ফ্লাইং সসার নিয়ে যত বিস্ময় : পর্ব-১

ফ্লাইং সসার নিয়ে এখন মানুষের জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। কখনো কি মনে হয়েছে আমরা পৃথিবীবাসীরা নজরবন্দী। কোটি কোটি মাইল দূরে ঐ মহাশূন্যের কোন এক গ্রহে বসে একদল প্রাণী আমাদের প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।

অনেকেরই ধারণা এই মহাশূন্যে কোন কোন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে। আর সেসব গ্রহে বসবাসকারী প্রাণীরা মানুষের চেয়েও অনেক বেশি জ্ঞানী। আর তারাই ফ্লাইং সসারের মাধ্যমে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করছে। তাহলে একটা প্রশ্ন কি মাথায় আসে না যে এই ফ্লাইং সসারটা কি আসলে? সহজ ভাষায় বলা যায়, ভিনগ্রহের আকাশযানই ফ্লাইং সসার। ফ্লাইং সসারই হোক কিংবা আনআইডেন্টিফাইড বিমানই হোক সবই ইউএফও (UFO – Unidentified Flying Object)-এর অন্তর্গত।

ফ্লাইং সসার নামটি যেভাবে এলো :

১৯৭৪ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী কেনেথ আরলল্ড সর্বপ্রথম “ফ্লাইং সসার” যার অর্থ উড়ন্ত পিরিচ নামটি প্রবর্তন করেন। তিনি নিজেকে আধুনিক কালের প্রথম প্রত্যক্ষ সসার দর্শনকারী হিসেবে দাবি করেন। তিনি আরো বলেছিলেন,

সসার দেখতে অবিকল পিরিচের মতো।

তবে ১৯৫৩ সালের দিকে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু।” তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া,অস্ট্রেলিয়া,ইউরোপ জুড়ে এখনো এটি “ফ্লাইং সসার” নামেই পরিচিত। কিন্তু রাশিয়াতে এটি “উড়ন্ত কাস্তে”(Flying Sickle) নামে পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় সসার :

১.মিশরীয় রাজা ফারাও তুতেম খানমের সসার দেখা :

খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১৪৫০ পর্যন্ত মিশরে রাজত্ব করেন ফারাও তৃতীয় তুতমুস। তার রাজত্বকালের ১২তম বছরের তৃতীয় মাস শীতকাল এ একবার মিশরের আকাশে আগুনের গোলক দেখা যায়। তুতেম খানমের রাজ্যের প্রজারা এটাকে “নিশ্চিত মৃত্যুযম” বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজা মনে করেছিলেন অপদেবতাগণ তার সুখের সাম্রাজ্য কেড়ে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আগুনের গোলক তারই সংকেত। ফলে সারা রাজ্য যুদ্ধের সাজে সেজে উঠে। ফারাও এর সেনাবাহিনীরা খুঁজেছিল গোলার উৎস। কিন্তু হঠাৎ সেই গোলা অদৃশ্য হয়ে যায়।

২. জার্মানে সসার দেখা :

১৬৮৬ সালের ৯ জুলাই এ জার্মানির লিপজিক অধিবাসীরা রহস্যময় এক ধাতব বস্তুকে উড়তে দেখেছিল।

৩. পাহাড়ের দেশ রোম নগরীতে সসার :

খ্রিষ্টপূর্ব ২১৬ অব্দে, প্রাচীন রোমের আকাশে আলোর গোলক দেখা যায়। তবে রোমবাসীরা এই গোলককে আলোর জাহাজ ভেবেছিলেন। মনে করেছিলেন তাদের ভাগ্যের দরজা খুলে দিতে স্বর্গের দেবতারা আকাশ পাড়ি দিচ্ছেন।

৪.সুইডেনবাসীদের সসার দেখা :

১৭৫৬ সালে সুইডেনের লোকেরা এক ধরনের অদ্ভুত রহস্যময় উড়ন্ত পিরিচ টাইপের বস্তু দেখেছিল। ১৯৮০ সালে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে একটি ত্রিকোণাকার বস্তু সন্ধ্যার পর প্রায়ই দেখা দিতে লাগল। বস্তুটি কালো রঙ এর ছিলো। এর তিন কোণায় তিনটি লাল আলো এবং মাঝে সবুজ বৃত্ত ছিল। কয়েকদিন পর আকাশযানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। একই সময়ে ইংল্যান্ডেও ইউএফও দেখা দিতে লাগল।

৫. ইরানের আকাশে সসার :

১৯৮৫ সালে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার উপর দিয়ে উড়ে যায় একটি অদ্ভুত পিরিচ আকৃতির আকাশযান। একে থামানোর জন্য বেতারবার্তা প্রেরণ করা হয় তবে তা ফিরে আসে। ফলে উড়ন্ত বস্তুটিকে মাটিতে নামানোর জন্য মিসাইল ও পারমাণবিক বোমাতে পরিপূর্ণ এক ভয়ংকর বিমান “ফ্যান্টম” ব্যবহার করা হয়।

বোমা নিক্ষেপের জন্য বাটন প্রেস করা হলে দেখা যায় তা বিকল হয়ে গেছে। ওই আকাশযান চলে যাওয়ার পর ২টি বিমান সচল হয়।

ইরান প্রেসের কাছে দাবি করে, “তাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নজরদারী করতে পশ্চিমারা এই গুপ্তচর আকাশযান পাঠিয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্বীকার করে জানায় অন্য বিমানের সুইচ বিকল করার যন্ত্র তাদের কাছে নেই। এমনকি আকাশযানটিও তাদের নয়। ”

মানুষ যে কারণে মনে করে ইউএফও দেখতে ফ্লাইং সসারের মতো :

১৯৪৭ সালের ২৪ শে জুন, অপেশাদার পাইলট ওরেগনে একটি এয়ার শোতে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি রেনিয়ার মাউন্টের নিকটে আকাশে একটি নীল আলো জ্বলতে দেখলেন। প্রথমে তিনি ভাবেন যে এটি অন্য একটি বিমান থেকে সূর্যের প্রতিবিম্ব দেখাচ্ছে। তবে আশেপাশের একমাত্র অন্য বিমানটি প্রায় 15 মাইল দূরে ছিল। তারপরে তিনি দেখেছিলেন আরও নয়টি আলোক প্রজ্বলকে, একের পর এক। উত্তরাধিকার সূত্রে পরে যা তিনি অজ্ঞাতনীয় উড়ন্ত বস্তু হিসাবে বর্ণনা করেছেন তা থেকে এসেছিল।

পাইলট কেনেথ আর্নল্ড ইউনাইটেড প্রেসের এক প্রতিবেদকের কাছে এভাবে বস্তুর গতি বর্ণনা চেষ্টা করেছিলেন যে, যন্ত্রটিকে আপনি যদি জলের উপর দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে ছেড়ে দেন তবে এটিকে সসারের মতো দেখাবে। এই প্রতিবেদনের অর্থ দাঁড়ায় যে, বস্তুগুলো নিজেরাই সসারজাতীয় ছিল এবং দেশজুড়ে খবরেটি এমনভাবে পুনরাবৃত্তি হয়েছিল যে আর্নল্ড “উড়ন্ত সসার” দেখেছিল।

২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ও ২০১৮সালের মার্চ মাসে নিউইয়র্ক টাইমস এমন তিনটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখানো হয়েছে,

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর বিমান চালকদের কিছু অজানা উড়ন্ত বস্তু অনুসরণ করছে। এই ভিডিওর রহস্যের বেড়াজালগুলি হাইপারসোনিক গতিতে সরে গিয়েছিল। পৃথিবীর উপরে কয়েক হাজার ফুট উপরে উড়ছে কিছু উন্নতমানের পিরিচ শেপের যন্ত্র যাদের কোনও স্বতন্ত্র ডানা, ইঞ্জিন বা এমন কোন বস্তু যা তাদের উড়তে সাহায্য করবে। প্রশ্ন একটাই তাহলে কি সেগুলো উড়ন্ত সসার ছিল? নাকি অবিশ্বাস্যভাবে হাই-টেক ড্রোনস? বিমান চালকদের কোনও ধারণা ছিল না এবং নেভির গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের এক সাম্প্রতিক বিবৃতি অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারেরও এই নিয়ে কোনো ধারণা নেই।

আরেকটি বিবৃতিতে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছিল, উদাহরণস্বরূপ, ২০০৪ সালে চিত্রায়িত একটি ঘটনায় অজানা জিনিসগুলি হঠাৎ “৮০,০০০ ফুট অবধি উপরে উঠেছিল এবং তারপরে সমুদ্রের দিকে আঘাত করে, অবশেষে ২০,০০০ ফুট নিচে থামে এবং সমুদ্রের উপর ঘুরে বেড়ায়। তারপর পিরিচ আকৃতির যন্ত্রগুলো রাডার সীমার বাইরে চলে গিয়েছিলো।

রেফারেন্স :

১. বই : মহাকাশের বিস্ময় ফ্লাইং সসার

লেখক : খায়রুল আলম মনির

২.https://www.jugantor.com/old/oneday-everyday/2014/01/06/56583

৩.https://time.com/3930602/first-reported-ufo/

৪.https://www.bbc.com/news/magazine-2779669

Comments are closed.