শহুরে রাস্তায় কখনো ক্রিং ক্রিং করে আবার কখনো হর্ন, মিউজিক বাজিয়ে যে সাইকেল গুলো চলে, সেগুলোর বেশিরভাগই মাউন্টেন বাইক বা এমটিবি। যেগুলোর মূল আকর্ষণ এদের গিয়ার। মুহূর্তের মধ্যেই স্পিড বদলে নানা রকম কারসাজি। শিরোনামে গিয়ারের কথাটা উল্লেখ থাকলেও সাধারণ বাইসাইকেলের চলার রহস্যটাও জানা হয়ে যাবে।
পার্টস অব গিয়ার ইনস্ট্রুমেন্টস
সাইকেলের গিয়ার কি করে কাজ করে সেটা আমি দুভাবে বুঝিয়ে দেব এক. তাত্বিক আর দুই. গাণিতিক। তবে সেগুলো বুঝতে গেলে এর অংশ গুলো সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
◆ক্র্যাংক : সাইকেলের প্যাডেলের সাথে যে খাঁজকাটা চাকতি থাকে সেটাকেই ক্র্যাংক বলা হয়। সাইকেল ভেদে এটি সিঙ্গেল, ডাবল বা ট্রিপল হতে পারে। এটির স্পিড বড় চাকতি থেকে ছোট চাকতির দিকে হিসেব করা হয়।
◆ক্যাসেট : পেছনের চাকার চাকতিগুলো ক্যাসেট নামে পরিচিত। এটি ৭-১০ স্পিডের হয়ে থাকে।এটার স্পিডও হিসেব করা হয় বড় চাকতি থেকে ছোট চাকতির দিকে।
◆ডিরেইলার : সাইকেলের চেইনকে ক্র্যাংক এবং ক্যাসেটের এক চাকতি থেকে আরেক চাকতিতে সরাতে যেটি কাজ করে তাকে ডিরেইলার বা ডেরা বলে। এটি দুই প্রকার সামনের ডিরেইলার টি ফ্রন্ট এবং পেছনের ডিরেইলারটি রিয়ার নামে পরিচিত।
◆শিফটার : সাইকেল দেখেই যেটা নিয়ে টেপাটেপি শুরু হয় সেটাই শিফটার। এটি স্পিড বা ডিরেইলার পরিবর্তন করে।
◆কগ : চাকতি গুলোতে যে খাঁজকাটা দাঁত থাকে তাকে কগ বলে।
তাত্বিক আলোচনা
প্রথমেই সাধারন সাইকেল দিয়ে বোঝানো যাক কেনো আমরা সাইকেল ব্যাবহার করি? কি করে এটি আমাদের কম শক্তিতে বেশিদূর নিয়ে যায়?
সাধারণ সাইকেলের ক্র্যাংক ও ক্যাসেট একটি করে থাকে। আর সব সময়ই ক্র্যাংক, ক্যাসেট থেকে বড় হয়। কেন?আপনি প্যাডেল করেন ক্র্যাংকের উপরে।ধরা যাক ক্র্যাংকটিতে ৩০ টি কগ আছে আর ক্যাসেটে ১০ টি। যখন একবার প্যাডেল করা হয় তখন ক্র্যাংক ঘুরে একবার কিন্তু ক্যাসেটটি ঘুরবে তিনবার। ক্যাসেটটি যুক্ত থাকে পেছনের চাকার সাথে অর্থাৎ ক্যাসেট যদি একবার ঘোরে তাহলে পেছনের চাকাও একবার ঘুরবে। তবে বাস্তবে গতি জড়তার কারনে পেছনের চাকা আরো বেশি ঘুরবে।
তাহলে একবার ক্র্যাংক ঘুরার ফলে ক্যাসেটটি ঘুরলো তিনবার এবং এর ফলে পেছনের চাকা ঘুরবে তিনবারেরও বেশি। যদি চাকার পরিধি দুই মিটার আর ক্র্যাংকের পরিধি ০ .২৫ মিটার হয় এর অর্থ দাঁড়াবে মাত্র ০.২৫ মিটার ঘুরিয়ে আপনি (২×৪) মিটার বা ৮ মিটার যেতে পারছেন। একারনেই আমরা সাইকেল ব্যাবহার করি যাতে একেবারে শারীরিক পরিশ্রম বন্ধ না হয়ে যায় আবার বেশি কষ্টও করতে না হয়।
যদি ক্র্যাংক এবং ক্যাসেট একই আকারের হত?
তখন একবার প্যাডেল করলে একবারই চাকা ঘুরত। কারণ দুটির পরিধি একই। তাই ক্যাসেট যত ছোট হবে চাকাও তত বেশি ঘুরবে। উল্টোটাও প্রযোজ্য ,ক্র্যাংক যত বড় হবে চাকাও তত বেশি ঘুরবে।
এবার এমটিবি সাইকেলের ভিত্তিতে আলোচনা করি। সাইকেলের গিয়ার পরিবর্তন করার অর্থ দাঁড়ায় ক্র্যাংক এবং ক্যাসেটের পরিধির পরিবর্তন করা। ফলে একবার প্যাডেল করলে কখনো ৫.৫ , ৫ , ৪.৭ , ৪ মিটার সর্বনিম্ন চাকা ঘুরবে। সর্বনিম্ন বলার কারন হলো গতি জড়তার কারনে চাকা এর থেকে আরো বেশি ঘুরবে।
গাণিতিক ব্যাখ্যা
যেহেতু ক্রাঙ্ক এবং ক্যাসেট উভয় এর স্পীড ই পরিবর্তন যোগ্য তাই বোঝার সুবিধার জন্য স্থির ধরি । এক্ষেত্রে ক্রাঙ্ক এর টা ধরে নিই ২ স্পীডে আছে। এবার ধরে নেই ক্রাঙ্ক এ ২ স্পীডে বা প্লেটে ৬৪ টি কাটা বা কগ আছে। আর ক্যাসেটে ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮ নং এ যথাক্রমে ৩২,২৮,২৪,২০,১৬,১২,৮ টি কগ আছে। ধরে নিলাম চাকার পরিধি ২ মিটার। তার মানে চাকা ১ বার ঘুরলে ২ মিটার পথ অতিক্রম করবে।
এখন ধরে নেই চেইন ক্যাসেটের ১ নং স্পিডের প্লেটে আছে। তার মানে
চাকা ঘোরার সংখ্যা= ক্রাঙ্ক এর কগ এর সংখ্যা ÷ ক্যাসেটের কগ এর সংখ্যা |
তাহলে চাকা ঘোরার সংখ্যা= ৬৪/৩২= ২
তার মানে ক্যাসেটের ১ নং স্পীডের চেইন থাকলে পুরো প্যাডেল একবার ঘুরালে পিছনে চাকা ২ বার ঘুরবে, তার মানে ২*২=৪ মিটার দুরত্ব অতিক্রম করবে। আবার ২ নং স্পিডে থাকলে ক্যাসেটে কগের সংখ্যা ২৪ এবং ক্র্যাংকে কগের সংখ্যা ৬৪ । সুতরাং (৬৪÷২৪)=২.৬৬ বার চাকাটি ঘুরবে।আর (২.৬৬ × ২)মি. = ৫.৩২ মি দূরত্ব অতিক্রম করবে।
এভাবে হিসাব করে নিচে একটি টেবিল দেয়া হল
ক্যাসেটের স্পিড সংখ্যা | চাকা ঘুরার সংখ্যা | অতিক্রান্ত দুরত্ব(মিটার) |
---|---|---|
১ | ২ | ৪ |
২ | ২.৮ | ৪.৫৬ |
৩ | ২.৬৬ | ৫.৩২ |
৪ | ৩.২ | ৬.৪ |
৫ | ৪ | ৮ |
৬ | ৫.৩৩ | ১০.৬৬ |
৭ | ৮ | ১৬ |
এই চার্ট থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে , যখন সর্বোচ্চ গিয়ার অর্থাৎ ৮ এ থাকবে তখন ১ টি প্যাডেল মেরেই ৩২ মিটার যাওয়া যাবে।
আশা করি এই লেখাটা থেকে কিছুটা হলেও সাইকেলের চলন সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
Leave a Reply