বিনোদন প্রযুক্তি – নয়নাভিরাম যত গেমস : পর্ব ১

প্রযুক্তি সময়ের আবর্তনে ধীরে ধীরে আমাদের জীবনের চিত্তবিনোদনগুলোর সাথে মিশে গিয়েছে। মিশে গিয়ে সৃষ্টি করেছে প্রযুক্তির নতুন এক দিক বিনোদন প্রযুক্তি। চিত্তবিনোদন এমন একটা জিনিষ, যা যেকোনো স্বাভাবিক মানুষের জন্যে ন্যূনতম প্রয়োজনীয়। আর সভ্যতার উৎকর্ষতায় প্রযুক্তি যেখানে আমাদের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছে, সেখানে প্রযুক্তি আমাদের মাঝে বিনোদনের নতুন এক দিক যোগ করেছে যার নাম গেমিং! গেমিংকে অনেকে নির্বিচারে কটাক্ষ করলেও গেমিং অন্যান্য যেকোনো বাজে অভ্যাস, মাদকাসক্তি আর অসুস্থ বিনোদনের চাইতে শ্রেয়। এবং অনেকক্ষেত্রে উপকারীও!

সে যাইহোক, প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় গেমিং জগতের গেমগুলোতেও এসেছে অনেক বিবর্তন। কাহিনীর পাশাপাশি নান্দনিক বা Aesthetic এর যে দিকটা রয়েছে তাতে ক্রমেই নিয়ে আসা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। আর তা করতে গিয়েই একে একে বেরিয়েছে বহু Visually Stunning Game। গ্রাফিক্স বা ভিজুয়াল দিক একটা গেমের মূল বিষয় না হলেও গেমটার বাহ্যিক দিক কতটা সুন্দর তা উপভোগ করাটা পুরোটাই নির্ভর করে এই গ্রাফিক্সের উপরই। আর তাই গেমিং জগতে গ্রাফিক্যাল দিকটা Artistic আর Aesthetic দিকের মূল পরিচায়ক।
আজ আলোচনা করবো সেইসব গেমের ব্যাপারেই যেগুলো সময় সময়ের হিসেবে ভিজুয়াল দিক দিয়ে খুবই নজড়কাড়া ছিল। আলোচনায় আমি শাহেদ রাইয়ান আছি আপনাদের সাথে, চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক গেমগুলোর তালিকা।

PC প্লাটফর্ম

১. Crysis (2007)

এখনকার সময়ে হয়তো খুব বেশি আহামরি গ্রাফিক্স মনে হবে না, কিন্তু Cry Engine এ তৈরি এই গেমটি ২০০৭ সালের গ্রাফিক্স এর তুলনায় অনেক অনেক বেশি এগিয়ে ছিল এবং সত্যি বলতে ক্রাইসিস এমন একটা গেম যা এখনো দেখলে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়!
গেমটি শুধু যে Visually Stunning তা নয়, এর কাহিনীও শ্বাসরুদ্ধকর।
গেমটির পাবলিশার Electronic Arts।

২. Mirror’s Edge (2008)

জনপ্রিয় Unreal Engine এর ভার্সন 3 তে তৈরি গেম মিরর্স এজ সেই সব পুরনো গেমগুলোর একটা যার গ্রাফিক্স তখন তো বটেই, এখনো আপনাকে মুগ্ধ করবে। গেমটির কাহিনী মোটামুটি মানের ভাল। তবে গেমপ্লে বলতে কেবল লাফালাফি ছাড়া মূলতে তেমন কিছুই না। কিন্তু এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিংয়ে লাফালাফির শ্বাসরুদ্ধকর কাজ করতে গিয়ে আপনি অনুভব করতে পারবেন গেমটির শহুরে চারপাশ কতটা ভাল গ্রাফিক্স এ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে!
গেমটি Electronics Arts থেকে প্রকাশিত।

৩. Splinter Cell : Conviction (2010)

ইউবিসফটের তৈরি স্প্লিনটার সেল সিরিজের গেম স্প্লিনটার সেল কনভিকশন গেমটি মূলত একটি Closed World Stealth approach Game। অর্থাৎ এতে ইচ্ছেমত পুরো শহর/নগর/গ্রাম/বিস্তর এলাকা জুড়ে ঘুরার ও অনেককিছু করার উপায় নেই। সে হিসেবে গেমটি খুব বেশি ভিজ্যুয়ালি স্টানিং না হলেও এর গ্রাফিক্স, লাইটিং আর টেক্সচার সময়কার হিসেবে বেশ ভাল ছিল। গেমটি Unreal Engine 3 তে তৈরি এবং এর ডেভেলপার Ubisoft Montreal।

৪. Crysis 2 (2011)

ক্রাইসিস সিরিজের ৩য় গেম Crysis 2 ভিজুয়াল দিক থেকে ২০১১ সালের সবচাইতে Stunning গেম। ভিন্ন প্রোট্যাগনিস্ট নিয়ে কিন্তু আগের কাহিনীর সম্পৃক্ততাতেই তৈরি এই গেমটি। এট পুরোপুরি Open World গেম না হলেও Roaming এর জন্য অনেক বড় এরিয়া দেয়া হয়েছে। electronic Arts এর এই গেমটি Cry Engine 3 তে তৈরি যার ভিজুয়াল আউটপুট সত্যিই আপনাকে ভাবতে অবাক করবে এটা আদতেই ২০১১ সালের গেম কিনা! এমনকি এই ২০১৮ সালে এসেও এমন দুর্দান্ত গ্রাফিক্স অনেক গেমে পাওয়া যায়না।

৫. Assassin’s Creed Revelations (2011)

পর্যটনের শহর ঐতিহ্যবাহী Istanbul’কে ঘিরে তৈরি গেমটি সিরিজটির ৪র্থ এবং এৎজিও ট্রিলজির তৃতীয় ও শেষ গেম। ওপেন ওয়ার্ল্ড এই গেমটি ক্রাইসিস ২ এর মত অত উচ্চপর্যায়ের হাই গ্রাফিকাল না হলেও এর চারপাশের দৃশ্য অদ্ভুত, মোহনীয় আর নয়নাভিরাম! গেমটিতে বিখ্যাত মসজিদ ও চার্চ Haghia Sophia থেকে শুরু করে Galata Tower আর তুর্কির পাতাল নগরী কাপাদোকিয়া (Cappadocia) এর দারুণ নির্মাণ রয়েছে! রয়েছে ইস্তানবুলের ঐতিহ্যবাহী বায়েজিদ মসজিদ আর গ্র‍্যান্ড বাজারের মত জায়গা! শুধু তাই নয়, গেমটিতে সিরিয়ার প্রাচীন শহর মাসিয়াফের একটি উন্নত সংস্করণও দেয়া হয়েছে। গেমটি অনেকগুলো কারণে মনোমুগ্ধকর। আগের গেমটির মত এটিও ইউবিসফট এর নিজস্ব ইঞ্জিন Anvil এ তৈরি।

৬. Battlefield 3 (2011)

২০১১ সালের আরেকটি দুর্দান্ত গ্রাফিক্স এর গেম হল ব্যাটলফিল্ড 3। ক্রাইসিস 2 এর মত এটিও FPS বা First Person Shooting গেম। এটি একটি মিলিটারি FPS গেম, যার গ্রাফিক্স দেখলে সত্যি বলতে আমি নিজেও অবাক হই, এটা ২০১১ গেম বটে! ব্যাটলফিল্ড এর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের মতই এটিরো তেমন কোনো কাহিনী না থাকলেও গেমপ্লে বেশ ভাল। গেমটির পাবলিশার Electronics Art, ডেভেলপার EA Dice এবং গেমটি বিখ্যাত Frostbite Engine এ তৈরি।

৭. Far Cry 3 (2012)

Far Cry 3’কে ২০১২ সালের সবচাইতে দারুণ গ্রাফিক্স ও ইনভায়রনমেন্ট এর গেম বলা চলে। গেমটি Cry Engine এর মডিফাইড ভার্সন Dunia Engine এ তৈরি । গেমটির Antagonist Vas Montenegro গেমারদের কাছে বেশ পরিচিত একটা নাম। গেমটির Environment বেশ মনোমুগ্ধকর এবং সাথে এর লাইট কোয়ালিটি, টেক্সচার, রেন্ডার কোয়ালিটি, ফিজিক্স ইফেক্টও দারুণ!

৮. Assassin’s Creed 3 (2012)

২০১২ সালের আরেকটি দুর্দান্ত ওপেন ওয়ার্ল্ড গেম এ্যাসাসিন্স ক্রীড 3 । গেমটিতে যেমন আছে ইতিহাসের ছোঁয়া, তেমনি আছে নিউইয়র্ক আর ফ্রন্টিয়ারের মনোমুগ্ধকর সব পরিবেশ। সেই সাথে গেমটিতে Ubisoft যোগ করেছিল ওয়েদার এবং বরফের বিশেষ সিমুলেশন, যা গেমিংয়ের ইতিহাসে দারুণ কিছু বটে। গেমটা অতোটা হাই টেক্সচারের না হলেও এর Environment যে কোনো প্লেয়ারকেই মুগ্ধ করবে। গেমটি সাইড কোয়েস্ট ও হান্টিং অপশনে ভরপুর। গেমটি Anvil Next ইঞ্জিনে তৈরি।

৯. Crysis 3 (২০১৩)

Graphical মাস্টারপিস যাকে বলা হয়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত Crysis 3। Cry Engine 3 তে তৈরি Electronic Arts এর এই গেমটির ভিজুয়াল সৌন্দর্যের সামনে বর্তমানের বহু হাই গ্রাফিক্যাল গেমও যেন নস্যি! এমনকি খেলতে গিয়ে প্রায়সময় মনে হবে যেন খেলা নয়, কোনো মুভি দেখছে প্লেয়াররা! Crysis 3 এর কাহিনী যেমন দুর্দান্ত তেমনি এর গেমপ্লেও সাবলীল। এমনকি Crysis 3 এ সাপোর্টিং ক্যারেক্টার Psychoর ফেসিয়াল টেক্সচার, রিগিং এবং মোশন ক্যাপচার এত দারুণভাবে করা হয়েছে যে কথা বলার সময় চেহারার অভিব্যক্তি (Expression) দেখলে থতমত খেয়ে যেতে হয়!

১০. Assassin’s Creed 4 Blackflag (2013)

২০১৩ সালের সবচে সুন্দর গেমের কথা জিজ্ঞেস করলে Assassin’s Creed Black Flag এর নাম সে তালিকায় সামনে চলে আসবে! হাভানার অদ্ভুত সবুজে ঘেরা দ্বীপপুঞ্জ থেকে শুরু করে মনোমুগ্ধকর জনপদ, বনাঞ্চল, পশুপাখি, শিকার, সমুদ্র অভিযান, যুদ্ধজাহাজের চোখ ধাধানো গোলাগুলি, কামান দাগা, বনে বনে ঘুরে বেড়ানো, পানির নীচে গুপ্তধন খোঁজা কি নেই গেমটাতে! যেমন মোহনীয় পরিবেশ এর তেমনি এর গেমপ্লে! গোটা সিরিজের সবচে মনোমুগ্ধকর গেমগুলোর একটা এটা। AnvilNext ইঞ্জিনে তৈরি এই গেমটি সিরিজের সবচে জনপ্রিয় গেমগুলোর একটি।

১১. Call of Duty Ghosts (2013)

জনপ্রিয় গেম সিরিজ কল অফ ডিউটির মূল সিরিজের ১০ম গেম এটি। এর ক্রিটিক রেটিং বেশ কম হলেও একথা মানতেই হয় যে ভিন্ন ভিন্ন গেম Environment, টেক্সচার কোয়ালিটি, লাইটিং, গেমপ্লে, সবকিছু মিলিয়েই গেমটি দূর্দান্ত! গেমটির পরিবেশের ভিন্নতা প্লেয়ারকে গেমটি আরো ভালভাবে উপভোগ্য করার যোগ্যতা রাখে বটে। গেমটির ডেভেলপার হল Infinity Ward এবং এর পাবলিশার Activision। গেমটি IW Engine এ তৈরি এবং এতে Smooth গেমিংয়ের জন্যে Shader Cache প্রিলোড করার ব্যবস্থা রয়েছে।

১২. Tomb Raider (2012)

Square Enix এর জনপ্রিয় সিরিজ টুম্ব রেইডারের ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালে একদম নতুন মাত্রা এনে দেয় যে গেমটি, সেটি হল Tomb Raider 2012। এর মধ্য দিয়েই দেখা মিলে এক নতুন রুপের Lara Croft এর। তাবৎ দুনিয়ার গেমাররা যে লারা কে দেখে মুগ্ধ বিমোহিত হয়ে যায়! শুধু তাই নয়, গেমটির Environment, টেক্সচার আর লাইটিংয়েতেও আনা হয় প্রচুর পরিবর্তন আর চোখ ধাধানো উন্নতি! এর মধ্য দিয়েই Reboot ঘটে গোটা সিরিজের। Square Enix এর নিজস্ব ইঞ্জিনে তৈরী টুম্ব রেইডার 2012 তে ব্যবহার করা hair quality গেম গ্রাফিক্সের জগতে এক মাইলফলক, যাতে লারার মাথায় কয়েক লাখ 3d চুল ব্যবহার করা হয়!

১৩. Assassin’s Creed Unity (2014)

২০১৪ সালের গ্রাফিক্যালি সবচাইতে নজরকাড়া গেমের নাম বলতে গেলে হলপ করে বলতে হবে Assassin’s Creed Unity। Ubisoft এর নিজস্ব ইঞ্জিন AnvilNext এর অতি উন্নত ভার্সনে তৈরি গেমটির অপটিমাইজেশন কিছুটা খারাপ আর আর্লি রিলিজে প্রচুর বাগ থাকলেও এর ভিজুয়াল দিকের কথা ভাবলে হতবাক হয়ে যেতে হয়। গেমটি ইউবিসফট এর চার বছরের প্রজেক্ট ছিল যাতে ব্যবহৃত বাড়িঘরের এক তৃতীয়াংশতেই ঢোকা যায়। শুধু তাই নয়, এতে ব্যবহৃত প্যারিসের প্রতিটা চার্চ ও অন্যান্য স্থাপনা এতোটাই নিখুঁতভাবে করা হয়েছে যে হুট করে দেখলে বুঝাই যাবেনা যে এটা একটা গেম! এতে ব্যবহৃত মুভ ও ফাইট মেকানিজম পলিগনাল না, বরঞ্চ ডায়নামিক, অর্থাৎ একেক মুভ এ হাত পায়ের নড়াচড়ায় ভিন্নতা রয়েছে। গেমটি ইতিহাসের বিখ্যাত ও বহুল বিতর্কিত কিং আর্থারের তলোয়ার এর কাহিনীকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে।

১৪. Far Cry 4 (2014)

ফারক্রাই সিরিজের আরেক চমৎকার গেম হল Far Cry 4। এটি Dunia Engine 2 তে বানানো যার টেক্সচার ও রেন্ডার কোয়ালিটি খুবই উন্নত। FC4 এর কাহিনীর মান নিয়ে গেমারদের মাঝে রয়েছে বটে তবে একথা অনস্বীকার্য যে এটি গ্রাফিক্যাল দিক থেকে খুবই নয়নাভিরাম। হিমালয় থেকে শুরু করে বন, জঙ্গল, খাল, বিল, বিচিত্র সব পশুপাখি, নানারকম যানবাহন সবই গ্রাফিক্যালি খুব চমৎকারভাবে বানানো ও ব্যবহার করা হয়েছে গেমটিতে। গেমটি যেমন নানারকম চ্যালেঞ্জ আর দুর্দান্ত সব এ্যাডভেঞ্চারে পূর্ণ, তেমনি এর নয়নাভিরাম চারপাশ দেখলে ইচ্ছে হয় তাকিয়েই থাকতে। এক কথায় একে বলা চলে A very colorful game!

১৫. Ryse : Son of Rom (2014)

Cry Engine 3 তে তৈরি Microsoft এর এক ভিজুয়াল মাস্টারপিস! গেমটির ফেসিয়াল টেক্সচার যেমন হতবাক করা, তেমনি গোটা Environment চোখ ধাধানো! Cry Engine এ বানানো গেম বলে কথা! গেমটি দৈর্ঘ্যে খুব ছোট আর কোনো সাইড কোয়েস্ট ছাড়া, একদম একহারা হলেও এর অকল্পনীয় রকমের গ্রাফিক্স আর ডিটেইলস যে কাউকে হতবাক করে দেয়ার মত!

১৬. Call of Duty Advance Warfare (2014)

২০১৪ সালের FPS জগতের এক দুর্দান্ত গ্রাফিক্সের গেম হল কল অফ ডিউটি এ্যাডভান্স ওয়ারফেয়ার। অনেকের কাছে COD এর এই ফিউচারিস্টিক আবির্ভাব ভাল না লাগলেও কল অফ ডিউটি মূলত আদিকাল থেকে বর্তমান এবং বর্তমানকাল থেকে ভবিষ্যতের যুদ্ধের এক সাবলীল ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে গেমটির মধ্য দিয়ে। Activision এর এই গেমটিতেও আগের ধারা বজায় রেখে Preload Shader Cache ব্যবস্থা দেয়া হয়েছে। গেমটিতে ডায়নামিক লাইটিং আর প্রচুর হাই ডেফিনেশন রিয়েলিস্টিক টেক্সচার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ব্যবহৃত physics ইফেক্টগুলোও খুবই ডায়নামিক এবং উন্নতমানের । গেমটি Activision এর নিজস্ব ইঞ্জিনে তৈরি।

১৭. Rise Of The Tomb Raider (2015)

২০১৫ সাল ছিল চোখ ধাধানো সব Graphically Stunning গেম এর বছর। আর সেই ধারাবাহিকতা যেন এখনো বহমান! তারই মাঝে অন্যতম সুন্দর এক গেম হল Rise Of The Tomb Rider! গেমটি খেলতে গিয়ে রাশিয়ার তুষারাবৃত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিভিন্ন নয়নাভিরাম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সবুজ শ্যামলীমা, প্রাণিবৈচিত্র সব সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। বিখ্যাত গেম পাবলিশার Square Enix এর তৈরি এই গেমটি একটি ওপেন ওয়ার্ল্ড গেম, যাতে প্রচুর আপগ্রেডেশন, ক্রাফটিং আর বহু সাইড কোয়েস্ট রয়েছে। নয়নাভিরাম এই গেম খেলতে গিয়ে মনে হবে যেন কিছুক্ষণ এর আশেপাশের পরিবেশের দিকেই তাকিয়ে রই!
ধারণা করা হয় গেমটি Square Enix এর নিজস্ব Horizon নামক ইঞ্জিনে তৈরি।

১৮. Metal Gear Solid 5 : The Phantom Pain (2015)

একটা গেম যদি গ্রাফিক্স, স্টোরি, গেমপ্লে সব দিক দিয়েই দশে দশ হয় তো কেমন! MGS V এমনই এক গেম! Konami আর Kojima Production এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি MGS V হল হিদেও কোজিমার এক মাস্টারপিস! মিলিটারি ঘরাণার এই গেম এ্যাকশন, এ্যাডভেঞ্চার আর শুটিংয়ে সবমিলিয়ে যেন এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে! আর গ্রাফিক্স?
Fox Engine এর অভূতপূর্ব, দুর্দান্ত অপটিমাইজেশনে তৈরি এই গেম খেলতে গিয়ে আপনার এই মর্মে ধাতস্থ হতে সময় লাগবে যে এটা আদতেই একটা গেম! এর ওয়েদার সিমুলেশন, টেক্সচার কোয়ালিটি, টেরেইন, ভেজিটেশন কোয়ালিটি, লাইটিং সব সব অকল্পনীয়রকমের বাস্তবিক! এই গেমের জীববৈচিত্র যে কাউকেই তাক লাগিয়ে দেয়ার মত!

১৯. Witcher 3 : Wild Hunt (2015)

২০১৫ সালের সবচে কালারফুল রিয়েলিস্টিক গেম কি’ জিজ্ঞাসা করা হলে অনেকেই বলে দিবেন Witcher 3 Wild Hunt! CD Projekt এর Red Engine 3 তে তৈরি RPG ঘরাণার এই মায়াবী গেমটি যে কাউকে নিয়ে চলে যাবে অন্য এক জগতে। খেলতে গিয়ে অনেকেই মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকবে গোধূলির আকাশ, ভেসে আসা কান্নার সূর, বাতাসের এলোমেলো গাছপালার দিকে! গেমটি Witcher নামক উপন্যাস থেকে বানানো। এবং বলা বাহুল্য গেমটি অভূতপূর্ব!

২০. Stat Wars Battlefront (2015)

আরেকটি অস্বাভাবিকরকম রিয়েলিস্টিক গেম গ্রাফিক্সে তৈরি জনপ্রিয় সিরিজ স্টার ওয়ার্স এর প্লটে গড়া গেম Stat Wars Battlefront। এতে ব্যবহৃত বৃক্ষাদির ভিজুয়াল কোয়ালিটি দেখলে আপনার মন মানতেই চাইবেনা এ যেন কোনো গেম গ্রাফিক্স! কাহিনী আহামরি জনপ্রিয় না হলেও গেমটির ভিজুয়াল যে কাউকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মত! বিশ্বাস না হলে ইউটিউবেই দেখে আসুন!
Frostbite 3 ইঞ্জিনে তৈরি গেমটির পাবলিশার Electronic Arts বা EA ।

২১. Ori and the Blind Forrest (2015)

না, এটা কোনো রিয়েলিস্টিক গ্রাফিক্স এর গেম নয়। কিন্তু অরি’র বাহারী Environment, মনভোলানো মিউজিক আর অরি নিজেই যে কোনো গেমারকে গেমটির প্রেমে পড়ে যেতে বাধ্য করতে পারে। চমৎকার Colorful এই গেমটির নির্মাতা Microsoft এবং গেমটি সবার পরিচিত Unity Engine এ তৈরি।

২২. Just Cause 3 (2015)

রিয়েলিস্টিক গেম গ্রাফিক্স ও মডেলে করা ১৫ সালের আরেক বাহারী গেম হল JC3 ! Square Enix এর এই গেমটির তথাকথিত ইঞ্জিন হচ্ছে Avalanche Engine । ওপেন ওয়ার্ল্ড মুডে করা গেমটি যেমন কালারফুল, তেমনি খুব উদ্ভট উদ্ভট কাজও করা যায় এতে। প্লেয়ারের প্রচুর ফ্রি রোমিং ফ্রি টাস্কিং অপশন রয়েছে গেমটিতে।

২৩. The Division (2016)

ইউবিসফটের নতুন মাত্রার nod-based গেম ইঞ্জিন Snowdrops এর এক চমৎকার ফসল The Division । থার্ড পার্সন শুটিং ও এ্যাডভেঞ্চার ঘরাণার এই গেমটি অনলাইনভিত্তীক হলেও ভিজুয়াল দিক থেকে এটি একটি মাস্টারপিস। গেমটির লেভেল ডিজাইন, ডিটেইলস, টেক্সচার, লাইটিং সবমিলিয়ে অসাধারণ! পাশাপাশি এর আরেক তাক লাগানো বিষয় হচ্ছে এর চেঞ্জেবল ফিজিক্স! এতে ব্যবহৃত ডেমোলিশন, বুলেট ইম্প্যাক্ট ইত্যাদি ইফেক্টও একেবারে ভিন্ন ভিন্ন রকমের।

২৪. Homefront : The Revolution (2016)

বিখ্যাত সিরিজ Metro’র পাবলিশার Deep Silver এর Dambstar Studio থেকে করা CryEngine 3+ এ তৈরি গেম হোমফ্রন্ট। আর ক্রাই ইঞ্জিন মানেই যে তাক লাগানো ভিজুয়াল তা অনেককেই বলা বাহুল্য। খানিক বিতর্কিত কাহিনীর হোমফ্রন্ট গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে খুবই হাই লেভেলের টেক্সচার, ডিটেইলড ফেসিয়াল এ্যানিমেশন। সাথে রয়েছে খুবই উচ্চমানের পার্টিকেল ও ফিজিক্স ইফেক্টসহ রিয়েলিস্টিক ডায়নামিক লাইট আর তাক লাগানো Environment!

২৫. Watch Dogs 2 (2016)

Ubisoft এর Watchdogs 2 কে
অনেকে মজা করে GTA V এর গ্রাফিক্যালি আপগ্রেডেড ভার্সন বলে। কেননা ওপেন ওয়ার্ল্ড এই গেমটিতে GTAর মতই শহরের চাকচিক্য থেকে শুরু করে, চোখ ধাধানো সমুদ্র সৈকত, বিভিন্ন স্থাপনা, পাহাড় পর্বত, বিভিন্ন রাইডিং, সেলফি তোলা সহ অনেক সাইড মিশন রয়েছে। তবে গ্রাফিক্স এর দিক থেকে এটি GTA V এর তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ও ডিটেইলড। পুরোদস্তুর ওপেন ওয়ার্ল্ড এই গেমটিও আগের মতই Disrupt Engine এ তৈরি, এবং এর কাহিনীও হ্যাকিং নিয়ে এগিয়েছে।

২৬. Battlefield 1 (2016)

সম্ভবত ২০১৬ সালের সবচাইতে চোখ ধাধানো গেম! Electronic Arts এর প্রকাশনায় EA Dice এর ডেভেলপমেন্ট এ Frostbite 3 Engine এ তৈরি গেমটি প্রতিটা এ্যাসেট থেকে শুরু করে প্রতিটা ইফেক্টস, টেক্সচার লাইটিং সবই অবিশ্বাস্যরকমের চোখ ধাধানো! গেমটির ক্যারেক্টারগুলোর ফেশিয়াল টেক্সচার আর এ্যানিমেশনও খুব সুক্ষভাবে করা। পাশাপশি গেমটিতে ব্যবহৃত মিউজিকও বেশ মনোমুগ্ধকর।

২৭. Forza Horizon 3 (2016)

সম্ভবত রেসিং জগতের সবচে সুন্দর গেম! মাইক্রোসফটের নিজস্ব ইঞ্জিনে তৈরি গেমটিকে রেসিং গেমের জগতে ভিজ্যুয়ালি মাস্টারপিস বলে চলে। গেমটির টেক্সচার কোয়ালিটি যেমন রিয়েলিস্টিক, তেমনি এতে থাকা ইফেক্টস, ফিজিক্স, লাইটিং আর ভেজিটেশনও চোখ ধাধানো! ব্যক্তিগতভাবে আমি রেসিং গেমের ফ্যান না হলেও এই গেমটা খেলতে কখনো বিরক্ত লাগেনি!

২৮. Quantum Break (2016)

মাইক্রোসফটের অনন্য এক গেম এবং ২০১৬ সালের অন্যতম Stunning Visual এর গেম হল কোয়ান্টাম ব্রেক। যেমন দুর্দান্ত স্টোরি, তেমন ইউনিক গেমপ্লে আর দারুণ গ্রাফিক্স। তেমনি এতে ব্যবহৃত লাইটিং, ইফেক্টস ও ফিজিক্সও দারুণ। মোট কথায় গেমারদের জন্যে মাস্ট প্লে জাতীয় এক গেম!
গেমটির ডেভেলপার Remedy Entertainment এবং গেমটি Northlight Engine এ তৈরি।

২৯. Star Wars Battlefront (2017)

গেমটি সিরিজের রিবুট, ২০১৫ সালের Star War Battlefront এর সিকুয়েল। এবং এটিতেও সেই একই Frostbite Engine 3 ব্যবহার করা হয়েছে। গেমটির সিনেমাটিক আলাদাভাবে তৈরি না করাতে অত হাই গ্রাফিক্যাল না হলেও এর Environment, টেক্সচার, লাইটিং ও ইফেক্ট খুবই হাই গ্রাফিক্যাল। বিশেষ করে গেমটির ভেজিটেশন বা গাছপালা চোখ ধাধিয়ে দেয়ার মত! Electronic Arts এর গেমটি মূলত একটি Third Person Shooter (TPS) গেম।

৩০. Assassin’s Creed Origins (2017)

২০১৭ সালের সবচে colorful গেম বোধহয় AC Origins ই। সুবিশাল এরিয়া নিয়ে বানানো পুরোদস্তুর ওপেন ওয়ার্ল্ড এই গেমটিতে কি নেই! রয়ছে নির্বাক করে দেয়া পিড়ামিডের সৌন্দর্য। তেমনি রয়েছে গ্রাম বাংলার কথা মনে করিয়ে দেয়ার মত চোখ ধাধানো বর্ণিল শস্যখেত। খাল, বিল আর চিরচেনা নদ নীল…! নির্বাক চোখে দেখার মত রয়েছে Alexandria শহর আর এশহরের বিলীন হয়ে যাওয়া বাতিঘর! আর এর সবই তৈরি করা হয়েছে খুবই হাই টেক্সচার দিয়ে। সাথে রয়েছে রিয়েলিস্টিক লাইটিং! একবার কেউ খেললে হয়তো কখনো ভুলবেনা!

৩১. Hellblade : Senua’s Sacrifice (2017)

২০১৭র গেম হিসেবে খুব একটা হাইপ না তুললেও সত্যিকার অর্থে গেমটার গেমপ্লে আর কাহিনী যেমন সুন্দর তেমনি গেমটার ভিজুয়াল দিকও বেশ নজরকাড়া। ২০১৭ সালের অন্যান্য গেম যেমন ভুরি ভুরি জায়গা দখল করে, সে হিসেবে ৩০জিবির হেলব্লেড জায়গায় তুলনায় খুব ভাল আর দারুণ নজরকাড়া ভিজ্যুয়ালের এক গেম! গেমটি অতি উন্নমানের এবং দারুণ অপটিমাইজেশন এর Unreal Engine 4 এ তৈরি যার ডেভেলপার ও পাবলিশার দুটোই Ninja Theory। গেমটির ফেসিয়াল মোশন যেমন দারুণ, তেমনি স্কিন টেক্সচার ও এনভায়রনমেন্ট বিল্ড আপও চমৎকাররকমের আকর্ষণীয়।

৩২. Final Fantasy XV/15 (2018)

গেমটি মূলত ২০১৬ সালে কনসোলে (PS4 ও XBox One) এ রিলিজ হলেও পিসি গেম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ২০১৮ সালে। Luminous Studio ইঞ্জিনে তৈরি Square Enix এর এই গেমটি পিসি পোর্টে বেশ ভাল পারফর্ম করে। এর গেমপ্লে খানিক ভিন্ন ধাঁচের আর আকর্ষণীয় বটে। ভিজুয়াল দিক থেকে গেমটি এক কথা স্রেফ অসাধারণ। ফ্যান্টাসির ওয়ার্ল্ড এর সাথে বাস্তবের দারুণ সংমিশ্রণ আর তার Realistic render গেমটিকে ভিজুয়াল দিক থেকে মুগ্ধকর করে তুলেছে। গেমটির অপ্টিমাইজেশনও বেশ ভাল!

৩৩. Assassin’ Creed Odyssey (2018)

অরিজিনের পরপরই এবছর E3 তে AC Odyssey বের হবার ঘোষণায় অনেকে বিরক্ত হলেও বেলা শেষে গেম রিলিজ হলে কিন্তু তারাই আবার হুড়মুড়িয়ে পড়েছে! পড়ারই কথা! প্রাচীন গ্রিসকে এমন অকল্পনীয়রকম সুন্দরভাবে আর কোনো গেমে তুলে ধরা হয়নি কখনোই! সক্রেটিস থেকে শুরু করে হিপোক্রেতেস, রাজা লিওনিদাস, হেরোডোটাস এমনকি রয়েছেন পিথাগোরাসও! আর রইলো গেমের Environment এর কথা? খেলেই দেখুন না! ক্রিটিকদের মতে গেমপ্লে আইটেম, কাহিনী, ইলেমেন্ট এর দিক দিয়ে এটা গোটা সিরিজের সবচাইতে সমৃদ্ধ গেম।

৩৪. Far Cry 5 (2018)

ফার ক্রাই সিরিজের ৬ষ্ঠ গেম ফার ক্রাই 5 নিয়ে অনেকের মিশ্র সমালোচনা থাকলেও বলতে হয় যে এর প্লট বেশ টুইস্টিং। তবে এর সবচে বড় আকর্ষণ ওপেন ওয়ার্ল্ড গেম হিসেবে এতে প্রচুর ওপেন ওয়ার্লশ অপশন এবং Dunia Engine 2 এর চোখ ধাধানো গ্রাফিক্স! FC5 এর গোটা পরিবেশই হতবাক করার মর মনোমুগ্ধকর!
পাহাড়, নদী, নালা, খাল, বিল, জঙ্গল, পশুপাখি, গাছপালা, সূর্যের আলো, যানবাহন আর গ্রামের ঘরবাড়ি সবকিছুর ভিজুয়াল কোয়ালিটিই প্লেয়ারকে বাধ্য করবে মুগ্ধ হতে। গেমটির পার্টকেল ও ফিজিক্স ইফেক্টগুলোও দারুণ আর সুনিপুণ।

৩৫. Battlefield 5 (2018)

আর মাত্র দু সপ্তাহ পরেই বের হরে চলেছে গেমটি। ইতোমধ্যেই গেমটি এবছরের সবচে আকর্ষণীয় গ্রাফিক্স এর গেমগুলোর খাতায় নাম লিখিয়েছে। মিলিটারি FPS জাতীয় গেমগুলোর বেলায় গ্রাফিক্স এর কথা শুনলে কেমন যেন লাগে অনেকের তবে এটা সত্যি যে এদিক দিয়ে Electronic Arts MFPS এর সাথে দুর্দান্ত গ্রাফিক্সের দারুণ সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে এর আগের পর্বেই। গেমটির কাহিনী আবারো সেই আদিকালের বিশ্বযুদ্ধে ফিরে যাওয়াতে হতাশ ও বিরক্ত অনেকেই, তবে একথা মানতেই হবে যে এর গ্রাফিক্স খেলার লোভ লাগানোর মত বটে। গেমটি EA’র ব্যাটলফিল্ড সিরিজের চিরাচরিত নিয়মে Frostbite Engine 3 দিয়ে তৈরি এবং এর অপ্টিমাইজেশনও বেশ ভালই হতে চলেছে প্রাপ্ত তথ্যমতে।

তো এই ছিল আমাদের Visually Stunning সব গেম নিয়ে আজকের প্রথম পর্ব। পরের পর্বে PS4 এক্সক্লুসিভ গেমগুলোর আলোচনা নিয়ে ফিরবো শীঘ্রই। ততক্ষণে ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিজের খেয়াল রাখুন
আর বিজ্ঞানবর্তিকার সাথেই থাকুন…
হ্যাপি গেমিং…

Comments are closed.