মানব জাতির সৃষ্টির বহুকাল আগে এই পৃথিবীর অবস্থান আজকের তুলনায় অনেক আলাদা ছিল। পৃথিবীর সাড়ে চার লক্ষ কোটি বছরের জীবনে পৃথিবীতে এমন অনেক পরিবর্তন এসেছে যা আমাদের কল্পনারও বাইরে। পৃথিবী নিজের জীবনের অনেক ধাপ পেরিয়ে বর্তমানের এই রূপ ধারণ করেছে আর এই ধাপগুলো সম্বন্ধে জানলে আপনি অবাক হবেনই। আর এই ধাপগুলি পৃথিবীর কাছে কখনো সুন্দর আবার কখনো দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। আর এইসব সম্বন্ধে জানার পর নিঃসন্দেহে আপনার মনে হবে এই পৃথিবী ও কোনদিন alien planet এর মত দেখতে ছিল। আর পৃথিবীর এই অতীতের গল্প কোন সাইন্স ফিকশন মুভি বা কোন science fiction বইয়ের থেকে কম নয়। তাহলে চলুন আসল পোস্টটি শুরু করা যাক।
আপনি জানলে অবাক হবেন যে আজকের থেকে প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর প্রায় সকল উদ্ভিদের উচ্চতা প্রায় দুই থেকে আড়াই ফুট পর্যন্তই হতো। যার থেকে শুধুমাত্র চন্দন গাছ ই তিন ফুট লম্বা হতো। কিন্তু এক ধরনের মাশরুম কাছে বর্তমান উদ্ভিদের মতই লম্বা হতো। অদ্ভুত মাশরুম গাছ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যেত এদের উচ্চতা প্রায় ২৬ ফিট পর্যন্ত এবং ৩ ফিট মোটা হতো যদিও এর আকার বর্তমান যুগের উদ্ভিদের তুলনায় অনেক ছোট কিন্তু এই গাছগুলি সেসময় পৃথিবীর সবচাইতে উঁচু গাছ গুলোর মধ্যে একটি ছিল। বড় বড় ছাতার মতো এই উদ্ভিদগুলো কে দেখতে সত্যি হয়তো খুব দারুণ লাগত।
বর্তমানে আমাদের এই পৃথিবীর প্রকৃতিতে অনেক রঙের মেলা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এক সময় ছিল যখন এই পৃথিবীর এই সবকিছু দেখতে অনেকটাই আলাদা ছিল। কারণ এই পৃথিবীর সমুদ্র এবং আকাশ চিরকালই নীলচে ছিল না। মনে করা হতো আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ কোটি বছর আগে এই পৃথিবীর সমুদ্র ছিল সবুজ রংয়ের, মহাদীপ গুলো ছিল কালচে রংয়ের এবং আকাশ ছিল লালচে হলুদ রঙের। সমুদ্রের রং সবুজ হওয়ার কারণ ছিল তখন লৌহজাত পদার্থ সমুদ্রের পানির সাথে মিশে ছিল যার ফলে ওই পদার্থের জং সমুদ্রের পানির সাথে মিলে সবুজ রঙের সৃষ্টি ঘটাত। তেমনি মহাদীপ গুলোর রং কালো থাকার কারণ হলো তখন আগ্নেয়গিরির লাভা ঠান্ডা হয়ে জমে মাটির সৃষ্টি করত তাই মহাদীপের মাটিগুলো ছিল কালো রঙেরই। তখন আবহাওয়াতে অক্সিজেনের পরিমাণ ছিল খুবই কম এবং মিথেন গ্যাসের আধিক্যের ফলে আকাশের রং লালচে হলুদ রঙের ছিল। আদিম যুগে এই পৃথিবী দেখতে কেমন ছিল তার খোঁজ বিজ্ঞানীরা করেছে। তার সাথে সাথে পৃথিবীর কোন ধাপে গন্ধ কেমন ছিল তার ধারণাও দিয়েছে।
আপনারা জেনে হয়তো কিছুটা হাসবেন কিংবা অনেককেই বিস্মিত হবেন যে আজকের থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগে এই পৃথিবীর গন্ধ একটি পঁচা ডিমের গন্ধের মতো ছিল। এর কারণ তখন সমুদ্রের নিচে বসবাস করত যেসব ব্যাকটেরিয়া তার সমুদ্রের পানির লবণ থেকে হাইড্রোজেন সালফেট তৈরি করে পরিবেশের গন্ধকে পচা ডিমের মতো গন্ধে তৈরি করেছিলো।। পৃথিবীতে বর্তমান পৃথিবীতে আমরা গাছপালা কিংবা যে কোন উদ্ভিদের রঙ হিসেবে সবুজ রং কেই চিনি। কিন্তু আপনি এটা জেনে অবাক হবেন যে পৃথিবীর শুরুতে যেসব উদ্ভিদ ছিল তাদের রং সবুজ রং ছিল না। কিছুদিন আগে আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সে সময় পৃথিবীতে যেসব উদ্ভিদ জন্মাতো সেসবের রং বেগুনি রংয়ের ছিল কারণ সেসব উদ্ভিদ সূর্যের আলোকে আলাদাভাবে ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করত। এখনকার উদ্ভিদ সবুজ রঙের কারণ এখনকার উদ্ভিদ তাদের খাবার এবং নিজেদেরকে বৃদ্ধি করার জন্য সূর্যের আলোর পাশাপাশি ক্লোরোফিলে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু সেই সময়ের উদ্ভিদ সূর্যের আলোকে ক্লোরোফিলের বদলে রেট্রিনালরিগার্ডের ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি করত। যার ফলে এদের রং বেগুনি ছিল তখন যদি আমরা পৃথিবীর উপর থেকে দেখতে পারতাম অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে থেকে পৃথিবী কে দেখতে পারতাম তাহলে সেখানে সবুজের বদলে বেগুনি রং বেশি মাত্রায় দেখা যেত।
আমরা সকলেই জানি যে হিম যুগ অনেক বছর ধরে চলেছিল এই পৃথিবীতে কিন্তু কিছুদিন আগেই জার্মানির এক সমীক্ষায় উঠে আসে যে আজ থেকে প্রায় 70 কোটি বছর আগে এই পৃথিবীতে এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যা অবাক করার মতো তথ্য দেয়। তথ্যগুলো অনুযায়ী পৃথিবী তখন মহাকাশ থেকে দেখতে একটি বরফের গোলার মতো দেখতে লাগত। কারণ তখন পৃথিবীর প্রায় সম্পূর্ণ অংশই বরফের মোটা চাদর এর মাধ্যমে ঢাকা ছিল যাকে বর্তমান বিজ্ঞানিরা Snowball Earth নামেও ডাকে। আপনি জেনে অবাক হবেন যে পৃথিবীর যেসব জায়গা বর্তমানে উষ্ণ সেসব জায়গা আজ থেকে প্রায় 70 কোটি বছর আগে বরফের স্তরে ঢাকা ছিল তখন আজকের এই পৃথিবীর সবচাইতে গরম জায়গাও আজকের পৃথিবীর north pole এর মতো ঠান্ডা জায়গা ছিল। কিন্তু এই ঠান্ডার যুগ শেষ হওয়ার পর এই পৃথিবীতে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
মনে করা হতো এই পৃথিবীতে প্রায় 1 লক্ষ বছর টানা রাসায়নিক বৃষ্টি হতে থাকে। এই যুগকে বিজ্ঞানীরা Intense Climate In Weathering নাম দেয়। পৃথিবীতে এক লক্ষ বছর রাসায়নিক বৃষ্টির কারণে পৃথিবীর সমস্ত বরফ গলে যায় এবং পৃথিবী এক নরকে পরিণত হয় এবং এই ঘটনার পৃথিবীবাসীর জন্য এক দুঃস্বপ্নের মতো মনে হলেও এই ঘটনাটি পৃথিবীবাসীর জন্য একটি ভালো খবরও ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে এ রাসায়নিক বৃষ্টির ফলেই এই সমুদ্র প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ লাভ করে যা কিনা সমুদ্রের গভীরে জীব সৃষ্টি হতে সাহায্য করে। তাছাড়া এই আবহাওয়া এই পৃথিবীতে অক্সিজেনের পরিমাণ কে আরও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। যার ফলে পৃথিবীতে জীব সৃষ্টির সম্ভাবনা শুরু হয়।
পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের Artic সম্বন্ধেতো আমরা সবাইই জানি। এখানকার জলবায়ু এতটাই ঠাণ্ডা যে, এখানে জীবনের নির্দেশন খুব কমই পাওয়া যায় কিন্তু, আপ্নারা জেনে অবাক হবেন যে, Artic আজ থেকে ৫ কোটি বছর আগে অন্য যায়গায় অবস্থিত ছিল। সেসময় পৃথিবীর জীবনকালের সবচেয়ে গরমকালীন সময় চলছিল যেখানে আলস্কা ও গ্রিনল্যান্ডেরমত ঠাণ্ডা যায়গাও সবুজ শ্যামল গাছপালা ও নদী এবং জীবজন্তুতে ভরপুর ছিল এমনকি পৃথিবীর উত্তরগোলার্ধের অ্যান্টার্কটিকও সবুজ শ্যামল ছিল।
ধারণা করা হয়, তখন Artic এর সমুদ্রও পরিস্কার ও মিঠা পানিতে পরিপূর্ণ ছিল যেখানে প্রচুর জীব বাস করত।
তাছাড়া, এখানে অনেক ধরণের গাছপালা জন্মাত। পুরো উত্তর গোলার্ধে কচ্ছপ ও ঘরিয়াল অনেক পরিমাণে দেখা যেতো। আপনি এটা জেনেও চোখ কপালে তুল্বেন যে, তখন পৃথিবী এত পরিমাণে গরম ছিল যে, Artic এর মত যায়গাও উষ্ণতা মাত্র ২০ সেলসিয়াসের মতই হতো। আজ থেকে প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে যখন ছোট ছোট গাছ ভর্তি ছিল তখন পৃথিবীতে অক্সিজেনের মাত্রা সবথেকে বেশি ছিল। যা আজকের দিনের তুলনায় দেড়গুণ বেশি ছিল। আর সে সময় পৃথিবীতে অনেক পতঙ্গের সৃষ্টি হয় যার দৈর্ঘ্য ২ ফিট পর্যন্ত হতো।
তো, আজকের আলোচনা এইটুকুই। আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা চমকে গেছেন। যদি না চমকে থাকেন তাহলে পরবর্তীতে আরও অনেক বিষয় আসবে যা আপনাদের চমকে দিবে।
Leave a Reply