কয়েকদিন আগে ইউটিউবে একটা ভিডিওতে দেখলাম একটা পানি ভরা বোতল পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে গড়িয়ে পাহাড় দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। দেখে তো আমি পুরা অবাক! ভিডিওটা কয়েকবার দেখেও কোন ক্যামেরা ট্রিক ধরতে পারি নি। বেশ চিন্তায় পরে গেলাম। ভিডিওতে টাইটেল ছিল ‘এন্টিগ্র্যাভিটি’। এসব দেখে আমার পাগল হয়ে যাবার যোগাড়। নিজের চোখকে অবিশ্বাস করতে পারছি না আবার এতদিন পড়ে আসা বিজ্ঞানের সূত্রকেও ভুলতে পারছি না।
সুতরাং ইউটিউবে দেখা ভিডিওর উপরে বিশ্বাস না করে নিজেই নেমে পড়লাম রহস্য উদ্ঘাটন করতে। সারাজীবন পড়েছি, দেখেছি যে উপরে যা উঠে তা নিচে নেমে আসবেই। মহামতি নিউটন সাহেব তার মহাকর্ষ তত্ত্বে এ কথাই বলেছেন। এ তো মিথ্যা হবার নয়। কিন্তু আরও অনেকগুলো ভিডিও দেখার পর নিউটন সাহেবকে সন্দেহ হতে শুরু করল। মনে মনে বলা শুরু করে দিলাম, ‘ নিউটন বেটা তো মহা ধাপ্পাবাজ। এতদিন আমাদের ভুল শিখিয়েছে’। কিন্তু যখনই এসব ভাবতেছি ঠিক তখনই ইন্টারনেটে কিছু রিসোর্স খুঁজে পেলাম। সেগুলো দেখে বুঝলাম আসলে নিউটন আঙ্কেল সত্যি কথাই বলছেন।
আসলে আমাদের দেশে এরকম কোন পাহাড় নেই যেখানে সবকিছু পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে যায়। তাই এর জন্য ইন্টারনেটে থাকা রিসোর্সই আমাদের ভরসা। এধরনের অনেক পাহাড় সারা পৃথিবী জুড়ে রয়েছে। এদেরকে বলা হয় ‘গ্র্যাভিটি হিল’ অনেকেই এইসব পাহাড়কে রহস্যময়ভাবে উপস্থাপন করতে আনন্দ পান তাই আদর করে ডাকেন ‘চৌম্বক পাহাড়’। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেই চারটা গ্র্যাভিটি হিল রয়েছে যেগুলো গুজরাট, লাদাখ আর কুচে অবস্থিত।
এবার আসি মূল কথায়। এসব পাহাড়ে দেখা যায় যে সবকিছুই পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটা মূলত পাহাড় ঘিরে যে রাস্তাগুলো থাকে সেখানেই দেখা যায়। পানির বোতল, ফুটবল সবকিছুই রাস্তার নিচু যায়গা থেকে উঁচু যায়গায় একা একা উঠে যায়। এমনকি বড় বড় গাড়িও পাহাড় বেয়ে একা একা উঠে যায়। কিন্তু বাস্তবতা হল সবকিছুই অভিকর্ষের প্রভাবে নিচে নেমে যায়। কিন্তু ঐ পাহাড়ের রাস্তাগুলো এমনভাবে থাকে যে দেখে মনে হয় সবকিছু পাহাড় বেয়ে উপরে যাচ্ছে। এটা একধরনের অপটিক্যাল ইলিউশান। পাহাড়ের রাস্তাগুলোর যেখানে সবথেকে উঁচু সেটা আসলে সবথেকে নিচু যায়গা। কিন্তু আশেপাশের সাপেক্ষে এর উল্টোটা আমরা দেখি।

বিজ্ঞানীরা এইসব পাহাড়ি রাস্তার উঁচু আর নিচু যায়গার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মেপে দেখেছেন। এতে তারা বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করলেন যে নিচু যায়গার উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে বেশি আর উঁচু যায়গার উচ্চতা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে কম। এভাবে আরও অনেক গবেষণা করে দেখা যায় যে এই পাহাড়ি রাস্তাগুলো কেবল একধরণের ‘দৃষ্টি বিভ্রম’ বা অপটিক্যাল ইলিউশান তৈরি করে। এইসব পাহাড় ঘিরে আর যেসব গালগল্প প্রচলিত আছে তার কোন ভিত্তি নেই। পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে সবকিছু উপরে উঠে যাওয়ার কারণ শুধুমাত্র ইলিউশান। আসলে এখানে কোন কিছুই উপরে উঠে যায় না। স্বভাবমতো সবকিছুই পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে নিচের দিকেই নামে। কিন্তু ইলিউশান তৈরি হওয়ার কারণে আমরা দেখতে পাই সবকিছু উপরে উঠে যাচ্ছে।
নিচের এই ভিডিওটা দেখলে ব্যাপারটা বুঝতে অনেক সুবিধা হবে আশা করি।
তথ্যসূত্রঃ
1) https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_gravity_hills
2) https://www.youtube.com/watch?v=pUasuxHZXZo