যখন আপনি মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি, টেকনোলজি নিয়ে একটু মাথা ঘামানো শুরু করবেন তখনই যে প্রশ্নটা মাথায় উঁকি দিবে সেটা হচ্ছে আমরা কীভাবে আকাশগঙ্গার চিত্র চিত্রায়িত করি যখন আমরা এর ভেতরে অবস্থান করছি।
বিষয়টা অনেকটা এরকম যে আপনি যে ঘরে বাস করছেন, সেটার মডিউল ভেতরে বসে কল্পনা করতে পারবেন না, অবশ্যই এরজন্য বাহিরে থেকে দেখা লাগবে। তাহলে বিজ্ঞানীরা কীভাবে মিল্কিওয়ের মতো বিশাল গ্যালাক্সিকে এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন?
আমরা জানি আলো এক প্রকার তাড়িতচুম্বকীয় তরঙ্গ। তবে দৃশ্যমান আলো বা যা আমরা দেখি সেটা শুধুমাত্র তাড়িতচুম্বকীয় নয়। এছাড়া মোবাইলের মাইক্রোওয়েব থেকে এক্সরে মেশিনের তরঙ্গ সবগুলোই তড়িৎচৌম্বকীয়। আমরা যেসব বস্তুকে খালি চোখে দেখতে পাইনা সেসব দেখার জন্য দৃষ্টির বাহিরে এইসব তরঙ্গ সাহায্য করে দেখতে। সেজন্যই নাসার এক্স রে অবজারভেটরি ১২ বছর ধরে আমাদের গ্যালাক্সির কোর বা কেন্দ্র হতে আগত এক্স রশ্মির বিকিরণের ডাটা সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয়েছে কেন্দ্র সম্পর্কে। যেহেতু আমাদের গ্যালাক্সিটি সর্পিল বা spiral এবং এর বাহুগুলো এর কেন্দ্র থেকেই উৎপন্ন হয়।
যে নক্ষত্রগুলো গ্যালাক্সির অভ্যন্তরে থাকে এবং একে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে সেগুলোর বেশিরভাগই আমরা খালি চোখে দেখতে পারিনা, কালো মেঘের ধূলিময় আস্তরণ, ভিশন রেগুলারিটি এসবের কারণে। তবে রেডিও টেলিস্কোপ, গামা রে এগুলো ব্যবহার করে সহজের এই আস্তরণ ভেদ করে অপর প্রান্তে থাকা বস্তু তথা তারা গুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাই।
আমাদের গ্যালাক্সি কীরকম দেখতে সেটা চিন্তা করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো অনুমান! হ্যাঁ, পার্শ্ববর্তী এন্ড্রোমিডা M31, NGC 3344 ইত্যাদি গ্যালাক্সি গুলো সর্পিল আকৃতির। বাহুগুলোর প্রকারভেদের ভিত্তিতে সর্পিল গ্যালাক্সিকে আবার ২ উপশ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এক হচ্ছে সর্পিল বাহুযুক্ত এবং অপরটি হচ্ছে সর্পিল ব্যান্ড বা বারের জন্য। আমাদের গ্যালাক্সি যে সর্পিল বাহু যুক্ত সেটা বুঝার জন্য রাত বারোটার দিকে দক্ষিণ-পূর্ব আকাশের ৩০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় তাকালে দেখতে পারবেন সাদা মেঘ এর মধ্যে অসংখ্য তারা। এটাই সেই মোহনীয় সর্পিল বাহু।

সুতরাং আমরা নিশ্চিত হলাম যে আমাদের আকাশগঙ্গা spiral galaxy। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিজ্ঞানীরা পুরো গ্যালক্সিকে তাহলে চিত্রায়িত করেন কীভাবে। আমরা গ্যালাক্সির এক প্রান্তে অবস্থান করছি, এই সীমানা থেকে অপর প্রান্ত বা কোরের মধ্যবর্তী এলাকা দেখা এখনও সম্ভব না। কিন্তু বিভিন্ন প্রান্তের তোলা ছবি নিয়ে বিজ্ঞানীরা সেগুলো কে ইনফ্রারেড, গামা, এক্স রশ্মি থেকে দৃশ্যমান রশ্মিতে নিয়ে আসেন এবং গ্যালাক্টিক কোর বা কেন্দ্রের সাপেক্ষে এক প্রকার কম্পোজিট অথবা প্যানোরোমা ইমেজ তৈরি করেন যা অনেকটা Messier M31 এর মতো দেখায় যেহেতু পূর্ববর্তী সময় এন্ড্রোমিডা কে দিয়েই উদাহরণ দেয়া হতো। যাইহোক আমরা যদিও আকাশগঙ্গার প্রকৃত ছবিটা পাচ্ছিনা, কারণ নিজের ঘরের বাহিরের কাঠামো না দেখলেও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘর দেখে তো একটা ঠিকই আন্দাজ করে নেওয়া যায়!…
তথ্যসূত্রঃ h/curious.astro.cornell.edu