ঘোড়ার মাথার খুলির নেবুলা

আমাদের এই বিশাল  মহাবিশ্ব জুড়ে রয়েছে  অসংখ্য রহস্যময় গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি এবং নীহারিকা। এতো সব  রহস্যেঘেরা বস্তুর মধ্যে এখনো অবদি হয়তো আমরা কিছু রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি, আবার কিছু রহস্য আমাদের আজও অজানাই রয়ে গেছে। পুরো অসীম মহাবিশ্ব জুড়ে রয়েছে এসব আশ্চর্যজনক রহস্যময় বস্তু। আর তারই মাঝে একটি অন্যতম রহস্যময় বস্তু হচ্ছে এই নীহারিকা বা Nebula.  আমাদের এই মহাবিশ্বে রয়েছে অসংখ্য নীহারিকা তবে তার মধ্যে এখন পর্যন্ত আমরা আমাদের “Milkyway Galaxy” বা ছায়াপথে ৩০০০ নেবুলার সন্ধান পেয়েছি যার অধিকাংশই  আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থান করছে। এই রহস্যময় নীহারিকার কথা শুনলেই আমাদের প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক যে কি আসলে এই নীহারিকা, তাইনা?  চলুন জেনে আসা যাক কী আসলে এই নীহারিকা।

নীহারিকাঃ

         আমাদের এই মহাবিশ্বে বিদ্যমান রয়েছে নানারকমের গ্যাস। আর তার মধ্যে Hydrogen, Helium, Dust এবং অন্যান্য ionized gas দিয়ে তৈরী হয় একটি মেঘের আধার। আর সেটির নামই হলো Nebula যার বাংলা নাম হলো “নীহারিকা।“  নীহারিকা হলো এই গ্যাসীয় এবং ধুলোর মেঘ। এই নেবুলাগুলো অত্যন্ত বিশাল আকারের হয়ে থাকে। কোনো কোনোটির ব্যাসার্ধ ১০০ আলোকবর্ষও হয়ে থাকে। আমাদের অসীম বহাবিশ্বে রয়েছে অসংখ্য নীহারিকা। যেমনঃ Horsehead Nebula, Crab Nebula, Eye Nebula, Lagoon Nebula, Flame Nebula ইত্যাদি।

ঘোড়ার মাথার খুলির নেবুলাঃ 

কি খুবই অবাক হচ্ছেন না এই নামটি শুনে? আপনাদের মনে এতক্ষণে প্রশ্ন জেগে উঠেছে এটা আবার কেমন বিদ্ঘুটে নামরে বাবা। চলুন জেনে আসি এই বিদ্ঘুটে নীহারিকা সম্পর্কে।

আসলে এই বিদ্ঘুটে নীহারিকাটির সুন্দর নাম হচ্ছে “Horsehead Nebula.” এই নীহারিকাটি আবার “Barnard 33” নামেও পরিচিত। এই নীহারিকাটি হলো একটি “Dark Nebula” যা “Orion Constellation” এ অবস্থিত। এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে নীহারিকার তো নাম শুনেছি কিন্তু এই ডার্ক নেবুলাটি কি আবার? ধৈর্য ধরুন, আর্টিকেলটির শেষ অংশে তার ব্যাপারে জানাবো আপনাদেরকে। এই নীহারিকাটি  Alnitak নামক তারকা সিস্টেমের ঠিক দক্ষিণ দিকে, Orion’s Belt এর পূর্বপ্রান্তে এবং বৃহত্তম Orion Molecular Cloud Complex এর অংশ জুড়ে রয়েছে। এই নেবুলাটি সর্বপ্রথম ১৮৮৮ সালে Harvard College Observatory তে স্কটিশ  এস্ট্রোনোমার  “Williamnia Fleming” আবিষ্কার করেন। এই নেবুলা বা নীহারিকাটি আমাদের পৃথিবী থেকে ১৫০০ আলোকবর্ষ  দূরে অবস্থিত। এই নীহারিকাটি স্পষ্টভাবে শনাক্তকৃত নেবুলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই নেবুলাটি দেখতে ঘোড়ার মতো আর এই কারণেই নেবুলাটিকে  শণাক্তকরণ করা সম্ভব হয়েছে এবং এই কারণেই  এই নীহারিকাটির নাম রাখা হয়েছে “Horsehead Nebula.”এই নেবুলাটির

ব্যাসার্ধ হলো ৩.৫ আলোকবর্ষ। এই নেবুলাটি “LDN 1630” নামেও পরিচিত। এই নেবুলাটিকে শণাক্তকরা আসলেই কঠিন তাই এটি Dark Nebula নামেও পরিচিত। এই ডার্ক বা অন্ধকার জায়গাটি হওয়ার কারণ হলো গ্যাস যার মধ্যে প্রধান হলো Hydrogen গ্যাস।  

                      চিত্রঃ “Horsehead Nebula                                                          

উপরের ছবিতে পিছনে যে পিংকিশ রংটি ঝকঝক করছে এটি মূলত Hydrogen গ্যাসের কারনে যা “নিঃসরিত গ্যাস” নামে পরিচিত।  Hubble  Space Telescope এর ১১তম বার্ষিকীপূর্তিতে ইন্টারনেট  ভোটাররা Horsehead Nebula এর ছবি তোলার জন্য ভোট দিয়েছেন। চলুন এবার জেনে আসা যাক Dark Nebula সম্পর্কে।

Dark Nebula : 

এই ডার্ক নেবুলাটি  “Absorption Nebula” নামেও পরিচিত। এটি হলো Interstellar Cloud  ধরণের নেবুলা যা অত্যন্ত ঘনীভূত অবস্থায় থাকে যার ফলে আলোর উৎসটি বা কোন বস্তু থেকে আলো নিঃসরিত হচ্ছে তাকে শণাক্ত করা সম্ভব হয় না অর্থাৎ তা অস্পষ্ট অবস্থায় থাকে। যেমনঃ নেবুলাটির পিছনে অবস্থান করা কোনো নক্ষত্র এবং Emission অথবা Reflection Nebula.

হাজারো রহস্যেঘেরা আমাদের এই অসীম মহাবিশ্বে যেখানে কোথাও রয়েছে অতি উজ্জ্বল আলো আবার কোথাও রয়েছে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রহস্যময় এই সমস্ত নীহারিকা, নক্ষত্র, গ্রহকে জয়ের নেশায় মত্ত্ব হয়ে মানুষ সবসময়ই ছুটে চলেছে তাদের পানে। তাদের রহস্য উদঘাটনের জন্য সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা  এসব রহস্যময় বস্তুদেরকে ঘিরে। আর এসব রহস্যেঘেরা বস্তু সবসময়ই আমাদেরকে তাদের সৌন্দর্য এবং রহস্য দিয়ে দিন দিন আরো বিমোহিত করে তুলছে।

Comments are closed.