আপনারা অনেকেই হয়তো তুঙ্গুস্কার ঘটনা (Tunguska Event) সম্পর্কে শুনেছেন। না শুনে থাকলেও অসুবিধা নেই। রাশিয়ার ক্রাস্নোয়ার্স্ক ক্রাই (Krasnoyarsk Krai) বা তৎকালীন ইয়েনিসেইস্ক প্রদেশ (Yenisysk Governorate) এর তুঙ্গুস্কা নদীর ধারে ঘটা ঘটনা এটি, যা ১৯০৮ সালের ৩০শে জুন তারিখে ঘটে এবং যা আজও বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দেয়। শিউরে উঠতে হয় ঘটনার ভয়াবহতা অনুধাবন করলে!
সেদিন তুঙ্গুস্কায় ঘটা সেই বিস্ফোরণের ক্ষমতা ছিল ১০ থেকে ১৫ মেগাটন ট্রাই নাইট্রো টলুইন/টিএনটি (মেগা = দশ লাখ বা এক মিলিয়ন)! যা হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমা লিটল বয় (১৫ কিলোটন ট্রাই নাইট্রো টলুইন) এর চাইতে কয়েক হাজার গুণ বেশি! মানব ইতিহাসে প্রত্যক্ষ করা পৃথিবীর বিস্ফোরণগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ শক্তিশালী, যা কিনা ভূপৃষ্ঠ থেকে আট দশ কিলোমিটার উপরে বিস্ফারিত হওয়াতেই পৃষ্ঠদেশের দুই হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা (৭৭০ মাইল) পুরো উজাড় করে দেয়!
আর এইসবই ঘটে সম্ভাব্য এক গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ডের পৃথিবীতে হামলে পড়ার কারণে!
তো ভাবুন একবার, সেই গ্রহাণু যদি সেদিন আকাশে বিস্ফারিত না হয়ে আছড়ে পড়তো পৃথিবীতে, তাহলে কি তান্ডবটাই না ঘটতো!
অনেকের কাছে তুঙ্গুস্কার ব্যাপারটা এখনো ধোঁয়াশা মনে হতে পারে, এই মর্মে যে সেটা আদতেই গ্রহাণু বা উল্কাপিণ্ডের ফলে ঘটা ঘটনা ছিল কিনা। তাদের দ্বন্দ্ব দূর করতে আমরা ফিরে আসতে পারি আরও কাছের ঘটনায়। এমন একসময়ের ঘটনায়, যখন মানব সভ্যতা সেই ১৯০৮ সালের চাইতে অনেক এগিয়ে গিয়েছে।
আর এই ঘটনাটা হল ২০১৩ সালের। যখন ঘরে ঘরে ইন্টারনেট আর প্রযুক্তির যুগ। মানব সভ্যতা অনেকটা দূর এগিয়েছে। এইরকম একটা সময়েও রাশিয়ার চেলিয়াবিন্স্ক এ ঘটা উল্কাপিণ্ডের আরেকটি ঘটনা সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল! যে উল্কা এখন ইতিহাসের পাতায় Chelyabinsk Meteor নামে পরিচিত। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার চেলিয়াবিন্স্ক এ স্থানীয় সময় নয়টা বিশের দিকে আকাশের উপরে থাকা অবস্থাতেই প্রচণ্ড শব্দে বিস্ফারিত হয় আনুমানিক ২০ মিটার লম্বা উল্কাপিণ্ডটি। যার বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল প্রায় ৪০০ – ৫০০ কিলোটন, যা হিরোশিমায় ফেলা বোমার চাইতেও ২৬-৩৩ গুণ বেশি শক্তিশালী ছিল। প্রায় ১৯.১৬ +/- ০.১৫ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ডে ধেয়ে আসা উল্কাটি বায়ুমণ্ডলের সাথে প্রচণ্ড সংঘর্ষে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ছাব্বিশ কিলোমিটার উপরেই বিস্ফারিত হয়। আর তাতেই যে প্রচন্ডরকম শকওয়েভ সৃষ্ট হয়, তার ধাক্কাতেই পরোক্ষভাবে অনেকে আহত হয়, ঘরবাড়ি, অফিস, ভবনের কাঁচ, গেইট ইত্যাদি মিলিয়ে ক্ষতি হয় ৭২০০ এরো বেশি!
আরও সামনের কোনও ঘটনা জানতে চান, তাহলে চলুন একনজর দেখি এবছরেই জুলাই মাসের ঘটনা। এইতো, দুই সপ্তাহ আগে, গত জুলাইয়ের ২৫ তারিখ নিউজিল্যান্ড এর Thule Air Base থেকে সাতাশ কিলোমিটার দূরে missile early warning radar থেকে ৪৩.৩ কিলোমিটার উপরে থাকতেই আরেক উল্কাপিন্ড ২.১ কিলোটন শক্তিতে বিস্ফারিত হয়! স্থানীয় এয়ার বেইসটি এই ঘটনার ব্যাপারে কিছু না জানালেও NASA’র Jet Propulsion Laboratory থেকে বিজ্ঞানীরা খবর ঠিকই পেয়ে যান।
এই গেল মানব ইতিহাসে বিভিন্ন উল্কাপিণ্ড আর গ্রহাণুর কথা, আমরা যদি চিন্তা করি সাড়ে ছয় কোটি বছর আগেকার ক্রিটেশাস যুগের কথা, আমরা জানতে পারবো কয়েক কিলোমিটার লম্বা একটি গ্রহাণু (Asteroid) বায়ুমণ্ডলের সংঘর্ষের সব বাধা পেরিয়ে আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে, যাতে মুহূর্তেই মারা যায় লাখ লাখ ডাইনোসর। টনকে টন পানি আর ধুলোবালি, মাটি ছিটকে উঠে ছড়িয়ে পড়ে বায়ুমণ্ডলে। প্রচন্ডরকম ধাক্কা প্রভাব ফেলে পৃথিবীর প্লেট টেকটনিক এ। শুরু হয় সেই সাথে মহাপ্রলয়কারী ভূমিকম্প আর একই সাথে সাগর ফুঁসে উঠে তেড়ে আসে কয়েকশ ফুট উঁচু সুনামি (Tsunami)। কয়েকশ বছরের মাথাতেই বিলুপ্ত করে দেয় দুর্দান্ত দাপটের সাথে ঘুরে বেড়ানো ডাইনোসরদের।
এসব ঘটনা থেকে বরাবরই একটা প্রশ্ন মনে জাগে আমাদের, আসলে আমরা কতটুকু নিরাপদ একদম ভিন্নরকমের এই হুমকি থেকে? এ এমন এক হুমকি যে সেটা থেকে বাচার জন্যে আপনি ভিআইপি বা খুব উঁচু পর্যায়ের কেউ বলে খুব বেশি সুবিধা করতে পারবেন না। এ এমন কিছু না যা মানব সৃষ্ট কোনও দুর্ঘটনা বা যুদ্ধ বিগ্রহ। নাই বা ভূমিকম্পের মত কিছু, যা থেকে আপনি হিসেব করে কম ভুমিকম্পপ্রবণ এলাকাতে বসবাস করতে পারবেন। না ই বা এটা সিডর বা আয়লার মত কোনও ঝড়, যার থেকে আগেভাগে সাবধান হয়ে থাকা যাবে।
এ এমন এক কিছু, যা আপনি টের পাবার আগেই হয়তো আপনার মহা সুরক্ষিত, বিলাসবহুল বাসভবনে প্রচন্ডগতিতে আর প্রচণ্ড শক্তিতে আছড়ে পড়তে পারে সমস্ত নিরাপত্তা উপেক্ষা করে। এতোটাই দ্রুত যে আপনি সেটার ধেয়ে আসার শব্দ পাবার অনেক আগেই তা ছিটকে পড়ে প্রলয়কাণ্ড বাধিয়ে বসতে পারে। কারণ তা শব্দের গতির চাইতে বহু বহুগুণ দ্রুত আছড়ে পড়তে পারে বায়ুমণ্ডলে! মুক্ত বাতাসে শব্দের গড় গতি যেখানে সেকেন্ডে ৩৩০ মিটার প্রতি সেকেন্ড, সেখানে একটা উল্কাপিণ্ডের গতি প্রতি সেকেন্ডে গড়ে পনেরো কিলোমিটারেরও (১৫০০০ মিটার) বেশি! তো ভাবেন তা কি ঘটাতে পারে?!
কি? ভেবে এলোমেলো লাগছে সব তাইনা? অবশ্য লাগারই কথা, কেননা এই ব্যাপারটা অনেকটা অনিশ্চিত। কখন আকাশ থেকে আমাদের ছোটবেলায় আর টিভি সিরিয়াল বা মুভিতে দেখা তথাকথিত ” Falling Star” বায়ুমণ্ডলে ভষ্ম না হয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে, তা আপনার আমার মত সাধারণ কেউ ই বলতে পারে না!
কিন্তু তাই বলেকি ছুটে আসা এসব উল্কা, গ্রহাণু, ধূমকেতু, ইত্যাদি থেকে আমাদের রক্ষার কোনও ভরসাই নেই?
সেই উত্তর জানার জন্যে আমাদের আগে জানতে হবে এদের পরিচয় আর গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে।
পৃথিবী যে কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, চলতি পথে বহু পাথরের টুকরোও আছে যেগুলো সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে গিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথের খুব কাছ দিয়ে যায়, বা দেখে গেল অনেকগুলো একই কক্ষপথে ঢুকে পড়ে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুরতে থাকা এসব ছোট – বড় এমন পাথরের টুকরোগুলোকে Near Earth Object (NEO) বলা হয়। আর এদের একেকটা পৃথিবীর যেকোনো বুলেটের চাইতে বেশি গতি নিয়ে মহাকাশে ছুটে বেড়ায়। দুই কক্ষপথ একসাথে এসে মিলিত হয়ে যাওয়াতে যেকোনো NEO পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে দুর্দান্ত গতিতে। তার উপর রয়েছে আবার পৃথিবীর নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, যা ধেয়ে আসা গ্রহাণু আর উল্কাদের গতি দেয় আরও বাড়িয়ে।
এছাড়াও পৃথিবীর পর পরই সূর্য থেকে দূরে হিসেবে অবস্থানে থাকা চতুর্থ গ্রহ মঙ্গল আর আমাদের গ্রহরাজ বৃহস্পতির মাঝে রয়েছে বিশাল গ্রহাণু চক্র বা Asteroid Belt । এই গ্রহাণুচক্র এতোটাই বিশাল যে এর কোনও ছবি তুলতে হলে গোটা সৌরজগতের বাইরে গিয়ে নির্দিষ্ট কোনও কোণ থেকে এর ছবি তোলা লাগবে। আর তারপরেও হয়তো আলো ছায়ার জন্যে পুরোটা সেভাবে বোধগম্য হবেনা। গ্রহাণুদের এই বিশাল বেল্ট এ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন আকৃতির গ্রহাণু সম্মিলিতভাবে সূর্যকে পরিক্রমা করে চলেছে। একটার সাথে আরেকটার সংঘর্ষে ভাংছে, আবার গড়ছে নতুন কিছু। এইসব গ্রহাণুগুলোর কতগুলোর আকার একেবারে নুড়িপাথরের সমান, তো কতগুলো আবার আস্ত একেকটা শহরের সমান। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ্যাস্টোরয়েড বেল্ট এ থাকা মোট গ্রহাণুর সম্মিলিত ভর সৌরজগতের ক্ষুদ্রতম গ্রহ প্লুটোর চাইতেও কম, আর বড়জড়ো পুল্টোর চাঁদ শ্যারন (Charon) এর চাইতে দ্বিগুণ বেশি।
তবে গ্রহাণুদের এই বিক্ষিপ্ত বিস্তৃর বেল্ট এ বহু পাথরখন্ড থাকলেও এর ৯৯.৯ শতাংশ ভর গঠনের প্রাক্কালেই প্রথম ১০ কোটি বছরের মাঝে হারিয়েছে। উল্লেখ্য যে এই এ্যাস্টোরয়েড বেল্টেই রয়েছে সৌরজগতের বামন গ্রহসমুহু বা Dwarf Planet যেগুলো আসলে কোনও গ্রহ না আবার ঠিক গ্রহাণুও না।
Ceres এর মধ্যে বৃহত্তম যার ব্যাস মোটে ৯৫০ কিলোমিটার। এছাড়াও আছে 4 Vesta, 2 Pallas, আর 10 Hygiea।
গ্রহাণুদের এই চক্র থেকেও অনেক পাথর বিক্ষিপ্ত হয়ে ছুটে আসে। আলাদা হয়ে ছুটে চলে আপন কক্ষপথে সূর্যকে ঘিরে। ধারণা করা হয় NEO’গুলো মূলত সেই বেল্ট থেকেই বিচ্যুত হয়ে আসা পাথরখন্ড যা পরবর্তীতে বিভিন্ন দূরত্বে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষপথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। যার গুটিকত যা কখনো কখনো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ টানে আটকে পড়ে প্রবল গতিতে ধেয়ে আসে পৃথিবীতে। কিন্তু বেশিরভাগই বায়ুমণ্ডলের প্রচণ্ড সংঘর্ষে আয়নমণ্ডলে থাকতেই ভষ্ম হয়ে যায়।
আবার মাঝে মাঝে কিছু বড়সড় পাথর বেশ কাছ দিয়েই পাশ কাটিয়ে চলে যায়। যার কোনোটা পৃথিবীতে একবার ঢুকে গেলে নির্ঘাত তাণ্ডবলীলা বাধিয়ে বসতে পারে!
আমাদের পৃথিবীর ক্ষেত্রে বাইরে থেকে আসা গ্রহাণু আর উল্কাপিণ্ডের হুমকি মূলত এইসব Near Earth Object থেকেই আসে। তবে এগুলোরও কিছু হিসেব নিকেশ আছে। আছে আকার অনুযায়ী ধরণ, সংঘর্ষের সম্ভাবনা/বছর।
NEOগুলোর অবস্থান ধরা হয় সচরাচর সূর্যকে ঘিরে তাদের পরিক্রমণ পথ এর দূরত্ব যদি সূর্য থেকে (Perihelion) ১.৪ এস্ট্রোনোমিকাল ইউনিটের কম হয়। ২০১৮ অর্থাৎ চলতি বছরের ২৫ শে জুন তারিখে Center for Near Earth Object Studies (CNEOS) এর দেয়া তথ্যমতে এ পর্যন্ত মোট ১৮,৪৪৫ টি Near Earth Object আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মাঝে ১০৭ টি ধূমকেতু (Comet) রয়েছে এ তালিকায়, গ্রহাণু বা Asteroid রয়েছে ১৮৩৩৮ টি। এবং পৃথিবীর জন্যে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, এমন NEO রয়েছে ১,৯১৪ টি যাদের Potentially Hazardous Asteroids (PHAs) বলা হয়।
চলতি বছরেরর ৩০ শে জুন তারিখে নাসার ওয়েবপেজ এ প্রকাশিত তথ্যমতে ৮৪৭ টা Near Earth Asteroids (NEAs) রয়েছে যেগুলোর ব্যাস ৫০ মিটার বা তার কম।
কোনও গ্রহাণু যদি আকারে ১৪০ (৪৬০ ফুট) বা তার বেশি হয় তখন তা মানবজাতি তো বটেই পৃথিবীর জন্যেও অনেকখানি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয় যা Potentially Hazardous Object (PHO) এর মধ্যে পড়ে। NCEOS এর ২০১৮ সালের হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি থাকা এমন গ্রহাণুর সংখ্যা ৮,১৪৮ টি। আর একেবারে পৃথিবী তছনছ করে দেয়ার মত গ্রহাণু, যেগুলোর একেকটার ব্যাস প্রায় ১ কিলোমিটার (১০০০ মি), পৃথিবীর কাছাকাছি কক্ষপথের এমন গ্রহাণুর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়, রীতিমতো পিলে চমকে দেয়ার মত! ১৫৫ টা!
উল্লেখ্য এগুলোর মাঝে বৃহত্তম গ্রহাণুর ব্যাস ৩৮ কিলোমিটার, মানে একটা শহরের সমান, আর ক্ষুদ্রতম পাথরের ব্যাস ১ মিটারের মত।
NEOগুলো Semi Major Axis, Perihelion আর Aphelion এর হিসেবে মোট চারভাগে বিভক্ত।
যথাঃ
১. Atira গ্রহাণু।
এরা সরাসরি পৃথিবীর কক্ষপথের (০.৯৮৩ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট বা AU) দিকেই ধাবিত হয়।
২. Aten গ্রহাণু। এরা ১ AU সৌরজাগতিক দূরত্বেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। যেখানে পৃথিবীর গড় দূরত্ব ০.৯৮৩ AU। এদের aphelion দূরত্ব ১-০.৯৮৩ AU এর মধ্যে।
৩. Apollo গ্রহাণু। এদের দূরত্ব আবার খানিক বেশিই। এরা ১ থেকে ১.০১৭ AU দূরত্বে পরিক্রমা করে।
৪. Amor গ্রহাণু। এরা সবচে বেশি নিরাপদ দূরত্বে চক্কর কাটে। এদের পরিক্রমণ দূরত্ব থাকে ১.০১৭ থেকে ১.৩ Astronomical Unite এর মধ্যে।
ঝুঁকি কতটুকু?
ঝুঁকি কতটুকু, তা নির্ভর করে কত দূরত্বে কোন আকারের গ্রহাণুর সংখ্যা বেশি। তার উপর আবার গ্রহাণুর আঘাতে উৎপন্ন গর্ত (Crater) বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ক্ষতির সম্ভাবনা নির্ভর করে গ্রহাণু ঠিক কতটুকু কোণ বা এঙ্গেলে আমাদের পৃথিবীতে প্রবেশ করছে। তুলনামূলক খাড়াভাবে প্রবেশ করা গ্রহাণুর পথ পেরোতে হয় কম, ফলে তা একেবারে আয়নমণ্ডল পেরিয়ে আছড়ে পড়তে পারে পৃথিবীপৃষ্ঠে। কিন্তু কিছুটা বাঁকা হয়ে প্রবেশ করা গ্রহাণু বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে গেলে অনেকখানি পথ পেরোতে হয়। ফলে পথেই তা বিস্ফারিত হয় ঊর্ধ্বাকাশে, বা জলে ভষ্ম হয়ে যায়।
তিন চার মিটারের একটা গ্রহাণু পৃথিবীতে প্রবেশ করতে নিলে বায়ুমণ্ডলের প্রচণ্ডে তাপ আর বিপরীত চাপে অগ্নিগোলকে রূপান্তরিত হয়ে বিস্ফারিত হয়ে যায়। কিন্তু আকার বেশি বড় থাকলেই ঝুঁকিটা থেকে যায়।
আকার অনুযায়ী ৪ মিটার (১৩ ফিট) এর গ্রহাণু প্রতি বছরই পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে।
৭ মিটার বা ২৩ ফুট দৈর্ঘ্যের গ্রহাণুরা, যাদের সংঘর্ষ ক্ষমতা হিরোশিমায় ফেলা বোমার সমান, সেগুলো প্রতি ৫ বছর পর পর আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকে।
১০ মেগাটন (১০,০০০ কিলোটন) ক্ষমতার ৬০ মিটার বা ২০০ ফুট লম্বা গ্রহাণুদের আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকে প্রতি ১৩০০ বছর পর পর। এধরণের গ্রহাণু তুঙ্গুস্কা ঘটনার গ্রহাণুর সমতুল্য।
আর ১ কিলোমিটার আকারের গ্রহাণুদের গড়ে ১৫ লাখ বছরে এক বার এবং ৫ কিলোমিটার আকারের গ্রহাণুদের আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকে গড়ে ১ কোটি ৮০ লাখ বছর পর পর।
সুতরাং সে হিসেবে চিন্তা করতে গেলে মানবসভ্যতা আপাতত’র জন্যে অন্তত বড়সড় গ্রহাণুগুলো থেকে অনেকখানি নিরাপদ রয়েছে।
আর রইলো ছোটখাটো গ্রহাণু বা উল্কাদের কথা, সেগুলোর বেশিরভাগই আছড়ে পড়ার আগেই অনেক উপরে বিস্ফারিত হয়ে পড়বে।
কিন্তু খানিক বড় উল্কাপিণ্ডগুলোর বেলায় খেয়াল রাখাটা জরুরী।
তবে বড়সড় গ্রহাণু, যেগুলোর বায়ুমণ্ডল ভেদ করে একেবারে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আছড়ে পড়ার ক্ষমতা রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে NASA আর এদের JPL আর CNEOS এর মত প্রতিষ্ঠান বরাবরই নজর রেখে যাচ্ছে। আর আকারে বড় হওয়াতে সেগুলোতে নজর রাখাটাও তুলনামূলক সহজ। বিস্ফোরণে গতিপথ পরিবর্তন থেকে শুরু করে খন্ড করে দেয়ার মত বিভিন্নধরণের চিন্তাভাবনা নিয়ে তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
সুতরাং আপাতত কোনও গ্রহাণু আপনার ঘরে আছড়ে পড়ার ভয় ঝেড়ে ফেলে দিয়ে শান্তিতে ঘুমোতে পারেন।
এই ছিল গ্রহাণু,উল্কাপিন্ড প্রভৃতি নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন। আশাকরি ভাল লেগেছে। পরে হয়তো আবারো আসবো অন্য কোনও বিষয় নিয়ে। ততক্ষণ, সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন, নিজের খেয়াল রাখুন।
One Comment
পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা জঞ্জাল সাফ করতে আসছে নতুন প্রযুক্তি | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] কতটুকু নিরাপদ আমরা আকাশ থেকে নেমে আসা … […]