আপনি কি আপনার ছুটি পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে কাটাতে চান? একদিনে ১৬ বার সূর্যোদয় দেখতে চান? ভাসতে চান জিরো গ্র্যাভিটিতে? মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে তা জানতে চান? মহাশূন্যে ভেসে বেড়াতে চান? এসব প্রশ্নের উত্তর যদি “হ্যাঁ” হয়ে থাকে তাহলে খবরটি আপনার জন্যই। আপনার জন্যই মহাকাশে বানানো হচ্ছে বিলাসবহুল হোটেল “অরোরা” (Aurora) ।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান জোসেতে অনুষ্ঠেয় স্পেস ২.০ সামিটে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ প্রযুক্তিবিষয়ক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান “ওরিয়ন স্প্যান” মহাকাশে এ হোটেল তৈরির ঘোষণা দেন। ওরিয়ন স্প্যানের প্রধান নির্বাহী ফ্র্যাংক বাংগার বলেন,
“প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য মহাকাশ ভ্রমণকে যথাসম্ভব সহজসাধ্য করা। আমরাই প্রথম মহাকাশে সাশ্রয়ীমূল্যের বিলাসবহুল হোটেল উৎক্ষেপণ করতে চলেছি। “
হোটেলটি ২০২১ সালে চালু হবার কথা আছে এবং ২০২২ সাল থেকে মহাকাশ ভ্রমণের এই ট্রিপটিতে প্রথম অতিথি নেয়া শুরু হবে।
সাশ্রয়ী মূল্যের কথা শুনে এরইমাঝে প্ল্যান করা শুরু করে দিয়েছেন নাকি?
তবে একটু ধৈর্য্য ধরুন। চলুন জেনে নেয়া যাক এই সাশ্রয়ীমূল্যের মূল্যটা আসলে কত?
হোটেলটিতে থাকতে চাইলে ১২ দিনের প্যাকেজ ট্যুরে পর্যটকদের গুণতে হবে প্রায় সাড়ে ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৮০ কোটি টাকা)। এ টাকা খরচ হবে বিশ্বের প্রথম বিলাসবহুল মহাকাশ হোটেলে থাকা-খাওয়ার বিল হিসেবে। তবে কথা হলো ব্যক্তিগত খরচে মহাকাশ ভ্রমণ এর আগেও হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে মোট সাতজন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে ভ্রমণ করেন। তাদের প্রত্যেকের জন্য খরচ পড়েছে ২০ থেকে ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে তুলনায় এতই সাশ্রয়ীই বটে! ইতিমধ্যে যারা যেতে চান তের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নেয়া শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ৮০ হাজার ডলার দিয়ে অগ্রিম বায়না করে রাখতে হবে। তবে পরে যদি কেউ পুরো অর্থ না দিতে পারেন, তবে ওই অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। ১২ দিনের এ সফরে চারজন অতিথি ও দু জন ক্রু সহ মোট ছয় জন থাকতে পারবেন।
তো কথা হচ্ছে কি কি উপভোগ করতে পারবেন আপনি সেখানে?
এই ১২দিনের সফরে থাকবে পৃথিবীর উপরিভাগের ২০০ মাইল উপরে ওড়ার সুযোগ। এর মাধ্যমে আপনি আমাদের এই নীল গ্রহটির অসামান্য রূপ দেখার বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে পারবেন। হোটেলটি প্রতি দেড় ঘণ্টা পর পর পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে। তার মানে ২৪ ঘণ্টায় আপনি ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন। হোটেলের ভেতর ভেসে থেকে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু প্রভার দৃশ্য দেখতে পাবেন। সেখানে থাকবে উচ্চগতির ওয়াই ফাই। যার মাধ্যমে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। আপনজনদের সাথে লাইভ ভিডিও চ্যাট করতে পারবেন। এছাড়া ভরশুন্য হওয়ার অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন। স্টেশন জুড়ে মুক্তভাবে উড়তে পারবেন। এছাড়াও অতিথিরা খাবার উৎপাদনের মতো গবেষণায় অংশ নিতে পারবেন। এসব খাবার তাঁরা উপহার হিসেবে পৃথিবীতে সঙ্গে নিতে পারবেন। এ ছাড়া পৃথিবীতে ফেরার পর তাঁদের বিশেষ সম্মান জানানো হবে।
ওরিয়ন স্প্যানের প্রধান নির্বাহী ফ্র্যাঙ্ক বার্গনার বলেন, “সবার জন্য মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য তাঁদের। ” তিনি আরো বলেন ,
” মহাকাশ স্টেশনে যেতে নভোচারীদের ২৪ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তাঁরা একে তিন মাসে নামিয়ে এনেছেন। “
যদিও তারা ধারণা করছেন , মহাকাশে ভ্রমণ খরচ যাই হোক না কেন, যাত্রীর সংখ্যা কমই পাওয়া যাবে। তবে এই অরোরা স্টেশন শুধু হোটেল হিসেবে কাজ করবে না। এটি মহাশূন্যে ভরশূন্য অবস্থায় বিভিন্ন গবেষণা ও মহাশূন্যের বিভিন্ন কাজে মহাকাশ সংস্থাগুলোর জন্য কাজ করবে।
One Comment
অ্যাসগার্ডিয়াঃ মহাকাশে আস্ত দেশ | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] ছুটিতে ঘুরতে যেতে চান মহাকাশে? […]