
যেহারে চীন, যুক্তরাষ্ট্র কার্বন নির্গমনের হার বাড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে, তাতে এই অবস্থা থেকে নিস্তারের জন্যে কৃত্রিম পাতাই হতে পারে একমাত্র উল্লেখযোগ্য সলুশন বর্তমানের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের এই যুগে পৃথিবীর বসবাসযোগ্য সবুজ রূপ ফিরিয়ে দিতে কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমাতে বিজ্ঞানীরা প্রচুর কাজ করে যাচ্ছেন, যার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি আর্টিফিসিয়াল লিফ এর মাধ্যমে। এতে করে যেমন কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা কমানো যাবে, অপরদিকে ওজন স্তরের ক্ষতিপূরন করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে যে হারে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বায়ুতে বেড়ে চলছে, তাতে সেই দিন আর বেশি দূরে নয় যে আমাদের অক্সিজেন কিনে গ্রহন করতে হবে কেননা বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্যতা হারিয়ে যাবে।
উপরন্তু উন্নত দেশ গুলো যে হারে কার্বন নির্গমন করে তাতে এর প্রভাব যেমন পুরো পৃথিবীর উপর পড়ছে, সাথে অনুন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কিছু না করেই সাজা পেতে হচ্ছে তাদের, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ও রয়েছে.

তবে কৃত্রিম পাতা আবিষ্কার করে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা লাঘব হয়েছে। যা কিনা বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে নিয়ে তা ইথানল নামক জ্বালানিতে রূপান্তর করবে। নামকরনের পিছনের ইতিহাস হলঃ সাধারণ পাতা উৎপন্ন করে গ্লুকোজ আর অক্সিজেন, পক্ষান্তরে আর্টিফিসিয়াল পাতা উৎপন্ন করে মিথানল ও অক্সিজেন।
যা একাধারে বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এর মাত্রা কমাবে + জ্বালানি ও তৈরি করবে। বড় স্কেলে এই প্রজেক্ট টা বাস্তবায়ন করা গেলে বিশাল দুশ্চিন্তা মাথা থেকে নেমে যাবে বড় বড় কার্বন নির্গমণকারী কোম্পানী+ দেশসমূহের।
প্রজেক্ট:
আমরা সবাই জানি যে, সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছপালা কার্বন ডাই অক্সাইড ভেঙে গ্লুকোজ ও অক্সিজেনে রূপান্তর করে, ঠিক সেই প্রসেস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করেছেন এই কৃত্রিম পাতা, যা কিউপ্রাস অক্সাইডের (লাল রঙয়ের গুড়া, যা প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়) উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড কে ভেঙে মিথানল এবং অক্সিজেন উৎপন্ন করে।

ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াটারলু ইঞ্জিনিয়ারিং এর এই প্রজেক্ট এর প্রধান গবেষক, প্রফেসর ইমিন ইয়ু বলেছেন যে,তারা এমন একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করতে চেয়েছেন যা কিনা সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ার মত কাজ করে সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানিকে গ্লুকোজ এবং ইথানলে রূপান্তর করবে। এই কাজের মূল উদ্দেশ্য হল, কার্বন ডাই অক্সাইড যা কিনা একটি গ্রীনহাউজ গ্যাস, তার নির্গমন কমিয়ে আনা, সেই সাথে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে কাজ করা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানী সৃষ্টির রাস্তা সুগম করা।
এছাড়াও ইন্ডিপেনডেন্ট এর সাথে আরেকটি ইন্টার্ভিউ এ বলেছেন যে, এই প্রযুক্তির সাহায্যে সূর্যের আলো থেকে জ্বালানি রূপান্তরের হার শতকরা ১০ ভাগ যা প্রচলিত সালোকসংশ্লেষন এর হারের থেকে ১০ গুন বেশী।
বিজ্ঞানীরা এখন শিল্প-কারখানার মতো কার্বন ডাই অক্সাইডের সরাসরি উৎস থেকে অধিক পরিমাণে মিথানল উৎপাদন করে তা বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণের চেষ্টা করছেন। তবে এ কাজে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ইমিন। তিনি বলেন, এই আবিষ্কারের উপযোগিতা নিয়ে আমি সত্যিই উচ্ছ্বসিত। জলবায়ু পরিবর্তন একটি জরুরী সমস্যা। আমরা এখন কার্বন ডাই অক্সাইড কমানোর পাশাপাশি বিকল্প জ্বালানিও তৈরি করতে পারছি।
বর্তমানে ব্যাপকহারে ব্যবহৃত গ্যাস জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে এই জ্বালানি কৃত্রিম পাতা থেকেই উৎপাদন করা যায় বলে জানিয়েছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষকরা গাছের পাতার সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ভিত্তি করে কৃত্রিম পাতা তৈরি করেছেন। ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি’র একদল গবেষক ও এই বিষয়টা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে, তারা কৃত্রিম পাতা দিয়ে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে SYNGAS নামক গ্যাস উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।

গাছের পাতা যেমন সূর্যালোকের সহায়তায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে তেমনি এই কৃত্রিম পাতাও সূর্যালোকের সহায়তায় সিন্থেটিক গ্যাস বা কৃত্রিম গ্যাস তৈরি করবে। এই সিন্থেটিক গ্যাসকে সংক্ষেপে বলা হয় সিনগ্যাস।

যখন এটাকে পানিতে রাখা হয় তখন এর একপার্শ্ব অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং অপরপার্শ্ব কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানিকে কার্বন মনোঅক্সাইড এবং হাইড্রোজেন এ রূপান্তরিত করে, পরবর্তীতে এই গ্যাস দুটিকে একত্রে করে SYNGAS (সিনথেটিক গ্যাস) প্রস্তুত করা হয়।
বিজ্ঞানীদের তৈরি এই কৃত্রিম জ্বালানি বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে পেট্রোলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। গবেষকদের প্রধান ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আরউইন রেইসনার জানান, কার্বন-ডাই-অক্সাইড, পানি ও সূর্যালোকের সহায়তায় জ্বালানি তৈরি করা হলে বৈশ্বিক আবহাওয়ায় কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে আনা যাবে। ফলে পরিবেশ দূষণও হ্রাস পাবে।

কৃত্রিম পাতা থেকে জ্বালানি তৈরি করার জন্য দুটি আলোক শোষক ও প্রভাবক হিসেবে কোবাল্ট ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রটিতে পার্ভোস্কাইট (ব্যবহার করার মূল উদ্দেশ্য হল এটি খুব ভালো আলো শোষন করতে সক্ষম + তা দিয়ে ভোল্টেজ উৎপন্ন করতে সক্ষম) এর তৈরি আলো শোষক। প্রাকৃতিকভাবে গাছের পাতার অণু যেভাবে সূর্যালোক ব্যবহার করে, আলোক শোষক দুটি কৃত্রিম পাতায় অনুরূপ কাজ করে। যখন পানিতে ডুবিয়ে রাখা অনুঘটক কোবাল্টে একটি আলো চালানো হয় তখন পানি থেকে অক্সিজেন তৈরি হয়। অপর একটি আলো কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাসের জন্য রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। এভাবে পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে কার্বন-মনো-অক্সাইড ও হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণ তৈরি হয়। এই মিশ্রণই হচ্ছে সিনগ্যাস বা কৃত্রিম গ্যাস। এই গ্যাস থেকে কার্বন নিরপেক্ষ জ্বালানি তৈরি করা হয়।
কৃত্রিম পাতার মাধ্যমে জ্বালানি তৈরি করার সময় কোনো অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গত হয় না। ফলে পরিবেশের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায় না। এই পাতার আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, স্বল্প আলোযুক্ত স্থান ও বৃষ্টির দিনেও পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তৈরি করতে পারে। তাই বিশ্বের যে কোনো দেশেই এটি ব্যবহার উপযোগী করা যাবে।

বর্তমানে এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে কৃত্রিম গ্যাস ও পরে তা থেকে তরল জ্বালানি তৈরি করা হচ্ছে। তবে গবেষক রেইসনার জানান, তারা পরবর্তীতে কৃত্রিম পাতা থেকে সরাসরি তরল জ্বালানি তৈরির কাজ করবেন। বর্তমানে গবেষকরা কৃত্রিম পাতা থেকে টেকসই তরল জ্বালানি তৈরির কাজ করছেন। এতে জ্বালানি অনেকটা সহজলভ্য হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।
আশার আলো দেখা যাচ্ছে যে,
গবেষকদের মতে ১.৭ মিটার লম্বা ও ০.২ মিটার চওড়া ৩৬০ টি কৃত্রিম পাতা প্রতিদিন প্রায় ১/২ টন কার্বন-মনো-অক্সাইড তৈরি করে যা দিয়ে জ্বালানি তৈরি করা যায়। ৫০০ বর্গমিটার এলাকায় ৩৬০টি এই ধরনের কৃত্রিম পাতা রাখা হলে দিনে প্রায় ১০ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমে যাবে।

গাছের পাতার থেকে দশগুণ বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইডকে জ্বালানিতে রূপান্তরিত করতে পারবে কৃত্রিম এক পাতা।
যদিওবা কনভার্সন রেট খুবই কম, হাইড্রোজেন উৎপন্নের হার ০.০৬% এবং কার্বন মনোঅক্সাইড এর হার মাত্র ০.০২%। যদিওবা সময়ের সাথে এই মাত্রা বাড়বে, সর্বোপরি কার্বন নির্গমনের হাত থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া সম্ভব।
Source:
https://www.captain-planet.net/scientists-develop-artificial-leaf-to-reduce-global-warming-and-produce-clean-energy/?fbclid=IwAR0dwijOj456x12f4LZ_-RRwXBZ0EL_8rCIX8IWQ26ogPpCnxJEQUW8ExEc
https://www.nature.com/articles/s41563-019-0501-6