
পৃথিবীতে সবথেকে বেশি মানুষ মারা যায় কীসের আক্রমণে? হাঙ্গর, বাঘ, সিংহ? নাহ। পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক প্রাণঘাতী প্রাণিটি আপনার কনিষ্ঠা আঙ্গুলের ডগা থেকেও বেশি ছোটো, মশা! স্টাডি দেখায় যে প্রতিবছর প্রায় ৭২৫,০০০ মানুষ এই মশা দ্বারা ছড়ানো বিভিন্ন রোগের কারণে মারা যায়। আসলেই প্রচন্ড খারাপ! বিজ্ঞানীরা অনেক চেষ্টা করে গেছেন যুগ যুগ ধরে এবং এখনো করছেন শুধুমাত্র এই ক্ষুদ্র প্রাণঘাতী প্রাণিটির মরণকামড়কে প্রতিহত করতে। হয়তবা তাঁরা এবার কাজটি করতে সক্ষম হয়েছেন একটি “বুদ্ধিমান” ব্যাকটেরিয়ার সাহায্য নিয়ে যার নাম Wolbachia.
শুধুই Wolbachia!

কিছু উপায় আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি মশা- ঘটিত রোগ গুলো সারাতে পারেন। এর মধ্যে একটি উপায় হচ্ছে ভ্যাক্সিনেশন। কিন্তু এই জিনিসটা বেশ কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। যেমন উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য দামী ভ্যাক্সিন ক্রয় করা কঠিন। আবার এমন কিছু রোগ আছে যেগুলোর ভ্যাক্সিন এখনও তৈরিই হয়নি। আপনি চাইলে সব মশা নিধন করে ফেলতে পারেন। কিন্তু এটাও অসম্ভব। কারণ অনেক প্রজাতিই বিভিন্ন কীটনাশকের বিরুদ্ধে নিজেদের রেসিস্টেন্স তৈরি করে নিয়েছে। তাহলে আপনার হাতে কী থাকে? এমন কিছু তৈরি করতে হবে যা এই মশাদের কম বিপজ্জনক করে তোলে। আপনি যেটা করতে পারেন সেটা হচ্ছে হয় তাঁদেরকে যৌন অক্ষমতার পোশন (potion) দিতে হবে যাতে কম বংশধর সৃষ্টি করে অথবা এমন কোনো ভ্যাক্সিন প্রয়োগ করতে হবে যাতে তাঁরা একইসাথে কম প্রজননক্ষমতা সম্পন্ন হয় এবং ম্যালেরিয়া জীবাণু না থাকে সেগুলোতে। ভাগ্যক্রমে আমাদের Wolbachia দুটো কাজই করতে পারে!
Wolbachia হচ্ছে এমন অণুজীব যা নিজের ধারক কোষকেই আক্রমণ করে কোষ বিভাজনে স্থবিরতা সৃষ্টি করে। এবং একটি কোষ থেকেই পুরো দেহে ছড়িয়ে যায়। যদি আরেকটু বিশাদভাবে বলি তবে, এই অণুজীবের আক্রমণের প্রিয় অঙ্গানু হচ্ছে প্রজননতন্ত্র! স্ত্রী মশকীর অভ্যন্তরে খুব সহজেই এটি ডিম্বাণুর মধ্যে নিজের অনুপ্রবেশ ঘটায় ও সেগুলোকে নষ্ট করে দেয় যার ফলে সেই মশকী আর ডিম পাড়তে পারেনা! সবচেয়ে সেরা বিষয়টি হচ্ছে যদি পুরুষ মশা Wolbachia দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে তাঁর শুক্রানু গুলোও আক্রান্ত হবে। এখন যদি সে স্ত্রী মশকীর সাথে মিলনে লিপ্ত হয় তবে তাঁর এই আক্রান্ত শুক্রাণু দ্বারা কোনো ডিম্বাণুই নিষিক্ত হবেনা এবং সে তাঁর যৌন ক্ষমতা হারাতে থাকবে। খুব চমৎকার ব্যাপার!
শুধু তাই নয়, Wolbachia ডেঙ্গুর সংক্রমণও থামাতে পারে। ডেঙ্গু এমন এক রোগ যার কোনো সঠিক চিকিৎসা নেই এবং একে বলা হয় “Backbone Fever“, কারণ দেহে ও গিটে অসম্ভব ব্যথার জন্য। Wolbachia এমন এক অণুজীব যা খুব সহজেই যেকোনো পরজীবীর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে প্রজনন বন্ধ করে দিতে পারে। প্রজনন বন্ধ হলে সহজভাবে কোনো রোগও ছড়াবেনা!

উড়ে যাও মশকীরা!
বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে তাঁদের বিভিন্ন পরীক্ষায় সফলভাবে Wolbachia কে ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছেন। তবে একটা ইস্যু দাঁড়ায় সেটা হচ্ছে Wolbachia প্রাকৃতিকভাবে কোনো মশার দেহে আক্রমণ করতে পারেনা। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের আক্রান্ত মশার জন্ম ঘটিয়ে প্রকৃতিত্র ছেড়ে দিতে হবে। ২০১৬ সালে গুগলের একটি প্রতিষ্ঠান Verily ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা শুধুই এই কাজটি করে যাবে!
The Debug Project এর আওতাভুক্ত একটি অটোমেটেড ল্যাব প্রায় মিলিয়নের উপর পুরুষ মশা Bred করে যাদের মধ্যে Wolbachia রয়েছে বা যেগুলো Wolbachia দ্বারা সংক্রমিত। পুরুষ মশা যদিও কামড়ায় না। ২০১৭ সালে প্রায় ২০ মিলিয়ন স্ত্রী মশকী ছাড়া হয় স্যান ফ্রান্সিস্কো, ক্যালিফোর্নিয়াতে। আবার ২০১৮ সালে একই এক্সপেরিমেন্টের জন্য আরো এক দফা Wolbachia সংক্রমিত স্ত্রী মশকী ছাড়া হয়। রিপোর্ট দেখায় যে প্রায় ৯৫% এডিস মশা-ই ডেঙ্গু ছড়াতে অক্ষম হয়ে পড়েছে এবং এদের বিস্তার খুবই দুর্বল। ঠিক ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রেও একই প্রভাব লক্ষণীয়। এই কোম্পানি ক্রমাগতই বিভিন্ন পরিবেশে এরকম Wolbachia এফেক্টেড মশা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং কাজ করছে যাতে সব পরিবেশেই ব্যাপারটার প্রসার ঘটানো যায়। এই দিন হয়ত বেশিদূর নেই যেদিন আমরা দেখব পৃথিবীতে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রায় নিঃশেষ হয়ে এসেছে। এবং দিন শেষে ধন্যবাদের গ্রাহক হবে এক আণুবীক্ষণিক পরজীবি!
Source: Curiosity