পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। প্রতিদিন ঘুমভাঙ্গা ভোরে চোখ খুলে যখন এই আলোকিত প্রকৃতি দেখি, দেহ-মনে অনাবিল প্রশান্তি নেমে আসে। একই ভাবে রাতের আঁধারে আকাশময় চাঁদ তারার খেলা কিংবা জ্যোস্না রাতে নদীর পারে প্রকৃতির যে অপার সৌন্দর্য তার মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করেও শেষ করা যাবে না,যদি না তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থাকে।
দৃষ্টি দৈনন্দিন জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কিন্তু অনেকেই আছেন যারা দৃষ্টিশক্তি বঞ্চিত। তাদের কেউ জন্মগত ভাবে, কেউ দুর্ঘটনাবশত,কেউ রোগাক্রান্ত হয়ে এবং বার্ধক্যজনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি হীন।
একমাত্র তারাই বুঝতে পারে আলোর অভাবটা যে কেমন যারা দেখতে পায়না, যাদের কাছে দিন আর রাতের কোনো ফারাকই নেই। অনেক ক্ষেত্রে পুনরায় চোখ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা সর্ব ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
জ্ঞান বিজ্ঞান এই যুগে প্রসারতার অন্ত নেই। বিজ্ঞানের এই যুগে দৃষ্টিহীনদের এখনো কারো চোখ দানের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু হয়তো ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না। এমনই আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা ইউনিভার্সিটির এক দল বিজ্ঞানী। এতদিন আমরা যা সাইন্স ফিকশন মুভিতে দেখেছি ঠিক ঐ রকম “বায়োনিক আই” নামের একটি কৃত্রিম চোখ তারা বানিয়ে ফেলেছে। বাস্তবে “বায়োনিক আই” যে তৈরি করা যায় সেটা এই প্রথম। এই “বায়োনিক আই” শুধু যে দৃষ্টিহীনদের কাজে লাগবে এমনটা নয়। যারা বিভিন্ন কারণে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে তারা সবকিছু দেখতে পারবে এই বায়োনিক আইয়ের সাহায্যে। বহুদিন ধরেই চলছিলো এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা, এখনো এর উপর চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা। এই বায়োনিক আই তে ব্যবহার করা হচ্ছে এক বিশেষ ধরণের লেন্স। বিশেষ এই লেন্সের সাহায্যে একজন অন্ধ ব্যক্তি তার পরিবেশ সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা পাবেন। কেননা, আশেপাশে যা যা রয়েছে তার নিখুঁত বর্ণনা দৃষ্টিহীনের মস্তিষ্কে পাঠিয়ে দেয় ওই বিশেষ চশমা। ফলে চোখে না দেখলেও অন্ধ ব্যক্তিটির মনে একটি দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। যে দৃশ্যকে অনুসরণ করে আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতোই তারা চলাফেরা করতে পারেন।
বিশেষ ওই গ্লাসটি দুটি ভাগে দৃষ্টিহীনের মনে মূল দৃশ্যটি উপস্থাপন করে থাকে। গ্লাসটিতে বসানো রয়েছে বিশেষ ক্যামেরা ও ক্ষুদ্র কম্পিউটার। ক্যামেরার যার সাহায্যে আসল দৃশ্যটি ধারণের পর সেই সংকেতটি বিশেষ কম্পিউটারে পাঠানো হয়। কম্পিউটার সেই দৃশ্যটি অন্ধব্যক্তির অপটিক নার্ভে বিশেষ সংকেত পাঠাতে থাকে। ফলে রেটিনার সংকেতের মতোই অপটিক নার্ভ সেই সংকেতটিকে পড়তে পারে। ফলে দৃষ্টিহীন সেই ব্যক্তি চোখের পেছনে হলেও মূল দৃশ্যটি দেখতে পারে। বুঝতে পারে আলোর বিচ্ছুরণ কিংবা কোনো নড়াচড়া।
দীর্ঘদিন ধরেই অন্ধত্বকে জয় করার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন বিজ্ঞানীরা। আঘাত কিংবা চোখের নানা কঠিন রোগের কারণে সাধারণত রেটিনা নষ্ট হওয়ায় অন্ধত্ব বরণ করেন অনেকে। তবে এই আবিষ্কার দৃষ্টিহীনদের আক্ষেপ অনেকটাই ঘোচাবে বলে বিশ্বাস তাদের।
জয় হোক বিজ্ঞানের, জয় হোক অন্ধত্বের!