এইডস বা এইচআইভি(AIDS), নামগুলো শুনলেই ভেতরটা কেমন জানি মোচড় দিয়ে ওঠে, চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন মানুষের জীবন্ত লাশের চিত্র। যারই একবার এইডস হয়েছে, আর যেনো রক্ষা নেই। তবে সাম্প্রতিক আবিষ্কারটি হয়ত মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।
টেম্পল ইউনিভার্সিটির Lewis Katz School of Medicine এর গবেষকরা বেশ কয়েকদিন ধরেই গবেষণা চালিয়েছিলেন জীবন্ত প্রাণীর জিনোমের উপর HIV-1 এর প্রভাব নিয়ে। এক পর্যায়ে তাঁরা সফলভাবে এই ভাইরাস ডিএনএ এর অনুলিপন থামিয়ে দিতে সক্ষম হোন। জুলাইয়ের ২ তারিখে প্রকাশিত হওয়া জার্নাল Nature Communications এ প্রকাশিত হয় এ যুগান্তকারী পদক্ষেপটি। Katz School এর একজন অন্যতম গবেষক Dr.khalili জানান,
“যখন ভাইরাল HIV এর ডিএনএ রেপ্লিকেশন থামিয়ে দেয়ার জন্য ক্রমাগত জিন থেরাপি দেয়া হয়,তখন দেখা যায় যে সংক্রামিত প্রাণীর জিনোম থেকে আস্তে আস্তে HIV কোষগুলো মারা যেতে শুরু করে।”
বর্তমানে এইডস বা HIV দমনের যে চিকিৎসা দেয়া হয় সেটাকে বলা হয় Antiretroviral Therapy(ART)। এই চিকিৎসা পদ্ধতির সমস্যা হচ্ছে এর মাধ্যমে শুধুই HIV ডিএনএ এর রেপ্লিকেশনটা বন্ধ করা গেলেও মূল ভাইরাস ঠিকই দেহে থেকে যায়। অর্থাৎ ART এইডসের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা। যদি একবার ART বন্ধ করে দেয়া হয় তবে HIV ডিএনএতে পুনঃপ্রতিলিপন শুরু হয় এবং আবারও দেহে ভাইরাসটি ফিরে আসে,ফলাফল এইডসের বিস্তার ঘটে।

বর্তমান পরীক্ষাটির আগে Dr.Khalili’র দল কাজ করেছিল CRISPR-CaS9 (বিস্তারিত) প্রযুক্তি নিয়ে। এটি একটি জিন এডিটিং ও থেরাপি পদ্ধতি। মূল লক্ষ্য ছিল, জিন এডিটিং এর মাধ্যমে ভাইরাল ডিএনএতে পরিবর্তন ঘটানো। ইঁদুরের জিনের উপর চালানো এই গবেষণা দেখায় যে খুব সহজেই ইনফেক্টেড HIV জিনগুলোর পরিবর্তন ঘটানো যাবে কিন্তু সমস্যা একটাই, ART এর মতো ডিএনএ রেপ্লিকেশন থামানো গেলেও ভাইরাল ইনফেকশনটা বন্ধ করা যাবেনা। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, জিন এডিটিং কখনোই HIV পুরোপুরি ধ্বংস করতে পারবেনা।
সুতরাং নতুন গবেষণার জন্য Dr.Khalili’র দল এই জিন এডিটিং এর সাথে একটি থেরাপি পদ্ধতি যোগ করে যার নাম Long acting slow effective release বা LASER ART। সাধারন ART থেকে এই পদ্ধতি অধিকতর সময় ভাইরাল ডিএনএ তে রেপ্লিকেশন বন্ধ করে রাখতে সক্ষম হয়। যখন ইঁদুরের জিনোমে মানুষের T Lymphosite কোষ ডেভেলপ করে LASER ART প্রয়োগ করা হয় তখন দেখা যায় ইনফেক্টেড ইঁদুর গুলোর এক তৃতীয়াংশই HIV মুক্ত।গবেষক দলের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এটা দেখা যে জিন এডিটিং আর থেরাপি উভয় পদ্ধতি একসাথে কাজ করে কীনা এবং তাঁরা খুবই সুন্দরভাবে একটি কার্যকরী ফল প্রদর্শন করে।
গবেষণা শেষে ড.খালিলি বলেন,
“অবশেষে আমরা একটি সম্ভাবনার দরজাতে উপনীত হলাম। এই গবেষণা নন প্রিমিটিভ প্রাণিদের উপর চালানো হবে এবং ফলাফল ভালো থাকলে তা এক বছরের মধ্যেই মানুষের জন্য ক্লিনিক্যালি রিলিজ দেয়া হবে।”
যদি খালিলির এই গবেষণা সঠিক হয়ে থাকে তাহলে খুব বেশিদিন নেই এইডসের মতো ভয়ংকর ব্যাধিকেও আমরা হার মানাতে পারব,এখন সময় শুধু অপেক্ষা করার।
তথ্যসূত্রঃ sciencedaily.com