কিভাবে সমাপ্তি ঘটবে আমাদের এই মহাবিশ্বের? সম্ভাব্য কয়েকটি থিওরী

মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্পর্কে অনেকগুলো তত্ত্ব বা   থিওরি প্রচলিত আছে। এর মধ্য বিগ ব্যাং থিওরি হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় থিওরি। কিন্তু মহাবিশ্বের সমাপ্তি সম্পর্কে?  অনন্তকাল ধরে মহাবিশ্ব টিকে থাকার সম্ভাবনা নেই কোনো। যার সৃষ্টি আছে তার ধ্বংস অবশ্যই আছে।  আমরা চলে যাওয়ার অনেক অনেক কাল পরে কি হবে এই মহাবিশ্বের , এই গ্রহ, নক্ষত্রের তা কি আমরা জানি??

মহাবিশ্বের ধ্বংস সস্পর্কে বিজ্ঞানীরা একমত হলেও কিভাবে এটি ধ্বংস হবে তা নিয়ে আছে বেশ কয়েকটি থিওরি । সেসব কিছু থিওরি নিয়েই আমাদের এবারের আলোচনা। তো চলুন দেখে সেসব  থিওরি গুলোঃ

১। দি বিগ রিপ ( The Big Rip) :

এ থিওরি সম্পর্কে আলোচনা করার আগে “ডার্ক এনার্জি” সম্পর্কে  সামান্য ধারনা দেয়া যাক।  বিগ ব্যাং সংঘটিত হওয়ার পর আমাদের এ মহাবিশ্ব ক্রমাগত  সম্প্রসারিত হচ্ছে।  তবে  মহাকর্ষিক বলের জন্য মহাজাগতিক বস্তুগুলো যেমন গ্যালাক্সি, ক্লাস্টার ইত্যাদির সম্প্রসারণ  গতি একটা সময় পর কমার কথা। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে গতি না কমে বরং ক্রমশ বেড়েই চলেছে।  এরা যত একে অপরের কাছ থেকে দূরে যাচ্ছে ততই তাদের দূরে যাওয়ার গতি  বাড়ছে ।  বলা যেতে পারে মহাকর্ষ বলের বিপরীতে এমন কোনো  অজানা শক্তি এখানে কাজ করছে  যা এমন কাজটি করছে । এই অজানা শক্তিটির নামই বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন “ডার্ক  এনার্জি” ।

এই ডার্ক এনার্জির জন্য  গ্যালাক্সিগুলো দূরে যেতে শুরু করলেও এর ভেতরে থাকা  গ্রহ নক্ষত্র গুলো মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে আবদ্ধ থাকে । কিন্তু  বিগ রিপ থিওরি অনু্যায়ী এমন একটা সময় আসবে যখন ডার্ক এনার্জির প্রভাব এমন বাড়বে যার ফলে গ্যালাক্সির ভেতরে থাকা গ্রহ নক্ষত্র তাদের মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে আর আবদ্ধ থাকবে না। এ বল তারা  অতিক্রম করবে।  এর ফলে গ্রহ নক্ষত্র গুলো একে অপর থেকে দূরে সরে যেতে থাকবে এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বা ছিঁড়ে  যাবে । সেই সাথে সাথে তাদের মধ্যকার আণবিক বন্ধনও ভাঙ্গা শুরু করবে একটা সময় ।  এতে করে এসব গ্রহ নক্ষত্র টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে থাকা অণুগুলো ভেঙ্গে যেতে থাকবে ।  এরা পরমাণুতে বিভক্ত হয়ে পড়বে। এভাবে সমগ্র মহাবিশ্বই  ভাঙতে  ভাঙতে   পরমানুময় হয়ে যাবে।

২। দি বিগ ক্রাঞ্চ ( The Big Crunch) : 

এই থিওরীটা বলা যেতে পারে  বিগ রিপ থিওরীর উল্টো । এখানের আমাদের ধরে নিতে হবে  ডার্ক এনার্জির প্রভাবটা মহাকর্ষীয় বলের চেয়ে কম । এখানে মহাকর্ষীয় বল বেশি হবার কারণে এক সময় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ থেমে যাবে। থেমে যাওয়ার পর শুরু হবে মহাবিশ্বের সংকোচন ।

এর ফলে গ্যালাক্সিগুলো একে অপরের কাছে আসা শুরু করবে।  এরা একে অপরের সাথে ধাক্কা খাবে ।  একে অপরের সাথে মিশে যেতে শুরু করবে।  তখন তারা  সৃষ্টি করবে ব্ল্যাকহোলের। এভাবে তৈরি হবে অসংখ্য ব্ল্যাকহোল।  তখন মহাবিশ্বের অসংখ্য ব্ল্যাকহোল গুলোও একটির সাথে আরেকটি মিশে তৈরি করবে একটি মেগা ব্ল্যাকহোলের।  সমগ্র মহাবিশ্বের ভর জমা থাকবে এই মেগা ব্ল্যাকহোলের ভেতর। এই ব্ল্যাকহোলটিও এক সময় নিঃশেষ হতে হতে এক সময় একটি বিন্দুতে পরিণত হবে।  অর্থাৎ বিগ ব্যাঙের  ঠিক উলটো অবস্থার সৃষ্টি হবে।

৩।  দি বিগ ফ্রিজ ( The Big Freeze) :

এই তত্ব অনুসারে  মহাবিশ্ব যত সম্প্রসারিত হবে  থার্মোডায়নামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র অনুসারে ততই বাড়তে থাকবে এর এনট্রপি।  এই এনট্রপি যখন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছাবে তখন মহাবিশ্বের সব তাপ সব দিকে সমান ভাবে বন্টিত হয়ে যাবে। ফলে মহাবিশ্বের সব জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে। নতুন করে কোনো তাপ সৃষ্টি করতে না পারায় মহাবিশ্ব হয়ে পড়বে সস্পূর্ণ  শীতল ।  অন্ধকার , শীতল, গতিহীন, প্রাণহীন  এক অবস্থায় চলে যাবে এ মহাবিশ্ব। এই থিওরীকে Heat Death ও বলা হয়।

 

৪।  দি বিগ বাউন্স (  The Big Bounce) :

এই থিওরীটি অনেকটাই বিগ ক্রাঞ্চের মত । তবে পার্থক্য হচ্ছে  এখানে মহাবিশ্ব  একবার সংকুচিত হয়ে একটি  বিন্দুতে পরিণত হবার পর আবার বিগ ব্যাং ঘটে। আবারো মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়। এ প্রক্রিয়া ঘটতেই থাকে।   বারবার  সংকোচন  প্রসারণ হবার ফলেই এই থিওরীকে বিগ বাউন্স থিওরি বলা হয়।

৫।  মাল্টিভার্স থিওরি ( The multiverse Theory) :

এই থিওরি অনুযায়ী আমাদের মহাবিশ্বের মত আরো অগণিত মহাবিশ্ব রয়েছে । তাদের কোনো কোনোটি বিগ ক্রাঞ্চ, বা বিগ রিপের মত ঘটনার কারণে ধ্বংস হচ্ছে। আবার কোনোটি বিগ ব্যাঙ্গের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে। তবে এই অগণিত মহাবিশ্বের সমন্বয়ে গঠিত যে বৃহৎ  মাল্টিভার্স , সেটি অনন্তকাল ব্যাপী টিকে থাকবে।

সূত্র ঃ  Curiosity , wired.co

Comments are closed.