বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস এখন দ্রুততম এবং মারাত্মক রোগগুলির মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনে ডায়াবেটিস অ্যাটলাসের মতে, বিশ্বের ৪১৫ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। এই সংখ্যাটি ২০৪০ সালের মধ্যে ৬৪২ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী, গড়ে ১১ জন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে ১ জন ব্যক্তি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত এবং বিশ্বস্বাস্থ্য খরচের ১২ শতাংশই ডায়াবেটিসে ব্যয় হয়।
WHO বুলেটিনে প্রকাশিত গবেষণার মতে বাংলাদেশের ৭.১ মিলিয়ন মানুষ এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত। ২০৪০ সালে এর সংখ্যা ১৩.৬ মিলিয়ন হবে বলে ধারণা করা হয়। ভেবে দেখুন আমরা কত ঝুকির মধ্যে আছি। কিন্তু এই ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বা ৫১.২% মানুষ, ভালো রাখেন না এবং সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন না।
ডায়াবেটিস নিয়ে আমাদের সমাজে যতগুলো ভূল ধারণা প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে ” বেশী চিনি খেলেই ডায়াবেটিস হবে” এটি অন্যতম। কথাটি পুরোপুরিভাবে সত্য নয়। কারণ গবেষণা বলছে খালি বেশি চিনি খেলেই যে ডায়াবেটিস হবে বা কম খেলে ডায়াবেটিস ঠিক হয়ে যাবে এটি ভূল ধারণা।
চিনি বেশি খাবার সাথে ডায়াবেটিসের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের অগ্নাশয় বা পেনক্রিয়াস হতে ইনসুলিন নামক এক হরমোন নিরগত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো রক্তের সুগার বা চিনি কোষের ভিতর ঢুকানো, যেন আমাদের কোষে সুগার বা চিনির পরিমান ঠিক থাকে।অগ্নাশয় থেকে ইনসুলিন কম বা না বের হলেই রক্তে চিনি বা গ্লুকোজের পরিমান বেড়ে যায় যা আমাদের কাছে ডায়বেটিস রোগ নামে পরিচিত।
ডায়াবেটিস রোগ মূলত দু’ধরনের ।
• টাইপ -১
এটি ইনসুলিন এর উপর নির্ভরশীল। শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন কম হওয়ার কারণে এই ধরণের ডায়াবেটিস দেখা দেয়। এদের চিকিৎসার জন্য শরীরের বাইরে থেকে ইনসুলিন নিতে হয় ।
• টাইপ -২
এ ধরনের ডায়াবেটিস মূলত রক্তে যথেষ্ট পরিমান ইনসুলিন থাকার সত্যেও শারীরবৃত্তীয় কিছু ত্রুটির জন্য দেহকোষগুলি ঠিক মত ব্যবহার এর ব্যবহার করতে পারে না। সাধারণত এটি বেশী বয়েসে ধরা পড়ে এবং ঠিক মত খাবার খেলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এখন বেশী চিনি খাওয়ার সঙ্গে ডায়বেটিসের কোন সম্পর্ক আছে কিনা এই ব্যাপারে ব্রিটেনে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠিত হয় এবং এবং তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী -বেশি চিনি খাবার সঙ্গে ডায়বেটিসের কোন সম্পর্ক নেই ।
তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপস্থিত হয়েছেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক সমীক্ষা এবং নানা পশু পাখির উপর গবেষণা করে । বরং তারা দেখেছেন যে ডায়বেটিস রোগীদের জন্য যে ফ্রুকটোজ বা সরবিটল দেওয়া হয় তাতে অনেক সময় ক্ষতি হয়।
গবেষকরা এটাও বলছেন যে ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে মানেই আপনাকে চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে, এমনটি নয়। আর হাইপো (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাইপ ওয়ানের ক্ষেত্রে) হয়ে গেলে তো বরং সুগার ট্যাবলেট খেতে হয়। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, আসলে খাবার সুষম হলে আলাদা করে চিনি বাদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
বর্তমানে ব্রিটেনে ডায়বেটিস অ্যাসোসিয়েশন ডায়বেটিস রোগীর খাবারে ২৫ গ্রামের মত চিনি রাখা যেতে পারে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন ।
সর্বশেষে বলা যাদের ডায়বেটিস রোগ নেই তাদের চিনি মেপে খাবার কোন প্রয়োজন নেই। কেননা চিনি শক্তি যোগায়। ফলে চিনি কম খেলে দেহে শক্তির পরিমান কম হয়ে যেতে পারে। এখন আবার অনেকেই হৃদরোগের ভয়ে চর্বি জাতীয় খাবার কম খাচ্ছেন। ফলে চর্বি জাতীয় খাবার থেকে যে শক্তি আসত তার পরিমাণও কমে যাচ্ছে। কিন্তু শরীরের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান শক্তি অবশ্যই দরকার। ফলে ডায়বেটিস হবে এই ভয়ে চিনি কম খেলে তার পরিণাম ভাল না হয়ে খারাপই হবে।
তথ্যসূত্র :
Leave a Reply