এল-নিনো সাউদার্ন অসিলেশনঃ পৃথিবীর এক অদৃশ্য জলবায়ু

আমরা সকলেই জানি, পৃথিবীতে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অনেকগুলো দেশের আবহাওয়া, বিশেষ করে তাপমাত্রার পার্থক্য বেড়ে গিয়েছে। যার ফলে প্রতি নিয়ত দেশগুলোতে কোথাও প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা দেখা দিয়েছে অথবা কোথাও শুষ্কতার দরুন মাঠে ফসল ফলানোও দায় হয়ে পড়ছে।

কিন্তু আমি যদি বলি যে এসকল সমস্যার পিছনে দুইটি প্রাকৃতিক কারণ থাকতে পারে। যার জন্য প্রতি ৩-৭ বছরের মধ্যে প্রায় ৪ টি মহাদেশের বিশাল বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে এই মহামারি দেখা দেয়। অর্থাৎ, চীনে যেখানে বর্ষার সময় স্বাভাবিক নিয়মে বৃষ্টি হতো সেখানে খরা দেখা দেয়।

আমেরিকা (পশ্চিমে), চিলিতে যেখানে শীতের প্রকোপ থাকার কথা সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে বন্যা দেখা দেয়। এছাড়াও মধ্য এশিয়া, জাপান, পূর্ব অস্ট্রেলিয়া, চিলি, আর্জেন্টিনা, আমেরিকা, কানাডার মতো দেশগুলির আবহাওয়ার বিরূপ পরিবর্তন দেখা দেয়।

এধরনের প্রভাবগুলোকে বিজ্ঞানীরা এল-নিনোর প্রভাব বা “এল-নিনো” নামে আখ্যা দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন এই জলবায়ুর প্রভাবের কারণে এইসকল বিরূপ পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।

কিন্তু কি এই এল-নিনো? কিভাবে তার সৃষ্টি এবং কেন এটি ঘটছে? এর সাথে মানুষের কোনো সংযুক্তি রয়েছে কি? তাহলে আসুন আজ এই পর্বে জেনে আসি এই অদৃশ্য জলবায়ু সম্পর্কে।

এল-নিনো কি?

এল-নিনো হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া দক্ষিণাঞ্চলীয় পরিচলন পদ্ধতির (বায়ুর ক্ষেত্রে) পরিবর্তিত রূপ। অর্থাৎ, প্রশান্ত মহাসাগরে তৈরি হওয়া দক্ষিণাঞ্চলীয় পরিচলন পদ্ধতির উষ্ণ অবস্থাই হচ্ছে এল-নিনো। এল-নিনো একটি স্প্যানিশ শব্দ যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ছেলে বা ‘বয়’।

মহাসমুদ্রের উষ্ণ পানির সাথে তাল রেখে এটি মধ্য এবং পূর্ব-মধ্য প্রশান্ত সাগরীয় অঞ্চলে বিস্তৃত। যদি আরো নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করি তবে বলা হয় যে, অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন থেকে উচ্চ চাপে এবং তাইহিতির (মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ) নিম্নচাপ পর্যন্ত বিস্তৃত এই দক্ষিণাঞ্চলীয় পরিচলন পদ্ধতি। এর জন্য প্রধানত দায়ী সমুদ্রের উপরিভাগের উষ্ণ এবং ঠান্ডা পানির প্রবাহ।

ছবিঃ এল-নিনোর সময়কালে মহাসমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার পরিবর্তন

প্রশান্ত মহাসগরের পানির তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে এই জলবায়ু পরিচালিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রায় ১৬০০ খ্রিটাব্দের দিকে, যারা দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ ধরত, তারা লক্ষ্য করে পানি হঠাৎ করেই উষ্ণ হয়ে আছে (ডিসেম্বর মাসে)। কিন্তু ঐ অঞ্চলে ঐ সময়ে তাপমাত্রা খুব কম থাকে। (তথ্যসূত্রঃ Australian Bureau of Meteorology, 2016)

তারা তখন সেই জলবায়ু সম্পর্কে অবহিত ছিলো না। তখন ঐ এলাকার মৎস উৎপাদন কমে যায়। যার জন্য ঐ মানুষগুলো এর নাম দেন এল-নিনো।

ছবিঃ স্যার গিলবার্ট ওয়াকার, যার নামে ওয়াকার সার্কুলেশন

কিন্তু পরবর্তিতে ১৯২০ সালে দুই বিজ্ঞানী, গিলবার্ট ওয়াকার এবং জেকব জার্কনেস এই জলবায়ুর অস্তিত্ব বের করেন। পরবর্তিতে ১৯৬০ সালের দিকে জেকব বায়ুমন্ডলের সাপেক্ষে ঐ অঞ্চলের আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তারা বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে, এইখানে একধরণের পরিচলন ঘটছে যা অস্বাভাবিক। আর সেটি প্রতি বছর ঘটছে না। বরং কিছু কাল পর পর সংঘটিত হচ্ছে। তখন তারা আবিষ্কার করেন এবং ১৯৬৯ এর নাম দেন বিখ্যাত “ওয়াকার পরিচলন” বা “ওয়াকার সার্কুলেশন”। (তথ্যসূত্রঃ Atmospheric teleconnections from the equatorial Pacific,” Monthly Weather Review, Bjerknes, J. (March 1969))

ওয়াকার সার্কুলেশন ঘটে থাকে সাধারণ সময়ে হয়ে থাকে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে, যেখানে বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু যখন এল-নিনো সংগঠিত হয়ে তখন তা আর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না। তখন ওয়াকার সার্কুলেশনটি ‘জেট স্ট্রিমের’ (সমুদ্রে তৈরি হওয়া শক্তিশালী বায়ুশক্তি) মাধ্যমে পূর্বদিকে চলতে থাকে। যার ফলে পুরো অঞ্চলের আবহাওয়ার সম্পূর্ন পরিবর্তন ঘটে। (তথ্যসূত্রঃ Relationship Between Sea Surface Temperature and Thermocline Depth in the Eastern Equatorial Pacific.- Journal of Physical Oceanography)

কিভাবে পরিচালিত হয় এই এল-নিনো?

প্রথমদিকেই উল্লেখ করেছিলাম যে এল-নিনো অবস্থাটি প্রতি ৩-৭ বছর অন্তর পর্যবেক্ষণ করা যায়। বিজ্ঞানীদের মতে এটি প্রকৃতিকভাবেই সংঘঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত বলতে পারেননি যে এল-নিনো নির্দিষ্টভাবে কবে বা কোন বছর সংঘঠিত হতে পারেন।

ছবিঃ এল-নিনোর পূর্ব এবং পরবর্তী সময়

যেমনটি পূর্বেই উল্লেখ করেছিলাম যে, এল-নিনো ৩ থেকে ৭ বছরের যে কোনো সময় ঘটতে পারে। সেই ক্ষেত্রে পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা এল-নিনো কিভাবে পরিচালিত হয় তার একটি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পেরেছেন। মূলত ডারউন (অস্ট্রেলিয়া) এবং তাহিতি (মধ্য প্রশান্ত মহাসাগর) এই অঞ্চল থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেই এল-নিনোর অবস্থান সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন।

এল-নিনো শুরু হওয়ার পুর্বে, অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে একমেন ট্রান্সপোর্ট এর জন্য পানি উষ্ণ থাকে। যার জন্য উপরের দিকের উষ্ণ পানি বায়ুর ঘর্ষনের সাহায্য একমেন ট্রান্সপর্টের মাধ্যমে নিচের দিকে নিয়ে যায়। আবার সেই পানি ক্রান্তীয় পানির পরিচলনের মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে অর্থাৎ আমেরিকার দিকে যেতে থাকে। (তথ্যসূত্রঃ National Oceanic and Atmospheric Administration, 2009)

আবার দুই আমেরিকা মহাদেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন রূপ দেখা যায়। তাদের ক্ষেত্রে যখন উপকূল দিয়ে পানির পরিচলন প্রক্রিয়াটি দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেকে যায় (পেরুর উপকূল), তখন উপরের পানি সরে যাওয়ায় নিচের ঠান্ডা পানি উপরে উঠে আসে। যার সাথে সমুদ্রের নিচে অবস্থিত খনিজ পদার্থগুলো উপরে আসে। এতে করে মৎস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই সময় পেরুর দিকে থার্মোক্লাইন উপরের নিকে চলে আসে।

প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিক উষ্ণ হওয়ায় ঐ অঞ্চলের পানি একটু উপরের দিকে বিরাজ করে। আর পূর্ব দিকে ঠান্ডা হওয়ায় তা নিম্নদিকে বিরাজমান থাকে। এতে করে পানি স্বভাবতই উষ্ণ অঞ্চল থেকে ঠান্ডা অঞ্চলের দিকে যায় (উচু থেকে নিচু অঞ্চলে) এবং উষ্ণ পানি ঠান্ডা হয়ে বায়ুর সাহায্যে (কোরিওলিস শক্তি) আবার পূর্বের জায়গায় ফিরে আসে। এই কারণে স্বাভাবিক সময়ে জুন-সেপ্টেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়া, জাপান, চীনে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে, পেরু অঞ্চলে শীত পড়ে।

কিন্তু যখন এল-নিনো সংঘঠিত হয়, তখন সবকিছুই বদলে যায়। সব কিছুই প্রায় উল্টো হয়ে যায়। সবার প্রথমে ওয়াকার সার্কুলেশন পূর্বদিকে এগিয়ে যেতে থাকে। যেটি অস্বাভাবিক। মহাসমুদ্রের নিচে থাকা থার্মোক্লাইন প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে উপরের দিকে উঠে যায় (ঠান্ডা পানি উপরে আসে) এবং পূর্বদিকে নিচে নেমে যায় (ঠান্ডা পানি নিচে নেমে যায়)।

সমুদ্রের উষ্ণ বায়ু পূর্ব দিকে সরে আসে এবং সমুদ্রের পানি অনেক বেশি উষ্ণ হয়ে উঠে। যে বায়ু প্রবাহের জন্য উপকুলে সমুদ্রের পানি সরে গিয়ে নিচের ঠান্ডা পানি উপরে আসতে পারতো তা বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিক অনেক শুষ্ক হয়ে যায় এবং পূর্ব দিকে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে যায়। শুষ্কতার জন্য এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার অনেক অঞ্চলে খরা দেখা দেয় এবং পানি শূন্য হয়ে পড়ে।

এর দুটি কারণ বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে, ওয়াকার সার্কুলেশনের নিজের স্থান পরিবর্তন এবং ট্রেড বায়ুর গতি হঠাৎ কমে যাওয়া। কিন্তু কেন এই ঘটনা ঘটছে সেই সম্পর্কে আজ পর্যন্ত কোনো তথ্য বিজ্ঞানীদের থেকে পাওয়া যায়নি। (তথ্যসূত্রঃ Impact of Shifting Patterns of Pacific Ocean Warming on North Atlantic Tropical Cyclones.- Peter J. Webster, Judith A. Curry (2009).

এল-নিনোর প্রভাব কতটুকু?

এল-নিনোর আগমন সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানীদের মাঝে সুস্পষ্ট নয়। যখন জলবায়ুর পরিবর্তন দেখা দেয়, শুধুমাত্র তখনি বুঝা যায় এল-নিনোর প্রভাব।

এখন সকলের ধারণা এমনকি অনেক বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিলো, এল-নিনোর প্রভাব শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিদ্যমান। কিন্তু না, বর্তমানে বিজ্ঞানীদের মতামত হচ্ছে এর প্রভাব সারাবিশ্বে রয়েছে।

এল-নিনো জলবায়ুর কারণে লাটিন আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে খরা দেখা দেয়। এল নিনোর প্রভাব বিশেষত দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর মধ্যে তীব্রতর হয়েছে, যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহজেই তাদের জীবিকার সুরক্ষা বিঘ্নিত করতে পারে। সেখানে এল-নিনো তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

ছবিঃ গ্রীষ্ম এবং শীতকালে এল-নিনোর বিস্তার

ভারী বৃষ্টিপাত এবং বন্যার ফলে ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, সোমালিয়া এবং কেনিয়ার মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছে, পরিবারের সম্পদ ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও, পূর্ব আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং এশিয়ার অনেকগুলো খরা ও বন্যা আক্রান্ত অঞ্চলে কলেরার মতো পানি বাহিত রোগগুলি নাটকীয়ভাবে বেড়েছে।

পাপুয়া নিউ গিনিতে, খরার কারণে আক্রান্ত পাহাড়ী জনগষ্ঠীগুলো নিম্নাঞ্চলগুলিতে চলে গিয়েছে যেখানে তারা ম্যালেরিয়ার সংক্রমনের হার বাড়িয়ে দিয়েছে নিম্নাঞ্চলের মানুষ জনের মধ্যে।

ইন্দোনেশিয়ায়, এল নিনোর কারণে যে খরা হয়েছিল তার জন্য ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে অনিয়ন্ত্রিত অগ্নিকাণ্ডের ফলে ৩.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টনেরও বেশি শস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছিলো এবং পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। এই খরাই মূলত দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। (তথ্যসূত্রঃ El-Nino in1997-98, Reliefweb.com)

শুধুমাত্র ১৯৯৭-৯৮ সালের এল-নিনো ঘটনার সময় প্রায় ২,১০০ মানুষ মারা যায়। তাদের বেশিরভাগই ছিলো খাদ্যের অভাব। তাছাড়া পুরো বিশ্বে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়। দক্ষিণ আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলগুলোতে মাছের অভাব দেখা দেয়। কারণ তখন উপকূলবর্তি পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি ছিলো। যার জন্য প্রচুর মৎস সম্পদ নষ্ট হয়। (তথ্যসূত্রঃ El-Nino effects, NOAA)

ছবিঃ ১৯৯৭ তে এল-নিনোর প্রভাব

এমনকি ১৯৮২-৮৩ সালের এল-নিনোর সময়কালে বন্যা, খরা, এবং প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক এলাকায় অনেকগুলো ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়। এতে করে অনেক প্রাণহানি ঘটে। এর ফলে বিষুবীয় অঞ্চলবর্তি প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিলো।

ফলে প্রচুর মাছ মারা যায় এবং সামুদ্রিক পাখিগুলো তাদের স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে বাধ্য হয়। এর প্রভাব সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীরগুলোতেও ছিলো। এমনকি ‘দ্যা গ্রেট বেরিয়ার রিফ’ এর প্রায় অনেকগুলো প্রবাল মারা যায়।

এল নিনো ২০১৫-২০১৬ সালে পশ্চিম থেকে ক্রান্তীয় প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ৬০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করেছে, বিশেষত পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকা, আফ্রিকার হর্ন, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। (তথ্যসূত্রঃ El-Nino effects, WHO, 2016)

ছবিঃ ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া

এই সমস্যার সমাধান কোথায়?

আমরা সবসময় ঐসকল সমস্যার সমাধান করতে পারি যেগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা রয়েছে। এল-নিনো নিয়ে এখনো বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দ্বিধা দন্দে আছেন। এল-নিনোর আবির্ভাব সম্পর্কে যদি পূর্ব থেকে জানা থাকতো তাহলে হয়ত এই সমস্যাগুলোর সমাধান পাওয়া যেতে পারতো।

এল-নিনোর ‘র সাথে লা-নিনা ‘র সম্পর্ক কি?

লা-নিনা হচ্ছে এল-নিনোর বিপরীত ঘটনা। অর্থাৎ, এল-নিনোর পরবর্তি ঘটনাই হচ্ছে লা-নিনা। এল-নিনোর প্রভাব সরে আসার পর থার্মোক্লাইন যখন তার পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসার কথা, সেখানে থার্মোক্লাইন আরো বেশি নিচে চলে যায়।

প্রশান্তের পশ্চিমে স্বাভাবিকের চেয়েও নিচে এবং পূর্বে স্বাভাবিকের চেয়েও উপরে অবস্থান করে থার্মোক্লাইন। যার ফলে সমুদ্র প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি উষ্ণ থাকায় জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। (তথ্যসূত্রঃ El-Nino theme page, NOAA)

যার ফলে এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং তার আশপাশের দ্বীপগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যা দেখা দেয়। এতে ফসলি জমির প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এমনকি বড় ধরণের দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।

ছবিঃ ইন্দোনেশিয়া, ২০১৫ Image by © ANTARA

আর অপর দিকে লাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে শীতের প্রভাব বাড়তে থাকে। যার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশিই থাকে। আবার সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে মাছ উপকূল থেকে দূরে সরে যায় অথবা অন্য কোথাও অবস্থান করে। সেক্ষেত্রে খাদ্য সংকটে পড়াই স্বাভাবিক।

হয়ত একদিন আমরা এই জলবায়ু সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারবো। হয়ত এই অদৃশ্য ঘটনা থেকে মানুষকে একটু হলেও ছায়া দিতে পারবো। বিজ্ঞানীরা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন নতুন কোনো তথ্যের সন্ধানে। আর যাই হোক, পৃথিবীর পরিবেশের প্রতি যন্তশীল হওয়া আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

আল্লাহ্‌ হাফেজ

এমোনিয়াম নাইট্রেট এবং বৈরুতের মহাবিস্ফোরণ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>