এরিয়া ফিফটি ওয়ানঃ UFO রহস্য এবং কয়েকটি সাড়া জাগানো সাক্ষাৎকার [পর্ব ২]

নতুন অনেক ধরনের এয়ার ক্রাফট পরীক্ষা নিরীক্ষার জায়গা হিসাবে গড়ে উঠেছিল এরিয়া ফিফটি ওয়ান। কিন্তু এই জায়গাটি কিভাবে UFO এর সাথে সম্পর্কিত হয়ে পড়ল তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। অধিকাংশ UFO বিশারদই এক মত হয়েছেন যে, এরিয়া ফিফটি ওয়ান বা এর কাছাকাছি অঞ্চলে যেসব UFO দেখার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী করা হয়, তার নব্বই ভাগই ১৯৭০ এর দশকের পর ঘটেছে। সে ক্ষেত্রে এটা ধরে নেয়া যেতেই পারে, মার্কিন সরকার এখানে যেসব নতুন মডেলের বিমানের পরীক্ষা চালিয়েছে সেগুলোর মধ্যে বিচিত্র চেহারার বিমানও ছিলো আর সেগুলোকেই মানুষ ভুলবশত UFO ভেবেছে।

কিন্তু বাকি ১০ ভাগ ঘটনার এখনো কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় নি। এমনকি এসব ব্যাপারে মার্কিন সরকার বহু দিন ধরে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। এটাও এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিয়ে তৈরী হওয়া বিভিন্ন কন্সপিরেসী থিওরীর আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করেছে। যদিও UFO বিশ্বাসীদের বিভিন্ন তত্ত্বের পেছনে খুব সামান্য প্রমাণই রয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়।

এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিয়ে গড়ে ওঠা কন্সপিরেসী থিওরীর একটি হচ্ছে, এখানে “এ্যান্টি গ্রাভিটি” এবং “টাইম ট্রাভেল” নিয়ে গবেষণা চালানো হচ্ছে। এখানে স্টেলথ প্রযুক্তি নিয়ে চালানো পরীক্ষা নিরীক্ষাও এই থিওরীতে ইন্ধন জুগিয়েছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন “ফিলাডেলফিয়া এক্সপেরিমেন্ট” থেকে এর শুরু হয়েছিল। এই এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে ১৯৪৩ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধ জাহাজকে বেশ কয়েক সেকেন্ডের জন্য অদৃশ্য করে দেয়া হয়েছিল।

তবে কন্সপিরেসী থিওরী গুলোর মধ্যে সব চেয়ে আলোচিত হলো রজওয়েলে UFO ক্রাশ করার ঘটনা। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ম্যাক্সিকো অঙ্গরাজ্যের রজওয়েলে একটি UFO ক্রাশ করেছিল বলে গুজব শোনা যায়। ওই UFO এর ধ্বংসাবশেষ এরিয়া ফিফটি ওয়ানে এনে গবেষণা শুরু হয়েছিল বলেও বিশ্বাস করেন অনেকে। এই ঘটনার পর থেকে আরো বেশ কিছু UFO এরিয়া ফিফটি ওয়ানে নিয়ে আসা হয়েছে বলেও দাবী কর হয়। এগুলোর মধ্যে ১৯৫৩ সালে লুজিয়ানা থেকে মার্কিন সেনাদের উদ্ধারকৃত একটি UFO এবং ১৯৫৫ সালে এলাবামা থেকে উদ্ধারকৃত চাকতি আকৃতির আরেকটি UFO উল্লেখযোগ্য।

এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিয়ে কন্সপিরেসী থিওরী গড়ে ওঠার পেছনে অবশ্য হলিউডের একটি মুভির প্রভাব বেশ জোরালো। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় ব্লক বাস্টার মুভি “Independence Day”। রজওয়েলে ক্রাশ করা UFO এবং তিন এলিয়েনের মরদেহ এরিয়া ফিফটি ওয়ানে এনে গবেষণা চালানো হয়েছে- এমন দৃশ্যই মুভিটিতে দেখানো হয়।

যদিও মুভির সাথে সম্পৃক্ত সেনা সদস্যরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বেইসের যাবতীয় রেফারেন্স বাদ দেয়ার দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু এতে করে মুভির কাহিনী কেঁচে যাবে বলে তা করতে অস্বীকৃতি জানান পরিচালক রোল্যান্ড এমব্রিজ। ফলশ্রুতিতে মার্কিন সেনারা মুভিটিতে সমর্থন দেয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এতে করে হিতে বিপরীত হয়েছে তাদের জন্য। কেননা এর পর থেকে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেন এরিয়া ফিফটি ওয়ানে সত্যিই এলিয়েন এয়ারক্রাফট সংরক্ষিত আছে। সম্ভবত মার্কিন সেনারা চেয়েছিলেন, এরিয়া ফিফটি ওয়ানে তাদের গোপন এয়ার ক্রাফট তৈরি এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যাপারে যাতে জন-সাধারণের কোন আগ্রহ তৈরী না হয়। কিন্তু এই পদক্ষেপের পর ঘটে তার উল্টো ঘটনা। অনেকেই সন্দেহ করতে শুরু করেন এরিয়া ফিফটি ওয়ানের কার্যক্রমের ওপর।

অবশ্য এরিয়া ফিফটি ওয়ানের বিভিন্ন কন্সপিরেসী থিওরীর পেছনে আরেকজন মানুষের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বব লেজার। ১৯৮৯ সালে লাস ভেগাসের একটি টিভি চ্যানেলে তাঁর দেয়া সাক্ষাৎকারের পর অনেক মানুষই এরিয়া ফিফটি ওয়ান নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েন। বব লেজার জানান, তিনি এক সময় এরিয়া ফিফটি ওয়ানে কাজ করেছেন। এবং সেখানে চলা গোপন গবেষণার ব্যাপারেও বেশ কিছু তথ্য দেন।

গ্রুম লেকের কাছে “এস ফোর” নামের ভুগর্ভস্থ একটি গোপন গবেষণাগারেও তিনি কাজ করেছেন বলে দাবী করেন। তিনি বলেন, ১৯৪০ এর দশক থেকে পরবর্তী সময় পর্যন্ত সংগ্রহ করা বিভিন্ন UFO সেখানে সংরক্ষিত আছে। তিনি এগুলোর রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি আরও জানান, সেখানকার ইঞ্জিনিয়াররা এলিয়েন প্রযুক্তি ব্যাবহার করে তৈরি এয়ারক্রাফটের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতো। আর ওইসব এয়ারক্রাফট চলতো UFO তে ব্যাবহৃত “গ্রাভিটি ওয়েভ প্রোপালশন” প্রযুক্তির মাধ্যমে।

তাঁর এই দাবী অবশ্য কয়েকটি ঘটনাকে সমর্থন করে। বিভিন্ন সময়ে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের আকাশে অদ্ভুত ধরনের এয়ার ক্রাফট দেখা গেছে বলে অনেকেই দাবী করেছেন। এসব এয়ারক্রাফত শুধু প্রচন্ড গতিতেই উড়ত তাই নয়, উপরে নিচে বা যেকোনো দিকে সহজেই ছুটতে পারত। এমনকি আচমকা স্থির হয়ে বাতাসে ভেসে থাকতে দেখার কথাও শোনা গেছে। যা সাধারণ কোন এয়ার ক্রাফটের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়।

১৯৮৯ সালে দেয়া ওই সাক্ষাৎকারে বব লেজার আরও জানান, সেই এয়ার ক্রাফট গুলোতে জ্বালানী হিসেবে যে উপাদান ব্যাবহার করা হতো, বিজ্ঞানীদের কাছে তখনো তা অনাবিষ্কৃত ছিল। এটির নাম দেয়া হয়েছিল Element 115. শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা এই উপাদানটি সিনথেসাইজড করতে সক্ষম হন। এবং এর নাম দেয়া হয় “মস্কোভিয়াম”। অবশ্য এই উপাদানটি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।

যাই হোক, বব লেজার ভীন গ্রহের যানের ভেতরের খুটি নাটি বিষয়েও জানান সাক্ষাৎকারে। সেই সাথে দাবী করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গোপন নথি ঘেটে তিনি জানতে পারেন, পৃথিবীতে গত দশ হাজার বছর ধরেই এলিয়েনদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। প্রাথমিক সাক্ষাৎকারে লেজারড তাঁর পরিচয় গোপন রেখেছিলেন। কারণ তিনি আশংকা করছিলেন ওই সাক্ষাৎকারের ফলে তাঁর জীবন বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু এরিয়া ফিফটি ওয়ানে কী ঘটছে সে ব্যাপারে খোলাখুলি আলোচনা করে গণমাধ্যমের আগ্রহে পরিণত হন তিনি। শুরু হয় তাঁর বিষয়ে অনুসন্ধান। বিশেষ করে তাঁর শিক্ষা জীবন নিয়ে বিশদ তদন্ত করা হয়। লেজারের দাবি অনুযায়ী তিনি এমআইটি(MIT) এবং ক্যালটেক থেকে মাস্টার্স করেছেন। কিন্তু তদন্তে জানা যায়, লেজার দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি থেকেও শিক্ষা গ্রহণ করেন নি। এমনকি তাঁকে কেউ শনাক্তও করতে পারে নি। তবে লেজার দাবি করেন, মার্কিন সরকার তাঁর শিক্ষা জীবনের সব তথ্যই শুধু মুছে ফেলে নি, শিক্ষার্থী এবং স্টাফদেরও বাধ্য করেছে তাঁর বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখতে। ১৯৯০ সালে লেজার আইনী জটিলতায় জড়িয়ে পড়েন। একটি প্রস্টিটিউশন চক্র কে সহায়তা করার দায়ে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়। ফের ২০০৬ সালে নিষিদ্ধ রাসায়নিক দ্রব্য পাচারের দায়ে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া অনেক স্বনামধন্য গবেষকও বব লেজারের এসব দাবীকে উড়িয়ে দিয়েছেন।

এরিয়া ফিফটি ওয়ানে এলিয়েন প্রযুক্তি বা খোদ এলিয়েনদের অস্তিত্ব থাকার বিষয়ে আরেকজন মানুষের দাবী হয়তো এতো সহজে উড়িয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তিনি পল হেলার। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি কানাডার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দাবী করেন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় তাঁর হাতে এমন কিছু প্রমাণ আসে, যা থেকে জানা যায় এরিয়া ফিফটি ওয়ানে শুধু এলিয়েনের অস্তিত্বই ছিলো তা নয়, প্রায়ই ভিন গ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে আসা যাওয়া করতো। নাম প্রকাশ না করে মার্কিন উচ্চ পদস্থ এক সামরিক কর্মকর্তার কথা তিনি জানান। যার আমন্ত্রনে তিনি এরিয়া ফিফটি ওয়ান পরিদর্শনে গিয়েছিলেন এবং সেখানে উদ্ধার করা UFO দেখেছেন। সেই সাথে কানাডার মাটিতে UFO ক্রাশ করলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়েও তাঁকে ধারণা দেয়া হয়। তাঁর মতে পৃথিবী পরিদর্শনকারী এলিয়েনদের অনেকেই পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়েও সংকিত। বিশেষ করে পরিবেশ দূষণ বা যুদ্ধের মতো ঘটনায় তারা রীতিমত উদ্বিগ্ন। তাঁর মতো একজন মানুষ নিজের সুনামকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে ধাপ্পাবাজি করবেন এমন কথা হয়তো আপনিও বিশ্বাস করতে চাইবেন না। অবশ্য পল হেলার যে সময় মন্ত্রীত্ব করেছেন সে সময়ে চলা স্নায়ু যুদ্ধের কারণে আমেরিকা এবং কানাডার সম্পর্ক বেশ দৃঢ় ছিল। সুতরাং, এটা ধরে নেয়া যায়, যদি সত্যিই এরিয়া ফিফটি ওয়ানে “এস ফোর” ফ্যাসিলিটির অস্তিত্ব থাকে তবে কানাডার কর্মকর্তাদের সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে থাকতেও পারে।

১৯৯০ এর দশকে যখন UFO নিয়ে বেশ মাতামাতি চলছে তখন স্কাই টিভিতে একটি ডকুমেন্টারী প্রচারিত হয়। ১৯৯৬ সালে প্রচারিত ওই ডকুমেন্টারীর নাম ছিল “ড্রিম ল্যান্ড”। ওই ডকুমেন্টারীতে ৭১ বছর বয়সী এক ব্যাক্তির সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। তিনি ১৯৫০ এর দশকে এরিয়া ফিফটি ওয়ানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছেন বলে দাবি করেন। তাঁর ভাষ্যমতে, তিনি সেখানে শুধু এলিয়েন প্রযুক্তি নিয়েই কাজ করেন নি, J-ROD নামের এক এলিয়েনের সাথেও কাজ করেছেন। তিনি দাবী করেন, ক্রাশ করা UFO প্রযুক্তি ব্যাবহার করে “ফ্লাইং ডিস্ক সিমুলেটর” নামের এক প্রযুক্তির উদ্ভাবনেও কাজ করেছেন তিনি। এর সাহায্যে মার্কিন পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো বলে তিনি জানান।

১৯৯৭ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর এক ব্যাক্তি ফোন করেন রেডিও জকি “আর্টবেল” এর শো তে। এবং জানান তিনিও এক সময় এরিয়া ফিফটি ওয়ানে কাজ করতেন। ফোনে কথা বলার সময় বাস্তবিকই লোকটি যে ভয় পাচ্ছিলেন তা কন্ঠস্বরেই বোঝা যাচ্ছিল। শুধু তাই নয়, শো চলা কালে হঠাৎ করে রহস্যময় কারণে রেডিও ব্রডকাস্ট বন্ধ হয়ে যায়। যার কোনো ব্যাখ্যা আর্ট বেল দিতে পারেন নি। এতে করে অনেকে সন্দেহ করতে শুরু করেন এর পেছনে মার্কিন সরকারের হাত রয়েছে।

১৯৯৮ সালের ২৮ এপ্রিল আর্ট বেলের রেডিও শো তে ফের আরেকটি ফোন আসে। এবং তিনি দাবী করেন এর আগে ফোন করা ভীতু ব্যাক্তিটি তিনিই ছিলেন। এবং দাবী করেন আগের কলটির পুরোটাই ধাপ্পাবাজি ছিলো। এজন্য দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি। ওই ব্যাক্তি নিজের নাম জানান, “ব্রায়ান”। কিন্তু ব্রডকাস্ট বন্ধ হয়ে যাবার ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে স্বীকার করেন।

প্রথম কলের প্রায় ১৭ বছর পর ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর কমিক বই এর লেখক ব্রায়ান গ্লাস সর্ব সমক্ষে স্বীকার করেন যে, ওই দুটি কল তিনিই করেছিলেন। তবে কলারের গলার স্বর এবং উচ্চারণে পার্থক্য রয়েছে এমন যুক্তি দেখিয়ে কয়েকজন বিশ্লেষক দাবী করেছেন ওই কল দুটি একই ব্যাক্তির নয়।

রহস্যময় এরিয়া ফিফটি ওয়ান: প্রকৃত ইতিহাস এবং শুরুর গল্প [১ম পর্ব]

[আপনি যদি এই লেখাটির প্রথম পর্ব পড়ে না থাকেন, তবে ব্যাক্তিগত ভাবে আমার অনুরোধ থাকবে প্রথম পর্বটি পড়ে দেখার। সেখানে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের শুরুর ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রকৃত এবং সরকারী রেকর্ড গুলো দেখানো হয়েছে। পরবর্তী পর্বে এরিয়া ফিফটি ওয়ানের আরো কিছু সাড়া জাগানো তথ্য তুলে ধরা হবে।]

রেফারেন্সঃ ১. https://www.amazon.com/Area-51-Uncensored-Americas-Military/dp/0316202304  ২. https://www.npr.org/sections/thetwo-way/2013/08/16/212549163/there-it-is-area-51-revealed-in-declassified-cia-report  ৩. https://www.businessinsider.com/area-51-american-conspiracy-theories-aliens-history-animation-video-2017-7   ৪. https://en.wikipedia.org/wiki/Paul_Hellyer  ৫. https://en.wikipedia.org/wiki/Bob_Lazar

Comments are closed.