মানুষের সৌন্দর্য প্রকাশের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে চুল। চুল মানুষের সৌন্দর্যকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই সুন্দর চুল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মানুষেরই থাকে। চুলের মধ্যে আবার রয়েছে রঙের ভিন্নতা। একেক জনের একেক রঙ। কারো দেখা গেছে কালো, আবার কারো লাল, কারো আবার সাদা রঙেরও হয়ে থাকে। আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষের চুলের রঙ কালো। তবে ইউরোপিয়ানদের চুলের রঙ এর মধ্যে আবার অনেক ভিন্নতা দেখা যায়। তাই চুলের রঙ কে নিয়ে অনেকেই আবার গবেষণার রাজ্যে ডুবে গেছেন।
সম্প্রতি এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা চুলের রঙ নির্ধারণকারী ১২৪ টি জিন শনাক্ত করেছে। লন্ডনের কিংস কলেজ (King’s college) এবং নেদারল্যান্ডের ইরাসমাস এম.সি ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার (Erasmus MC University Medical Center) এর একদল গবেষক এই জিনগুলোর উপর পরীক্ষা চালায়। তারা লক্ষ করেন মানুষের চুলের রঙ নির্ধারণে এই ১২৪ টি জিন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এই জিনগুলোর উপস্থিতিতে দেহে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থের সৃষ্টি হয় যা আমাদের চুলের রঙ এর ভিন্নতার জন্য দায়ী।
বিজ্ঞানীদের এরূপ আবিষ্কার জেনেটিক জটিলতায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এই আবিষ্কারের ফলে মানুষ তার চর্মাদির স্বাভাবিক রং সম্বন্ধে ধারনা লাভ করবে এবং টেস্টিকুলার (Testicular) , প্রোস্টেট (Prostate) এবং ওভারিয়ান ক্যান্সার (Ovarian Cancers) এর দশাও বুঝতে পারবে। এই নতুন আবিষ্কার ফরেনসিক বিদ্যার জটিলতাকে অনেকাংশে হ্রাস করবে।
পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে চুলের এই রঙের ভিন্নতার কারণ হিসেবে ১২ টি জিনকে দায়ী করা হতো। কিন্তু নেচার জেনেটিক্স (Nature Genetics) এ প্রকাশিত এই নতুন তথ্য পূর্ববর্তী জেনেটিক গবেষণার অনেকগুলো খাঁদকেই পূর্ণ করে দিয়েছে। পূর্বের অনাবিষ্কৃত চুলের রং নির্ধারক এই জিনগুলো আবিষ্কারের লক্ষ্যে গবেষকরা প্রায় তিন লক্ষ ইউরোপিয়ান বংশধরের উপাত্ত এবং তাদের চুলের রঙের ভিন্নতার বৈশিষ্ট্যগুলো সংগ্রহ করে যা ইউ.কে বায়ো ব্যাংক (UK Bio Bank) সরবরাহ করে। তারা প্রত্যেকের চুলের রং এবং জেনেটিক তথ্যগুলো তুলনা করে ১২৪ টি জিন আবিষ্কার করতে সক্ষম হন যার মধ্যে ১০০ টি-ই পূর্ববর্তী সময়ে আমাদের কাছে আজানাই রয়ে ছিল। বিজ্ঞানীরা আরো মন্তব্য করেন তাদের এই পূর্বাভাস আগের জেনেটিক তথ্যগুলো হতে অত্যাধুনিক এবং নির্ভুল।
লন্ডনের কিংস কলেজের অধ্যাপক টিম স্পেক্টর বলেন, “তাদের এই আবিষ্কারটি জীববিজ্ঞান ও ঔষধের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপর প্রভাব ফেলবে। এছাড়াও প্যাগমেন্টেশন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী জিনগত গবেষণা হিসেবে এটি ম্যালোনোমা (Melanoma), চামড়া ক্যান্সারের আক্রমণাত্মক ফর্ম এর বোধগম্যতাকেও বহুগুণে বৃদ্ধি করবে”। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এই ১২৪ জিন যে শুধু চুলের রঙ কে প্রভাবিত করে তা কিন্তু নয় এর সাথে এটি আমদের দেহের ক্যান্সারের প্রকারভেদ, জিন ক্রোহেন এবং অন্যান্য ধরনের আন্ত্রিক রোগের সম্ভাবনার বিষয়টিকেও প্রভাবিত করে।
ইরাসমাস এম.সি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ম্যানফ্রেড কায়সার বলেন, “মানব প্যাডমেন্টেশন জেনেটিক্স সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করবে এছাড়াও এই নতুন উদ্ভাবন চুলের রঙের জিনগুলো খুঁজে বের করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে ফরেনসিক এপ্লিকেশনে ডি.এন.এ (D.N.A) ট্রেস থেকে চুলের বর্ণের সঠিকতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যা অনেক অপরাধীদের খুঁজে পেতে সহায়তা করবে”।
বিজ্ঞানীদের শনাক্ত করা এই ১২৪ টি জিন যেমন চুলের রঙের জেনেটিক্স সমস্যাকে নিরূপণ করতে সহায়তা করেছে তেমনি ডি.এন.এ পদ্ধতিটাকেও সহজ থেকে সহজতর করে তোলেছে।এরূপ আবিষ্কার সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। তবে তাদের উদ্ভাবন কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে এখনো অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে।
তথ্যসংগ্রহ: sciencedaily.com
Leave a Reply