সুস্থ থাকার জন্য কি পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত?

ভালোবাসার অপর নাম লবণ। কথাটি শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। খাবার খেতে কে না ভালোবাসে? কিন্তু খাবার যদি হয় লবণবিহীন তাহলে খাবারের স্বাদে মোটেও তৃপ্তি আসে না। লবণের স্বাদকে মৌলিক স্বাদের মধ্যে একটি বলে গণ্য করা হয়। খাদ্যকে তরতাজা ও নিরাপদ রাখতেও লবণের জুড়ি নেই।

আমরা আক্ষরিক অর্থেই সোডিয়াম ছাড়া বেঁচে থাকতে পারব না । লবণ বা সোডিয়াম ক্লোরাইড আমাদের এই খনিজ সরবরাহের প্রধান যোগান, যা আমাদের পেশীর ব্যথা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও সাহায্য করে।

লবণ এক ধরনের স্ট্রেস ফুড। এটি সিমপ্যাথেটিক নার্ভ সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে। এছাড়াও এটি শরীরের পানি আর খনিজ লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তের পি.এইচ ঠিক রাখে, স্নায়ুর সংকেত চলাচল স্বাভাবিক রাখা এবং পেশির সংকোচন-প্রসারণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে লবণের ভূমিকা অপরিসীম।

কিন্তু চার দশকেরও বেশি সময় ধরে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে লবণ কম খাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে এসেছেন। কারণ লবণ প্রায় ৪০ শতাংশ সোডিয়াম থাকে, যা খুব বেশী পরিমাণে রক্তচাপ বাড়াতে পারে।

আমাদের শরীরে, সোডিয়াম জলের জন্য একটি চুম্বক মতো কাজ করে। এটি তরল টেনে আমাদের রক্তপ্রবাহে মিশিয়ে দেয়। এই অতিরিক্ত তরল আমাদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। শরীরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধমনীর সংকোচনও বাড়িয়ে দেয় লবণ। এ জন্যও রক্তচাপ বাড়ে। রক্তচাপ বাড়ার কারণে বেড়ে যায় বিভিন্ন হৃদরোগ যেমন- ইস্কেমিক হৃদরোগ, হার্ট ফেইলিওর ও স্ট্রোক এর ঝুঁকি। শরীরে বাড়তি পানি জমে শরীর একটু মোটাও হয়ে যেতে পারে।

আমরা অনেকেই প্রতিদিন প্রায় ৩৪,০০ মিলিগ্রামের মতো সোডিয়াম খাই । সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মতে, প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করলেই প্রধান স্বাস্থ্যগত উপকারিতা পাবো। ২০০৪ সালে ইন্সটিটিউট অব মেডিসিন (আইওএম) একমত হয়েছেন যে ৫০ বছর বয়সী আফ্রিকান-আমেরিকান বংশোদ্ভূত লোকদের উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ বা ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের সোডিয়াম গ্রহণের পরিমাণ ১৫০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।

আমাদের দৈনিক সোডিয়াম দরকার ১০০০-৩০০০ মিলিগ্রাম। অনেকের মতে ২৪০০ মিলিগ্রামের বেশি নয়। আর সোডিয়ামের এই চাহিদা মেটাতে প্রতিদিন খাবার লবণ প্রয়োজন বড়দের ক্ষেত্রে মাত্র ৬ গ্রাম বা প্রায় ১ চা চামচ পরিমাণ। শিশুদের কিডনি বেশি লবণ সহ্য করতে পারে না। তাই তাদের প্রয়োজন আরো কম লবণ।

এক থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের প্রয়োজন দৈনিক মাত্র ২ গ্রাম বা তিন ভাগের এক চা চামচ,৪ থেকে ৬ বছর বয়সীদের জন্য দরকার প্রায় ৩ গ্রাম বা আধা চা চামচ, আর ৭ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫ গ্রাম লবণ প্রয়োজন।

দশ বছরোর্ধ শিশুদের প্রয়োজন বড়দের সমান অর্থাৎ দৈনিক প্রায় ৬ গ্রাম।  দৈনিক ৬ গ্রামের চেয়ে কম লবণ খেলে উচ্চরক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, কম লবণ খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে প্রায় ১৩ শতাংশ আর ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনা কমে প্রায় ১০ শতাংশ। অর্থাৎ কম ও নয় আবার বেশীও নয়, পরিমাণ মতো লবণ খাওয়াই শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may use these HTML tags and attributes: <a href="" title=""> <abbr title=""> <acronym title=""> <b> <blockquote cite=""> <cite> <code> <del datetime=""> <em> <i> <q cite=""> <s> <strike> <strong>