সোনালী অনুপাত বা গোল্ডেন প্রপর্শন বা গোল্ডেন রেশিও সাধারণত গ্রিক অক্ষর ফাই( Phi ) দিয়ে প্রকাশ করা হয়,যা একটি অমূলদ সংখ্যা ১.৬১৮০৩৩৯৮৮৭…(প্রায়) কে প্রকাশ করে। এটার অদ্ভুত ও আশ্চর্যজনক গুনের জন্য অসংখ্য গবেষক এবং গণিতবিদ এটার উপর গবেষণা করেছেন। বিখ্যাত স্থপতি( আর্কিটেক্ট), শিল্পী,নকশাকারীরা ও এটা নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। তাদের বিখ্যাত সব শিল্পকর্মে এবং স্থাপত্যে সোনালী অনুপাতের প্রকাশ পাওয়া গেছে।
সোনালী অনুপাতকে মানুষের দর্শন অনুভূতিতে সবচেয়ে সুখকর বলে বিবেচনা করা হয়,এটা শুধু কৃত্রিম সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়, দুনিয়াজুড়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৃষ্টির মধ্যে এবং জীবিত প্রাণী এবং উদ্ভিদের সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশে এই সোনালী অনুপাতের উপস্থিতি রয়েছে।
সোনালী অনুপাতকে গাণিতিক ধারায় এবং জ্যামিতিক প্যাটার্নে ব্যাখ্যা করা যায়। এখানে আমরা এই বিস্ময়কর সোনালী অনুপাতের গাণিতিক প্রকাশ এবং প্রাকৃতিক ও মানুষ সৃষ্ট বিভিন্ন বস্তু এবং জিনিসে সোনালী অনুপাতের উপস্থিতি নিয়ে একাধিক পর্বে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করব। এখানে সোনালী অনুপাতের সমীকরণ, ক্লাসিক্যাল জ্যামিতি দিয়ে সোনালী অনুপাতের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করার চেষ্টা করব। সোনালী অনুপাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, গোল্ডেন মিনের ধারনা,জ্যামিতির সাথে সোনালী অনুপাতের সম্পর্ক, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ব্যাখ্যায় সোনালী অনুপাতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
কোনো বস্তুর বিভিন্ন অংশের অনুপাত এবং ওই বস্তুর সুন্দর দেখানোর ভিতর একটা সম্পর্ক আছে তা নিয়ে বিজ্ঞানে বিস্তর আলোচনা আছে। বিভিন্ন বিখ্যাত নকশা,পেইন্টিং, বই ইত্যাদি অন্তত তাই বলে। এসব আয়তাকার বস্তুর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের মধ্যে একা গাণিতিক সম্পর্ক পাওয়া যায়। এগুলোর দৈর্ঘ্যের এবং প্রস্থের অনুপাত সোনালী অনুপাত Φ (ফাই )কে ডিভাইন প্রপর্শন, গোল্ডেন সেকশন, গোল্ডেন কাট, গোল্ডেন রেশিও এবং গোল্ডেন মিন ও বলা হয়। যা আসলে যদি কোন বস্তুকে p ও q দুইটি অংশে ভাগ করা হয় তাহলে p/q=(p+q)/p=1.6180339887 (প্রায়)।
যদি ১নং চিত্র অনুযায়ী AC একটি লাইন হয় তাহলে B হলো এটার সোনালী অনুপাতের বিন্দু যেখানে AC রেখাটি সোনালী অনুপাতে বিভক্ত হয়েছে। ধরি, AB=p এবং BC= q তাহলে সংজ্ঞা অনুযায়ী p ও q এর অনুপাত p ও p+q এর অনুপাতের সমান হবে( এখানে p>q)।
চিত্রঃ১
চিত্র থেকে এটা পরিষ্কার যে রেখার কোন একটি অংশ ১ হলে অপর অংশ এমন হতে হবে যে যেন উপরের সমীকরণে Φএর মান যেন ১.৬১৮০৩৩….. হয়। উদাহরণ সরূপ যদি q=1 হয় তাহলে p হবে Φ(p=Φ)। আবার যদি p=1 হয় তাহলে q হবে Φএর উল্টা ( ইনভার্স)।
অতি প্রাচীনকাল থেকেই সোনালী অনুপাতকে একটি রেখাকে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ভাবে ভাগ করার উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চিত্রঃ২
সোনালী অনুপাতের সাথে সম্পর্কিত আয়তক্ষেত্রকে সোনালী আয়তক্ষেত্র বলে।এটি একটি বিশেষ আয়তক্ষেত্র যার দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের অনুপাত Φ= ১.৬১৮০৩৩….. এর সমান। ২নং চিত্রের ABCD একটি সোনালী আয়তক্ষেত্র । এটির AB এবং BC অথবা CD এবং DA এর অনুপাত Φ এর সমান।
ABCD আয়তক্ষেত্রের গোল্ডেন সেকশন দিয়ে MN একটি রেখা টানা যায় যা একটি বর্গ ANMD এবং একটি নতুন আয়তক্ষেত্র MNBC তৈরি করে। বর্গক্ষেত্রের ধার p এবং q এর দৈর্ঘ্যের সমান ( BC=MN=pএবং CM=BN=q) এবং সেকেন্ড লেভেলের সোনালী আয়তক্ষেত্র বিবেচনা করা যায়।
অন্য আরেকটি রেখা IJ টানা যায় পূর্বের দুই ধার AD এবং BC এর গোল্ডেন সেকশন থেকে যা নতুন আরেকটি বর্গ MGJC তেরি করে ফলে আরেকটি নতুন থার্ড লেভেলের সোনালী আয়তক্ষেত্র তৈরি করে। MN এবং IJ রেখাদ্বয় পরস্পর G বিন্দুতে ছেদ করে এবং G বিন্দুকে বলা হয় ABCD আয়তক্ষেত্রের গোল্ডেন মিন।
এই প্রক্রিয়া অন্য আর তিনটি পার্শ্বের সাপেক্ষে করলে আরো তিনটি গোল্ডেন মিন G1,G2,G3 পাওয়া যায়। অর্থাৎ একটি আয়তক্ষেত্রে চারটি গোল্ডেন মিন পজিশন পাওয়া যায়।
সোনালী আয়ত আকার কিছু পদ্ধতি আছে। প্রথমত, একটি বড় রেখাকে তার গোল্ডেন সেকশনে বিভক্ত করে তার বড় অংশের শেষ প্রান্তে ছোট অংশের সমান একটি লম্ব রেখা একে আয়তক্ষেত্র সম্পূর্ণ করা যায়। ২নং চিত্রে AB কে N বিন্দুতে p এবং q অংশে ভাগ করা হয়েছে, BC এবং AD লম্ব রেখাদ্বয় এর দৈর্ঘ্য q এর সমান এবং N অথবা B যেকোনো বিন্দুথেকে আঁকলে
এটিই হবে নির্দিষ্ট আয়ত।
দ্বিতীয়ত, গোল্ডেন সেকশন থেকে যেকোনো একটি অংশকে অপর অংশের সাপেক্ষে ৯০ডিগ্রিতে ভাজ করলে L আকৃতির গঠন তৈরি করে, এভাবে সোনালী আয়ত আকা যায়। ২নং চিত্রে বৃহত্তর AN অংশ N বিন্দুতে ৯০ ডিগ্রীতে ভাজ করলে L আকৃতির MNB তৈরি হয় এবং সোনালী আয়ত MNBC তৈরি হয়।
তৃতীয়ত,২নং চিত্রের ANMD বর্গক্ষেত্রের AN বাহুর মধ্য বিন্দুকে একটি বৃত্তের কেন্দ্র ধরে সেখান থেকে উপরের যেকোনো শীর্ষের দূরত্ব নিয়ে যদি একটি বৃত্তচাপ আকা হয় তা AN এর বর্ধিতাংশকে B বিন্দুতে ছেদ করবে এবং ছেদবিন্দু দিয়ে BC লম্ব টানলে তা আয়তক্ষেত্রের অপর বাহু নির্দেশ করবে এবং ABCD সোনালী আয়তক্ষেত্র তৈরি হবে।
সোনালী অনুপাতের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ফিবোনাচি ধারার। সম্পর্ক এবং এর সাথে আমাদের আলোচনার কি সম্পর্ক তা বলার আগে ফিবোনাচি ধারা কি সে সম্পর্কে একটু ধারনা থাকা উচিত। আসলে ফিবোনাচি ধারা হলো একটি গাণিতিক ধারা বা সংখ্যার লাইন যেখানে প্রত্যেক সংখ্যা তার পূর্ববর্তী সংখ্যা দুইটির যোগফলের সমান। অর্থাৎ প্রথম সংখ্যা ১ হলে দ্বিতীয় সংখ্যা ও হবে ১ কারণ পূর্বের ১এবং ০ এর যোগফল ১হয় এবং তৃতীয় সংখ্যা হবে ২(১+১) চতুর্থ সংখ্যা হবে ৩(১+২) পঞ্চম সংখ্যা হবে ৫(২+৩) ইত্যাদি। অর্থাৎ ধারাটি দাড়াচ্ছে ১,১,২,৩,৫,৮,১৩,২১,৩৪,৫৫,৮৯,১৪৪,২৩৩,৩৭৭,৬১০……….এরকম।
এই ফিবোনাচি ধারার সাথে প্রকৃতির গাঢ় সম্পর্ক আছে,যে কোন খরগোশ এর বংশে নির্দিষ্ট প্রজন্মে কতটি খরগোশ থাকবে তা বলে দেওয়া যায় এবং তা হবে যততম প্রজন্ম আপনি হিসাব করছেন ফিবোনাচি ধারার ততো তম পদের সমান যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অস্বাভাবিক কারণে কোন খরগোশের মৃত্যু না হয়। একথা প্রকৃতির আরো অনেক যায়গায় খাটে যেমন মৌমাছির ক্ষেত্রে আর এই লেখার বাকি অংশে আরো উদাহরণ দেখতে পাবেন।
এখন কথা হলো সোনালী অনুপাতের সাথে ফিবোনাচি ধারার সম্পর্ক কি?
হ্যা, সম্পর্ক আছে আর তা হলো ফিবোনাচি ধারার যেকোনো পরপর দুইটি পদের অনুপাত সোনালী অনুপাত “Φ” (ফাই)এর সমান হয়। অর্থাৎ ফিবোনাচি ধারা আসলে সোনালী অনুপাতকে প্রকাশ করে। নিচের টেবিলটি এই সম্পর্ক প্রকাশ করবে।
1 | 1 | |
2 | 1 | 1 |
3 | 2 | 2 |
4 | 3 | 1.5 |
5 | 5 | 1.66666666666667 |
6 | 8 | 1.6 |
7 | 13 | 1.625 |
8 | 21 | 1.61538461538462 |
9 | 34 | 1.61904761904762 |
10 | 55 | 1.61764705882353 |
11 | 89 | 1.61818181818182 |
12 | 144 | 1.61797752808989 |
13 | 233 | 1.61805555555556 |
14 | 377 | 1.61802575107296 |
15 | 610 | 1.61803713527851 |
16 | 987 | 1.61803278688525 |
17 | 1597 | 1.61803444782168 |
18 | 2584 | 1.61803381340013 |
19 | 4181 | 1.61803405572755 |
20 | 6765 | 1.61803396316671 |
21 | 10946 | 1.6180339985218 |
22 | 17711 | 1.61803398501736 |
23 | 28657 | 1.6180339901756 |
24 | 46368 | 1.61803398820533 |
25 | 75025 | 1.6180339889579 |
26 | 121393 | 1.61803398867044 |
27 | 196418 | 1.61803398878024 |
28 | 317811 | 1.6180339887383 |
29 | 514229 | 1.61803398875432 |
30 | 832040 | 1.6180339887482 |
31 | 1346269 | 1.61803398875054 |
32 | 2178309 | 1.61803398874965 |
33 | 3524578 | 1.61803398874999 |
34 | 5702887 | 1.61803398874986 |
35 | 9227465 | 1.61803398874991 |
36 | 14930352 | 1.61803398874989 |
37 | 24157817 | 1.6180339887499 |
38 | 39088169 | 1.61803398874989 |
39 | 63245986 | 1.6180339887499 |
40 | 102334155 | 1.61803398874989 |
41 | 165580141 | 1.6180339887499 |
42 | 267914296 | 1.6180339887499 |
43 | 433494437 | 1.6180339887499 |
44 | 701408733 | 1.6180339887499 |
45 | 1134903170 | 1.6180339887499 |
46 | 1836311903 | 1.6180339887499 |
47 | 2971215073 | 1.6180339887499 |
48 | 4807526976 | 1.6180339887499 |
49 | 7778742049 | 1.6180339887499 |
50 | 12586269025 | 1.6180339887499 |
মানুষের শরীরে রয়েছে গোল্ডেন রেশিওর প্রকাশ । শরীরের মোট উচ্চতা এবং মাথা থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত দূরত্বের অনুপাত Φ এর সমান। আবার মাথা থেকে নাভি এবং নাভি থেকে পায়ের গোড়ালির দূরত্বের অনুপাতও Phi এর সমান। মানুষের হাতের আঙ্গুলের হাড়গুলো একটি অন্যটির সাথে গোল্ডেন রেশিও দিয়ে সম্পর্কিত। যেমন নিম্নবাহু (হাতের কনুই থেকে তালু পর্যন্ত) এবং উর্ধবাহুর ( কনুই থেকে ঘাড়) দূরত্বে ও রয়েছে গোল্ডেন রেশিও বা Phi এর সম্পর্ক, একই সম্পর্ক রয়েছে হাতের তালু এবং নিম্নবাহুর দৈর্ঘ্যে।
মানুষের মুখের চোখ,কান,গাল এবং নাকেও রয়েছে গোল্ডেন রেশিওর সম্পর্ক। মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর এবং সবচেয়ে নিখুঁত সৃষ্টি।
পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে একথা বলা হয়েছে। সূরা আত-তীনের একটি আায়াত হলো “লাকাদ খালাকনাল ইনাসানা ফি আহসানি তাকই্বম। ” যার অর্থ হলো ” নিশ্চয়ই আমি মনুষকে সর্বোত্তম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি।” এখন আমরা এই আয়াতটি নিয়ে একটু অংক করব। আমরা এটা জানি যে আরবী ভাষা ডান থেকে বাম দিকে লেখা হয়, আয়াতটিতে মোট ২৬টি অক্ষর আছে এবং “ইনসান” যার অর্থ মানুষ শব্দটি বাক্যটির গোল্ডেন মিন অবস্থানে রয়েছে। এই ২৬টি অক্ষরকে p এবং q দুইভাগে ভাগ করা যায়, যেখানে বামদিকের p অংশে রয়েছে ১৬টি অক্ষর এবং ডানদিকের q অংশে ১০টি অক্ষর। এই p এবং q এর অনুপাত হলো ১.৬ যা গোল্ডেন সংখ্যা ১.৬১৮……..এর খুবই কাছাকাছি।
মানুষের শরীরের আকৃতি এবং গঠনে গোল্ডেন সেকশনের সম্পর্ক দেখা যায়। মানুষের শরীরের রয়েছে একটি দেহ,একটি মাথা,একটি হার্ট। অনেক অঙ্গ আছে জোড়ায় জোড়ায় যেমন হাত, পা,হাত এবং পায়ে ৩টি করে অংশ রয়েছে, মানুষের আঙ্গুলে রয়েছে ৩টি করে ফ্যালাংস, প্রত্যেক আঙ্গুলের প্রত্যেক ফ্যালাংস দৈর্ঘ্যে গোল্ডেন বা সোনালী অনুপাতে সম্পর্কিত।
আমাদের দেহের সাথে ৫টি অঙ্গ দুই হাত,দুই পা এবং মাথা যুক্ত, প্রত্যেক অঙ্গে পুনরায় আরো ৫টি করে অঙ্গ যেমন হাত এবং পায়ে ৫টি করে আঙ্গুল এবং মুখমণ্ডলে ৫টি অঙ্গ( চোখ,নাক,গাল) যুক্ত। আমাদের ৫টি ইন্দ্রিয় ( দর্শন, শ্রবণ,স্পর্শ, স্বাদ এবং গন্ধ) রয়েছে।
৫ হলো ফিবোনাচি ধারার একটি সংখ্যা এবং গোল্ডেন সংখ্যা নির্ণয় করতে ৫ ব্যবহার করা হয়।
অনেক গাণিতিক গবেষণায় মানবদেহকে পেন্টাগ্রামের( এক দাগে পাঁচ বাহুর যে তারা আঁকা হয়) সাথে তুলনা করা হয়েছে। একই নকশা প্রকাশ পেয়েছে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি এবং ডুরের ( Durer) অনেক শিল্পকর্মে।
চিত্রঃ৩
পুনরায়, হাতে ৩টি প্রধান অংশ আছেঃ কব্জি,মেটাকার্ফাস এবং আঙ্গুল। আঙ্গুল সহ মানুষের হাতে ৮টি অংশ আছে, কব্জির ৮টি কার্পাল হাড় ৫টি মেটাকার্পাল হাড়ের সাথে যুক্ত হয়ে হাতের তালু গঠন করে। মুখমণ্ডল, মধ্যকর্ন এবং গলায় যথাক্রমে ১৪টি,৬টি ও ১টি সহ মোট ২১টি হাড় আছে। মানুষের মাথার খুলি সহ মেরুদণ্ডে মোট ৩৪টি হাড় আছে ( ৮টি ক্রানিয়া,২৪টি ভার্টেব্রা,১টি স্যাক্রাম,১টি কক্কিক্স)। তাহলে মোট ৫৫টি ( ২১+৩৪) হাড় একসাথে মানুষের দেহের মূল কাঠামো তৈরি করে। এতক্ষণে যে সংখ্যা গুলো দেখলাম ১,২,৩,৫,৮,২১,৩৪,৫৫ প্রত্যেকে ফিবোনাচি ধারার সংখ্যা। আসলে প্রকৃতির নিয়ম এবং সোনালী অনুপাতের সম্পর্ক বোঝার জন্য অনেক গবেষণার প্রয়োজন।
ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত ওরাল সার্জন ড.স্টিফেন মারকোয়ার্ডট লক্ষ্য করেন যে সেন্ট্রাল ইনসিচর এর দৈর্ঘ্য দুটি সেন্ট্রাল ইনসিচর এর প্রসস্থতার সাথে সোনালী অনুপাতে হয়। তার এই পর্যবেক্ষণ দাতের সৌন্দর্য বিষয়ক বেশকিছু সমস্যার সমাধান দিয়েছিল।
সোনালী অনুপাতের গ্রিড সামনের ৮টি দাতের সাথে অন্যান্য দাতের আন্তঃ সম্পর্ক প্রকাশ করে,যেখানে আয়তক্ষেত্রটি ইনসিচর দুটির প্রসস্থতার সাথে উচ্চতার সম্পর্ক নির্দেশ করছে।
চিত্রঃ৪
গ্রিড এবং আয়তক্ষেত্রের সমন্বয় দাঁতগুলোকে প্রাকৃতিক ও আকর্ষণীয় হওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। ” Dental aesthetics and the golden proportion ” নামক গবেষণা পত্রে এই গ্রিড এবং সোনালী আয়তক্ষেত্রের আলোচনা করা হয়েছে। এই দুইয়ের সমন্বয় সৌন্দর্য প্রকাশের শক্তিশালী উপকরণ তৈরি করে।সামনের সেন্ট্রাল ইনসিচর থেকে প্রিমোলার চারটি দাত আমাদের হাসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এরা একে অন্যের সোনালী অনুপাতে আছে। ড. ম্যাক আর্থার তার ” Maxillary and Mandibular Teeth Width” নাকম প্রবন্ধে ১৯৮৫ সালে দেখিয়েছিলেন ঊর্ধ্ব সেন্ট্রাল ইনসিচর এবং নিম্ন সেন্ট্রাল ইনসিচরের অনুপাত ১.৬২। শোমেকার ১৯৮৭ সালে একটি সিরিজ আর্টিকেল লিখেছিলেন সোনালী অনুপাত এবং কসমেটিক ডেন্টিস্ট্রি নিয়ে। অ্যামোরিক তার ” Le nombre d’or ” প্রবন্ধে সোনালী অনুপাতের সাথে সেফালোমেট্রিক ট্রেসিং এর মাধ্যমে ফেসিয়াল গ্রোথের বিভিন্ন ধাপের সম্পর্ক দেখিয়েছিলেন যেখানে জ্যামিতিক বিশ্লেষণ ও ছিল।
প্লাস্টিক সার্জারির এক গবেষণায় Kawakami et al. ১৯৮৯ সালে দেখেন সোনালী অনুপাত জাপানি লোকদের চোক,নাক এবং মুখের সাম্যতা আনে। তিনি এগুলো পরে ককেশিয়ানদের সাথে তুলনা ও করেন সার্জারির আগে ও পরের সৌন্দর্য বিশ্লেষণে, এখানে তিনি Moire’ topography ব্যবহার করেন। ড. ইয়োশ জেফারসন ১৯৯৬ সালে জেনারেল অর্থডন্টিক্স জার্নালে সোনালী অনুপাতের ডায়াগ্রাম ও কম্পিউটারে তৈরি ছবি ব্যবহার করে সম্পূর্ন মাথা সম্পর্কে একটি আদর্শ প্রবন্ধ লেখেন। তার কাজ সেফালোমেট্রিক ট্রেসিং এ সমর্থন পেয়েছিল।
মানুষের হার্টবিটে ও সোনালী অনুপাতের রিদম পাওয়া যায়। নিচের ছবিতে ECG ট্রেসিং এ স্বাভাবিক হার্টের সোনালী অনুপাতের পরিমাপ দেখানো হয়েছে ।
চিত্রঃ৫
DNA এর প্রস্থচ্ছেদও সোনালী অনুপাতে হয়। DNA এর ডাবল হেলিক্সের প্রস্থচ্ছেদের দিক থেকে একটি ডেকাগন আাঁকা সম্ভব। একটি ডেকাগন (দশভুজ) স্বাভাবিক ভাবেই দুইটি পেন্টাগন(পঞ্চভুজ) হয় যার একটি অপরটি থেকে ৩৬ ডিগ্রিতে রোটেট করানো হয়। তাই প্রত্যেকটি স্পাইরাল ডাবল হেলিক্সে পেন্টাগনের আকৃতি পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি ডাবল হেলিক্স ৩৪ অ্যাংস্ট্রম লম্বা এবং ২১ অ্যাংস্ট্রম চওড়া হয়, এখানে ২১ এবং ৩৪ উভয়েই ফিবোনাচি ধারার সংখ্যা। এবং এদের অনুপাত হলো ১.৬১৯০৪৭৬….. যা Phi এর মানের খুবই কাছাকাছি।
সুত্রঃ Geometrical Substantiation of Phi, the Golden Ratio and the Baroque of Nature, Architecture, Design and Engineering
Md. Akhtaruzzaman*, Amir A. Shafie.
2 Comments
গণিত, সৌন্দর্য্য এবং প্রকৃতি। পর্ব-২ | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] গণিত, সৌন্দর্য্য এবং প্রকৃতি। পর্ব-১ […]
গণিত,সৌন্দর্য্য এবং প্রকৃতি পর্ব-৩ | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] পর্ব-১ যারা মিস করেছেনঃ […]