বায়ো সেন্সিং কন্টাক্ট লেন্স

মানবজাতির আগমনের পর থেকেই তার সঙ্গী রোগ-বালাই। শুরু থেকেই চলে আসছে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ধারা। আর এর প্রতিরোধে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। রোগ নির্ণয়ের অনেক পদ্ধতি রয়েছে। ব্লাড টেস্ট,ইউরিন টেস্ট অন্যতম। এসব টেস্টের জন্য প্রয়োজন ব্লাড স্যাম্পল, ইউরিন স্যাম্পল। সুচ ঢুকিয়ে টেস্টটিউবে রক্ত সংগ্রহই হল ব্লাড টেস্টের প্রথম ধাপ। এটি অনেকের কাছে বিরক্তি আবার অনেকের কাছে ভীতির কারণ। কিছু ক্ষেত্রে বেশ সময় সাপেক্ষ। এইসকল জটিলতা এড়াতেই এসেছে বায়ো সেন্সিং কন্টাক্ট লেন্স।

বায়ো সেন্সিং কন্টাক্ট লেন্সের সাথে পরিচয়

সহজ ভাষায় এটি এক ধরণের কন্টাক্ট লেন্স যা অবশ্যই আপনার চোখে স্থাপন করা হবে। লেন্সটি আপনার সম্পূর্ণ দেহকে মনিটর করবে। কোথাও কোন অসঙ্গতি দেখা দিলে লেন্সটি সে ব্যাপারে আপনাকে সচেতন করবে।

 প্রশ্ন হল এই লেন্সটি একাজ করবে কিভাবে? এই বায়ো সেন্সিং লেন্সে কিছু সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এদের ট্রান্সপারেন্ট বায়ো সেন্সর বলে হয়।

আপনি কি জানেন যে আপনার teardrop বা চোখের পানি পরীক্ষা করলে আপনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বেশ ভালো একটি ধারণা পাওয়া যায়। মূলত এই প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হচ্ছে এই লেন্সে। লেন্সটি আপনার চোখের পানির মাধ্যমে আপনার শারীরিক অবস্থা সর্বক্ষণ মনিটর করবে।

আপনার চোখের পানিতে আপনার সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। এই বায়ো সেন্সিং কন্টাক্ট লেন্সের রিসার্চ টিমের লিড রিসার্চর Gregory Herman বলেছেন, “মানুষের চোখের পানিতে গ্লুকোজ,ল্যাকটেট, ডোপামিন,ইউরিয়া,প্রোটিন বিদ্যমান। এসব উপাদানের পরিমাণ ও ঘনত্ব এর উপর নির্ভর করে রোগ নির্ণয় সম্ভব।”

অনেক সময় ডাক্তারদেরকে তাদের রোগীদের নিয়ে স্ট্রাগল করতে দেখা যায়। আমাদের সমাজে কিছু বিজ্ঞ আছেন যারা নিজেদের চিকিৎসকের চেয়েও চিকিৎসাবিজ্ঞানে অধিক পারদর্শী মনে করেন। তাদের নিয়েই মূলত সমস্যা। তারা কখনই ডাক্তারের দেখানো পথে চলতে চান না। ফলে ডাক্তার সুষ্ঠু চিকিৎসা করতে পারেন না। ধরুন আপনি একজন হার্টের রোগী। তাহলে আপনাকে নিয়মিত মেডিসিন গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত প্রেশারও মাপাতে হবে। আপনি একজন ডায়াবেটিস রোগী হলে নিয়মিত ব্লাড ও সুগার টেস্ট করাতে হবে। অনেক রোগীই একাজ গুলো নিয়মিত করেন না। তাদের জন্য নিষ্পত্তিযোগ্য সমাধান বায়ো সেন্সিং কন্টাক্ট লেন্স।

Herman এবং তার টীম ২০১৭ এর এপ্রিলে আমেরিকান কেমিকেল সোসাইটিতে প্রথম এই বিশেষ লেন্সের সাথে পৃথিবীর পরিচয় করান।

লেন্সটির বিশেষত্ব

আগেই বলেছি লেন্সটি চোখের পানির সাহায্যে সকল ফাংশনাল কাজ করে। এই লেন্সে এডভান্স টেকনোলজির ব্যবহার করা হয়েছে।

আপনি চাইলে লেন্সটিকে আপনার স্মার্ট ফোনের সাথে কানেক্ট করে রাখতে পারবেন। এতে করে আপনার শরীরের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন হলে লেন্সটি আপনাকে স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে সতর্ক করবে। ধরুন আপনি একজন ডায়াবেটিস রোগী।

হঠাৎ করে আপনার শরীরে গ্লুকোজের লেভেল বেড়ে গেল। তখন সাথে সাথেই লেন্সটি আপনার স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে আপনাকে সচেতন করবে। লেন্সে এক ধরণের যৌগ রয়েছে যা লেন্সের গ্লুকোজ সেন্সিংয়ে সহায়তা করে। যৌগটির নাম ইন্ডিয়াম গ্যালিয়াম জিঙ্ক অক্সাইড (আইজিযেডও)। এই প্রযুক্তি শুধু ডায়াবেটিস রোগী নয় তথা সকলের জীবে ইতিবাচক প্রভাব তৈরিতে সক্ষম।

হারম্যান একটি মিডিয়া রিলিজে বলেছেন,”তার টীম সবসময় লেন্সের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে চলেছেন। তারা চেষ্টা করছেন যাতে লেন্সটি ক্যান্সারের পূর্বাভাস দিতে পারে, এমনকি কিডনির ফাংশনাল সিগন্যাল ও দেখাতে পারে।”

তাত্ত্বিকভাবে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ১ মিলিমিটারের এই লেন্সে ২৫০০ বায়ো সেন্সর স্থাপন সম্ভব। যদি গবেষকরা এটিকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন, তবে প্রচলিত সকল ব্লাড টেস্ট অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাবে।

Spread Happiness, Respect People

 

Comments are closed.