হোমিওপ্যাথি ও ইতিবৃত্তান্ত

বর্তমান এলোপ্যাথি ও আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের দুনিয়ায় হোমিওপ্যাথির প্রভাব খুব একটা চলেনা বললেই বললেই চলে। তাও এই নামটি শুনলেই ছোটোবেলার সেই কাঁচের শিশিতে মিষ্টি ঔষধ খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। আসলেই কি হোমিওপ্যাথি আমাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত? আলোচনা করা হলো।

হোমিওপ্যাথি কী? 
এটি এক প্রকার চিকিৎসাপদ্ধতি যা জার্মানিতে প্রায় ২০০ বছর আগেই উদ্ভাবিত হয়েছিল। দুটি অস্বীকৃত রীতির উপর দাঁড়িয়ে আছে এর ভিত্তিঃ
Like cure like – অর্থাৎ একটি অসুখ যেটা কোনো বস্তু দ্বারা নিরাময় হবে সেটা সুস্থ দেহেও একই প্রভাব ফেলবে।
এবং
Law of minimum dose – অর্থাৎ নিরাময় বস্তুর পরিমাণ যত কম, দেহে তাঁর প্রভাব তত বেশি। এজন্যও হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলোতে নিরাময়যোগ্য বস্তুর পরিমাণ এতই কম থাকে বা সহজ বাংলায় এগুলো এত বেশি হালকা থাকে যে বুঝাই যায়না এদের অস্তিত্ব।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ বেশিরভাগই তৈরি হয় গাছ গাছালি ও প্রকৃতি থেকে। চিকিৎসকরা বিশ্বাস করেন মানবদেহের নিজস্ব ক্ষমতা আছে নিজ থেকে সুস্থ হওয়ার এবং যেকোনো রোগের নিরাময়ে ভেষজ ব্যবহার করা যায়। হোমিওপ্যাথিকে এই নীতিই খাটানো হয়। বিভিন্ন ধরনের ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ, ছোটো প্রাণীর দেহাবশেষ, পাহাড়ি ফুল, খনিজ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হয় নিরাময়। এগুলোকে সাধারণ প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ছোটো ছোটো চিনির সাদা বলের মতো সেবনযোগ্য তৈরি করা হয়। অথবা অনেক ক্ষেত্রে ড্রপ, জেল, ক্রিম আকারেও তৈরি করা হয়। ট্রিটমেন্টগুলোও আলাদা হয় ব্যক্তি বিশেষ। অর্থাৎ একই রোগ হওয়া সত্ত্বেও দুজন আলাদা ব্যক্তির চিকিৎসা আলাদা ভাবে হওয়াটাও স্বাভাবিক।

বিজ্ঞান কী বলে হোমিওপ্যাথির প্রভাব সম্পর্কে? 

২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান সরকার তাঁদের জাতীয় স্বাস্থ্য ও সেবা গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে জানায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব মানবদেহে পাওয়া যায়নি। হোমিওপ্যাথি একটি বিতর্কিত আলোচনা। যেমন এর অনেক মূলবক্তব্যই বৈজ্ঞানিক আলোচনার সাথে সাদৃশপূর্ণ হয় না। যেমন, বৈজ্ঞানিকভাবে এটা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব যে কীভাবে এত কম ঘন বা পাতলা দ্রবণ যেখানে কোনো সক্রিয় নিরাময়কারী উপাদান নেই যা স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলার মত। আবার এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ যে হোমিওপ্যাথিক ডাক্তাররা কোনো আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড মেনে ঔষধ প্রেসক্রাইভ করেন না। অর্থাৎ কয়েকশ এর উপর নিরাময় রয়েছে যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণের জন্য ভিন্ন ঘনমাত্রায় প্রদান করা হয় যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।

নিরাপত্তা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অনেক হোমিওপ্যাথিকই রয়েছে যা উচ্চ মাত্রায় ঘন। এগুলো সেবনে দেহে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
★২০১২ সালে একটি রিপোর্টে দেখা যায় কিছু ঔষধে মারাত্মক পরিমাণ ধাতব যেমন লেড, মার্কারি রয়েছে যা দেহের অকল্পনীয় ক্ষতি করতে পারে।
★ হোমিওপ্যাথি সিরাপে এলকোহল থাকে যা FDA এর নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি ও সেবন বর্জনীয়।
★ ২০১৭ সালে FDA সতর্ক করে দাঁতের চিকিৎসা হিসাবে কিছু হোমিও গ্রহণ করার ব্যাপারে। এগুলোতে অনেক বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর রাসায়নিকের অস্তিত্ব মিলে।

★ ২০১৬ সালেও FDA হোমিওপ্যাথিক ঔষধগুলো সম্পর্কে সতর্কতা জারি করে। কারণ বেশিরভাগই বিজ্ঞানসম্মতভাবে কাজ করেনা এবং অনেক কিছুই ব্যাখ্যাতীত।
এছাড়া বিশেষ কোনো ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়নি।

কিন্তু দিনশেষে ফলাফল দাঁড়ায়, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও বিতর্কিত ও রহস্যময়। আপনি চূড়ান্ত চিকিৎসা হিসাবে হোমিওপ্যাথির আশ্রয় নিলেও খুব একটা সঠিক কাজ করবেন সেটাও নয়।

Source: National Center for Complimentary & Integrative Health

Comments are closed.