মানবদেহের ৪ “অপ্রয়োজনীয়” অঙ্গ যা একসময় সক্রিয় ছিল।

যখন কোন একটি প্রজাতির বিবর্তন ঘটে তখন তাতে দেখা যায় অসংখ্য ছোট বড় পরিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দৈহিক পরিবর্তনটাই বেশি পরিলক্ষিত হয়। কোনো প্রাণীর পাখনা পরিণত হয় পায়ে আবার একইভাবে অতীব প্রয়োজনীয় লেজও হয়ে যায় নিষ্প্রাণ। প্রাণীদেহের এইরকম অঙ্গাণুসমূহ কে বলা হয় Vestigial Traits বা এমন সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যা আগে আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল কিন্তু বর্তমানে অকেজো হিসেবে চিহ্ন বহন করছে।

১. Tailbone বা পুচ্ছ অস্থি
এই পুচ্ছ অস্থি বা কক্ক্বিক্স একসময় আমাদের পূর্বপুরুষদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। বিভিন্ন ধরনের ভারসাম্য রক্ষায়, গাছে চলাকালীন সময়ে এটা খুবই ভালো ভূমিকা রাখত। আপনার একসময় লেজ ছিল, আমাদের সবার ছিল। কিন্তু বিবর্তনের ধারায় সেটি বর্তমানে আর দৃশ্যমান নেই। এমনকি মানবভ্রূণ গঠনের সময়ও তাঁর লেজ থাক কিন্তু একটা সময় দেহ সেটা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিলীন করে দেয়। কিছু বিরল ঘটনায় দেখা যায় অনেক সময় যে বাচ্চার জন্ম হয়েছে লেজ সহ। কিন্তু একসময় এই লেজই ছিল পূর্বপুরুষের অলংকার।

পুচ্ছ অস্থি

২। Goosebumps বা লোম খাড়া হয়ে যাওয়া

হরর মুভি দেখছেন বা কোনো রোমাঞ্চকর মুহূর্তে আছেন। আপনার গায়ে “কাঁটা” দিয়ে উঠল বা গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে গেল। কেন এমন হয়? কারণ হচ্ছে আমাদের পূর্বপুরুষের দেহে একসময় বিশাল লোম ছিল। Arrector Pili নামে এক বিশেষ পেশি পরিবেশের বিভিন্ন অবস্থার উপর ভিত্তি করে প্রতিবর্তী ক্রিয়ার মাধ্যমে সাড়া প্রদান করে। যখন খুব ঠান্ডা বা কোনো উত্তেজনাপূর্ন অনুভূতি দেহে অনুভূত হয় তখন সে পেশি সংকুচিত হয় এবং গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।

. কান
অবাক হচ্ছেন কি? কান আমাদের অতীব প্রয়োজনীয় অঙ্গ, কিন্তু সহস্রাব্দের বিবর্তনের ফলে কান ও সংলগ্ন পেশিরও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আপনি আপনার বন্ধুদের মাঝে কাউকে হয়ত দেখতে পারবেন দুটো কানই পেশির সাহায্যে নাড়াতে পারছে। ব্যাপারটা অনেক বিরল হলেও এই কাজটি সাধারণ কুকুর, বিড়াল অথবা অন্য প্রাণীরা করে থাকে। তাঁরা আশেপাশের শব্দ গুলো ধারণ করার জন্য বিভিন্ন দিকে কান কে ঘুরাতে পারে। Auricular পেশির সাহায্যে এটি করা যায়। কিন্তু মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিরা শব্দ শোনার জন্য কান না ঘুরিয়ে সরাসরি মাথা ঘুরায়। তাই কালের বিবর্তনে এই Auricular পেশির কাজ আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বিধায় আমরা কান নিজেদের ইচ্ছেমত নাড়াতে বা ঘুরাতে পারিনা। তাছাড়াও আমাদের কানের উপরের অংশে একটা ছোট্টো কপাটিকার মতো পর্দা ছিল যা কানের প্রবেশমুখ ঢেকে রাখত যা বর্তমানে বিলুপ্ত।

৪. আক্কেল দাঁত

এটা বেশ পরিচিত। বলা হয়ে থাকে আক্কেল দাঁত ওঠা মানেই বুদ্ধি বা আক্কেল গজায় মানুষের। ব্যাপারটা ওইরকম কিছুনা। মানুষের কর্তন দাঁত বা মোলার দাঁতের প্রথম পাটি ওঠে ৬ বছর বয়সে। দ্বিতীয় সেট ১২ বছর বয়সে এবং তৃতীয় অংশ যা গজায় ১৮-২০ বছর বয়সে। এটাকেই মূলত বলা হয় আক্কেল দাঁত। কখনো সাধারণভাবেই আক্কেল দাঁত আসে, কখনো বা অনেক ব্যথা হয় আবার কারো কারো ক্ষেত্রে জীবনে একবারও আক্কেল দাঁতের দেখা মেলে না। কিন্তু এমন না যে আক্কেল দাঁত থাকলে আমরা অতিরিক্ত কোনো উপকার পাই। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষদের ভীষণ কাজে দিত এই আক্কেল দাঁতের পাটি। বিবর্তনের একটা পর্যায়ে এসে এখন এই দাঁতের আগমন শুধুমাত্র ধরা হয় বুদ্ধি বা মস্তিষ্কের পরিপূর্ণতা বুঝাতে।


বোনাসঃ এপেন্ডিক্স
আমাদের দেহের আদি চিহ্ন হিসেবে বর্তমান অপ্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহের নাম টানলে যে নামটি প্রথমেই আপনি বলবেন সেটা হচ্ছে এপেন্ডিক্স। কিন্তু এর ব্যাপারটা এখনও রহস্যময় যে আদৌ এপেন্ডিক্স কোনো প্রয়োজনীয় কী না। বিজ্ঞানীরা এখন দাবি করেন যে এপেন্ডিক্সের একসময় কাজ ছিল আমাদের দেহে। এটি কাজ করত এক প্রকার প্রতিরক্ষা গ্রন্থি হিসেবে। বর্তমানে যাদের এপেন্ডিক্স কেটে ফেলে দেয়া হয় তাঁদের মধ্যে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। অর্থাৎ কিছু হলেও এই এপেন্ডিক্স আমাদের দেহের প্রতিরক্ষায় হয়ত ভূমিকা রাখে যা জানা যাবে আরো গভীর অনুসন্ধানে।

এপেন্ডিক্স

তথ্যসূত্রঃ curiosity, businessinsider, science alert.

One Comment

Comments are closed.