল রেইনফরেস্ট মানবসৃষ্ট কারণে সম্পূর্ণভাবে ধবংস করা সম্ভব না, উপরন্তু এটা পূনরায় তৈরি হতে পারবে যদি প্রয়োজনীয় বীজ ও চারা পাওয়া যায় এবং মানুষের সাহায্যে ছাড়াই। তার জন্যে একটাই কাজ করতে হবে, তা হল প্রতিনিয়ত আমাজনে মানুষের করাল গ্রাস ফেলতে দেওয়া যাবে না।

সেটা করা সম্ভব হলে তবেই আমরা জলবায়ু বিপর্যয় রোধ করতে সক্ষম হবো।

যেমন:

  • গরু, ছাগল ইত্যাদি তৃণভোজী প্রানী ভক্ষণ করা কমিয়ে আনতে হবে। মাংসের উপর চাপ কমাতে হবে,  তাহলে উদ্ভিদের উপর চাপ কমানো যাবে।
  • বিফ চিকেন বার্গার সহ অন্যান্য ফুড আইটেম যেখানে পূর্বপ্রস্তুত মাংস ব্যবহার করা হয়, সেখান থেকে আমাদের মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার বাড়াতে হবে
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানীর দ্বারা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে এগিয়ে আসতে হবে
  • ফসিল ফুয়েল ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে যাতে করে কার্বন এমিশন কমানো যায়।
  • ইলেক্ট্রিক ভেহিকল ব্যবহার কমাতে হবে।
  • কাগজের বিকল্প বের করে এর বহুল প্রচার করতে হবে কেননা বেশিরভাগ কাগজ এর কাচামাল আমাজন থেকেই আসে।

এভাবে চলতে পারলে আমরা পৃথিবীর ফুসফুস আমাজনকে বাচাতে পারবো ,সাথে সাথে আমাদের ফুসফুস ও বাচবে।

সোর্সঃ ইউটিউব, উইকিপিডিয়া

Comments are closed.