বিদেশি মুভিগুলোতে অনেক সময় বিরাট বিরাট পাখার মত জিনিস দেখা যায় সমুদ্র উপকুলে অথবা ফাঁকা মাঠে দাড়িয়ে আছে,আপনি জানেন জিনিস টি আসলে কি কেন এমন বড় সাইজের একটা পাখা মাঠের মাঝখানে দাড় করিয়ে রেখেছে ? ছোটবেলায় আমরা খেজুরের পাতা দিয়ে এমন পাখা( ফুরফুরি বলতাম আমরা) তৈরি করে হাতে নিয়ে দৌড়াতাম ওটা ঘোরানো জন্য যেন দৌড়ানোর সময় ওটাতে বাতাস বেধে ওটাকে ঘোরায়৷ বিদেশের ওই পাখাগুলোও কি শুধু এমন ঘুরিয়ে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয় নাকি আরো কোন উদ্দেশ্যে আছে? হ্যা,এই পাখা গুলি একদিকে যেমন সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে তারথেকে ও গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কাজ করে তা হলো এগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয়। এগুলো থেকে আবার কিভাবে বিদ্যুৎ হবে? যারা জানেন না এগুলো কি কাজে ব্যবহৃত হয় অথবা জানেন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয় কিন্তু কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তা জানেন না তাদেরকে উদ্দেশ্যে করেই এই লেখাটা লেখা হয়েছে।
বাতাসের কাজ করার একটা ক্ষমতা বা শক্তি আছে? কেমন? কারন দ্রুত গতির বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সময় তার সমনে যা কিছু থাকে তাই উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে তা আমরা ঝড়ের সময় ভালোকরেই উপলব্ধি করতে পারি। এখন ঝড়ের মতো শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ নয় যেসব স্থানে বায়ু প্রায় সবসময় মোটামুটি একটা গতিতে প্রবাহিত হয় সেসব জায়গায় এই পাখাগুলো স্থাপন করা হয়।
তো বায়ু প্রবাহের গতিপথে এই পাখাগুলো স্থাপন করা হলে বাতাসের গতি পাখাকে ঘুরায়। পাখাটি একটি আনুভূমিক শ্যাফট বা অক্ষের সাথে যুক্ত থাকে তাই পাখা ঘুরলে শ্যাফটিও ঘুরবে এই শ্যাফটি একটি বৈদ্যুতিক জেনারেটরের সাথে যুক্ত থাকে, তাই শ্যাফট ঘুরলে জেনারেটরের রোটর ঘুরে আর এভাবেই জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এই বিদ্যুৎ পরবর্তীতে ডিস্ট্রিবিউশন লাইনের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করা হয়।
এখানে জেনারেটর মূলত ফ্যারাডের সুত্র অনুযায়ী কাজ করে। ফ্যারাডের সুত্রটি ছিল এমন ” কোন পরিবাহিকে কোন চৌম্বক ক্ষেত্রের ভিতর গতিশীল করা হলে অথবা কোন পরিবাহির পাসে পরিবর্তিত চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করলে ঐ পরিবাহিতে বিদ্যুত উৎপন্ন হয়” জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে জেনারেটরের রোটর একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্রের ভিতর সেট করা থাকে তাই টারবাইন যখন জেনারেটরের রোটরকে ঘুরায় তখন ঐ চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন হয় এবং সুত্রমতে সেখানে বিদ্যুত সৃষ্টি হয়। এই বিদ্যুত লাইনের মাধ্যমে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য সরবরাহ করা হয়।
এই উইন্ডমিল ছোট পরিসরে একক ব্যক্তিগত ভাবেও ব্যবহার করা যায়। ইউরোপ, আমেরিকার গ্রাম্য বাড়িগুলোতে এ ধরনের উইন্ডমিল ব্যবহার করা হয়। ফলে একদিকে যেমন তাদেরকে মুল বৈদ্যুতিক লাইনের জন্যে অপেক্ষা করতে হয় না তেমনি ন্যাসনাল পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থার উপর চাপ ও কমে।
আর এ উইন্ডমিলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে ভালো দিক হলো ব্যবস্থাটি নবায়নযোগ্য এবং এখানে কোন প্রকার পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা নেই। তাই এটি একটি গ্রিন এনার্জি সোর্স।
বিভিন্ন প্রকার আকার আকৃতির উইন্ডমিল প্রচলিত আছে এগুলো দুইটি মেজর ভাগে ভাগ করা হয় যার একটি আনুভূমিক বা হরাইজন্টাল অক্ষ এবং অপরটি উলম্ব বা ভার্টিক্যাল অক্ষ উইন্ডমিল।
আনুভুমিক অক্ষ উইন্ডমিলই সারা পৃথিবীতে সচরাচর দেখা যায়,এটা দেখতে অনেকটা বিমানের প্রফেলারের মতো। উলম্ব অক্ষ উইন্ডমিল অতোটা প্রচলিত নয়, এটি দেখতে অনেকটা ডিম্বাকৃতি। এক্ষেত্রে একটি লম্বা অক্ষের উপর থেকে নিচের দিকে দুটি ব্লেড স্থাপন করা হয় এবং এই ব্লেডে বাতাস বেধে লম্বা অক্ষ সহ টারবাইনটিকে ঘুরায়।
উইন্ডমিল ব্যক্তিগত ভাবে স্থাপন করা তুলনামূলক ভাবে ব্যয়বহুল। কারণএক্ষেত্রে বেশ দামি এবং টেকসই কিছু যন্ত্র প্রয়োজন হয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে স্থাপনের জন্য সরকারি সহযোগীতা করা হয়। তবে বড় স্কেলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে এর খরচ পুষিয়ে নেওয়া যায় কারন সেক্ষেত্রে এফিসিয়েন্সি বেশি পাওয়া যায়। আলাদা আলাদা অনেক যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না একটি বড় উইন্ডমিলই অনেক পরিবার অর্থাৎ একটি কমিউনিটির জন্য এমনকি ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রয়োজন ও মেটাতে পারে। তাই পৃথিবীর অনেক দেশেই এখন এই বায়ুকল বা উইন্ডমিল ব্যবহার করছে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে।
উইন্ড এনার্জির উল্লেখযোগ্য কিছু উপকারী দিকঃ
প্রথমত এটি একটি নবায়নযোগ্য শক্তি। কারন এটি শুধু বায়ুর প্রবাহকে কাজে লাগায় আর পৃথিবীতে বায়ু প্রবাহ যেহেতু থেমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই তাই এই শক্তির উৎস শেষ হওয়ারও কোন ভয় নেই। পৃথিবীতে তেল,গ্যাস,কয়লার মজুদ সিমিত এটি একটা সময় শেষ হয়ে যাবে। তাই বার বার ব্যবহার করা যায় এমন শক্তির উৎসের সন্ধান করা দরকার। আর বায়ু থেকে যেহেতু এই কাজটি করা যায় তাই বায়ু থেকে শক্তি উৎপাদন একটি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস।
দ্বিতীয়ত এটি পরিবেশ বান্ধব। কারন অন্য তেল,গ্যাস ভিত্তিক যেসব শক্তির উৎস আছে এগুলো ধোয়া সৃষ্টি করে যা বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধি করে, তাছাড়া এগুলো থেকে প্রচুর ক্ষতিকর বিষাক্ত পদার্থ তৈরি ও তা পরিবেশে নির্গত হয়। কিন্তু উইন্ডমিলে কোন জ্বালানি পোড়ানো হয় না এখানে তাই কোন প্রকার পরিবেশ দূষণ হয় না। এমনকি এটি অন্যান্য শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের মতো আশেপাশের শব্দ দূষণ ও ঘটায় না।
তৃতীয়ত যদিও এটির প্রাথমিক ইনস্টলেশন খরচ একটু বেশি কিন্তু এর পরবর্তীতে রক্ষনাবেক্ষনে সামান্য খরচ হয় তাই এক্ষেত্রে ওভারঅল কম খরচেই শক্তি পাওয়া যায়।
চতুর্থত এটি জায়গা অপচয় কমায়। কারন এটি উচু টাওয়ারের মাধ্যমে স্থাপন করায় জায়গা খুবই কম প্রয়োজন হয় তাছাড়া এই জায়গা সম্পুর্ণ কৃষি কাজের উপযোগীই থাকে,তাই এক্ষেত্রে অন্যান্য পাওয়ার প্লান্টের মতো শত শত একর কৃষি জমি নষ্ট করার দরকার হয় না।
পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে উইন্ডমিল ব্যবহার করে তাদের প্রথাগত
বৈদ্যুতিক উৎসের উপর নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে একই সাথে সরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠছে বড় প্রকল্প। আমাদের দেশে ও বায়ু শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সমুদ্র উপকুলীয় অঞ্চলে বিরাট এলাকা এই উইন্ডমিল স্থাপনের জন্য উপযোগী। তাই আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এবং এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা গবেষণার মাধ্যমে এই শক্তির উৎসটিকে আমরা কিভাবে আমাদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি সেদিকে নজর দিবে বলে আশা করি।
সুত্রঃইন্টারনেট