স্বাভাবিক হাটা চলা না দৌড়াদৌড়ি করার সময়ে আমরা হাত সামনে পেছনে কেন আনি? এই প্রশ্নটা সাধারণ মানুষ এমনকি বিজ্ঞানীদের মনেও অনেক দিন ধরেই খোঁচা দিচ্ছিল। অনেকে অনেক থিওরি দিলেও এর সঠিক সমাধান পাওয়া যাচ্ছিল না। ২০০৯ সালের দিকে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক অবশেষে এই ‘হাত সামনে পেছনে নেয়ার’ নেপথ্যের কাহিনী উন্মোচন করতে সক্ষম হন।

গবেষক দল কিছু মানুষের হাটার উপরে গভীর পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের শক্তি ক্ষয়ের উপরে নজর রাখেন। দেখা যায় যে যারা স্বাভাবিক ভাবে হাতের নড়াচড়া করছে তাদের থেকে যারা হাত নাড়াচাড়া না করে হেঁটেছে তারা ১২% বেশি শক্তি ক্ষয় করেছে। এবং যারা স্বাভাবিকের উলটো দিকে হাত নাড়াচাড়া করেছে তারা ২৬% বেশি শক্তি ক্ষয় করেছে।
এরকমভাবে আরও অনেক পর্যবেক্ষণের পরে এই শক্তি ক্ষয়ের কারণগুলোও আমরা জানতে পেরেছি। মানুষ যখন হাটে তখন হাটার জন্য একটা কৌণিক ভরবেগ তৈরি হয়। কৌণিক ভরবেগ বেশি হলে হাটার সময় মানুষ উলটে পরে যেতে পারে। তাই হাটার সময়ে আমাদের ডান পা সামনে আগালে বাম হাত পেছনে যায় এবং একইভাবে বাম পা সামনে গেলে ডান হাত পেছনে যায়। এখানে মূলত এক পা সামনে যাওয়ার কারণে যে কৌণিক ভরবেগ তৈরি হয়েছে তা কমিয়ে আনার জন্য বিপরীত দিকের হাত পেছনে যায়। এভাবেই হাত পা এর বিপরীত দিকে চলার জন্য যে বিপরীতমুখী বলের সৃষ্টি হয় তা মোট লব্ধ কৌণিক ভরবেগকে কমিয়ে আনে এবং দেহের ভারসাম্য প্রদান করে।
এখন মানুষ যদি পায়ের সাথে হাত না নড়িয়ে স্থির রাখে তাহলে কৌণিক ভরবেগের কারণে যেন মানুষ পরে না যায় সেজন্য দেহকে অতিরিক্ত শক্তি খরচ করতে হয়। আর যদি পা এর সাথে হাতের নাড়াচাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে উলটো হয় তাহলে ভারসাম্য বজায় রাখতে দেহকে আরও বেশি শক্তি ব্যয় করতে হয়।

তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার হল, হাটার সময়ে দেহ যে গতি পায় সেই গতির কারণে পেন্ডুলামের মতো হাত সামনে পেছনে আগায়। এভাবেও দেহের ভারসাম্য রক্ষা পায়। অনেকেই মনে করেন বিবর্তনও একটা কারণ হতে পারে আমাদের এই হাতা নাড়াচাড়া করার পেছনে।
বর্তমানে রোবটিক্স নিয়ে গবেষণা করার সময় মানুষের শক্তি সাশ্রয়ের বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করার মাধ্যমে এসব তথ্য উঠে আসে। আধুনিক রোবটগুলো এখন অনেকটা মানুষের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে। এমনকি শক্তি সাশ্রয়ের জন্য রোবটকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হচ্ছে যেন হাটার সময়ে শক্তি কম খরচ হয় আর হাত সামনে পেছনে নাড়াচাড়া করে। মানুষের উপর এরকম আরও অনেক গবেষণার মাধ্যমে আধুনিক রোবটিক্সকে দিনে দিনে উন্নত থেকে উন্নততর করা হচ্ছে। আর আমরাও একরকম আশা নিয়ে বসে আছি যে একদিন রোবট প্রায় পুরোপুরি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারবে।
তথ্যসূত্র:
১) http://mentalfloss.com/article/63362/why-do-we-swing-our-arms-when-we-walk
২) https://www.youtube.com/watch?v=mclbVTIYG8E
৩) https://en.wikipedia.org/wiki/Arm_swing_in_human_locomotion