অস্বস্তিকর গরমকালে আপনি যখন অতিষ্ট হয়ে আপনার দিন পাড়ি করছেন তখন অনেকদিন পর দেখলেন আকাশ কালো হয়ে এলো মেঘে। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয়ে গেলো মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি। বৃষ্টির ফোটা স্পর্শ করলো মাটি। এমন অবস্থায় আমদের মন আনচান হয়ে উঠে। অদ্ভুত এক ভালো লাগা ছড়িয়ে যায় শরীর ও মনে। সেই সাথে নাকে এসে ধাক্কা খায় মনোরম একটা ঘ্রাণ যেটাকে আমরা বাংলায় বলি “সোঁদা গন্ধ”। তো কেন হয় এই সোঁদা গন্ধ?
এই গন্ধের পেছেনে আসলে কাজ করে ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়া। আমরা যেটাকে বলি সোঁদা গন্ধ, ইংরেজিতে সেটাকে বলে ‘পেট্রিকোর‘। ১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয় একদল গবেষক প্রথম এই নামকরণ করেন। গ্রীক শব্দ ‘পেত্রোস‘ ও ‘ইকোর’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে এই শব্দ। পেত্রোস অর্থ ‘পাথর’ আর ইকোর অর্থ ‘ঈশ্বরের শিরায় প্রবাহিত তরল।’ যুক্তরাজ্যের জন ইনস সেন্টারের আণবিক জীবাণুবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক মার্ক বাটনার বিবিসিকে বলেন,
“আপনি যখন মাটির সোঁদা গন্ধ পান তখন আসলে বিশেষ একধরণের ব্যাকটেরিয়ার তৈরী করা অণু গন্ধ পান আপনি।”
১৯৬৫ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম একটি রাসায়নিক যৌগপদার্থের সন্ধান পান যা একটিনোমায়সিটিস গোত্রের ব্যাক্টিরিয়া তৈরি করে থাকে । এর নাম জিওসমিন। এই জিওসমিনই দায়ী সোঁদা গন্ধের জন্য। এটি উৎপাদনকারী ব্যাক্টেরিয়া গুলো সাধারণত উর্বর মাটিতে থাকে।মাটির মধ্যেই তাদের জীবনাবসান ঘটে, আর বৃষ্টির পানি পড়লে তাদের মৃত কোষগুলো থেকে জিওসমিন বেরিয়ে আসে । সে জিওসমিন বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃষ্টির পর আরো অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। তখন সে গন্ধ আমাদের নাকে এসে লাগে।
তবে কেন শুধু প্রথম দিকের বৃষ্টিতেই এমন হয়?
পরে কেন অতটা হয় না?
এর কারণ হল মাটির শুষ্কতা। মাটি যখন অনেকদিন ধরে শুষ্ক থাকে তখন জিওসমিন উৎপাদনের হার বেশি থাকে। কিন্তু নিয়মিত বৃষ্টিতে যখন মাটির শুষ্কভাবটা চলে যায়, তখন জিওসমিন উৎপাদন কমে যায়। যার কারণের পরবর্তীতে ঘ্রাণটা আমরা পাই না।
অধ্যাপক বাটনার বলেন,
“অনেক প্রাণীই এই গন্ধের বিষয়ে সংবেদনশীল হলেও মানুষ এ সম্পর্কে অতিরিক্ত অনুভূতিশীল।”
এই গন্ধকে ‘পেট্রিকোর’ নাম দেয়া দু’জন গবেষক ইসাবেল বেয়ার আর আর.জি. থমাস ১৯৬০ সালে জানতে পারেন যে সেসময় ভারতের উত্তর প্রদেশে এই ঘ্রাণ আহরণ করে সুগন্ধি হিসেবে বিক্রি করা হতো ‘মাটি কা আত্তর’ নামে।বর্তমানে সুগন্ধি তৈরীর কাঁচামাল হিসেবে জিওসমিনের ব্যবহার বাড়ছে ।
মাটিতে উপস্থিত জিওসমিন ছাড়াও গাছ এবং ব্জ্রপাত বৃষ্টির ঘ্রাণ তৈরীতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অধ্যাপক নিয়েলসেন বলেন, অনেক গাছে সুঘ্রাণের উৎস হিসাবে থাকে তারপিন। বৃষ্টির কারণে এসব সুবাস প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও তিনি বিবিসিকে বলেন, “শুকনা ভেষজ গুড়া করলে যেমন তার ঘ্রাণ বৃদ্ধি পায়, তেমনি দীর্ঘ শুষ্ক মৌসুমের পর বৃষ্টি হলে গাছের শুকিয়ে যাওয়া অংশগুলো থেকে নতুনভাবে সুবাস তৈরী হয়।”
এছাড়াও বজ্রপাতেরও ভূমিকা আছে ঘ্রাণ তৈরিতে। বিদ্যুত চমকানোর কারণে বায়ুমন্ডলে বৈদ্যুতিক আবেশ তৈরী হওয়ায় প্রকৃতিতে ওজোন গ্যাসের একধরণের গন্ধ প্রতীয়মান হয়। মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যারিবেথ স্টোলযেনবার্গ বলেন,
“বিদ্যুৎ চমকানোর পাশাপাশি ঝড় এবং বিশেষত বৃষ্টির কারণে বাতাস পরিষ্কার হয়। যার ফলে বৃষ্টি পরবর্তী সুঘ্রাণও সহজে ছড়িয়ে পড়ে।”
সুত্রঃ BBC, Curiosity