ঘাস : The survival master

রং এর নেশায় মাতাল সে, তাই গান গায় রং নিয়ে। অবহেলায় পরে থাকা ঘাস. চুপিসারে ফোটে কিছু ফুল,. ঘাসফুল ঘাসফুল

বলছিলাম ঘাসের কথা এই রং রসে মেতে থাকা ঘাস নিয়ে জেনেটিক্স গবেষণায় বেড়িয়ে এল এত অদ্ভুত তথ্য। বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ঘাসই হচ্ছে সারভাইভ্যাল মাস্টার অর্থাৎ উদ্ভিদ কুলের মধ্যে সব থেকে বেশী জীবনী শক্তি সম্পূর্ন। বিজ্ঞানীরা বলছেন Brachypodium distachyon প্রজাতি যারা purple false brome অথবা  stiff brome নামে আমাদের কাছে বেশী পরিচিত এই প্রজাতিটির অতিরিক্ত সাশ্রয়ী পত্ররন্ধ্র এবং পাতায় নিয়ন্ত্রনযোগ্য ছিদ্র রয়েছে যাতে করে পানি সঞ্চালন প্রকৃয়ায় ঘাস থেকে পাতা এবং বাইরের মধ্যে ব্যাপক সাশ্রয়ী ভুমিকা পালন করে।এছাড়াও ঘাস তাদের পাতায় জল সংরক্ষনের জন্য পত্রশীর্ষে খাঁজ ও বর্ডার রয়েছে যার  মাধ্যমে ঘাসগুলো জল নিয়ন্ত্রন করে থাকে। ২০১৭ সালের মার্চে Science News এর একটি আর্টিকেলে বলা হয়েছে বর্তমানে বিজ্ঞানী ঘাসের জেনেটিক্স গবেষণার মাধ্যমে এমন একটি জেনেটিক্স সুইচেরর সন্ধান পেয়েছেন যা তাদেরকে পানি ব্যবহার না করেই কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহনে সহায়তা করে আর ধারনা করা হয় এই গুনটি বা জেনেটিক্স সুইচটিই তাদের সারভাইভ্যাল মাস্টার হিসেবে তৈরী করে তোলে। ধারনা করা হচ্ছে  এই জেনেটিক্স সুইচটিকে কাজে লাগিয়ে আরও খড়া বান্ধব ফসলি  উদ্ভিদ উৎপাদন সম্ভব।

পাতার নিচের অংশে অবস্থিত নিয়ন্ত্রিত ছিদ্রপথ বা পত্ররন্ধ্র উদ্ভিদকে পানির অপচয় কমিয়ে কার্বনডাইঅক্সাইড (CO2)  গ্রহনে সহয়তা করে। হালকা, আর্দ্রতা এবং তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় সূর্যালোকে প্রতিক্রিয়াশীল পত্ররন্ধ্রগুলো উদ্ভিদ খোলে এবং বন্ধ করে দেয়।আর ঘাসের পত্ররন্ধ্র গুলো অনান্য উদ্ভিদের তুলনায় অধিক প্রতিক্রিয়াশীল এবং প্রসস্থ ভাবে খুলতে সক্ষম যা এদের সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে।

আর”এই ক্ষমতাই পৃথিবীর অনেক জায়গায় সফলভাবে ঘাসের চাষের কারণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে” বলেছেন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়াতের   উদ্ভিদবিজ্ঞানী ব্রেন্ট হেলিকার।

উদাহরণস্বরূপ,

ঘাসগুলি দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়া এবং শক্তিশালী বায়ুর সাথে মোকাবিলা করতে বিশেষভাবে সজ্জিত এবং এরা সমতল থেকে বৃক্ষহীন তৃণভূমিতেও বেঁচে থাকতে সক্ষম।বেশীরভাগ উদ্ভিদের  স্টটমাটায়, দুটো কিডনির মত  মটরশুঁটি-আকারের কোষ থাকে,এবং এই নিয়ন্ত্রিত রন্ধ্ররগুলোকে বেলুনের মত বায়ু দ্বারা পূর্ণ এবং বায়ু হ্রাসের মাধ্যমে আকার পরিবর্তন করানো সম্ভব যেটি বেশীর ভাগ সময়েই সংগঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু ঘাসের ক্ষেত্র ঘটে ভিন্ন ঘটনা ঘাসের ক্ষেত্রে এই কোষগুলো হয়ে থাকে ডাম্বেল আকৃতির কোষ থাকে যাদের বলা হয় গার্ড সেল বা রক্ষী কোষ এবং প্রতিটি ডাম্বেল আকৃতির কোষ  একটি নতুন কোষের সাথে যুক্ত হয় যাকে বলা হয় সাবসিডিয়ারি কোষ বা সহায়ক কোষ যেটি অন্য উদ্ভিগুলোর ক্ষেত্রে ঘটে না।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন থেকে সন্দেহ করছেন এই সাবসিডিয়ারি কোষ বা সহায়ক কোষ গুলো ডাম্বেল আকৃতির রক্ষী কোষগুলোকে সহজেএবং দ্রুত  খুলতে এবং বন্ধ হতে সাহায্য করে। কিন্তু এটা নিয়ন্ত্রিত ভাবে পরীক্ষা করা অনেক দুঃস্কর ব্যাপার।

Stanford University এর জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ডমিনি বার্গম্যান বলেছিলেন,

” যখন একটি পত্ররন্ধ্র খোলা হয় তখন এর প্রতিবেশী কোষ গুলো মধ্যে এক প্রকারে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায় এবং এর পথ ধরে রাখে যদি প্রতিবেশী কোষ গুলো সরে যেতে না চায় তাহলে এটি আটকে পড়ে কিন্তু সাবসিডিয়ারি কোষ গুলোতে বিশেষ পাঁক থাকায় এটি প্রতিবেশী কোষ গুলোকে সরিয়ে রক্ষী কোষের কার্যক্রম দ্রুততর করে।”

 

এদিকে বার্গম্যান ও তার সহকর্মীরা purple false brome (Brachypodium distachyon) এর জেনেটিক্স বিশ্লেষণে মাধ্যমে MUTE নামের  প্রোটিন   ঊৎপাদনকারী  একটি জীনকে সনাক্ত করেছেন এবং এই জীনটিকে ঘাস থেকে আলদা করেছেন কারন MUTE প্রোটিন ছাড়া উদ্ভিদ সাবসিডিয়ারি কোষ বা সহায়ক কোষ তৈরি করতে পারবে না যাতে করে সাবসিডিয়ারি কোষ ছাড়া পত্ররন্ধ্র খোলা এবং বন্ধ করতে পূর্বের তুলনায় বেশী সময় প্রয়োজন।

এ গবেষনার পর বার্গম্যান বলেন, ” শুধুমাত্র ঘাসই একমাত্র উদ্ভিদ নয় যাদদের MUTE জীন রয়েছে।”

কিন্তু অন্যান্য উদ্ভিতগুলোতে  MUTE জীন থাকলেও সেগুলো রক্ষীকোষ গুলোর জন্য সহায়ক নয়। এরা শুধু রক্ষীকোস গুলোই তৈরী করে সহযোগী বা সাবসিডিয়ারি কোষ গুলো নয়।ঘাসের বিবর্তনের কিছু সময়ে,  MUTE জিন একটি ফাংশন গ্রহণ করে যা উদ্ভিদ সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশ থেকে পৃথক।যদিও এই নতুন গবেষণা নিশ্চিত করে সাবসিডিয়ারি বা সহায়ক কোষ এবং রক্ষী কোষ ঘাসের স্টোম্যাটাকে আরও প্রতিক্রিয়াশীল করার জন্য একসাথে কাজ করে তারপরও এখনও সাবসিডিয়ারি কোষ এবং এর কাজ আরো ব্যাপক গবেষনার প্রয়োজন।

এ প্রসঙ্গে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ চিকিৎসক মাইকেল ব্লাট বলেছেন,

“এটা দেখানো সত্যিই চমৎকার হবে যে আসলে দুটি ভিন্ন ধরনের কোষের  মধ্যে আয়ন বিনিময় আছে এবং হচ্ছে।” আজ থেকে হয়ত কয়েক বছর পর যখন পৃথিবীর উষ্ণ এবং আরো বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে তখন আরো প্রতিক্রিয়াশীল স্টোমাটো গুলো ঘাসকে সে সময়েও বেঁচে থাকতে সহায়তা করবে। স্ট্যানফোর্ডের স্টাডির সহকারী লেখক মাইকেল রাসিগ বলেছেন “ঘাস গুলো সত্যি অনেক ভাগ্যবান” তাই হয়ত রং রসে মেতে থাকা ঘাস গুলো চরম জলবায়ু পরিবর্তনের দিনেও রয়ে যাবে আজের মতই। আর এই  জেনেটিক উদ্ভাবন অন্যান্য উদ্ভিদের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারলে হয়ত জলবায়ু পরিবর্তন অনেকাংশেই মোকাবিলা করা সহজ হবে আমাদের।

Comments are closed.