ছোটোবেলা যখন কেউ প্রশ্ন করত, বড় হয়ে কী হবে। অনেকের উত্তরটাই ছিল আমি নভোচারী বা Astronaut হবো। খুব সহজেই আমরা বলে দিতাম। এমনকি আমি নিজেই এখনও সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি মহাকাশচারী হওয়ার! আবার আমাদের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, যে কেউ মহাকাশচারী হতে পারেনা অথবা সেখানে যেতে হলে অমানুষিক ক্ষমতা সম্পন্ন হতে হয়। আসলেই অনেক ব্যাপাই আমরা জানিনা। যাহোক আজ আমরা জানব আসলেই কী যোগ্যতা প্রয়োজন মহাকাশচারী হতে গেলে।

নাসার ন্যূনতম যোগ্যতার শর্তানুযায়ী মহাকাশচারী হতে গেলে স্নাতক পাশ করে কিছু ফিজিক্যাল টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হবে। কিন্তু এটা কি এতই সহজ? ২০১৬ সালের মাত্র ১২০ জন সুপার কোয়ালিফাইড কিছু প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছিল ১৮,৩০০ আবেদন থেকে! ভাবা যায়? কী এমন “Soft Skill” প্রয়োজন তবে?
নাসা কী চায়?
Anne Romer, নাসার মহাকাশচারী নির্বাচন প্যানেলের ম্যানেজার এবং মহাকাশচারী Shannon Walker কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ২০১৬ সালের প্রার্থী নির্বাচনের সময়। তাঁদের ভাষ্যমতে মহাকাশচারীদের মধ্যে পশু ডাক্তার থেকে শুরু করে প্রকৌশলী, ওশেনোগ্রাফার, সামরিক কর্মকর্তা সবাই রয়েছেন। এটা নির্ভর করেনা আপনি কোন ব্যাকগ্রাউন্ডের। মূলত যা দরকারী সেটা হচ্ছে আপনার অভিজ্ঞতা এবং নিজের ক্ষেত্রের উপর কতটুকু দক্ষ সেটা। তিনি আরো বলেন যে নাসা এটাও চায় যে একজন মহাকাশচারীর নিজের ফিল্ডের উপর দক্ষতা ছাড়াও তাঁর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের স্কিল থাকবে, অর্থাৎ এক বিষয়ে পারদর্শী এমন না, বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্কিলের বৈচিত্র্যতা থাকতে হবে যাতে যেকোনো সমস্যায় নিজের জ্ঞানের সুবিশাল ভান্ডার কাজে লাগানো যেতে পারে। Shannon বলেন তাকে মোট ৫ বার এপ্লিকেশনের পর নির্বাচন করা হয়েছে। ১৯৯৪, ৯৬, ৯৮, ২০০০ এবং সব শেষ ২০০৪ এ গিয়ে সফলভাবে ইন্টারভিউ পাস করেন। সুতরাং চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই। হার মানা যাবেনা কোনোভাবেই। এটা নির্ভর করেনা আপনি কতবার এপ্লাই করবেন, প্রত্যেকবার সিলেকশনেই বিভিন্ন ধরনের স্কিল সম্পন্ন মানুষ খোঁজা হয়।
বর্তমান দিনে নাসা এমন কাউকেই খুঁজে যার অসীম ধৈর্য ও সাহসের পাশাপাশি থাকবে ভালো সেন্স অফ হিউমার। যতটা সম্ভব আপনাকে চেষ্টা করতে হবে ইন্টারভিউ বোর্ডে পজেটিভ ইম্পেক্ট ফেলার। সাবেক নভোচারী Tom Jones বলেন, ” তাঁরা এক ঘন্টায়ই আপনাকে ওলটপালট করে যাচাই করে নিবে যে আপনি আসলেই এমন মানুষ কীনা যাকে নাসা চায়!”
আবার মহাকাশচারীদের ইংরেজীতে দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি মাতৃভাষার মত রাশিয়ানও শিখতে হয়। যদি কোনো বিপদ হয় হঠাৎ তাহলে রেডিওতে হওয়া রাশিয়ান কথোপকথন এবং নির্দেশনাও যাতে আপনি বুঝতে পারেন।

অভিজ্ঞদের বচন
যে স্কিলগুলো আপনার প্রয়োজন নাসাতে কাজ করার জন্য সেগুলো অনেক সময় লাগবে নিজেকে তৈরি করতেই। কাজেই যত আগে থেকে সম্ভব শুরু করে দেয়া উচিত। কানাডিয়ান নভোচারী Chris Hadfield বলেন,” নতুনদের ক্ষেত্রে আমি তিনটি গুণ তৈরি করে নিতে বলব। নিজের ভালো স্বাস্থ্য তৈরি করতে হবে, প্রচন্ড ধৈর্য্যশালী হতে হবে এবং সব সময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটাতেই অটল থাকতে হবে। তাছাড়াও মেডিকেল ট্রেনিং নাও, নতুন ভাষা শেখো, স্কুবা ডাইভিং শেখো অর্থাৎ যত ধরনের স্কিল একটা মানুষের পক্ষে সম্ভব আয়ত্ত করা সেটা করার চেষ্টা করো। আসলে কোনো নির্দিষ্ট গুণ নেই যেটার উপর যাচাই করে নাসা তাঁদের মহাকাশচারী নিয়োগ করে। তোমাকে শুধু অনেকগুলো বিষয়ের উপর ভালো হতে হবে। আরেকজন নভোচারী Mchelle Williams বলেন,
” আমি অনেক মহাকাশচারীদের সাথেই কথা বলেছি, তাঁদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি। এরা অন্য কোনো গ্রহের মানুষ না। এরা আমাদের মতোই সাধারণ কিছু মানুষ যারা অসাধারণ কাজ করে থাকেন। তাঁরা যা-ই করেন সেটা প্রচন্ড ভালো লাগা নিয়ে করেন এবং তা মানুষকে শেখাতে দ্বিধাবোধ করেন না। তাঁরা খুবই হাস্যরসিক এবং উদার।”
আমরা মোটমুটি একট ধারণা পেলাম নাসার মহাকাশচারী হতে গেলে আসলে কী কী গুণের অধিকারী হতে হয়, কী কী করতে হয়। এখনও অনেক সময় বাকী, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আস্তে আস্তে মহাকাশকেন্দ্রিক কাজের প্রসার বাড়বে প্রযুক্তি যত উন্নতি হবে। একসময় হয়ত অনেক বেশি সংখ্যক মানুষই নিজেদের ইচ্ছেমত ক্ষেত্রের উপর কর্মসংস্থান তৈরি করে মহাকাশে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবে। কে জানে!
Source: Curiosity