একবিংশ শতাব্দীতে ফেসবুক বা অন্য কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম শুনি নি এমন মানুষ আমরা কমই আছি। এমন মানুষও আছি যারা একাধারে কয়েক আইডি ব্যবহার করে থাকি। একবার কি চিন্তা করেছেন, ব্রাউজারে যখন আপনি সামাজিক মাধ্যমে প্রবেশ করছেন বা ফোন এপস ইন্সটল করছেন, কি কি পারমিশন চাচ্ছে বা কেচ ফাইলের এক্সেস চাচ্ছে? হ্যাঁ দেখে থাকলেও হয়তো তোয়াক্কা না করে আমরা অনায়াসে এক্সেস দিয়ে দিচ্ছি। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হয়ে হয়তো আপনার চিন্তা যে, “আরে ভাই আমার ডাটা নিয়ে করবেটা কি!!! আর করলেই বা করুক!!!” হয়তো আপনি কেবল স্ক্রলিং এ ব্যাস্ত কিন্তু বিশ্বের অন্য প্রান্তে শুরু হয়ে গেছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এর যুগ, যা আপনার চিন্তাধারার বাইরে। আপনার বিন্দু পরিমাণ ধারণাও নেই যে কি করতে পারে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার বা AI এলগরিদম গুলো আপনার ডাটা পয়েন্ট নিয়ে।
চলুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক কি কি করতে পারে আপনার এই পাবলিক ইনফরমেশন নিয়েঃ
- পারসোনালাইজড এডসঃ আপনার ডাটা, প্রতিটা নিউজফিডের উপর রিয়েকশন, ব্রাউজার কেচ, মাইক্রোফোন এনালাইসিস করে আপনার ডাটা পয়েন্ট এর উপর ভিত্তি করে এড তৈরি করা হবে যা কিনা কেবল আপনার টাইমলাইন বা আপনার মেইলেই শুধু আসবে। মনে হতে পারে আমি না কিনলেই হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত যখন আসতে থাকবে তখন নিজের অজান্তেই হয়তো অপ্রয়োজনীয় জিনিষটার উপর আপনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি হতে পারে।
- Behavior Tracking: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো, বিভিন্ন কন্টেন্ট এ আপনার রিয়েকশন ট্র্যাক করে ডাটাসেট আপডেট করে এলগরিদম ট্রেইন করতে পারে। জিনিষটা তীব্রমাত্রায় ভয়ংকর হতে পারে। উদাহারণসরূপ, ধরুন তারা জানে আপনি ধর্মীয়ভাবে খুব সেনসিটিভ। খুব সহজেই আপনাকে উসকে দিতে পারে বিভিন্ন কন্টেন্ট এর মাধ্যমে, যার ফলে মনের অজান্তেই হয়তো কোনো সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি ঘৃণা পুষে আসছেন। এই বিষয়টা আমাদের বাংলাদেশের মানুষের জন্য প্রচন্ড হুমকিসরুপ।
- Dividing Zone by interest: গোটা বিশ্বজুড়ে রয়েছে ৩.৫ বিলিওন এর বেশী একটিভ ইউজার। গোটা একটি দেশকে কয়েকভাগে ভাগ করা হয়েছে, ইউজারদের ইন্টারেস্ট বা আগ্রহের ভিত্তিতে। এর ফলে ২ টা জিনিষ হয়েছে। প্রথমত, অনলাইন এড এর জন্য খুব সহজেই টার্গেট সেট করা যায়। যা কিনা ই-কমার্স সাইটগুলোর জন্য সুবিধাজনক। কিন্তু আরেকটি ভয়ংকর দিক হলো রাজনৈতিক দিক। হ্যাঁ ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশের সাম্প্রদায়িক এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার জন্য। উদাহারণসরূপ, USA এর সর্বশেষ নির্বাচন এ ট্রাম্প কেম্পেইন এ ফেসবুক, গুগল, কেম্ব্রিজ এনালিটিকা কাজ করেছে। তারা ৭০ হাজার ভোটারের মতামত চেঞ্জ করে দিয়েছে কেবল মাত্র কাস্টম এড এর মাধ্যমে। যদি আরও স্পষ্ট করে বলি তবে, এই ৭০ হাজার ভোটারের সবাই হিলারি ক্লিনটন এর পক্ষে ছিলেন। কিন্তু ক্রমাগত এড এর কারণে তাদের ভেতর হিলারির বিরুদ্ধে মানসিকতা গড়ে উঠে। এই পরিবর্তন রাতারাতি ঘটে নি। শুরু হয়েছে ছোট ছোট কিছু ভিডিও এবং হ্যাসট্যাগ এর মাধ্যমে। হ্যাসট্যাগটি ছিলো HilaryCrook। আর ভিডিও গুলো শুরুতে ছিলো হিলারিকে নিয়ে বিভিন্ন হাসিতামাশার, কদিন বাদে হিলারির পার্সোনাল লাইফ নিয়ে ছোট ছোট ফুটেজ এর পর যখন দেখলো ইউজাররা এই ধরণের কন্টেন্ট গ্রহন করছে এরপর শুরু হয় হিলারির মিলিটারি প্ল্যান এবং বিভিন্ন নেগেটিভ সাইড গুলো।
এরপর আসে Third Party এপ্লিকেশন এবং ফেসবুক গেমসঃ
Profoundly এর মতো সিক্রেট মেসেজ সেন্ডিং বা কনফেসন এপগুলো শুরুতেই আপনার কাছ থেকে আপনার আইডির এক্সেস চেয়ে নেয়। খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি ঐ এপস গুলো থেকে আপনার ফ্রেন্ডদের মেসেজ পাঠাতে পারছেন। তার মানে এপসগুলো আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ফ্রেন্ডলিস্ট রিড করতে পারছে। এতে শুধু যে আপনার ডাটা পাচ্ছে তাই নয়, বরং আপনার ফ্রেন্ড লিস্টের যারা আছে, তাদেরকে আপনার ডাটার একটি নোড হিসেবে ডাটাবেজ সাজানো হচ্ছে। এছাড়াও কন্টাক নাম্বার এবং ইমেইল তো নিচ্ছেই।
তবে উপায়!!!
বিষয়গুলোর প্রভাব এখন লক্ষ্য করা না গেলেও আগামী ১০ বছর পর এর পরিনাম ব্যাপকরূপ নিবে। হয়তো সিস্টেম বা কোনো সার্ভার আপনার সব ডাটা জানে, হয়তো আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং আপনার বর্তমান লোকেশন এবং আপনার মানষিক অবস্থা সবই সিস্টেম বা 3rd পার্টি এপ নির্মাতারা জানে। কিছু উপায় আছে
- এপস ইন্সটল করার সময় দেখে নেওয়া , যে সকল পারমিশন চাচ্ছে আসলেও কি এপস এর জন্য তা লাগবে কিনা। যেমনঃ মিউজিক প্লেয়ার এ যদি আপনার কন্টাক লিস্ট আর মেসেজ এর এক্সেস চায়, সিক্রেট চ্যাট সার্ভিস আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের এক্সেস চায় ইত্যাদি।
- আমরা জানি আমরা ইতোমধ্যেই ফেসবুক এবং গুগলের কাছে বিক্রি। তবে যা করতে পারি তা হলো, আমাদের প্রতিটা আবেগ এবং প্রতিটা মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না ছড়ানো। কারণ, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাকেন্ড এ বসে আছে সবচেয়ে শক্তিশালি AI Engine গুলোর একটি।
- একাধিক প্রোফাইল চালানোর প্রবণতা কমাতে হবে। উপরেও একবার বলেছি এতে করে ডাটাসেটের নোড এর সংখ্যা বাড়ে যাতে করে মেশিন আরো সুক্ষভাবে আপনাকে শনাক্ত করতে পারে।
একটি অনুরোধ, যদি আপনার হাতে একটি মুভি দেখার সময় থাকে তবে, The Great Hack মুভিটা একবার দেখতে পারেন। সোসাল মিডিয়া সম্পর্কে আপনার ধারণা বদলে যাবে।
One Comment
বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষমতার ৫ টি সোলার পার্ক | বিজ্ঞানবর্তিকা
[…] ভার্চুয়াল জগতে কতটা নিরাপদ আমরা? […]