বাকমিনিস্টারফুলারিন

বাকমিনিস্টারফুলারিন বা বাকিবল কার্বনের একটি যৌগ। রাসায়নিক সংকেত C60।এটি দেখতে একটি ফুটবলের মতো। ৬০টি কার্বন পরমানু থেকে এক একটি বাকিবল তৈরি হয়। পরমানুগলো ১২টি পঞ্চভুজ ২০টি ষড়ভুজ তৈরির মাধ্যমে এই গোলক আকৃতির গঠনটি তৈরি করে।
১৯৪০ এর দিকে আর্কিটেক্ট বাকমিনিস্টার ফুলার একটি গম্বুজ নকশা করেন যেটি বাকানো গঠনের হওয়া সত্যেও নিজের ভর সামলে গঠন ঠিক রাখতে পারে যদিও এই গম্বুজ তৈরি হয়েছিল সমবাহু ত্রিভুজ ব্যবহার করে।

বিজ্ঞানীরা যখন ১৯৮৫ সালে C-60 অণুটি আবিষ্কার করেন এটার নাম করা হয় বাকমিনিস্টারফুলারিন বা বাকিবল। যদিও ফুলার গম্বুজ শুধু ত্রিভুজ দিয়ে তৈরি কিন্তু বাকিবল তৈরি হয় পঞ্চভুজ ও ষড়ভুজ দিয়ে। এই একই গবেষকেরা ৭০টি কার্বন বিশিষ্ট গোলক নয় এমন অণুও ও আবিষ্কার করেছেন। ফুলারিন প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এবং মহাকাশেও এগুলোর সন্ধান মিলেছে।
বাকমিনিস্টারফুলারিন কার্বনের অন্যান্য পদার্থের মতো কালো হলেও এর ধর্ম বেশ আলাদা প্রকৃতির। এটি অক্সিজেন নেই এমন জৈবযৌগে যেমন টলুইন এবং কার্বন ডাইসালফাইডে দ্রবীভূত হয় । দ্রবণ ঘনত্বের এবং দ্রাবক-দ্রবের উপর নির্ভর করে পার্পল,ম্যাজেন্টা এবং সবুজ বর্ণের হয়।

গঠন

বাকিবলের মূল কাঠামোতে ৬০টি কার্বন পরমাণু একসাথে যুক্ত হয়ে ফাঁপা গোলক তৈরি করে। গোলকটির ৩২টি পার্শ্ব (face) থাকে যার ২০টি ষড়ভুজাকৃতির এবং ১২টি পঞ্চভুজাকৃতির। একই ধরনের গঠন ব্যবহৃত হয় সকার(soccer) বল তৈরিতে। বিশেষকরে অ্যাডিডাস ১৯৭০ এবং ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে যে Telstar সরবরাহ করেছিল তাতে।
কার্বন ন্যানোটিউব এবং বাকিটিউব এর গঠন একই ধরনের হলেও পরবর্তী দুটির আকৃতি সিলিন্ডারের মতো। এর চেয়ে বেশি কার্বন বিশিষ্ট একই ধরনের আরো কিছু পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে যেমন C70,C76। কম ২৮ কার্বন বিশিষ্ট এবং আরো বেশি ৬০০ কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট অণুও আবিষ্কৃত হয়েছে।

উৎপাদন

যদিও ফুলারিন ক্যান্ডেল সুটের মতো সাধারণ বস্তুতেও পাওয়া যায় কিন্তু এটি উৎপাদনের প্রচলিত পদ্ধতি হলো দুটি কার্বন ইলেক্ট্রোডের মাঝে একটি ইলেকট্রিক আর্ক স্থাপন করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ইলেক্ট্রোডের পৃষ্ঠের কার্বন আর্ক থেকে শক্তি গ্রহণ করে আলাদা হয় এবং নিষ্ক্রিয় পরিবেশে কার্বন তাপ হারিয়ে বাকিবল গঠন করে। কিন্তু এই পদ্ধতি বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত নয়।

পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে গ্রাফাইটের ইলেকট্রোড ব্যবহার করা হয় এবং C60 এর সাথে C70 এবং আরো বেশি কার্বন বিশিষ্ট অণু তৈরিতে এটিকে ব্যবহার করা হয়।

বৈশিষ্ট্য

C60 অণু প্রচণ্ড স্থিতিশীল, এটি উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপে নিজেকে অপরিবর্তিত রাখতে পারে। এর উন্মুক্ত পৃষ্ঠ এর গোলকীয় গঠন ঠিক রেখেই অন্যান্য পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে।
এর ফাঁপা গঠনটি অন্য ছোট আকৃতির পদার্থ যেমন হিলিয়ামকে আটকে রাখতে পারে এবং এসময় এটি হিলিয়ামের সাথে কোন বিক্রিয়া করে না। বাকিবলের গোলকের অভ্যন্তরটা এতটাই প্রসস্থ যে এটি প্রিয়ডিক টেবিলের যেকোন মৌলকে ভিতরে ধারণ করতে পারে।

বাকিবল নিজেরা একে অন্যের সাথে কোন বিক্রিয়া করে না। এরা পরস্পরের সাথে দুর্বল ভ্যান্ডারওয়াল বলের মাধ্যমে যুক্ত হতে পারে।

ফুলারিনকে ডোপিং করে এটাকে ইলেক্ট্রিক্যালি ইনস্যুলেটিং,কন্ডাক্টর এমনকি সুপার কন্ডাক্টরেও পরিণত করা যায়।

ব্যবহার

বাকমিনিস্টারফুলারিনের কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহার নিচের ক্ষেত্র গুলোতে হয়।
(i) সুপার কন্ডাক্টর।
(ii) লুব্রিক্যান্টস।
(iii) এদের উচ্চ রিঅ্যাক্টিভিটির জন্য বিভিন্ন বিক্রিয়ায় প্রভাবক হিসেবে।
(iv) ওষুধ শিল্পে এবং টার্গেটেড ক্যানসার থেরাপিতে।
(v) ফুয়েল সেল তৈরিতে মেটাল হাইড্রাইড তৈরিতে, কারণ বাকিবলের ফাঁপা স্থানে হাইড্রোজেন শোষণ করে নিতে পারে এবং হাইড্রোজেন সহ বাকিবল মেটাল হাইড্রাইডের মতই আচরণ করে।
(vi) অপটিক ডিভাইসে।
(vii) ক্যামিক্যাল সেন্সরে।
(viii) ফটোভোল্টাইক সেলে।
(ix) পলিমার ইলেকট্রনিক্সে Organic Field Effect Transistors (OFETs)।
(x) অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে।
(xi) পলিমার অ্যাডিটিভ্সে।
(xii) কসমেটিকস শিল্পে।

সুত্রঃ AZoM.com, American Chemical Society.

ফুলারিন এর ন্যায় গ্রাফিন সম্পর্কে জেনে নিন এক নজরেঃ 

গ্রাফিন-পরবর্তী বিষ্ময় পদার্থ।

Comments are closed.