আপনারা অনেকেই হয়তো আগে শুনেছেন যে ডাইনোসর থেকেই এসেছে আজকের পাখি। বিবর্তনের কারণেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু ঠিক কবে কোন সময়ে আকাশে উড়ার ঘটনা প্রথম ঘটে তা বলা মুশকিল। বিশেষ করে উড়তে যে অঙ্গের প্রয়োজন সেই অঙ্গটার আগমনই বা হুট করে কিভাবে হল। একটা প্রাণী উড়তে পারতো না, তবে কি এমন উপায়ে সে বিবর্তিত হলো যে উড়া শিখে গেলো। এটা হাঁটা শিখার মতো নয় যে শিশুকে কয়েক পা এগিয়ে দিলাম আর তারপর তা সে একাই শিখে গেলো। আকাশে উড়তে পারা এক বিশেষ সক্ষমতা। এবার দেখে নিই একটি পাখির উড়তে পারার এই গল্পটা ঠিক কি রকম।
পালক থেকে পাখনা
যদি আমরা ৬ টন ওজনের একটি ট্রাইসেরাটপস ( triceratops ) ডাইনোসরের কথা চিন্তা করি। আর তারপর ভাবি যে সেই বিশাল দেহ থেকে উড়ার জন্য পাখির পাখনার মতো ছোট্ট দুটো পাখনা জেগে উঠছে। তবে সত্যিকার অর্থে সেই ভাবনাটা অনেকটা যুক্তিহীন হবে। কিন্তু যদি একটি ছোট থেরোপডের ( theropod ) কঙ্কালের ছবির পাশে একটি মুরগীর বাচ্চার কঙ্কালের ছবি রাখি তবে তা যুক্তিসঙ্গত বলেই মনে হবে।

আর্কেয়োপটেরিক্স ( archaeopteryx ) এই প্রজাতির পাখির গঠন দিয়ে ডাইনোসর ও পাখির মধ্যকার সম্পর্ক সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যখ্যা করা যায়। এই প্রজাতির পাখির খাদ্যভঙ্গি, দাঁতের আঁকার, পাখনার গঠন, পালকের ধরণ সবকিছু ডাইনোসরকে নির্দেশ করে। তাই অনেক বিজ্ঞানী একে ডাইনো-বার্ড বলতেই স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে।

অনেকে এখনো নিশ্চিত নন যে এটি আসলেই পাখি না ডাইনোসর। অনেকে অবশ্য সরাসরই ডাইনোসরই বলে থাকেন। যদিও এসব আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার হয় না যে আর্কেয়োপটেরিক্সের আসল উৎপত্তি কোথায়।
আর্কেয়োপটেরিক্স এর ফসিল রেকর্ড পাখির সাথে সম্পূর্ণ মিলে যায়। আর আগে আমরা জানতাম যে ডাইনোসরদের দেহে পালক বা পাখনা কিছুই থাকে না। তাই অনেক বিজ্ঞানী এই প্রজাতিকে ডাইনোসর ভাবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আবার অনেকে একে হোপফুল মনস্টার হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন এই আশাতেই যদি ভবিষ্যতে কোন সংকেত পাওয়া যায়। মনে রাখতে হবে বিবর্তন খেয়াল খুশি মতো হয় না। এটা একটা নিয়মতান্ত্রিক সিস্টেম। পরিবেশে টিকে থাকা সাপেক্ষে চাহিদা অনুযায়ী এই পরিবর্তন হয়। আবার এটি ম্যাজিকাল কিছুও না। বিবর্তন একটি সূত্র ধরে সামনে আগায়।
একটি উদাহরণ দিয়ে বলি। মুরগির পাখনা আছে। কিন্তু সামান্য উচ্চতার বেশি আর উড়তে পারে না। কিন্তু বিবর্তন ৫০০ বছর পর মুরগিকে মাটি হতে ২০০ মিটার উপরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু মুরগির যদি পাখনাই না থাকতো তবে তা সম্ভব হবে না। তাই পাখির সাথে ডাইনোসরের সম্পর্ক দেখানোর জন্য ডাইনোসরের দেহে পালক বা অক্ষম ডানা থাকাটা খুব দরকার ছিলো।
এজন্য অবশ্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। পরবর্তীতে জানা যায় যে বেশ কিছু প্রজাতির ডাইনোসরের দেহে পালক ছিলো, অক্ষম ডানাও ছিলো। কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শৈশবে পালক থাকতো। প্রাপ্তবয়স্ক হলে ঝরে যেতো। এমনকি ইউটিরেনাস ডাইনোসরের মতো ভয়ংকর মাংসাশীর দেহেও পালকের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। আর অবশ্যই ফসিল পরিক্ষার মাধ্যমেই এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

বিবর্তন সম্পর্কে আরো একটি বিষয় যা বলা হয় নি। বিবর্তন সবসময় দেয় না অনেক সময় অনেক কিছু কেড়েও নেও। প্রকৃতির এই সিস্টেমটা সাইন্সের এক্সপেরিমেন্টের মতো। একবারে যেনো কিছুই হতে চায় না। একই জিনিস অনেক উপায়ে ট্রাই করা হয়। তারপর সেখান থেকে বেস্ট রেসাল্ট টা নেওয়া হয়। এসব কথা বলার কারণ একটাই। খেচর সবসময় দুই পাখা বিশিষ্ট বিশিষ্ট ছিলো না।
মাইক্রোর্যাপটর ডাইনোসরের নাম শুনেছেন? এই মহাশয়ের চারটি পাখনা বা ডানা ছিলো। আসলে বাদুড়ের দু’পায়ের চামড়া প্রসারিত হয়ে যেভাবে ডানার কাজ করে। ঠিক তেমনিভাবে মাইক্রোর্যাপটরের চার পায়ের চামড়া প্রসারিত হয়ে ডানার কাজ করতো।

মাইক্রোর্যাপটার নিয়ে আর বেশি কথা বলবো যদিও এই প্রজাতির গল্পটা বেশ কৌতূহল জানাবে আপনার মধ্যে। ইচ্ছা আছে সামনে এই প্রজাতি নিয়েই একটা আর্টিকেল লেখার। তবে এখানে এতোটুকুই।
এই পর্বে এ পর্যন্তই। খেচর হিসেবে আমরা আকাশে শুধু পাখি নয়, আরো অনেক প্রাণীই দেখি। এসব প্রাণীর সাথে ডাইনোসরের সম্পর্ক স্থাপন কতটা যৌক্তিক? আর সব খেচরই কি ডাইনোসর থেকে এসেছে? এসব দেখবো আগামী পর্বে।
চলবে………
তথ্যসূত্রঃ curiosity, scienceamerica