এসিড বৃষ্টি তো সবাই শুনেছি, এবার শুনুন হীরার বৃষ্টি

হীরা কার্বনের বহুরুপের মধ্যে একটা।নেপচুনের তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্র পৃথিবীর তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রের চাইতে ১০ গুন শক্তিশালী।তাছাড়া এর তড়িৎচৌম্বকীয় ক্ষেত্রটি ১০ ডিগ্রি নতিতে গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের মধ্যে বিন্যস্ত।এই কারনে গ্রহটির গ্যাসীয় মেঘের সমুদ্রের মাঝে প্রচুর বজ্রপাত হয়।আমরা অনেকেই জানি একেকটি বজ্রপাতে সূর্যের পৃষ্ঠের সমপরিমান তাপ উৎপন্ন হয়।তাছাড়া নেপচুনের বায়ুমণ্ডলের চাপ পৃথিবীর চাপ অপেক্ষা কয়েকশত গুন বেশি।এতটায় বেশী যে টাইটানিকের মত জাহাজ কয়েক সেকেন্ডে দুমড়ে মুচড়ে প্রতিটা অংশ আলাদা হয়ে যাবে।নেপচুনের প্রায় ১০% উপাদান মিথেন।তাছাড়া প্রচুর কার্বন অণুরুপেও বিরাজ করছে।এর প্রতিকুল পরিবেশের অত্যধিক তাপমাত্রা ও চাপে বায়ুমণ্ডলের মিথেন ভেঙ্গে কার্বনের স্ফটিকে(গ্রাফাইট) পরিনত হয়।স্ফটিক গুলো যখন বায়ুমণ্ডল ভেদ করে নিচে নামতে থাকে তখন তা ঘর্ষণের ফলে হীরাতে পরিনত হয়।যত নীচে নামে, ততই আশপাশের হীরার কণাগুলো জুড়ে গিয়ে আরও বড় বড় খণ্ড হতে থাকে। আরও লোভনীয় হয়ে উঠতে থাকে। তার ঝলক বাড়ে। বেড়ে যায় সেই হীরক খণ্ডের দ্যুতি, দীপ্তিও। বহুগুণ বেড়ে যায় তাদের ঔজ্জ্বল্যও। যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক হীরের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি উজ্জ্বল। অনেক অনেক বেশি ঝকঝকে। যা চার পাশটা আলোয় আলোয় ভরিয়ে রাখে। যেন হাজার তারার আলো। এমন একেকটি হীরার টুকরো ১ সেন্টিমিটার পর্যন্তও হতে আরে।তবে দূরত্বের কারনে পৃথিবী থেকে সবচাইতে শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়েও আমরা তা পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। ইজরাইলের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা নেপচুনের সম্পুরক পরিবেশ তৈরি করে হীরা উৎপন্ন করেছেন। গ্রাফাইটকে পৃথিবীর ১০০ গুন বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ৬০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উত্তপ্ত করে এর উপর লেজার লেজার রশ্মি ফেলে হীরার দানা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।এর মাধ্যমে নেপচুনে হীরার বৃষ্টিপাতের ঘটনাটি প্রমানিত হয়। এক দল জ্যোতির্বিজ্ঞানীর জোরালো দাবি, হীরার তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম গ্যাসে ভরা বাকী আরও ৩ গ্যাসীয় গ্রহে।তবে গ্রহগুলিতে হীরা প্রচুর পরিমাণে জন্মালেও আর তাদের ঔজ্জ্বল্য পার্থিব হীরার চেয়ে অনেক বেশি হলেও, তা খুব বেশি ক্ষণ কঠিন হীরা হয়ে থাকতে পারে না। বিশেষ করে শনি আর বৃহস্পতির ওপরের ঘন, জমাট গ্যাসের স্তরগুলো ফুঁড়ে-ঢুঁড়ে কঠিন হীরে যতই নীচে নামতে থাকে, সেগুলো ততই গলতে শুরু করে দেয়। গলতে গলতে, গলতে গলতে… এতেবারে তরল হীরে হয়ে যায়।আর ইউরেনাস বা নেপচুনের কেন্দ্রীণ প্রচুর উত্তপ্ত(প্রায় ৬০০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) হওয়ায় হীরাগুলি আবার বাস্পিভুত হয়ে যায়।যা উপস্থিত হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে পুনরায় মিথেনে উৎপন্ন করে।এই ঘটনাটি অনেকটা বরফ-পানি-বাস্প রূপান্তর প্রক্রিয়ার অনুরূপ। ।বিষয়টি জানিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া স্পেশ্যালিটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (এসই) জ্যোতির্বিজ্ঞানী মোনা ডেলিটস্কি ও উইসকন্সিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেভিন বেইন্স। তাদের গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছিল বিজ্ঞান জার্নাল ‘’অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ। ডেনভারে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ডিভিশন ফর প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের বার্ষিক অধিবেশনেও পেশ করা হয়েছিল গবেষণাপত্রটি।সহযোগী গবেষক সুইডেনের আপসালা সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায় বলেন,”কার্বনের অভাব নেই ভীন গ্রহগুলিতে। সেই কার্বন যেমন অন্য কোনও পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন যৌগ বানাচ্ছে, তেমনই তা বিভিন্ন রকম ভাবে থাকছে মৌল হয়েও।” এমন অনেক গ্রহ(যেমনঃPlanet 55 Cancri e) বা নক্ষত্র(যেমনঃ শ্বেত বামন BPM 37093 ও V*886 Cen) আছে যারা প্রায় সম্পন্ন হীরার তৈরি।জ্যোতির্বিদদের মতে শনিতে প্রতি বছর প্রায় ১০০০ টনের হীরার বৃষ্টিপাত হয়।তাই, যারা নেপচুনসহ গ্যাসীয় গ্রহগুলিতে অভিযানের কথা ভাবছেন তারা আর এদিক সেদিক না ভেবে সাথে অবশ্যই একটা বাটি নিয়েন।

প্রতিবেদকঃ Talha Tarique

Comments are closed.