২০২০ এর মে মাস পর্যন্ত দেখা গেছে ৭০ শতাংশ ব্যবহারকারী ব্রাউজার হিসেবে ক্রোম ব্যবহার করেন। অপরদিকে ফায়ারফক্স ও এজ এর ক্ষেত্রে শতাংশের হিসাবে সংখ্যাটা ৮ ও ৭। দীর্ঘকাল ব্রাউজারের বাজারে পিছিয়ে থেকে এবারে শক্ত অবস্থান তৈরি করার জন্য মাইক্রোসফটকে উঠেপড়ে লাগতে দেখা যাচ্ছে।

সম্পুর্ণ নতুন রুপে এজ এর আগমন হওয়ার বেশ কয়েক মাস হয়ে গেলো। ক্রোমিয়াম ভিত্তিক এই নতুন সংস্করণ ইতিমধ্যেই অনেক ব্যবহারকারীরা পছন্দ করেছেন, ক্রমেই সেই সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। সেই সাথে বাড়ছে নানান অভিযোগ, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে যারা সচেতন তারা এজের এমন আগমনকে মোটেও খুশিমনে গ্রহণ করতে পারছেন না।
সম্প্রতি উইন্ডোজের রেডিট কমিউনিটির মাধ্যমে Edge এর বিরুদ্ধে ফায়ারফক্সের ডাটা চুরির অভিযোগ সামনে এসেছে। ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ফায়ারফক্সে থাকা বুকমার্ক ও হিস্টোরি এজ এ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনাটি অনেকের গোচরেই এসেছে।
যথেষ্ট দ্রুত এবং কার্যকরী ব্রাউজার হলেও নিরাপত্তার দিক থেকে এজ অন্যান্য বহুল ব্যবহৃত ব্রাউজারের থেকে পিছিয়ে আছে। ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন এর বিশেষজ্ঞরা ছয়টি ব্রাউজারের ব্যাক এন্ড সার্ভারের কার্যক্রমের ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন। ব্যবহারকারীর হার্ডওয়ারের তথ্য, আইপি এড্রেস লোকেশন ইত্যাদি ডাটা কালেক্ট করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

Edge এর নতুন সংস্করণটি আপডেট হচ্ছে উইন্ডোজ আপডেটের মাধ্যমে। এছাড়াও ম্যানুয়ালি ইন্সটলেশনের জন্য প্রায়ই তাগাদা দেওয়া হচ্ছে ব্যবহারকারীকে। ইন্সটল করতে গিয়েই অনেক ফায়ারফক্স ব্যবহারকারী লক্ষ্য করেছেন এজ কোনো রকমের অনুমতি ছাড়াই ভিন্ন ব্রাউজারে থাকা ডাটা ইম্পোর্ট করে নিচ্ছে।
ইন্সটলেশনের পর সেটাপ উইজার্ডের পপ আপে উল্লেখ থাকে অন্য ব্রাউজার থেকে ডাটা/বুকমার্ক ইম্পোর্ট করার কথা। ব্যবহারকারী চাইলে ডাটা ইম্পোর্ট করতে পারেন কিংবা অনুমতি নাও দিতে পারেন। অথচ এজ এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে ব্যবহারকারীর অনুমতির আগেই এটি ফায়ারফক্সে থাকা ডাটা ইম্পোর্ট করে নিচ্ছে, বুকমার্কগুলো পপ আপ ডায়লগ এর পেছনে দেখা যাচ্ছে। যদি ব্যবহারকারী ইম্পোর্ট করার অনুমতি না দেন, তখনই বুকমার্কগুলো গায়েব হয়ে যাচ্ছে।
Edge এর সেটাপ উইজার্ড, যার শুরুতে লেখা থাকে ‘Get Started’ সেটিতে কোনো এক্সিট অপশন নেই। উইজার্ডটি একবার চালু করলে সেটি থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তাই রাখেনি ডেভেলপাররা। বাধ্য হয়েই ব্যবহারকারীকে সেটাপ শেষ করতে হচ্ছে কিংবা টাস্ক ম্যানেজার ব্যবহার করে সেটাপ উইজার্ড বন্ধ করতে হচ্ছে। একজন ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, টাস্ক ম্যানেজার থেকে কার্যক্রম বন্ধ করার পরেও পরবর্তীতে তিনি ফায়ারফক্সের বুকমার্ক ও হিস্টোরি এজে দেখতে পেয়েছেন। এমনকি ক্রোমের ডাটাও এজ এ ইম্পোর্ট হতে দেখা গেছে।
নতুন সংস্করণ ইন্সটল করার জন্য অযাচিতভাবে জোর খাটানোর ব্যাপারটাও বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর কাছে অপছন্দনীয়। বার বার ইন্সটলেশনের পপ আপ, সার্চ রেজাল্টে এজ ইন্সটলের এডভার্টাইসমেন্ট সব মিলিয়ে বিরক্তিকর একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। যদিওবা নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কেউ কেউ একবার ব্যবহার করার চেষ্টা চালান সেখানেও অসন্তুষ্টির ঘটনা ঘটছে।
Edge এর অনুমতিবিহীন এই কান্ড ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলছে। বুকমার্ক, ব্রাউজিং হিস্টোরি যদি ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা হয়ে থাকে তাহলে অগোচরে আরো ঠিক কী কী হচ্ছে? ব্যক্তিগত ডাটা আদৌ নিরাপদ থাকবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট শংকা রয়েছে।
মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ডাটা চুরির অভিযোগ নতুন নয়। নিরাপত্তা ব্যাপারে সচেতন ব্যবহারকারীরা এজ এর এমন কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন, নিন্দা জানিয়েছেন। মার্কেটে শক্ত অবস্থান তৈরি করার লক্ষ্যে মাইক্রোসফট যে পথে এগুচ্ছে সেটা সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে বেশ বিরক্তিকর, অগ্রহণযোগ্য।