জীবনে চলার পথকে গতিশীল রাখতে মানসিক অবকাশের বিকল্প আর কিছু নেই। আর মানসিক অবকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে ভ্রমণ। ভ্রমণ যেমন মানসিক অবসাদগ্রস্ততা দূর করে তেমনি নতুন নতুন অভিজ্ঞতা লাভেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভ্রমণকে আরো সুন্দর ও রোমাঞ্চকর করে তোলার জন্য বিজ্ঞানীরা নিয়েছে এক নতুন পদক্ষেপ। তারা প্রথমবারের মতো মহাকাশে হোটেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওরিয়ন স্প্যান (Orion span) নামক একটি মহাকাশ সংস্থা এই উদ্বেগটি গ্রহণ করে। তাদের মতে এটিই হতে চলেছে এ যাবতকাল সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেল। তারা হোটেলটির নাম দিয়েছে অররা স্টেশন (Aurora station)। অররা স্টেশনের সম্পূর্ণ কাজ ২০২১ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এবং ২০২২ সালের মধ্যে অতিথিসেবা শুরু করবে বলেও জানা গেছে।
ওরিয়ন স্প্যান এর প্রস্তাবিত এই মডুলার স্পেস স্টেশনটি দুই জন ক্রু সদস্য সহ একসাথে ছয় জন মানুষ বহন করতে পারবে। পর্যটকগণ ১২.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ১২ দিনের জন্য এই হোটেলটির বাসিন্দা হতে পারবে। অর্থাৎ এটিই যে এ যাবতকাল সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেল হতে চলেছে তার কোন সন্দেহ নেই। তবে যে শুধু বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হলেই আপনি হোটেলটির পর্যটক হতে পারবেন তাও কিন্তু নয়, এর জন্য হাই প্রোফাইল ও উন্নত মানসিক সুস্থতা থাকাটাও আবশ্যক। হোটেলটি ভ্রমণের পূর্বে পর্যটকদের ৩ মাসের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করতে হয়। তারপর হোটেল কর্তৃপক্ষ তাদের শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট প্রদান করে। তবেই কোনো ব্যক্তি অররা স্টেশনের যাত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে পারবে।
অররা স্পেস স্টেশন পরিচিতি :
মহাকাশ কেন্দ্রিক এই হোটেলটি লম্বায় ১৩.৩ মিটার বা ৪৪ ফুট এবং প্রস্থে ৪.৩ মিটার বা ১৪ ফুট। এবং এটির আদর্শ কক্ষপথ উচ্চতা ৩২০ কি.মি. বা ২০০ মাইল। অররা স্টেশন প্রতি ৯০ মিনিটে তার কক্ষপথে একবার পর্যায়কাল সম্পন্ন করবে। এক্ষেত্রে অররা স্টেশনের পর্যটকগণ প্রতিদিন ১৬ বার সূর্য উদয়ের মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে পারবে, যা সত্যিই রোমাঞ্চকর। যাত্রীসেবা নিশ্চিতে প্রতিবারই চার জন পর্যটকের সাথে দুইজন ক্রু সদস্য থাকবে। অররা স্টেশনের পর্যটকগণ প্রতিদিন ১৬ বার সূর্য উদয়ের মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত এক স্পেস সামিটে ওরিয়ন স্প্যানের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ফ্রাঙ্ক বাঙ্গার বলেন, পর্যটকপ্রেমীগণ হয়তো অনেকদিন ধরেই মহাকাশের রূপ-রস গ্রহণ করার জন্য অধীর অপেক্ষায় আছেন। অনেকেই নীল গ্রহের চারপাশে স্বপ্নের ছুটি কাটানোর জন্য বহুকাল ধরেই অপেক্ষা করছে। তাদের কথা মাথায় রেখেই আমরা এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। হোটেলটি অনেক ব্যয়বহুল হবে জেনেও কেবলমাত্র পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে আমাদের এই পদক্ষেপ। এর দ্বারা পর্যটকগণ যেমন রোমাঞ্চিত হবে, তেমনি এটি মানসিক অবকাশেও বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
হোটেলটি মানুষকে কতটুকু আকর্ষিত করতে পারবে তার অনেকগুলো প্রমাণ এখনি পরিলক্ষিত হচ্ছে। পুরোপুরি তৈরি হওয়ার পূর্বেই অনেকেই হোটেলের টিকেট প্রি-বুকিং করে ফেলছে, যা সত্যিই আশ্চর্যজনক। তবে অররা স্টেশন অতিথিসেবার জন্য কতটুকু প্রস্তুত তা জানার জন্য আমাদের ২০২২ সাল অবধি অপেক্ষা করতে হবে।
One Comment
ছুটিতে ঘুরতে যেতে চান মহাকাশে? | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] হচ্ছে বিলাসবহুল হোটেল “অরোরা” (Aurora) […]