নেশা কেটে গেলে তুমিও কেটে যাবে!

“নেশা কেটে গেলে,
তুমিও কেটে যাবে।”

অনেক পরিচিত একটি গানের লাইন। একি সাথে একটি কষ্টকর সত্য এটি। চলুন আজ ঘুরে আসি নেশার সেই ধোঁয়াশা রঙ্গিন থেকে রঙ্গিন জগত থেকে।(শেষে শুধুই কালো)

নেশা বলতে মূলত যেকোনো প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় কাজ বা অভ্যাসের নিয়মিত ক্ষতিকর প্রয়োগকে বুঝানো হয়। তবে আমরা নেশা বলতে শুধুই মাদক গ্রহণকেই বুঝে থাকি। সাধারণত কৌতূহল/আবেগ/অস্বাভাবিক মানসিকতা/অপরাধ প্রবনতা/অনুকরণ প্রবৃত্তি/অনুসরণ/ব্যর্থতা/দু:খ/রাগ/অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে একজন মানুষ নেশাগ্রস্থ হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি তার অস্বাভাবিকতা বুঝতে পারে না।(ব্যতিক্রম আছে) অনেকে বুঝতে পারলে নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। আমাদের সমাজে সিগারেট/ তালের রস/ Dendrite(জুতার আঠা)/ সাধারণ বিয়ার/ রেকটিফাইড স্পিরিট ইত্যাদি দ্বারাই একজন নেশার দুয়ারে পা রাখে।

চলুন এবার যাই মস্তিষ্কের ভিতরে সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের ধুসর-সাদা অঞ্চলে যেখানে সকল সাদা কালো রঙ্গিন আর রংহীন বস্তুর পরিমাপ হয়। লাখো নিউরনের অনবরত সিগনালে চোখে রাতের শহরের লাল-নীল বাতি দেখি।(আমরা জানি প্রত্যেক রংয়ের জন্য আলাদা আলাদা তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে)। আমাদের মস্তিষ্ক নিজের পরিশ্রম কমানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট থেকে আরেক নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে একই বর্ণ প্রদর্শন করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে প্রতি ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তন হলে বরং কিছুটা হলেও পরিবর্তীত হয় যা আমাদের মস্তিষ্ক ধরতে পারে না (পারলেও তা মস্তিষ্কের জন্য পীড়াদায়ক তাই মস্তিষ্ক এই বর্ণ পরিবর্তন আমাদের বুঝতে দেয় না)।

কিন্তু যখন একজন মানুষ নেশা দ্রব্য গ্রহণ করে তখন তা তার মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে এবং নেশা দ্রব্য মস্তিষ্ককে অতিরিক্ত কর্মক্ষম (efficient) হতে বাধ্য করে। ফলে যাদের মস্তিষ্ক অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়ে পড়ে তাদের নেশা দ্রব্য গ্রহণে ঘুম আসে। আর যাদের ঘুম আসে না তারা এক আশ্চর্য দৃষ্টি লাভ করে যেখানে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ রং। আমরা জবা ফুল কে লাল দেখি। কিন্তু যারা নেশা দ্রব্য গ্রহণ করে থাকে তারা লাল ছাড়াও বহু রঙা অপূর্ব এক ফুল দেখবে যার সৌন্দর্য তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। যা তার ভালোলাগায় পরিণত হবে এবং সে পুরোপুরি আসক্ত হওয়ার দিকে পা বাড়াবে। শুরু হবে নেশায় নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। কখনও ইচ্ছায়, কখনও অনিচ্ছায়। (এই ব্যাপারে আরও কথা আছে যা পরবর্তীতে দেয়া হতে পারে)

এখন আবার ফিরে আসি সেই গানের লাইনে, দেখি যে, যদি নেশা কেটে যায় তবে কি হবে?

আমরা যখন কোন কিছু খাই তখন সেই সিগনাল এবং প্রতিবর্ত ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ সাধারণত ভেগাস স্নায়ুর মাধ্যমে  এবং দেহে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া চালু করে। যেমন খাবার খেলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আমাদের হরমোন ও পাচকরস নি:স্বর্ণ হয়ে খাবার হজম হতে সাহায্য করে তেমনি ভাবে নেশাদায়ক দ্রব্য গ্রহণে বিভিন্ন শারীরিক প্রতিক্রিয়া হয়। যেমন : হাত পা কাঁপা, বমিভাব, অস্বস্তি  মাথাধরা, ঘুম আসা, অনিয়ন্ত্রিত মল মূত্র ত্যাগ ইত্যাদি।

যখন কেউ হটাত করেই তাৎক্ষনিক নেশা ছেড়ে দেয় তারা নেশা ছেড়ে দিলেও নেশা তাদেরকে সহজে ছাড়ে না। অর্থাৎ তাদের মধ্যে সেই প্রতিক্রিয়া থেকে যায় ফলে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ না করলেও তাদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া থেকে যায় যা Withdrawal Syndrome বা Discontinuation Syndrome বা Drug Syndrome নামে পরিচিত। এটি উপযুক্ত ও নিয়মিত চিকিৎসা, শক্তিশালী কাউন্সেলিং এবং বন্ধুবৎসল পরিচর্যার মাধ্যমে ভাল করা যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিক্টিম Trauma তে চলে যায় যা হয়ত দুরারোগ্য হয়ে পড়ে এবং পরিণতি কি সেটা সবাই জানি।

তাই অনুরোধ নেশা যে কারণেই করে থাকুন না কেন, নেশা কাটুক বা থাকুক সবক্ষেত্রেই আপনি নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আপনার পরিবার, দেশ হারাবে একজন মূল্যবান মানব সম্পদ। ক্ষণিকের ভুলের জন্য হোক সেটা নিজের বা অন্যের, এজন্য নিজের, পরিবারের এবং দেশের ক্ষতি করবেন না। হয়ত আপনার দ্বারাই হতে পারত দেশের গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজ, হয়ত আপনার দ্বারা উপকৃত হতে পারত বহু মানুষ। নিজের বা অপরের ভুলের জন্য দেশের ক্ষতি করবেন না। আসুন হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করি বিজ্ঞান নিয়ে, গড়ে তুলি সমাজ, গড়ে তুলি দেশ। পাশে আছি আমরা ওমেগা প্রাইম টিম আপনার সাথে। উপরোক্ত বিষয়ে আপনার যেকোনো প্রশ্ন ও মতামত জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে।

সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

Comments are closed.