আচ্ছা কেমন হবে বলুন তো, যদি আপনার বাসার নিচেই বাস-ট্রাক বা অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে?
যারা মফস্বল শহরে থাকেন বা যাদের বাড়ি রাস্তার পাশে তারা হয়তো বলবেন, “এ আর এমন কি? আমার বাড়ির সামনেইতো হাইওয়ে”। তাদের জন্য বলি, আপনার বাড়ির আঙিনা দিয়েই যদি রাস্তা যায় বা আপনার বিল্ডিং এর নিচ তলা দিয়ে কোন রাস্তা যায় তাহলে কেমন মজা হবে? নীচতলা থেকেই গাড়িতে উঠে যেতে পারবেন যেকোনো জায়গায়। কি মজা তাই না? অন্যদের কথা জানি না কিন্তু ঢাকা শহরের সবাই নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবেন আর এরকম হলে ঢাকা শহরের জ্যাম এর অবস্থারও উন্নতি হবে আশা করি।
১৯৮০ দশকের কথা, উন্নত প্রযুক্তি আর আধুনিক জ্বালানির আবির্ভাবের কারণ এ জাপানের একটি কাঠ এবং কয়লা কোম্পানির ব্যবসা পড়তির দিকে। মন্দার কারণে বিভিন্ন স্থাপনা ছেড়ে দিতে হয় কোম্পানিটিকে। এরই মধ্যে তাদের কেনা একটি জমিতে স্থাপনার অনুমতি আটকে যায়। ওই একই জায়গা দিয়ে হাইওয়ের পরিকল্পনা থাকায়। কিন্তু ওরা জমি ছাড়তে নারাজ। আর সরকার তার রাস্তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার পাত্র নয়। এভাবে দুই পক্ষের লড়াইয়ে অমীমাংসিতভাবে কেটে যায় পাঁচ বছর। অবশেষে উভয়ের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় রাস্তা হবে এবং তার সাথে বিল্ডিংও হবে। মানে, বিল্ডিংয়ের ভেতর দিয়ে রাস্তা হবে। এজন্য অবশ্য সরকারের নিয়ম কানুন এ কিছু পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। সাধারনত, সরকার এবং জমি মালিকের এরকম ক্ষেত্রে রাস্তা মাটির নিচ দিয়ে পরিচালিত করা হয়। কিন্তু আলোচিত এই রাস্তাটি তার ব্যতিক্রম।
বলছি জাপানের ওসাকা শহরে অবস্থিত ফুকুশিমা- কু এর “গেট টাওয়ার বিল্ডিং” এর কথা। ১৬ তলা বিশিষ্ট এই ভবনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর ভেতর দিয়ে হানশিন এক্সপ্রেস নামক হাইওয়েটি পরিচালিত। ভবনের পাঁচ ছয় এবং সাত তলা দিয়ে রাস্তাটি প্রবাহিত এবং বাকি অংশ অফিস ও বাণিজ্যিক কাজের জন্য বরাদ্দ। রাস্তাটি অনেকটা ভবনের ভাড়াটিয়ার মতো। তবে সাধারন ভাড়াটিয়া নয় কিন্তু!
তিনতলা জুড়ে থাকা হাইওয়ে টির মূল ভবনের সাথে কোন সংযোগ নেই। অর্থাৎ ভবন থেকে গাড়ি এবং যাত্রী ওঠানামার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া গাড়ির শব্দ এবং ঝাঁকুনি যাতে ভবনে কোন প্রভাব না ফেলে সে জন্য বিশেষভাবে রাস্তার প্রাচীর ( শকপ্রুফ এবং সাউণ্ডপ্রুফ ) তৈরি করা হয়েছে। ভবনের লিফট এই পাঁচ থেকে সাত তলা স্কিপ ( না থেমে ) করে যায়। এসব কিছুই এমনভাবে করা হয়েছে যাতে রাস্তার কারণে মূল ভবনের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত না ঘটে এবং ভবনের বাসিন্দাদের আরামে কোন ঘাটতি না হয়। বাস্তবিক ভাবেও এই রাস্তা ভবনের উদ্দেশ্যে ব্যাঘাত ঘটায় নি বরং একে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে সকলের কাছে।
কাঠামোগত দিক থেকে এই রাস্তা এবং ভবনের ডিজাইন কিন্তু খুব বেশি জটিল নয়। রাস্তার বিপুল পরিমাণ লোড আসলে ভবনের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলেনি কারণ ভবনের পাশে থাকা দুটি বড় বড় পিলার রাস্তার অধিকাংশ ভার বহন করে। ফলে ক্ষতি তো নয় বরং ভারসাম্য রক্ষায় একে অপরকে সাহায্য করছে ভবন এবং রাস্তাটি। 1992 সালে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ভবনটি তৈরি হবার পর থেকেই প্রকৌশলীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে স্থাপনাটি।
সামান্য একটি বিবাদ থেকে অসাধারণ কিছু। যেখানে আমাদের ক্ষেত্রে বিবাদ থেকে মারামারি, খুনোখুনি শুরু হয়ে যায় সেখানে তারা বিবাদ থেকে দারুণ কিছু জন্ম দিয়েছে। যা ভবিষ্যৎ যোগাযোগ প্রযুক্তির মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। দূর করতে পারে ঢাকা শহরের আবাসন ও রাস্তা সংকট এবং ট্রাফিক জ্যাম। ও হ্যাঁ, ঢাকা শহরেও কিন্তু এরকম একটি স্থাপনা রয়েছে। ঠিক এরকম নয় তবে একই ধাঁচের বিজ্ঞানবর্তিকা পাঠক বন্ধুদের খুজে বের করার দায়িত্ব থাকলো।