মাদারবোর্ডের টুকিটাকি

মাদারবোর্ড এমন একটা নাম, যা আজকালকার অনেক বাচ্চারাও জানে। এমনকি অনেকে অনেক জটিল কিছু না বুঝলেও অন্তত জানে যে মাদারবোর্ড কি বা এমন নামের কিছু একটা রয়েছে। অনেকের বাসাতেই আজ প্রযুক্তির কল্যাণ আর সহজলভ্যতার ফলে রয়েছে কম্পিউটার। যার CPU কেসের ভেতরে সমস্ত যন্ত্রপাতি গিয়ে মিশেছে এই মাদারবোর্ডে। আমরা অনেকেই নিত্যদিন তা ব্যবহার করেই যাচ্ছি, এবং জানিও যে কোনটা মাদারবোর্ড আর তার কাজ কি। কিন্তু গভীর থেকে ঘাটতে গেলে প্রশ্ন আসবে, আসলে আমরা কতটুকু জানি আধুনা বিশ্বের এই অতি পরিচিত নামটার ব্যাপারে?
আমরা কতটুকু জানি এর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর সেগুলোর কার্যাবলির ব্যাপারে?

সেইসব নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আয়োজন। তো চলুন দেরী না করে চলে যাই আলোচনাতে।

প্রথমেই এক কথা বলে নিই মাদারবোর্ড কি?
যদিও আমরা অনেকেই জানি এটা কি, তবু বলার জন্যে বলা, – মাদারবোর্ড হচ্ছে কম্পিউটার বা কম্পিউটিং যন্ত্রের সেই যন্ত্রাংশ (Component) যা অন্যান্য সকল যন্ত্রাংশকে ধারণ করে। এবং একই সাথে তা প্রতিটা যন্ত্রাংশের মাঝে একটা বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়ে যার যা কাজ, সেটা তাকে প্রদান করে।

সাধারণভাবে মার্কেটে প্রচলিত (Available) মাদারবোর্ড সচরাচর দুই ধরণের হয়:

১. কনজিউমার: যা আমরা গেম খেলা, বাসায় ব্যবহার করা এবং সকল সাধারণ কাজের জন্যে ব্যবহার করি। আমাদের আশেপাশে দেখা প্রায় সকল মাদারবোর্ডই কনজিউমার।

Asus এর একটি ROG Strix Z370 Full ATX মাদারবোর্ড

এধরণের মাদারবোর্ড আবার Micro ATX, Mini ATX আর Full ATX এ বিভক্ত থাকে।

২. ওয়ার্কস্টেশন মাদারবোর্ড: এগুলো বিশেষ কাজের জন্যে। অর্থাৎ গেম খেলা, বাসার কাজে ব্যবহার, গান শোনা, মুভি দেখার মত বিনোদনমূলক কাজে নয়, বরঞ্চ রেন্ডারিং, থ্রিডি মডেলিং, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ও পোস্ট প্রোসেসিং এর মত কাজের জন্যেই ব্যবহৃত হয়। এধরণের মাদারবোর্ড খুব কমই দেখা যায়।
Workstation এর জন্য উচ্চপর্যায়ের ও বেশ দামী মাদারবোর্ডগুলো থাকে, যাতে সাধারণভাবে প্রয়োজনীয় স্লট/চ্যানেল, পোর্টের চাইতেও বেশি থাকে।

X99 ওয়ার্কস্টেশন মাদারবোর্ড

তবে মাদারবোর্ড কনজিউমার হোক বা ওয়ার্কস্টেশন সকল মাদারবোর্ডেরই কমন বা সাধারণ অংশ থাকে। অবস্থাভেদে কোনোটাতে কিছু পোর্ট বেশি বা ভিন্ন কিছু পোর্ট /চ্যানেল থাকে তো কোনোটাতে থাকে কম। আমরা সেইসব অংশের দিকে দেখে নিই এক এক করে।

১. প্রসেসর স্লট /সকেট

Intel এর LGA 1151 ধাচের একটি প্রসেসর সকেট

এটা প্রসেসরের মগজ ধারণের জায়গা বলা যেতে পারে। সকেট হচ্ছে আসলে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হাজারখানেক পিন এর সমন্বয়। এই পিনগুলো প্রসেসরের নীচে থাকা পাতগুলোর সাথে একদম কাটায় কাটায় মিলে গিয়ে প্রসেসরে একই সাথে বিদ্যুৎ পরিচালন ও Data আদানপ্রদাণ করে থাকে।
কোন প্রসেসরের জন্যে কোন মাদারবোর্ড কিনবেন, তার জন্যে প্রাথমিকভাবে দুটোরই সকেট নাম্বার বা সিরিয়াল জানা জরুরী। এই যেমন Intel এর ৮ম প্রজন্মের সকেট নাম্বার হচ্ছে 1151। অপরদিকে AMD তাদের সকেটের নাম্বার না দিয়ে সিরিয়াল ব্যবহার করে থাকে, যা তাদের Zen Processorগুলোর জন্যে হল AM4
আর আরেকটা কথা, পিন সংখ্যা এক হলেও হয়না, পিন এলাইনমেন্টও একই হতে হবে।
এজন্যে কোন জেনারেশন এর প্রোসেসরের সাথে কোন জেনারেশনের মাদারবোর্ড সকেট সাপোর্ট করবে তা জানা অত্যন্ত জরুরী। যেমন Intel এর 6th gen থেকে নিয়ে সর্বাধুনিক 9th gen পর্যন্ত সবগুলোর সকেটই 1151। কিন্তু তাই বলে 6thgen এর মাদারবোর্ড 8th বা 9th gen এর বোর্ড সাপোর্ট করবেনা।

ট্রাবলশুট: যদি কোনো কারণে কম্পিউটারের বাতি জ্বলে উঠে বা বিপ দিয়ে কম্পিউটার চালু না হয় এবং প্রসেসর হিট না হয়, সেক্ষেত্রে মাল্টিমিটার দিয়ে সাবধানে বোর্ড টা খুলে, ঠিক এর নীচে থাকা সোল্ডারিং এ চেক করে দেখে নিতে পারেন। লাইন পেলে বুঝবেন যে সমস্যা প্রসেসরে। না পেলে বোর্ডের কোথাও।

২. North Bridge বা Host Bridge

নর্থব্রিজ ও সাউথব্রিজ

এটা একটা বিলুপ্ত ব্রিজ। ইন্টেলের Sandy Bridge নামের বিল্ট ইন বা System On Chip(SoC) প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে চিপটি বোর্ডের বদলে প্রসেসরের ভেতরের Architecture এতেই জায়গা করে নেয়। আগে এদের প্রসেসরের পাশেই চারকোনা আকৃতির বা খাজকাটা প্লেট এ ঢাকা অবস্থায় দেখা যেত। পুরো বোর্ডটাকে উত্তর-দক্ষিণ অক্ষ হিসেবে বিবেচনা করলে খাড়াভাবে এর অবস্থান উপরে হত বিধায় এর নাম নর্থব্রিজ। আর ব্রীজ নামটা হল এটা প্রসেসরের সাথে র‍্যাম ও PCI Express চ্যানেলের সেতুবন্ধন করে দেয়। মানে উপাত্তের (Data) সেতুবন্ধন। তাই এই নাম। এটা মূলত একটা সেকেন্ডারি চিপ। আর অনেকগুলো চিপের সমন্বয়ে মাদারবোর্ড গঠিত বিধায় একে চিপসেট (Chipset) ও বলে।
নর্থব্রিজ সিপিউ এর সাথে সরাসরি Front-Side Bus দ্বারা সংযুক্ত, ফলে পাওয়ার নেয়া বাদে সমস্ত উপাত্ত (Data) প্রসেস এর জন্যে প্রসেসরকে আগে উপাত্ত এর কাছেই পাঠাতে হয়। এরপর সেখান থেকে একটা বাস (ডানদিকের) র‍্যামের সাথে তথ্য প্রক্রিয়াকরণে আদানপ্রদান করে, আরেক বাস সরাসরি PCI Express এ ডেটা প্রসেস করে। অর্থাৎ গ্রাফিক্স কার্ড এর স্লটে। বর্তমানে এই কাজগুলো বোর্ডের বদলে প্রসেসরই সামলায়।

ট্রাবলশ্যুট: র‍্যাম ভাল হওয়া সত্বেও বোর্ড র‍্যাম ডিটেক্ট করতে না পারলে এবং একই রকম ব্যাপার GPU’র সাথেও ঘটলে সেক্ষেত্রে PCIE ও র‍্যাম চ্যানেলের সোল্ডারিং চেক করে দেখতে হবে। সেগুলো ঠিক থাকলে আর প্রসেসর হিট হলে বুঝতে হবে সমস্যা প্রসেসরের ব্রিজ সেকশনে। যেহেতু এখন এই ব্রিজটা আর আলাদা নেই বিধায় এটা নষ্ট মানে প্রসেসর নষ্টই ধরা হয়।

৩. South bridge

MSI এর একটি Z370 মাদারবোর্ডের সাউথব্রিজ বা চিপসেট

এদের এখনো বোর্ডেই দেখা যায়। সচরাচর র‍্যাম ও প্রসেসর সকেটের দিকটা উপরে বিবেচনা করলে এদের বোর্ডের নিচে, বাঁ দিকে দেখা যায়। নর্থব্রিজের মত এটিও সচরাচর স্ক্রু দিয়ে আটকানো একটা ধাতব প্লেটে আচ্ছাদিত থাকে। এটিও নর্থব্রিজের মত একটি Hub যা অনেকগুলো পথে নিজের ডেটাকে বিভাজিত করে দেয়।
সাউথব্রিজের আবার প্রস্তুতকারক কোম্পানী হিসেবে নাম আলাদা আলাদা হয়।
যেমন Intel তাদের সাউথব্রিজকে বলে I/O (Input/Output) Controller Hub বা ICH । আবার AMD তাদেরটার নাম রেখেছে Fusion Controller Hub (FCB)
বর্তমানে এই কন্ট্রোলার হাবটি Platform Controller Hub (PCH) এ রুপান্তরিত হয়েছে যা নর্থব্রিজ এর লজিক সেকশন প্রসেসরে চলে যাওয়ায় এখন সরাসরি প্রসেসরের সাথেই যুক্ত।

বর্তমান সময়ে বোর্ডগুলোতে এই সাউথব্রিজের অবদান অনেক অনেক বেশি। যদিও একটাই চিপ, তবু একেই এখন বোর্ডের চিপসেট বলা হয়। আর এই সাউথব্রীজের সক্ষমতার উপরই নির্ভর করে গোটা বোর্ডের সক্ষমতা। মোট কথা হচ্ছে সাউথব্রিজ বোর্ডের প্রাণ।

যেহেতু সাউথব্রীজ I/O Hub তার মানে হচ্ছে প্রসেসর থেকে আসা যাওয়া করা এক বাস যায় সোজা গ্রাফিক্স কার্ডের চ্যানেলে যা বর্তমানে 40 লেইন (Lane) পর্যন্ত হতে পারে। একটা যায় র‍্যামের চ্যানেলগুলোতে। যা ডুয়েল চ্যানেলে করে মোট চারটা ডুয়েল চ্যানেল বা আটটা র‍্যামের স্লটকে ডেটা আদানপ্রদাণ করাতে পারে। আর আরেকটা যায় এই সাউথব্রিজে।
সাউথব্রিজ তাই র‍্যাম ও গ্রাফিক্স কার্ড বাদে অন্য প্রতিটা ইনপুট আর আউটপুট এর জন্যে অদ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ। একেই এখন মাদারবোর্ডের চিপসেট বলে।
সাউথব্রিজের ডেটা বাস কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন লেইন এ বিভক্ত করা। এই লেইন (Lane) হল আসলে দুই জোড়া বা চারটা তারের সমন্বয়। অর্থাৎ প্রতি 1 Lane PCI এ দুইটা বা একজোড়া Input Wire থাকে আর দুইটা Output Wire থাকে। কোনো চ্যানেল বা পোর্টে লেইন যত বেশি সেটার প্রতি সেকেন্ডে ডেটা আদানপ্রদান করার সংখ্যাও তত বেশি।

সাউথব্রিজ যেসব যেসব চ্যানেল ও পোর্টে লাইন ছড়িয়ে থাকে সেগুলো হল:

i. Basic Input Output Section (BIOS)

ii Legacy Firmware

iii. PCIE 8 Channels

iv. Built In HD Audio

v. LAN Port

vi. Power /Restart Switches

vii. SATA port বা Hard Disk আর Solid State Drive (SSD) এর পোর্ট।

viii. M.2 Port যা অত্যন্ত আধুনিক SSD পোর্ট

ix. সমস্ত USB পোর্ট।

ট্রাবলশুট: সাউথব্রীজের সমস্যা বুঝার জন্যে আসলে এর থেকে বের হওয়া প্রতিটা লেইন যেসব অংশে গিয়েছে সেগুলো আগে চেক করে নিতে হবে। যেহেতু বোর্ডে এটাই একমাত্র Low Voltage I/O Hub সেহেতু এর থেকে বের হয়ে গিয়ে মেশা যে কোনো পোর্ট বা চ্যানেলেও সমস্যা হতে পারে।
তবে সাধারণভাবে BIOS চেক করার পরেও কম্পিউটার চালু না হওয়া, প্রসেসর উত্তপ্ত হবার পরেও কম্পিউটার চালু না হওয়া, পাওয়ার দেয়ার পরেও Power Supply আর প্রসেসর ঠিক থাকা সত্বেও কম্পিউটার চালু না হওয়া, Gigabit LAN পোর্টে লাইন শো করার পরেও ইন্টার্নেট না পাওয়া, ইত্যাদি সাউথব্রিজের সমস্যা নির্দেশ করে।

৪. RAM Channel /Slot

ডুয়েল চ্যানেল এর চারটা র‍্যাম স্লট। একই কালারে বসানো মানে সেইম চ্যানেলিং

RAM চ্যানেল এর অবস্থান প্রসেসরের একদিক বা উভয়দিকেই থাকে। র‍্যাম চ্যানেলগুলোর সর্বোচ্চ Bus ক্যাপাসিটি নির্ভর করে বোর্ডের চিপসেটের উপর। আবার একই সাথে প্রসেসরের ক্ষমতার উপরও। যেমন কোনো প্রসেসর সর্বোচ্চ 26666 Megahertz এর বাস সাপোর্ট করে। সেক্ষেত্রে বোর্ডের বাস বেশি থাকলেও এবং তাতে এর বেশি, যেমন ধরুন 3200Mhz এর র‍্যাম লাগালেও পার্ফর্মেন্স সর্বোচ্চ ওই 26666 ই পাওয়া যাবে।
আবার ধরুন কোনো প্রসেসর সাপোর্ট করে 3200mhz পর্যন্ত ওভারক্লকেবল র‍্যাম। কিন্তু বোর্ড সাপোর্ট করে 2666Mhz র‍্যাম। সেক্ষেত্রে 3200Mhz এর G-Skill Ripjaw বা Corsair Vengeance LPX র‍্যাম লাগালেও সর্বোচ্চ বাস পাবে ঐ ২৬৬৬ মেগাহার্জই। যদিও কোনো DDR জেনারেশনের র‍্যামের বাস মান নির্ধারক প্রতিষ্ঠান JEDEC থেকে নির্ধারণ করেই দেয়া থাকে।

এই চ্যানেলের আরেকটা ব্যাপার হল ডুয়েল চ্যানেলিং। ডুয়েল চ্যানেলিং বলতে বিশেষ কোনো র‍্যামকে বুঝায় না, বরঞ্চ চ্যানেল বুঝে র‍্যাম ইনস্টল করাকে বুঝায়। ধরুন একটা বোর্ডে ৪টা স্লট আছে বাম থেকে ডানে ধরলে সেগুলোর চ্যানেলগুলো হবে এমন: A1, A2, B1, B2 ।
এক্ষেত্রে ডুয়েল চ্যানেল মানে হচ্ছে এই চারটা স্লট দুইটা চ্যানেলে বিভক্ত প্রথমটার সাথে তৃতীয়টা, মানে A1 এ র‍্যাম বসালে সর্বোচ্চ পার্ফর্মেন্স এর জন্যে B1 এ আরেকটা বসাতে হবে। A2 তে বসালে তদ্রুপ B2 তে বসাতে হবে।

৫. SATA পোর্ট

SATA পোর্ট

Serial Advanced Technology Attachment পোর্ট বা SATA পোর্ট হল সেই পোর্ট যার মাধ্যমে হার্ড ডিস্ক আর SSD যুক্ত থাকে এবং এই পোর্টের মাধ্যমেই SATA কেবল দিয়ে উপাত্ত আদান-প্রদাণ হয়।
বর্তমানে প্রচলিত SATA ভার্সন হচ্ছে 3.0 এবং ক্রমেই তা সময়ের সাথে উন্নত হবে। সুতরাং বোর্ড কেনার বেলায় তা খেয়াল রাখাটা জরুরী। পোর্ট ভার্সন আধুনিক মানে এর প্রতি সেকেন্ডে ডেটা প্রসেসের হার বেশি।

ট্রাবলশুট: HDD (HardDisk) বা SSD ও সাটা কেবল ঠিক থাকা সত্বেও লাইন না পেলে বা কম্পিউটার চালু করলে Bootable Drive না পেলে।

৬. ATX Power Connector বা TPM (Trusted Platform Module) Header

একটি স্ট্যান্ডার্ড পাওয়ার কানেক্টর

গোটা মাদারবোর্ডে হাই ভোল্টেজ পাওয়ার সাপ্লাই করার কানেক্টর পিন এটা। এই কানেক্টরে Power Supply Unit (PSU) এর 24 পিনের প্লাগটা বসে। তবে কিছু Micro ATX বোর্ডের সকেট ২০ থাকাতে সেক্ষেত্রে বাঁ দিক থেকে হিসেব করে প্লাগটা বসাতে হয় এবং বাকি ৪টা প্লাগহোল খালিই থাকে।

৭. Power – Restart Header

পাওয়ার ও রিস্টার্ট এবং সেগুলোর ইন্ডিকেটর পিন

সহজ ভাষায় এদের বলা হয় পাওয়ার সুইচ, রিস্টার্ট সুইচ ও এলইডিগুলোর পিন। এই হেডারে দুই সারি পিন থাকে যা থেকে সচরাচর উপর থেকে সর্ব ডান দিকের পিন দুটি হল পাওয়ার সুইচের পিন। কোনো কারণে সুইচ খোল রাখা হলে ঐ দুটোতে ধাতব কিছু স্পর্শ করে কম্পিউটার চালু করা যায়।

Power Header এ একজোড়া সুইচ থাকে Power SW (Switch) যা ভালভাবে দেখে Power SW লেখা পিনে লাগাতে হয়। একজোড়া সুইচ থাকে Reset SW এটা একই লেখা পিনজোড়ার উপর বসাতে হয়। একজোড়া থাকে Power LED অর্থাৎ পিসি চালু হলে যে LED বাতি বাতি জ্বলে তা Indicate করে ঐ সুইচ। এবং আরেকজোড়া থাকে HDD LED অর্থাৎ হার্ডডিস্ক বা স্টোরেজ ড্রাইভ পেয়েছে কিনা সেটা Indicate করার বাতি।

উল্লেখ্য কানেক্টরগুলোর তারের মধ্যে রঙিনগুলো হচ্ছে বিভিন্ন ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সক্রিয় তার আর সাদা এবং কালো তারগুলো হচ্ছে নিষ্ক্রিয় পরিবাহি যা Grounding বা Earthing এর জন্যে ব্যবহৃত হয়।

ট্রাবলশুট: কোনো কারণে বোর্ড ঠিক থাকা সত্বেও পাওয়ার সুইচে প্রেস করলে পাওয়ার না পেলে।

৮. Front Panel Audio Header বা F Audio Connector

F Audio কানেক্টর

এই হেডারগুলো CPU case এর সামনে বা ফ্রন্ট প্যানেলে থাকা হেডফোন ও মাইকের 3.5mm সকেটের কানেক্টর। এই কানেক্টরগুলো যে যে তারের প্লাগের লেখা নামের সাথে বোর্ডে হেডার/পিনের পাশে থাকা নাম মিলিয়ে বসাতে হয়। সচরাচর এতে Mic input, Mic output, Mic Power এর লাইন থাকে।

ট্রাবলশুট: কেসের অডিও I/O প্যানেল ঠিক থাকা সত্বেও জ্যাক প্লাগড ইন না দেখালে বা ঠিকমত কাজ না করলে।

৯. USB (Universal Serial Bus) Header

USB হেডার

বোর্ডে, নীচের দিকে দেখবেন ৯টা Header বা Pin আলাদা একটা প্লাটফর্মে থাকে যার পাশে বা প্লাটফর্মের উপরেই USB লেখা থাকে। I/O প্যানেলে থাকা Audio আর USBর বাইরে অতিরিক্ত Audio প্যানেলের মতই এটাও কেস এর সামনে থাকা অতিরিক্ত USB পোর্ট কানেক্ট করার কাজে ব্যবহৃত হয়। এই হেডার USB 2 আর 3 দুটো ভার্সনের জন্যেই হতে পারে।

ট্রাবলশুট: ফ্রন্ট প্যানেলে USB ক্যাবল আর Pendrive ঢোকানোর পরেও লাইন না পেলে।

১০. Jumper

Jumper

Jumper এর ব্যবহার সবচে বেশি করা হয় বায়োস রিসেট করার জন্যে। জাম্পার মাত্র দুটো পিনের একটা হেডার সেট। এর অবস্থান প্রসেসর সকেটের আশেপাশে থাকে।
তবে সচরাচর সকেটের নীচের দিকে থাকে। জাম্পারে প্লাগ ইন করে বোর্ডে কারেন্ট ফ্লো অফ করে যাবতীয় অংশ চেক করা হয়, BIOS ও চেক করা হয়। পাশাপাশি বোর্ড ক্যাপাসিটরে থাকা বাড়তি সামান্য ইলেক্ট্রিসিটি ডিসচার্জ করা হয়, বায়োস/firmware রিসেট করা হয়।

ট্রাবলশুট : অত্যন্ত Rare Case, তবে যদি কখনো দেখা যায় জাম্পারে প্লাগ বসানোর পরেও কম্পিউটার চালু হচ্ছে।

১১. CMOS ব্যাটেরী

CMOS ব্যাটেরী

CMOS বা Complementary Metal-Oxide Semiconductor ব্যাটেরী হল ৩ ভোল্টের একটা ব্যাটারি যা মাদারবোর্ডের সময়, তারিখ ও BIOS এর বেসিক তথ্যগুলো ধরে রাখতে সহায়তা করে। এর কাজই হচ্ছে বোর্ডের ক্লক হিসেবে টাইম – ডেট ঠিক রাখা ও CPU কে বায়োসের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। আর এজন্যেই CMOS খুলে রাখলে BIOS রিসেট হয়ে যায়।
এছাড়া ভুলক্রমে CMOS ছাড়া কম্পিউটার চালু করে দিলে অনেকসময় সিপিইউ গ্রাফিক্স কার্ডকে না পেয়ে Onboard গ্রাফিক্সকেই (IGPU) প্রাইমারী ধরে নেয়। ফলে ঐ অবস্থায় গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো থাকলে, প্রসেসরের ফ্যান, অন্যান্য ফ্যান, সব ঘুরবে ঠিকই, কিন্তু মনিটরে পাওয়ার পাবেনা।

ট্রাবলশুট: বার বার বায়োস রিসেট হয়ে গেলে। কার্ড ভাল থাকা সত্বেও অনেকসময় না পেয়ে মনিটর কালোই হয়ে থাকলে।

১২. BIOS Chip /BIOS ROM বা Firmware Chip

BIOS চিপ

নামেই হয়তো বুঝতে পারছেন এটা কি। গোটা কম্পিউটারের চালু হওয়া নির্ভর করে এর উপর। এর মধ্য দিয়ে কম্পিউটার তার হার্ডওয়্যার প্রোপার্টিগুলোকে চিনে রাখে। ফলে এই চিপ নষ্ট হলে বা পুড়ে গেলে কম্পিউটার চালুই হবেনা।
শুধু তা ই নয়, উইন্ডোস বা অন্য যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম শনাক্ত ও ইনস্টল করার জন্যেও বায়োস চিপ অপরিহার্য।
BIOS Chip মূলত একটা বেসিক ফার্মওয়্যার বা ROM (Read Only Memory), যাতে মাদারবোর্ড ও এর সাথে সংযুক্ত কম্পোনেন্টগুলোর সংক্ষিপ্ত তথ্য থাকে। এবং একই সাথে এটি একটি রেগুলেটরও যার মধ্যে অল্পকিছু জায়গা নিয়ে প্রোগ্রাম করা User Interface (UI) ব্যবহার করেই র‍্যাম ও প্রসেসরের ক্লকিং বদলানো, ওভারক্লকিং বা OC করা, সিস্টেম গ্রাফিক্স এর মেমোরি বাড়ানো/কমানো, বুট ডিভাইস সিলেক্ট করা (মানে কোনটা দ্বারা কম্পিউটার চালু বা Boot হবে), সময় ঠিক করা, ফ্যান স্পীড মনিটর ও নিয়ন্ত্রন করাসহ আরো বহু গোড়ার কাজ করা যায়।
আধুনিক বোর্ডগুলোর প্রতিটাই Dual BIOS এর থাকে। অর্থাৎ শট সার্কিট থেকে বাচার জন্যে এগুলোতে একটা প্রাইমারী বায়োসের পাশাপাশি একটা ব্যাকআপ বায়োসও থাকে।

ট্রাবলশুট: পাওয়ার সাপ্লাই ও প্রসেসর ঠিক থাকা সত্বেও কম্পিউটার চালু না হওয়া।

১৩. 4/6 বা 8 পিন CPU পাওয়ার রেগুলেটর হেডার।

CPU’র জন্যে একটা ডেডিকেটেড পাওয়ার কানেক্টর হেডার থাকে যার অবস্থান সচরাচর CPU’র খানিক উপরে (বোর্ডের হিসেবে) বাঁ দিকে হয়। এটা চার পিনেরো হতে পারে বা আট পিনেরো হতে পারে৷ PSU (Power Supply Unit) থেকে আসা সরাসরি একটা প্লাগ এই হেডারে যায়। প্রসেসরের ভোল্টেজ রেগুলেশনের জন্যেই ১২ ভোল্টের এই বাড়তি হেডার দেয়া হয়।

ট্রাবলশুট: খুব Rare Case, তবে প্রসেসর চালু না হওয়া বা হ্যাং করা।

পাওয়ার রেগুলেটর হেডার ও ফ্যান হেডার

১৪. PCIE 16 Slot

PCI Express 16 ও PCI স্লট

পুরো নাম Peripheral Component Interconnect Express 16 Slot
এটা গ্রাফিক্স কার্ড এর স্লট। যাতে 16 দ্বারা এর লেইন বুঝানো হচ্ছে। সচরাচর সিঙ্গেল স্লটের PCIE 16 স্লটে ১৬ লেন এর ডেটা প্রসেস হয়। তবে একাধিক চ্যানেল থাকলে এবং সেগুলোতে একাধিক কার্ড বসালে লেনগুলো 16, 12, 8 এ ভাগ হয়ে যায়। PCI Express এর জন্যে ঠিক কত Lane এর ডেটা প্রসেস করা যাবে তা নির্ভর করে প্রসেসরের উপরেও। সচরাচর একটা উচ্চমানের প্রসেসরে সর্বোচ্চ 40 Lane বরাদ্দ থাকে PCI Express স্লটগুলোর জন্যে।
এর মধ্যে থেকে চারটা কার্ড বসিয়ে SLI (Nvidia’র কার্ডে) বা Crossfire (AMD’র কার্ডে) করলে লেনগুলো ৮ টা করে 4 x 8x Lane এ বিভক্ত হয়ে যেতে পারে।
তাই প্রসেসর কেনার বেলায় সেটা PCIE 16 এর জন্যে কত Lane দিচ্ছে তা দেখে নেয়া দরকার। যদিও 16 আর 8 লেইন এর ডেটার ভিজ্যুয়াল আউটপুটে তেমন কোনো তফাৎ নেই। বিশেষ করে গেমিংয়ের বেলাতে।

PCIE এর বিভিন্ন ভার্সন রয়েছে। যা PCIE 16 এর পাশেই লেখা থাকে। সর্বাধুনিক কনজিউমার ভার্সন হচ্ছে 3.0 । তাই কার্ড কেনার বেলায় এটা দেখে কেনা জরুরী।
বর্তমানে প্রচলিত সমস্ত গ্রাফিক্স কার্ড PCI Express 16 এর জন্যেই বানানো যা যেকোনো বোর্ডের স্লটেই বসে যাবে। তবে এক্ষেত্রে কার্ডের চাইতে প্রসেসর বেশি লো হলে Bottleneck করবে ও গেমপ্লে আটকে আটকে যাবে।

ট্রাবলশুট: কার্ড ভাল থাকা এবং কার্ড ছাড়া পিসি ঠিকঠাকমত চলা সত্বেও নির্দিষ্ট স্লটে কার্ড না পাওয়া বা Detect না হওয়া।

১৫. M.2 পোর্ট

M.2 SSD পোর্ট

এটা অত্যন্ত আধুনিক পোর্ট। যা AMD আজকাল তাদের মিডবাজেট, এমনকি খানিক লো বাজেটের বোর্ডগুলোতেও দিচ্ছে। এটি একটি SSD পোর্ট যা সচরাচর দামী বোর্ডগুলোয় ধাতব প্লেট বা কাভার দারা ঢাকা থাকে এবং যার অবস্থান SATA পোর্টের পাশেই থাকে। এটি অত্যন্ত হাই স্পীড একটি পোর্ট।

ট্রাবলশুট: M.2 SSD ভাল থাকা সত্বেও না পাওয়া এবং সাউথব্রিজ থেকে M.2 তে কানেকশন ঠিক থাকার পরেও না পাওয়া।

১৬. ফ্যান ও RGB হেডার

ফ্যান হেডার প্রসেসরের ফ্যান এর পাওয়ার কানেক্টর, যা সচরাচর ৪ পিনের হয়। এবং যার অবস্থান প্রসেসরের আশেপাশেই হয়। এছাড়াও খানিক ভাল বা বেশি ফাংশনিং বোর্ডে বাড়তি কিছু ফ্যান হেডার থাকে।

Light Control RGB হেডার

RGB হেডার যে কি, তা হয়তো বলা বাহুল্য। তবু বলে দিই, অনেকে পিসিতে লাল – নীল – সবুজ “বাত্তি” জ্বালাতে পছন্দে করেন। অনেকে ব্যাপারটা নিয়ে Obsessed’ও থাকেন! তাদের জন্যে এই হেডার।

১৭. PCIE 8 স্লট।

PCI স্লট হলেও এটা সর্বোচ্চ আট লেনের স্লট, যা কোনো গ্রাফিক্স কার্ডের জন্যে ব্যবহার হয়না। বরঞ্চ প্যানেল, যার মাধ্যমেই কম্পিউটার সমস্ত হিউম্যান ইন্টারফেস ইনপুট বা ব্যবহারকারীর দেয়া নির্দেশনা নিয়ে ও সেগুলো প্রসেস করে Audio ও Video আউটপুট দিয়ে থাকে।
PCI চ্যানেলের সাউন্ডকার্ড, LAN কার্ড বা নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টর কার্ড, SSD ইত্যাদির জন্যে ব্যবহৃত হয়।
PCIE 16 এর নীচেই এদের দেখতে পাওয়া যায়।

ট্রাবলশুট: ইনস্টল করা নির্দিষ্ট কার্ড বা এডাপ্টর ভাল থাকা সত্বেও Detect না করা।

১৮. বোর্ড স্পীকার/Beeper

বোর্ড স্পীকার

পিসি চালু হলে যে বিইইইপ করে শব্দ করে, তা এই ছোট্ট জনাবের কল্যানেই হয়। দেখতে সচরাচর কালো রঙের, প্রস্থচ্ছেদে গোলাকৃতির হয়। এদের বোর্ডের যেকোনো একপাশে দেখা যায়।

ট্রাবলশুট: খুবই Rare Case, তবে এটা নষ্ট হলে কম্পিউটার ঠিকঠাক চললেও বিপ হয়না।

১৯. Capacitors

ক্যাপাসিটর

বোর্ডে অনেকগুলো ক্ষুদে ক্যাপাসিটর দেখা যায়। এগুলো মূলত বোর্ডে চার্জ ধারণ ও পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত হয়। বোর্ডকে কারেন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরেও তাতে অনেকসময় সামান্য চার্জ থেকে যায় ক্যাপাসিটরগুলোর কল্যাণে।
অনেকসময় বোর্ড ডিসচার্জের প্রয়োজন পড়ে।
সেক্ষেত্রে লাইন বন্ধ করে পাওয়ার বাটন বেশ কিছুক্ষণ চেপে রাখতে হয়। আকারে বেশ ক্ষুদে হলেও এই ক্যাপাসিটরগুলো বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যপরিচালনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্যাপাসিটর সচরাচর দুইরকম হয়: Water Based Electrolyte Capacitor (দেখতে কালো আর খানিক লম্বা)। এবং Polymer Based Electrolyte Capacitor (দেখতে সিলভার রঙা ও খাটো)।

ট্রাবলশুট : কম্পিউটার চলতে চলতে ঘণঘণ হ্যাং করা বা Freeze হওয়া, আপনা আপনি রিস্টার্ট হওয়া, অন্য সব ঠিক থাকা সত্বেও স্লো চলা এমনকি অনেকসময় চালুই না হওয়া!
ক্যাপাসিটরের সমস্যায় সচরাচর নষ্ট ক্যাপাসিটর খানিক ফুলে যায় যাকে Bulging বলে।

২০. প্রিন্টেড লেখাসমূহ

বোর্ডে কিন্তু বিভিন্ন অংশের বহু তথ্য দেয়া থাকে। এগুলো আদতে কোনো যন্ত্রাংশ না হলেও বোর্ডে কোন কম্পোনেন্ট বসানো যাবে তা বুঝতে সহায়তা করে।
কিছু প্রয়োজনীয় লেখা হল:

i. বোর্ডের প্রস্তুতকারক ও মডেল, যেমন Gigabyte B250, MSI B350, Asus H110 ইত্যাদি

ii. PCI ভার্সন, যেমন PCI 2.0, PCI 3.0 ইত্যাদি

iii. র‍্যাম জেনারেশন ও সর্বোচ্চ র‍্যাম ক্যাপাসিটি,
যেমন DDR4 2666, DDR4 3200 OC ইত্যাদি

iv. বিভিন্ন হেডারের নাম, যেমন USB 2.0, USB 3.0, USB 3.1, Power SW+, Power SW-, HDD Led, CMOS, 24Pin Power connector, Audio ইত্যাদি।

v. বিভিন্ন স্লটের নাম, যেমন PCI E 16, PCI 8, PCI 2 ইত্যাদি।

vii. বিভিন্ন পোর্টের নাম, যেমন SATA, M.2 ইত্যাদি।

২১.Input/Output বা I/O প্যানেল

এটা একটা বেসিক প্যানেল, যার মাধ্যমেই কম্পিউটার সমস্ত হিউম্যান ইন্টারফেস ইনপুট বা ব্যবহারকারীর দেয়া নির্দেশনা নিয়ে ও সেগুলো প্রসেস করে Audio ও Video আউটপুট দিয়ে থাকে।

এই প্যানেলের অংশগুলো হল:

i. USB Port : সমস্ত USB Cable এর ইন্টেরফেস ডিভাইস যেমন মাউস, কীবোর্ড, গেমপ্যাড, ব্লুটুথ, Dongle, মডেম, পেনড্রাইভ, Card Reader আর সকল USB Cable এই পোর্ট দ্বারাই সংযুক্ত হয়।

চিরচেনা USB পোর্ট

ii. PS2 Socket : প্রাচীন সকেট। উপরে গোলাকৃতির যে পিন ঢুকানোর গর্তওয়ালা সকেট দেখা যায় সেগুলো। এগুলোর প্রচলন এখন খুব কম। নেই বললেই চলে।

PS2 সকেট

iii. VGA (Video Graphics Array) সকেট

প্রসেসরের অনবোর্ড গ্রাফিক্স এ মনিটরে আউটপুট দেয়ার জন্যে থাকে। এটা কেবল ভিজ্যুয়াল ডেটাই বহন করে।

iv. DVI বা Digital Visual Interface
এটাও একটা ডিসপ্লে সকেট, যা সরাসরি কোনো আউটপুটে বর্তমানে ব্যবহার হয়ই না। এতে কালার আউটপুট হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন ২৪টি পিন ও C1, C2, C3, C4 নামের চারটা ফ্ল্যাট পিন থাকে।

VGA, DVI ও HDMI পোর্ট

v. HDMI বা High Definition Multimedia Interfere

এটি কোনো সকেট না, বরঞ্চ পোর্ট। মনিটরের সর্বাধুনিক পোর্ট, যা একই সাথে ভিজ্যুয়াল আর অডিটরি দুইধরণের আউটপুটই দিয়ে থাকে। অর্থাৎ এতে সংযুক্ত একটা তার দিয়ে মনিটরে দেখা ও বিল্ট ইন স্পীকারে শোনা, দুটোই সম্ভব। এর ডেটা ট্রান্সফার রেট VGA’র চাইতে অনেক অনেক বেশি। ফলে HDMI তে সংযুক্ত মনিটরের আউটপুটও থাকে চোখ ধাধানো।

ট্রাবলশুট: VGA, DVI আর HDMI তিনটার ক্ষেত্রেই সমস্যা হলে মনিটরে আউটপুট পায়না। বাকি সব কার্যক্রমই ঠিক থাকে। কার্ড আর বোর্ডও ঠিক থাকে।

vi. LAN port বা Network Adapter Port
LAN (Local Area Network) পোর্ট হল ইন্টার্নেট এর কর্ড সংযোগের পোর্ট। এটা মূলত একটা RJ-45 Ethernet Socket যা ইথারনেট, ফাস্ট ইথারনেট ও Gigabit ইথারনেট হিসেবে ডেটা রেট এ বেশকম হয়ে থাকে। এরমাঝে Gigabit Ethernet বর্তমানে প্রচলিত পোর্টগুলোর মাঝে সবচে ফাস্ট, যার ট্রান্সফার রেট 1000Megabit প্রতি সেকেন্ড। আর ১ হাজার বলেই এই পোর্টগুলোকে গিগাবিট পোর্ট বলা হয়।

LAN পোর্ট

ট্রাবলশুট: পোর্টে বাতি না জ্বলা, লাইন থাকা সত্বেও লাইন না পাওয়া, থেকে থেকে লাইন ছেড়ে দেয়া (Rare Case)।

vii. Audio সকেট

অনবোর্ড Audio সকেট

এটি বোর্ডের Built in অডিও I/O সকেট যা 3.5 মি.মি. প্লাগকে সাপোর্ট করে। তবে সবগুলো একই ধরণের প্লাগ হলেও কার্যাবলী হিসেবে এদের Color Coding করা থাকে। যেমন: উজ্জ্বল গোলাপী সকেট হল Microphone ইনপুট (মনো আর স্টেরিও)।
হাল্কা নীল হল এনালগ লাইন লেভেল অডিও ইনপুট।
হাল্কা সবুজ হল স্পীকার আর হেডফোন আউটপুট।
কালো হল rare stereo আর surround sound এর আউটপুট এবং কমলা হল এনালগ লেভেল সেন্ট্রাল আর Subwoofer আউটপুট।
অডিও প্লাগিং এর সময় প্রত্যেকেরই কোডিংগুলো খেয়াল রাখা উচিত কেননা ভুলভাল বসানোর জন্যে অনেকসময় শব্দ না আসার বা কোনো অংশ কাজ না করার ঝামেলা পোহাতে হয়।

ট্রাবলশুট : খুব rare case, তবে সেক্ষেত্রে অডিও ইনপুট বা আউটপুট বা কোনোটাই পায়না।

অনেকে হয়তো এখানে Thunderbolt Portও খুজবেন তালিকায়, কিন্তু সেটা আপাতত একচেটিয়াভাবে অ্যাপলের প্রোডাক্ট এ থাকায় সর্বসাধারনের I/O port এর গণনায় পড়েনা।

মাদারবোর্ড এর বর্তমান বাজার মূল্য জানতে এখানে ভিজিট করুন।

তো আজ এপর্যন্তই মাদারবোর্ড নিয়ে আমাদের আলোচনা। সাথে থাকার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তীতে হয়তো আবারো ফিরবো ভিন্ন কোনো বিষয় নিয়ে। ততক্ষণ ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিজের খেয়াল রাখুন
আর বিজ্ঞানবর্তিকার সাথেই থাকুন…

তথ্যসূত্রঃ

https://www.asus.com/Motherboards/ROG-STRIX-Z370-E-GAMING/

Basic & Major Parts of Motherboard and their Functions

https://www.asus.com/us/Commercial-Servers-Workstations/X99E_WSUSB_31/

https://www.google.com.bd/amp/s/www.windowscentral.com/heres-what-cpu-socket-and-why-its-important%3famp

Comments are closed.