GPU নিয়ে যত জিজ্ঞাসা

কেউ ডাকে গ্রাফিক্স কার্ড, কেউ ডাকে তাহারে GPU, আবার আদিকালের (!) কেউ ডাকে AGP কার্ড, তো কেউ বলে VGA। কেউ কেউ ডাকে তারে “গপু”, আরো এক ধাপ এগিয়ে!
তবে যে যাই ডাকুক, কাজ তার একই। মানে গ্রাফিক্স প্রসেস করা। Peripheral বা দর্শনসংক্রান্ত বা চিত্রাবলীর ডেটা (উপাত্ত) প্রসেস করার জন্যে যে ইউনিট বা চিপ বা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় তার সমন্বিত একটা রুপই হল GPU। যদিও একটা কার্ডে শুধু GPU চিপ ছাড়াও আরো বহু কম্পোনেন্ট থাকে। তবে মূল কাজ GPU চিপই করে বলে সবাই, বিশেষত গেমাররা একে GPU বলতে পছন্দ করে। আর বাংলাদেশি গেমার হলে তো কথাই নেই, আমার মত আরো বহু গেমাররা একে আদর করে “গপু” ডাকতে ছাড়ে না।

GPU’র প্রয়োজন কেন হয়?

এর এককথায় উত্তর হল মনিটরে আউটপুট দেয়ার জন্যে। মানে মনিটরে ডিসপ্লে দেখানোর জন্যে, চাক সেটা Windows কেবল সচল রাখার জন্যে হোক, গান শোনা হোক, গেম খেলা হোক বা কোনো হাইপলিগন্যাল (High polygonal) সাবডিভিশনযুক্ত 3d মডেল বা কমপ্লেক্স লেয়ারে করা কাজ Render দেয়া হোক, ডিসপ্লের জন্যে GPU লাগবেই। ঠিক যেমন কেউ মুখ দিয়ে জ্ঞানের কথা বলুক বা নিতান্তই বক বক করুক, শব্দ বের করার জন্যে তার বাগযন্ত্র লাগবেই।

GPU’র ধরণ

গঠনগত ও উৎপত্তিগত দিক থেকে GPU দুই প্রকার। এটা অবশ্য যারা GPU সম্বন্ধে হাল্কা পাতলাও জানে তাদের বলা অনেকটা বাহুল্য। তবু অনেকের না জানাও থাকতে পারে বিধায় আলোচনার শুরুতে জানিয়ে দিচ্ছি।

১. Integrated GPU (IGP) বা Shared Graphics Solution

আপনার কোনো গ্রাফিক্স কার্ড নেই কিন্তু আপনি কম্পিউটার ঠিকই চালাচ্ছেন। মনিটরে ঠিকই ছবি আসছে। এইযে কোনো কার্ড ছাড়াই আপনার মনিটরে ছবি আসছে। এটা হচ্ছে আপনার প্রসেসরে বিল্ড করে দেয়া IGP বা Integrated Graphics Processor এর কাজ। একে অনেকে Built in Graphics, Processor Graphics ইত্যাদি নামে ডাকে।
IGP মূলত সাধারণ কাজ করার জন্যে বা কিছু কিছু low end গেম চালানোর জন্যে প্রসেসর আর্কিটেকচারের সাথেই সংযুক্ত করে দেয়া হয়। তবে তা হলেও বর্তমানে বের হওয়া প্রসেসরের সাথে সংযুক্ত IGP দিয়ে বেশ কিছু গেম Low/mid-low সেটিংস এ ভালই চালানো যায়। আবার কতগুলো প্রসেসরে কোনধরনের IGP বিল্ড করা থাকেনা। যেমন 2017 এর Ryzen 1000 সিরিজের (1200,1500,1600,1700,1800) AM4 সকেটের Gen প্রসেসরসমুহ, 1900 সিরিজের Threadripper প্রসেসর, Intel 7900 সিরিজের i9 প্রসেসরে কোনো IGP নেই।
জনপ্রিয় দুই প্রসেসর নির্মাতা Intel ও Advance Micro Devices (AMD) এর বর্তমানে প্রচলিত প্রসেসরগুলোতে যথাক্রমে Intel HD500, HD600, Iris Plus 600, UHD 600 সিরিজ গ্রাফিক্স (Intel Sky lake – Apollo Lake, Kaby lake – Coffee Lake, Cannon Lake প্রসেসরগুলোতে) এবং Vega 11 সিরিজ Integrated গ্রাফিক্স (Ryzen 2000 সিরিজ প্রসেসরগুলোতে) ব্যবহৃত হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে Ryzen 2000 প্রসেসরে থাকা Vega আর্কিটেকচারে তৈরি IGP যাকে বলা হয় APU বা Accelerated Processing Unite এ পর্যন্ত বের হওয়া সবচাইতে শক্তিশালী IGP (2017-18 সাল)।
যা একটি লো বাজেটের সাত আট হাজার টাকা দামের GT 1030 গ্রাফিক্স কার্ড এর সমান পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম! এটি AMD এর পঞ্চম প্রজন্মের APU

২. Dedicated GPU

এটা আসলে শুধু GPU না, GPU’র সাথে অন্যান্য ট্রাঞ্জিস্টরের সমন্বিত একটা প্যাকেজ। যাকে আমরা সবাই গ্রাফিক্স কার্ড নামে চিনি। অতি উচ্চমাত্রার গ্রাফিকাল ডেটা প্রসেস করার প্রয়োজন পড়ে এমন যেকোনো কাজে Graphics Card প্রয়োজন পড়ে।গ্রাফিক্স কার্ড মূলত GPU চিপ, এডিশনাল চিপ, হিটসিংক, কুলিং ফ্যান ও বহু ট্রাঞ্জিস্টরের সমন্বিত রুপ।

গ্রাফিক্স কার্ড এর ধরণ

কার্যকারিতার দিক থেকে গ্রাফিক্স কার্ড মূলত দুই প্রকার।

Consumer Graphics Card আর Professional বা Pro Graphics Card । এরমধ্যে আমরা গেম খেলা ও ভিজুয়াল ইফেক্টস এর বিভিন্ন কাজের ব্যবহারে যতধরণের গ্রাফিক্স কার্ড সচরাচর দেখি তার সবই Consumer Graphics Card ।
পক্ষান্তরে, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স কার্ড গেম খেলার জন্যে নয়, বরঞ্চ যেকোনো স্টুডিও বা ভিজুয়াল ইফেক্টস ফার্ম বা সেটাপে VFX এর কাজ করার জন্যে, স্পেশালি প্রোডাকশন রেন্ডারিং এর জন্যে ব্যবহৃত কার্ড। তাই এগুলা দেখলে ভাই ভরকে যাবেন না।
উল্লেখ্য যে Nvidia’র Pro গ্রাফিক্স কার্ডগুলো হল Qudro সিরিজ এবং AMD’রগুলো FirePro সিরিজের।

কোন গ্রাফিক্স কার্ড কিনবো?

প্রসেসর কেনার বেলায় প্রসেসর নির্বাচন করাটা সহজ। কিন্তু গ্রাফিক্স কার্ডের বেলায় অনেককিছুই মাথায় রাখতে হয়।
কম্পিউটারের দুই Dedicated GPU নির্মাতা Nvidia ও AMD এর টেকনোলজি দিয়ে বানানো বহু কোম্পানীর বহু বহু কার্ড আছে বাজারে। হুট করে কিনতে গেলে যারপরনাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেতে হয়। তার উপর এই বান্দা এমন এক জিনিষ, যা বছরে বছরে পুরাতন হয়!এত কার্ডের ভীরে ২০১৭ – ১৮ সালের GPU Technology’র উপর ভিত্তি করে মডেল অনুযায়ী যেসব কার্ড মাথায় রাখা যায় তা হল।

AMD এর
বাজেট ১২ – ১৫ হাজার হলে এন্ট্রি লেভেলের মধ্যে
RX 460
RX 550 ও
RX 560
বাজেট যদি ১৫ হাজারের এর এর বেশি এবং ৩০ – ৩৫ হাজার হয় তাহলে
RX 480
RX 570 বা
RX 580 নিতে পারেন। (Polaris GPU, Architecture : GCN 4th Gen)

Nvidia এর
এন্ট্রি লেভেলে (এদের এন্ট্রি লেভেল আবার চড়া দামে রয়েছে আপাতত)
GTX 1050ti
বেশি বাজেটে, মানে ত্রিশ – চল্লিশ হাজারের মধ্যে হলে মিড লেভেলের কার্ড
GTX 1060
এবং আরো অনেক উপরে মানে ৬০/৭০/৮০/৯০ হাজার টাকায় বাজেট গেলে (আমাদের দেশী গেমারদের ভাষায় “বড়লোক্স” আরকি।)
GTX 1070
GTX 1070ti ও
GTX 1080ti (Pascal Architecture)

তবে কার্ডগুলোর নামধাম বলে দেয়া মানেই কিন্তু সমস্যা চুকে যাওয়া না। এ থেকে কেবল আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে থাকা কার্ড সম্বন্ধে ধারণা নিতে পারবেন। কিন্তু ঠিক কি কি জিনিষের উপর নির্ভর করে কার্ড কেনা দরকার তা জানতে পারছেন না। তো চলুন বিষয়গুলো একটু দেখে আসি।

১. 2GB/ 4GB/ 6GB গ্রাফিক্স কার্ডই সব?

এগুলো হল একটা কার্ডের VRAM বা Video RAM। অর্থাৎ প্রসেসরের যেমন র‍্যাম লাগে, তেমনি একটা কার্ডকে হাই গ্রাফিকাল ডেটা মনিটরে প্রসেস করার জন্যেও VRAM দরকার পড়ে। যেহেতু এটা একধরণের র‍্যাম সুতরাং বুঝতেই পারছেন প্রসেস এর সাময়িক লোডগুলো নেয় এটা। ফলে গেমের ফ্রেমরেট ড্রপ, টেক্সচার (গেমের প্রতিটা জিনিষের যে রঙ, প্যাটার্ন ইত্যাদির সমন্বিত রুপ) ইত্যাদি কমে আসে। গেম আটকায় না।
তবে VRAM ই কিন্তু সব না। দেখা গেল আপনার কার্ডের VRAM 4GB কিন্তু আপনার কার্ডের মেমরী ব্যান্ডউইথ, টেক্সেল রেট, পিক্সেল রেট, কোর ক্লক, মেমরী ক্লক, ফ্লটিং পয়েন্ট ইত্যাদি পর্যাপ্ত না, সেক্ষেত্রে 4GB VRAM তেমন কোনো কাজেই আসবেনা। আর তাই একটা GT630 4GB কার্ড থেকে আড়াইগুণ বেশি দামি GTX 1050ti 2GB কার্ডের পারফর্মেন্স অনেক অনেক বেশি! সুতরাং কার্ড কেনার বেলায় অবশ্যই অন্য জিনিষগুলোর দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তবে হ্যা, বর্তমানে প্রযুক্তি হিসেবে 4GB VRAM এর নীচে কোনো কার্ড নেয়া উচিত না।

২. কোর ক্লক ও মেমোরি ক্লক (Core Clock & Memory Clock)

এক কথায় কোর ক্লক হচ্ছে একটা GPU’র নিজের প্রসেসিং স্পীড। অর্থাৎ সে কার্ডে থাকা ট্রাঞ্জিস্টরগুলোর মাধ্যমে মাদারবোর্ড থেকে আসা ডেটা কত দ্রুত প্রসেস করতে পারছে সেটাই হচ্ছে তার ক্লক স্পিড বা কোর ক্লক।
অপরদিকে মেমোরি ক্লক হচ্ছে কোর ক্লকের সহায়ক। এটা সেই গতি যা কোনো নির্দিষ্ট দ্রুততার সাথে গ্রাফিকাল ডেটার মেমরী প্রসেস করতে পারে। বা বলতে পারেন যত দ্রুত সবগুলো ডেটাকে একসাথে খুঁজে এনে দিতে পারে ।
কোর ক্লক আর মেমরি ক্লক একটা কার্ডের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর দুটি।
কার্ড কেনার সময় খেয়াল রাখবেন যেন কার্ডটির কোর ক্লক নুন্যতম 1000Mhz ও মেমরী ক্লক 1400Mhz বা তারও বেশি হয়।

২. টেক্সচার রেট (Texture Rate)

টেক্সচার রেট এর আগে জানতে হবে টেক্সচার কি। ধরুন একটা পুতুল রংচং ছাড়া। এখন আপনি তাতে গায়ের রঙ, গায়ের চামড়ার দাগগুলো, চোখের রঙ কাপড়ের রঙ ইত্যাদি দিলেন। এই যে উপরে একটা আবরণ চড়িয়ে দিলেন, সেটাই হল টেক্সচার। একটা গেম বা মডেলের টেক্সচার যত ভাল হবে যত সূক্ষ্ম হবে, তাকে প্রসেস করে দেখানোর জন্যেও তত ক্ষমতা লাগবে। আর সেই ক্ষমতার এককই হল Texture Rate । মানে একটা GPU প্রতি সেকেন্ডে যত একক Texture ম্যাপিং করতে বা দর্শাতে পারে সেটাই তার টেক্সচার রেট। টেক্সচার রেট বেশি হলে High End গেম আর HD Texture এর রেন্ডারও সময় অনুপাতে বেশি হয়।
GPU কেনার বেলায় নুন্যতম 50 GigaTexel/s (5000 কোটি টেক্সচার) দেখে নিবেন।

৩. পিক্সেল রেট (Pixel Rate)

পিক্সেল শব্দটা কিন্তু আমরা সবাই ই কমবেশি জানি। পুরো স্ক্রিনটাকে যে লক্ষ লক্ষ ছোট অংশে ভাগ করা হয় তার একেকটা হচ্ছে এক পিক্সেল। কোনো নির্দিষ্ট পরিসরে কোনো জিনিষের পিক্সেল যত বেশি তা স্বচ্ছ, সুস্পষ্ট আর সূক্ষ্মও তত বেশি। আর GPU’র প্রতি সেকেন্ডে এই পিক্সেল প্রসেসের হারকেই পিক্সেল রেট বলে।
কার্ড কেনার বেলায় দেখে নিবেন তা যেনো নুন্যতম 30 Gigapixel এর বা তারও বেশি হয়।

৪. মেমোরি ব্যান্ডউইথ (Memory Bandwidth)

একটা কার্ডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এর মেমরি ব্যান্ডউইথ। আপনার কার্ডের গ্রাফিকাল প্রসেসর বোর্ডের Semiconductor Memory তে থাকা ডেটা কত দ্রুত নিতে বা সেখানে দিতে পারে সেটার হারই হচ্ছে মেমরি ব্যান্ডউইথ। একটা রেন্ডার প্রসেস ভালভাবে এবং সফলভাবে করার জন্যে হাই ব্যান্ডউইথ অত্যাবশ্যকীয় একটা ব্যাপার। আর তাই ভিডিও মেমোরির পরিমাণের (VRAM) চাইতে ঐ মেমরি কত দ্রুত প্রসেসরের সাথে উপাত্ত আদানপ্রদান করতে পারে সেটাই বেশি জরুরী। ব্যাপারটা হচ্ছে এমন যে আপনি চারটা কবিতা জানেন কিন্তু আবৃত্তি করতে গিয়ে আপনি একটাতেই অনেক সময় লাগিয়ে ফেলছেন। আরে ভাই, তাইলেতো হবেনা!
কার্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এর ব্যান্ডউইথ 90-100 গিগাবাইট/সেকেন্ড (Gbps) এবং এর মেমরি বাস নুন্যতম 128bit হওয়াটা অত্যাবশ্যক। অবশ্য AMD তাদের অনেক এন্ট্রি লেভেল কার্ডে মেমরি বাস 256bitও দেয়! উল্লেখ্য যে GDDR5 এর ব্যান্ডউইথ DDR3 এর প্রায় দ্বিগুণ!

৫. GFLOPS

G FLOPS বা Giga FLOPS হচ্ছে প্রতি সেকেন্ড এ ফ্লটিংপয়েন্ট এর হার। আর Floating Point হচ্ছে সেই নাটের গুরু যে বাইনারি, অক্টাল, ডেসিমাল, হেক্সাডেসিমাল ইত্যাদি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে এত এত জটিল, এত বিশাল আর একদম ক্ষুদ্র, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসেবগুলো করে থাকে। এই কম্পিউটিং রেটের উপর অনেককিছু নির্ভর করে। আর তাই GFLOPS/s rate খুবই জরুরী। মোটামুটি ভাল একটি কার্ডের ফ্লটিং পয়েন্ট নুন্যতম 1400 থেকে 2000 GigaFLOPS বা 1.4 থেকে 2 TerraFLOPS হওয়া উচিত।

৬. শেডার (Shader)

কোনো বস্তুর আলো-ছায়া আর রঙের হিসেবকে শেডার বলে। শেডার সেই প্রোগ্রাম যার মাধ্যমে নির্ধারণ করা মনিটরে দেখানো বস্তুর আলো ছায়া আর এর জন্যে ভিন্ন ভিন্ন অংশে রঙের কেমন সূক্ষ্ম তারতম্য হবে। আর যে জিনিষে আলো, ছায়ার ও রঙের বৈচিত্র্য যত সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় তা ততই Realistic হয়।
কার্ডের ক্ষেত্রে Shader নুন্যতম 650 – 700 হওয়া শ্রেয়।

৭. PCI Version

বর্তমানে প্রচলিত সব মাদারবোর্ডেরই গ্রাফিক্স কার্ডের স্লট হচ্ছে PCI Express 16। এবং আরো চার পাঁচ বছর আগেকার কার্ডগুলোরও একই। তবে আপনার বোর্ড যদি খুব বেশি পুরনো হয় তবে দেখে নিবেন আপনার বোর্ডের PCI Version এবং কার্ডের PCI Version মিলে কি না (মাদারবোর্ড এ লেখা থাকে)। অবশ্য বেশিরভাগ কার্ডেরই PCI Version 2 ও 3 থাকে আর বেশিরভাগ পুরনো বোর্ডেরই PCI Version 2 থাকে।

কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা…

ভাই আমি একটা GTX 1050ti নিবো, এর জন্যে কি আমার আলাদা পাওয়ার সাপ্লাই লাগবে?

উ: আজ্ঞে না। কারণ GTX 1050ti বা RX560 এসব কার্ডে কোনো ডেডিকেটেড পাওয়ার লাইন লাগেনা। অর্থাৎ এরা লো পাওয়ারে চলতে পারে। এজন্যে আপনার পিসিতে যদি 300 Watt এর একটা PSU লাগানো থাকে এবং আপনার প্রসেসর যদি PDC Gold, i3 বা i5 হয় সেক্ষেত্রে আপনার PSU কেনার দরকার নেই। তবে বাড়তি নিরাপত্তার জন্যে Corsair, Thermaltake বা Antec এর 450 ওয়াটের একটি PSU কিনে নিতে পারেন।

ভাই আমার GPU’র ফ্যান মাঝে মাঝে ঘুরে আবার মাঝে মাঝে একটা ঘুরেনা। আমার GPU কি নষ্ট?

উ: অনেক GPU অটোম্যাটেড সিস্টেমে সবকটা ফ্যান তখনই ঘুরায় যখন তার প্রয়োজন পড়ে। নিশ্চয়তার জন্যে MSI Afterburner বা অন্য কোনো সফটওয়্যার দিয়ে আপনার GPU’র তাপমাত্রা মাপিয়ে নিন। লোড নেয়া অবস্থায় তা ৬০-৭০ ডিগ্রী থাকা স্বাভাবিক। তাপমাত্রা ৯০ বা তার বেশি দেখলে এবং পারফর্মেন্স স্লো হয়ে গেলে আপনার কার্ড এর ফ্যান ও CPU পরিষ্কার করুন এবং আপনার PC Case এ পর্যাপ্ত বাতাসের ব্যবস্থা করুন।

ভাই আমি গেম খেলিনা, তবে গ্রাফিক্স এর কাজ করবো। বিশ ত্রিশ হাজার টাকার মধ্যে কোন GPU নিবো?
উ: কোনোটাই না। আপনি যদি গেমার না হোন তাহলে ওয়ার্ক স্টেশনের জন্যে আপনার কেনা ২০-৩০ হাজার টাকার GPU কোনো কাজেই আসবে না। কারণ সেগুলো কনজিউমার GPU, ওয়ার্কস্টেশন বা প্রো GPU না। এদামে আপনি যে GPU কিনবেন, আপনার একটা মিড রেঞ্জের প্রসেসর তার চাইতে ভাল রেন্ডার দিতে পারবে। আর তাছাড়া Max, Maya, Blender এগুলোর বাই ডিফল্ট রেন্ডার CPU বেসই থাকে। বরঞ্চ সে টাকা প্রসেসর আর র‍্যামে ঢালুন। নাহয় সম্ভব হলে একটা Quadro বা Firepro GPU সেটাপ নিন।

ভাই আমার প্রসেসর i5 8400। আমি GTX 1050ti কিনতে চাইলাম কিন্তু এই ওয়েবসাইট দেখাচ্ছে 30% Bottleneck । একজন বললো আমার GPU নাকি 30% কম পারফর্মেন্স দিবে!

উ: ভাই থামেন। যে আপনাকে একথা বললো সে আদতে জানেইনা সে কি উলটাপালটা বলছে। Bottleneck দুইটা হয়, CPU Bottleneck আর GPU Bottleneck।
যখন GPU’র দেয়া ডেটা CPU’র প্রসেসিং ক্ষমতার চাইতে বেশি হয় তখন ঘটে CPU Bottleneck যার ফলে গেম স্লো হয়ে যায়, কার্ডের হিসেবে ফুল পারফর্মেন্স পায়না। আর GPU Bottleneck হল আপনার GPU যতটা ডেটা প্রসেস করে আপনার প্রসেসর তার চাইতে আরো বেশি ডেটা নিতে সক্ষম। আর i5 8400 + 1050ti এর বেলায় ঠিক সেটাই ঘটেছে। মানে 8400 এর বেলায় 1050ti তার ফুল পারফর্মেন্সই দিবে কিন্তু 8400 তার চাইতেও 30% বেশি পারফর্মেন্স নিতে সক্ষম। মানে সে ঐ কার্ডকে শতভাগ Consume তো করতে পারবেই সাথে আরো 30% বেশি পারবে।

ভাই আমার মনিটর 22 ইঞ্চির 1080p। আমি GTX 1070ti নিলে কি অসুবিধা?

উ: অসুবিধা না, ওয়েস্ট অফ মানি। কারণ 22 ইঞ্চির একটা 1080p বা 2k মনিটর যতটা পারফর্মেন্স দিবে, 1070ti গ্রাফিক্স কার্ডের পারফর্মেন্স দেয়ার ক্ষমতা তার চাইতে অনেক বেশি। সুতরাং শুধু শুধু টাকা কেন নষ্ট করবেন? কার্ড আর মনিটর নির্বাচনে এটা সবসময় খেয়াল রাখবেন। এক্ষেত্রে হয় আপনার কার্ড আরো কমের মধ্যে কোনোটা নিন (GTX 1060 বা RX580) অথবা আপনার মনিটর বদলে একটা 4k মনিটর নিন। বা বড়সড় কোনো মনিটর নিন।

তো এই ছিল আজকে GPU নিয়ে আমাদের আলোচনা। কার্ড কেনার ক্ষেত্রে এবিষয়গুলো মাথায় রাখলে কার্ড নির্বাচন বহুলাংশেই সহজতর হয়ে যায়।
সুতরাং, Chose your card wisely…
Happy Rendering
Happy Gaming
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, নিজের খেয়াল রাখুন। পরেরবার আবার হয়তো কথা হবে অন্য কোনো বিষয়ে।

7 Comments

  1. santo

    Pentium এর 7th Generation & Core i-3 7th Generation এর মধ্যে low বাজেটে best কোনটা? টা্

    • Shahed Raiyan

      i3 7th gen মানে 7100 ও PDC G4560 এর পার্ফর্মেন্স ডিফারেন্স মাত্র ১০%। অথচ দুটোর দামের পার্থক্য চার হাজার টাকা। সেহিসেবে বলবো, কমের মধ্যে নিতে চাইলে Pentium Gold 4560 ই নিন। আর যদি নয় দশ হাজারে নিতে চান, এবং পরে গ্রাফিক্স কার্ড কেনার ইচ্ছে থাকে তাহলে i3 8100 নিন।

  2. Hazzaz

    Amar i7 8700 Ami gtx1050ti nite cassi & Amar power supply 550w .Apnar motamot ki kemon perfomance dibe?

    • Shahed Raiyan

      নিশ্চিন্তে নিতে পারেন। তবে আমি রিকমেন্ড করবো ব্র‍্যান্ডের কোনো পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করতে…

  3. Iftekhar

    আমি একজন আর্কিটেক্ট। আমার কাজ করতে হয় অটোক্যাড, স্কেচ আপ, ফটোশপ, এছাড়া বিভিন্ন রেন্ডার সফটওয়্যারে। আমার পিসি মান্দাতা আমলের, সো আপগ্রেড করতে চাচ্ছি। যেহেতু মোটামুটি রেন্ডারের কাজ আছে আমার, আমার জিপিইউ লাগবে। কিন্তু কোনটা নিলে আমার জন্য সাশ্রয়ী হবে বুঝতে পারছি না। আর ইনভেস্ট কি জিপিইউতে বেশি করবো নাকি সিপিইউ আর র‍্যামে করব? রিপ্লাই পেলে উপকার হত। থ্যাংকস।

  4. Kawshik Sarkar

    ভাই আমার Motherboard: Gigabyte H81M S2PV. এই Motherboard এ কি GTX 1050TI চোলবে।

  5. Pritom debnarh

    একটা mid level i5 6gen pc কনফিগার এর জন্য mid price কোন GPU কিনতে পারি? ? এটা দিয়ে gaming and video editing করব।। ।আসা কর তারাতাড়ি reply দিবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>