ডিজিটাল ডিভাইস এবং নেটওয়ার্ক এর বিবর্তন

মোবাইল ফোন আবিষ্কার এর সাথে সাথে যোগাযোগসহজতর মাধ্যমটি আবিষ্কার হয়।যখনই যোগাযোগের প্রশ্ন উঠে আসে তখনই এর সাথে এর দ্রুততার প্রশ্নটিও উঠে আসে। যেমনঃ 2G, 3G, 4G ইত্যাদি। পূর্বে বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস এর সংখ্যা নেহায়েতই কম ছিল,তাই নেটওয়ার্ক এর দ্রুততা নিয়ে অত বেশি চিন্তা করতে হয়নি।কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে এখন উদ্ভাবকদের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি এবং এর দ্রুততা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।আজকের বিষয় মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং এর বিবর্তন নিয়ে।যোগাযোগ আরো দ্রুত উন্নত এবং নিরাপদ করতেই প্রতিনিয়ত মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।

প্রথম প্রজন্মের নেটওয়ার্কঃ

১৯৭৩ সালে আন্যালগ সিস্টেম ও পোর্টেবল সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে এই নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিলো।এ নেটওয়ার্ক তৈরির পর মোবাইল কমিউনিকেশনে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়।১৯৮১ সালে Nordic Mobile Telephone কর্তৃক ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনে আন্তর্জাতিক রোমিংসহ ১ম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্কের দ্বিতীয় যাত্রা শুরু করে।তখনকার জনপ্রিয় কয়েকটি মোবাইল স্ট্যান্ডার্ড ছিলো AMPS,NMT,ETACS.

এই নেটওয়ার্ক কে রেডিও সিগন্যাল হিসেবে এনালগ সিস্টেমে ব্যবহার করা যেতো।এই নেটওয়ার্কের ডাটা ট্রান্সমিশন হার কম থাকার কারণে একটির বেশি ডিভাইস এর সাথে সংযোগ রাখা যেতো না।তাই উদ্ভাবনকারী রা এই নেটওয়ার্ক কে আরো উন্নততর করে দ্বিতীয় প্রজন্মের ডিজিটাল নেটওয়ার্ক চালু করেন।

 

দ্বিতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক

১৯৯০ সালে ইউরোপে দ্বিতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্কের ব্যবহার সর্বপ্রথম শুরু হয়।ট্রান্সমিশন কোয়ালিটি, সিস্টেম ক্যাপাসিটি,নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি এইসব সুবিধা কে মাথায় রেখেই 2G নেটওয়ার্ক চালু করা হয়।

2G নেটওয়ার্ক এর জনপ্রিয় কয়েকটি জনপ্রিয় মোবাইল স্ট্যান্ডার্ড হলো GSM,CDMA,TDMA (GSM, CDMA কিছুদিন পূর্বেও আমাদের দেশে চালু ছিল) 


ডাটা লোড হতে অনেক বেশি সময় লাগতো এছাড়া ডিভাইস কানেক্টিভিটি ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কারণে আরো উন্নততর প্রযুক্তির কথা আবার চিন্তা করতে হয়।এরই পরিপ্রেক্ষিতে আসে 3G.
এই প্রযুক্তির বেশ কিছু সুবিধা ছিলো যা 1G নেটওয়ার্ক এ পাওয়া যেতো না।2G প্রযুক্তি আসার পরই সর্বপ্রথম প্রিপেইড চালু হয়।পেজিং সিস্টেম ও এসময় ই চালু হয়।মেসেজিং, ভয়েস ডেটা ট্রান্সমিট করা যেতো এই প্রযুক্তিতে।যাকে আমরা মাল্টিমিডিয়া সার্ভিস বলে জানি।এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সফলতা হলো এর মাধ্যমেই মোবাইল ফোন এ সর্বপ্রথম ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হয়।যার ফলে পুরো বিশ্বকে জানার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

 

তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্কঃ 

3G এর সাথে আমরা খুবই পরিচিত।বর্তমানে আমাদের দেশে মোবাইল ফোন এ যে নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।এই প্রযুক্তির সর্বপ্রথম ব্যবহার শুরু হয় জাপানে।২০০১ সালে টোকিওতে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।

ইন্টারনেটের উচ্চগতি,ভিডিও কলিং সেবা,সর্বত্র নেটওয়ার্ক সংযোগ,সাশ্রয়ী মূল্য ইত্যাদি কারণে 3G নেটওয়ার্ক ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।কিন্তু যখনই একাধিক ডিজিটাল ডিভাইস সংযোগ করা হয় তখন ব্যান্ডউইথ কমে যায়।3G প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা দ্রুতগতির ব্যয় সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সেবা।

এর জনপ্রিয় কয়েকটি মোবাইল ষ্ট্যাণ্ডার্ড হলো  UMTS,WCDMA,HSDPA. 3G প্রযুক্তিতে সর্বাধিক ডেটা ট্রান্সফারের মোবাইল টেকনোলজি EDGE সিস্টেম চালু হয়।ডেটা ট্রান্সফার রেট সর্বোচ্চ প্রায় ২Mbps।এই পদ্ধতির একটা বড় সুবিধা হলো প্যাকেট সুইচ্যিং এবং সার্কিট সুইচ্যিং উভয় পদ্ধতিই ডেটা ট্রান্সমিট করতে ব্যবহার করা যায়।কিন্তু IP ভিত্তিক নেটওয়ার্ক এই প্রযুক্তিতে ব্যবহার সম্ভব ছিলো না বলে 4G প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়।

 

চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্কঃ

সর্বোচ্চ ২০Mbps ডেটা ট্রান্সফার রেটকে সামনে রেখে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে চালু করা হয় 4G।যেখানে প্যাকেট সুইচিং বা সার্কিট সুইচিং ডেটা ট্রান্সমিশনের পরিবর্তে IP ভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়। IP ব্যবহারের ফলে LAN, WAN,VOIP,ইত্যাদি সিস্টেমে প্যাকেট সুইচিং এর পরিবর্তে প্রটোকল ভিত্তিক ভয়েস ডেটা ট্রান্সফার করা যাচ্ছে।ফলে ডেটা ট্রান্সমিশন দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং অধিক নিরাপদ হয়েছে।4G এর উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে WiMax,FLASH-OFDM,3GPP LTE এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে।

উচ্চ গতির ফ্রিকোয়েন্সি, ত্রি মাত্রিক ছবি, উন্নত ওয়্যারলেস সিস্টেম,বিস্তৃত জায়গা জুড়ে নেটওয়ার্ক কভারেজ এইসকল কারণেই উন্নত বিশ্বে 4G প্রযুক্তি অধিক জনপ্রিয়।বর্তমানে উন্নত দেশগুলো যেমন USA,UK,France ইত্যাদি দেশে LTE  প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।যা 4G প্রযুক্তিরই উন্নত সংস্করণ।

সবকিছুকে ছাপিয়ে ২০২০ সালের মাঝেই আসতে যাচ্ছে অতি উচ্চ প্রযুক্তির পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক বা 5G.

 

পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্কঃ 

4G প্রযুক্তির চেয়ে ২০০ গুণ দ্রুততর!!!

হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন।5G নেটওয়ার্ক যা মোবাইল যোগাযোগে এক নতুন মাত্রা যোগ করতে যাচ্ছে।আসুন 5G প্রযুক্তির ভিতরে প্রবেশ করা যাক।5G প্রযুক্তি কী?

-IEEE 802.11 AC স্ট্যান্ডার্ড ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি ও LIFI, এডভান্স টেকনোলজি র সমন্বয়ে 5G প্রযুক্তি।LIFI হলো উচ্চপ্রযুক্তির ওয়্যারলেস প্রযুক্তি।এই পদ্ধতিতে আলোকে কাজে লাগানো হয়।

এইবার এই প্রযুক্তির সুবিধাগুলোর দিকে আলোকপাত করা যাক।

১.১-১০ gbps স্পিড যা 4G প্রযুক্তির তুলনায় ২০০ গুণ বেশি!

২.১ মিলিসেকেন্ড  One to one রাউন্ড ট্রিপ!

৩.প্রতি Per Unit এরিয়া তে ১০০০X ব্যান্ডউইথ।এর গতি সম্পর্কে এখন নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন।আপনি যদি চাঁদে থাকেন তবে পৃথিবী থেকে পাঠানো ডাটা আপনি সর্বোচ্চ ১ মিলিসেকেন্ড এর মাঝে পেয়ে যাবেন!

৪.৯৯.৯৯৯ শতাংশ সক্ষমতা।

৫.১০০ শতাংশ কভারেজ!

৬.এই প্রযুক্তিতে নেটওয়ার্ক এর শক্তি ব্যবহার ৯০% পর্যন্ত কমিয়ে আনা হবে।

৭.১০-১০০X সংখ্যক ডিভাইস সংযোগ করা যাবে।

এই প্রযুক্তির গবেষণা হচ্ছে University of Surrey তে।5G Innovation Centre সেখানেই অবস্থিত।নামীদামী মোবাইল কোম্পানিগুলোর সহায়তায় এই প্রতিষ্ঠানে 5G প্রযুক্তি এবং এর উন্নয়ন নিয়ে সেখানে গবেষণা হচ্ছে।গবেষকদের মতে

“5G is not about speed -but it turns out we can provide the fastest wireless speed ever”

এই প্রযুক্তি যেমন ব্যয়সাশ্রয়ী হবে সেই সাথে উচ্চগতির ওয়্যারলেস কানেকশনের ক্ষেত্রে এক নতুন পথ উন্মোচন করবে।আশা করা যায় ২০২০ সালের মধ্যেই উন্নত বিশ্বে এই প্রযুক্তির বাস্তবিক প্রয়োগ করা হবে।

 

Comments are closed.