একবার ভাবুনতো আপনার দেহের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছে জ্যান্ত ক্ষুদ্র রোবট, বহন করে চলেছে ন্যানোমেডিসিন। কোন ধরনের কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই সারিয়ে তুলবে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধিকে। শুনতে অনেকটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও, তা বাস্তবে দেখতে খুব বেশি দেরী নেই।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির (ASU) বিজ্ঞানীরা এবং চীনা বিজ্ঞান একাডেমীর ন্যানোসায়েন্স এন্ড টেকনোলজির (NCNT) গবেষকদের একক গবেষণায় ন্যানোপ্রযুক্তির এই নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিজ্ঞানীরা একটি সিস্টেমকে উন্নত করেছে যা অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট ডিজাইন এবং টার্গেটেড ক্যান্সার থেরাপির জন্য সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ডিএনএ রবোটিক সিস্টেম।
ন্যানোরোবটগুলিকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয়েছে যাতে টিউমারের রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে টিউমার কোষ গুলিকে সঙ্কুচিত করে।
অনেক ধরনের ক্যান্সারের জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে, যেহেতু সব সলিড টিউমার-ফিড ব্লাড ভেসেল একই রকমের হয়।
এই প্রথম স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার, মেলানোমা, জরায়ু ও ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য এধরনের গবেষণা করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা গত দুই দশক ধরে, ন্যানোরবোটের আরো জটিল কাঠামো গড়ে তোলার জন্য পারমানবিক স্কেল উৎপাদন করে যাচ্ছেন। এই ন্যানোরবোটগুলির উপাদান ডিএনএ থেকে আসে, যা সব ধরনের আকার ও মাপ ধারণ করতে পারে। এই আকার মানুষের চুলের প্রস্থের তুলনায় এক হাজার গুণ ছোট।
গবেষণাগারে আক্রমণাত্মক টিউমার বৃদ্ধির জন্য একটি ইঁদুরের দেহে মানুষের ক্যান্সার কোষকে ইনজেক্ট করা হয়। টিউমার তৈরি হওয়ার পর উদ্ধারের জন্য ন্যানোরবোটগুলি কাজে লেগে পরে। প্রতিটি ন্যানোরবোট একটি ফ্ল্যাট থেকে তৈরি যা আয়তাকার ডিএনএ অরিগ্যামি শীট, ৯০ ন্যানোমিটার বাই ৬০ ন্যানোমিটার আকারের হয়। এক ধরনের ব্লাড-ক্লোটিং এনজাইম যা থ্রোম্বিন নামে পরিচিত, এটি ডিএনএ অরিগ্যামি শীটের সাথে সংযুক্ত থাকে। থ্রোম্বিন রক্ত জমাট করে টিউমারের রক্ত প্রবাহ আটকে দিতে পারে। যা টিউমার টিস্যুর মৃত্যু ঘটায়।
প্রথমত, চারটি থ্রোম্বিন অণু গড়ে একটি ফ্ল্যাট ডিএনএ এর সাথে যুক্ত থাকে। পরবর্তীতে ফ্ল্যাট শীটটি একটি গুচ্ছ নল তৈরি করে, শীটে নিজেই আবদ্ধ থাকে। ন্যানোরবোটগুলি যেভাবে প্রোগ্রামিং করা হয়ে থাকে, ক্যান্সার কোষের উপর আক্রমণ করে বিশেষ পেলোড অন্তর্ভুক্ত করে, যার নাম ‘অ্যাপটেমার’। এই ডিএনএ ‘অ্যাপ্টেমার’ বিশেষভাবে ‘নিউক্লিওলিন’ নামে এক ধরনের প্রোটিনকে লক্ষবস্তু করে। যা উচ্চমাত্রায় টিউমার এন্ডোথেলিয়াল কোষের উপর তৈরি হয়, কিন্তু সুস্থ কোষের উপরিভাগে এটি তৈরি হয় না। ন্যানোরবোটগুলি একবার টিউমার ব্লাড ভেসেলের পৃষ্ঠে আবদ্ধ হলে টিউমার কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং টিউমার কোষের উপর থ্রোম্বিন এনজাইম উন্মুক্ত করে ব্লাড-ক্লোটিং ঘটায়। ইনজেক্ট করার কয়েক ঘণ্টা পরেই টিউমার কোষকে ঘেরাও করে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করে।
সুস্থ কোষের ওপর প্রভাব না থাকার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিউমারের রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং উৎপন্ন ক্ষতিকর টিস্যুকে ধ্বংস করে দেয়। বিজ্ঞানীরা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে, ন্যানোরবোটগুলি টিউমারকে সঙ্কুচিত করার জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর, সুস্থ কোষে এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
Leave a Reply